Sonajhoori Maitra

Fantasy Others

4.0  

Sonajhoori Maitra

Fantasy Others

মুক্তি

মুক্তি

2 mins
503


   

                                       

 

ছোট্ট গ্রাম রুপনগরী। ছোট হলেও ভারি সুন্দর। সবুজ উপত্যকার কোলে, লালমাটির দেশ। কলকল করে বয়ে চলেছে স্বচ্ছ পাহারি ঝর্ণা। গ্রামের একপাশে বিশাল চা –বাগান।  রোজ সকাল বিকেল পিঠে ঝুরি নিয়ে দেহাতি মেয়ের দল চা চাষ করে। মাসের শেষে বিশাল বড় ট্রাক গাড়ি বস্তা বস্তা চা নিয়ে যায় কারখানায়। গ্রামের থেকে চার মাইল দূরে মিশনারি স্কুল। সন্ধ্যে নামার খানিক আগে ঢং-ঢং করে বাজে চার্চের ঘণ্টা। তখন ছোট ছোট বাড়ি গুলোয় টিমটিম করে আলো জ্বলে ওঠে। দূর থেকে পাহারি কুয়াশায় ঢাকা রূপনগরীকে দেখে মনে হয় পুতুলের বাড়ি যেন। গ্রামের শেষ প্রান্তে আছে এক বিশাল বাগান বাড়ি। আমি সেখানেই থাকি।

 

আজ কত বছর যে হয়ে গেল আমার এই ছোট্ট গ্রামে তার ইয়ত্তা নেই। রূপনগরীকে তৈরি হতে দেখেছি। অনেক ছোট আমি তখন। জমিদারবাবুর হঠাৎ একদিন মনে হল গরমকালে ঘুরতে যাওয়ার মত জায়গা নেই। তক্ষুনি ডাক পড়ল মজুরদের। পাহার কেটে বানানো হল রূপনগরী গ্রাম। তৈরি হল বিশাল বাগান বাড়ি।বাগান বাড়ির সামনে লাল- নীল ফোয়ারা হল, পরীদের মূর্তি লাগানো হল। এখন আর সেই ফোয়ারাও নেই, মূর্তিও নেই। এদিক-ওদিক পরে শুধু অতীতের ভাঙা টুকরো। জমিদারবাবু এলে রোজ সন্ধেবেলা জলসা বসতো। নামকরা কালোয়াতি গায়াক আসত। গান চলত মাঝরাত অবধি,আর তার সাথে তাল মিলিয়ে নাচ। জমিদারবাবু কিন্তু গ্রামবাসীদের ভীষণ ভালবাসতেন। প্রত্যেকবার ফিরে যাওয়ার আগে গ্রামে বিরাট ভোজের ব্যাবস্থা হত।

 

শেষ বয়সটা জমিদারবাবু এখানেই কাটান। বাড়ির লোক কিছুদিন ছিল সঙ্গে। একদিন জমিদারের ছেলে এসে বললেন, “ হ্যাঁ রে রঘু, এইবার যে আমায় যেতে হবে রে। কতদিন এখানে বসে থাকব বল? ডাক্তারবাবু তো বলেই দিলেন এ আর ঠিক হওয়ার নয়। আমাকেও তো কাজেকর্মে মন দিতে হবে নাকি। আমি বলি কি তুই থাক বাবার সাথে শেষ কটা দিন। আমরা এইবেলা বেড়িয়ে পরি।“ সেই থেকে আমি এখানে। জমিদারবাবু মারা যাওয়ার আগে বলেছিলেন, “ এই গ্রাম থেকে মুক্তি পাব না রে। এই গ্রামের মানুষদের থেকেও না। এখানেই থেকে যাব চিরটাকাল।“ শেষকৃত্যের কাজ সেরে জমিদারবাবুর ছেলে বললেন, “ এইবার তুইও আমাদের সঙ্গে চল রঘু। এখানে কি করবি একা?” আমি যাইনি। গ্রামটার মধ্যে যেন মায়া আছে। কিছুতেই যেতে পারলাম না। একেবারে আস্টেপৃষ্টে বাঁধা পরে গেলাম এখানে।

 

আজ একশো বছর পার হতে চলল এখানেই থেকে গেছি। আমাকে কেউ দেখতে না পেলেও আমি কিন্তু সব্বাইকে কে দেখি। পাহার কেটে নতুন রেললাইন হল, মোবাইল টাওয়ার হল, বাগান বাড়িটা আস্তে আস্তে লতা – পাতা জঙ্গলে ঢেকে গেল , সব দেখলাম। গ্রাম ছেড়ে আর যেতে পারলাম না। এই সবুজ উপত্যকা থেকে মুক্তি নেই। বাগান বাড়িতেই থাকি। রূপনগরীকে সত্যি সত্যি নগর হতে দেখি। ভালই আছি এখানে। মন্দ নেই।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Fantasy