Mohona Debroy

Abstract Fantasy Thriller

2.0  

Mohona Debroy

Abstract Fantasy Thriller

পুরাঘটিত

পুরাঘটিত

6 mins
333


"ওই বাড়িটা ভাড়া নিলেন শেষ পর্যন্ত?"

"হ্যাঁ, কেন বলুন তো?"

"নাহ্, এমনিই।"

"ওহ্... হ্যাঁ ওটাই নিলাম। কমে পাওয়া গেল।"

"তা... নেওয়ার আগে ভালো করে খোঁজ খবর করেই নিয়েছেন নিশ্চয়ই?"

"মোটামুটি করেছিলাম। কিন্তু এসব কেন জিজ্ঞাসা করছেন বলুন তো?"

"না, আসলে ওই বাড়িটা অনেক দিন হলো তালা বন্ধ পড়ে ছিল, অনেক চেষ্টা করেও কোন ভাড়াটে পাওয়া যায়নি, আশাকরি জানেন?"

"জানি। কিছু একটা অ্যাকসিডেন্ট হওয়ার পর সম্ভবত এটা হয়েছিল।"

"হুঁ, কিছু একটাই বটে। ঠিক কী যে হয়েছিল খুব স্পষ্ট করে জানাও যায়নি।"

"ওহ আই সি..."

"আই সি" মানে? আপনি বাড়িটা ভাড়া নিয়েছেন বাড়িটার ব্যাপারে বিস্তারিত না জেনেই?"

"দেখুন দাদা, আমি অকৃতদার মানুষ। অফিসের কাছাকাছি একটা থাকার জায়গার দরকার ছিল, তাই ভাড়া নিয়েছি বাড়িটা। মেস বা পেইং গেস্ট থাকার খোঁজ করিনি, কারণ বেশিরভাগ দিনই আমার বেরোনো বা বাড়ি আসার সময়ের কোন ঠিক ঠিকানা থাকে না। কতক্ষণ বাড়ি থাকবো তাও বলা যায়না। বেসিক্যালি কাউকে না বিরক্ত করে রাতে ঘুমনোর মতো একটু জায়গা খুঁজছিলাম। পেয়ে গেছি, ব্যাস। এবার কতো দশক আগে ওবাড়ির কোথায় কী হয়েছিলো, বিশ্বাস করুন, কোন ইন্টারেস্ট নেই।"

"আচ্ছা, ইন্টারেস্ট নেইই যখন বলছেন, তখন থাক। অনেক দিন হয়েও গেল, মানুষকে তো ভুলতেও হয়, নাকি? আসি তাহলে, আমার বাসও এসে পড়লো।"


ভদ্রলোক তাড়াহুড়ো করে বাসে উঠে যাওয়ার পর, ওনার কথা গুলো নিয়ে আমি নাড়াচাড়া শুরু করলাম। যে বাড়িটা নিয়ে এতক্ষণ কথা হচ্ছিল সেটাতে আমি গতকাল থেকে থাকছি। বাড়ির মালিক এতদিন কলকাতার বাইরে থাকতেন, এবার স্টেটসে চলে যাচ্ছেন, সেই কারণেই বোধ হয় বাড়িটা খুব কম ভাড়াতেই দিয়ে দিলেন আমায়, বেশ তাড়াহুড়ো করেই। একতলা আর দোতলার একটা করে ঘর আমার জন্য খোলা, এবং আমার পক্ষে সেটাই যথেষ্ট। যে ভদ্রলোকের সাথে এতক্ষণ কথা বলছিলাম তিনি একজন প্রতিবেশী। বাস স্ট্যান্ড পৌঁছানোর মিনিট পাঁচেকের পথটা মনে হচ্ছে মাঝে মাঝেই এঁর সঙ্গে পেরোতে হবে।

ওনাকে যে আমি বাড়িটা নিয়ে কোন দুর্নাম বা বিতর্কের কথা বলতে নিরস্ত করলাম সেটা নিছক কৌতূহলের অভাবে নয়, বরং বলা চলে কোনরকম গল্প শুনে মনে কোন খচখচানি ধরাবো না বলেই প্রধানত। আসলে বাড়িটা যখন বেশ কমেই পেয়ে গেলাম, আমার খোঁজ নেওয়ার প্রধান বিষয়বস্তু হয়ে দাঁড়িয়েছিল যে পাড়ায় আসছি সেই পাড়া টা। সেই বিষয়ে নিশ্চিন্ত হয়েই ফাইনাল ডিসিশন টা নিই। বাড়িটার নিজস্ব ইতিহাস নিয়ে বেশি গবেষণায় যাইনি খুব সচেতন ভাবেই, ঠিক যে কারনে একটু আগে এই ভদ্রলোক কে হতাশ করলাম।


সেদিন বাড়ি ফিরতে প্রায় সাড়ে দশটা হল। নমো নমো করে একটু কিছু মুখে দিয়ে শুতে চলে গেলাম। প্রচণ্ড ঘুম পাচ্ছিল।

সাউন্ড স্লিপ যাকে বলে সেটা আমার কোনোদিনই হয়না। রাতে অন্তত একবার ঘুম ভাঙবেই। কালও তার ব্যতিক্রম হয়নি, আজও হলো না। কিন্তু আজ যেন কী একটা অস্বস্তি তে ভেঙে গেল ঘুমটা। নতুন জায়গা, অস্বস্তির ব্যাপারটা অস্বাভাবিক নয়, কিন্তু, কেবলই মনে হতে লাগলো, শুধু পরিবেশ নয়, কী একটা ডিস্টার্বেন্সের জন্যই যেন ভেঙেছে ঘুমটা।

বিছানার মাঝখানে শুয়েও একদিকে সরে আসা টা আমার অনেকদিনের অভ্যাস। লক্ষ্য করলাম সেই মত আমি বিছানার বাঁ দিকে সরে এসেছি আর বাঁ দিকেই মুখ করে শুয়ে আছি। আর আমার পিছন থেকে কিসের যেন শব্দ ভেসে আসছে।

নিঃশ্বাসের শব্দ।

আমার শরীরটা ঠান্ডা হয়ে গেল। ঘরের দরজা ভেতর থেকে বন্ধ। তাহলে এত রাতে কে নিঃশ্বাস ফেলছে আমার পিছনে? চোর ছ্যাঁচড়? নাকি আমার মনের ভুল? নতুন জায়গা আর সকালের ভদ্রলোকের ভুলভাল বকুনির মিলিত প্রভাবে হ্যালুসিনেট করছি? চোখ খুলে ঘরের আবছা অন্ধকারে সামনের দেওয়ালটা ছাড়া আর কিছু দেখতে পেলাম না। কিন্তু এবার আর শুধু নিশ্বাসের শব্দ নয়, বিছানায় অন্য কেউ থাকলে যেমন শুধু নিঃশ্বাস ছাড়াও আরও কিছু অনুভূতির দ্বারা বোঝা যায় যে আর কেউ আছে, সেগুলো এখন বেশ অনুভব করছি। যেন কারো শরীরের উষ্ণতা বিছানার দ্বারা পরিবাহিত হয়ে ছড়িয়ে পরছে আমার শরীরে। আমার ঠিক পিছনেই, বিছানার প্রায় মাঝখানে, আমি ছাড়া দ্বিতীয় কোন ব্যক্তি শুয়ে আছে।

আমি স্থির হয়ে শুয়ে রইলাম। এ অবস্থায় কি করনীয় আমার জানা নেই। তবে আর যেই থাক না কেন এই ঘরে, তাকে দেখাটা আমার প্রাথমিক কর্তব্য। আমি পিছন ফিরলাম।

অন্ধকারে স্পষ্ট কিছু দেখা যায় না, তবুও বুঝতে পারলাম একটা চাদরাবৃত শরীর আমার পাশেই শুয়ে আছে, নিঃশ্বাসের তালে তার মধ্যভাগ টা উঠছে-নামছে। আমি বিছানার পাশে রাখা মোবাইলটার জন্য হাত বাড়ালাম।

ওটা নেই।

আমার ফোনটা নেই।

কোথায় গেল?

বিছানা ছেড়ে উঠতে সাহস হয়না, কিন্তু না উঠেও কোন উপায় নেই। এই আগন্তুকের পরিচয় জানার জন্য উঠে আলোটা আমাকে জ্বালাতেই হবে। অতি সন্তর্পনে খাট থেকে নেমে সুইচ বোর্ড এর দিকে এগিয়ে গেলাম আমি। এবং আলো টা জ্বেলে দিলাম।

না, ভূতের গল্পের মতো সঙ্গে সঙ্গে খাট থেকে মূর্তিটা মিলিয়ে গেল না। এখন স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি চাদর চাপা শরীরটা, নিঃশ্বাসের তালে উঠছে, পড়ছে। আমি সুইচবোর্ডের কাছে পাথরের মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে রইলাম। এবার শরীরটার মধ্যে একটা নড়াচড়ার আভাস দেখা গেল। এবং সেই নড়াচড়ায় তার মুখের উপর থেকে চাদরটা গেল সরে।

একটা মেয়ে।

আন্দাজ ছাব্বিশ সাতাশ। এলোমেলো চুলগুলো মুখের চারপাশে ছড়ানো। চোখ বন্ধ। বোঝা যাচ্ছে আলোতে তার ঘুমের একটু অসুবিধা হলেও, সেটা ভাঙেনি। চাদরটা আবার মুখের উপর টেনে নিয়ে আলোর থেকে উল্টোদিক ফিরে শুয়ে পড়ে মেয়েটা।

এবার আমার চোখ চলে যায় ঘরের অন্যান্য দিকে। আমি এসে যেমন করে ঘরটা গুছিয়ে রেখেছিলাম, এই ঘর আর তেমন নেই। আমার ফোনটা যে নেই সে কথা তো আগেই বলেছি, এখন দেখতে পেলাম খাটের মাথার কাছে একটা ফুলদানিতে কয়েকটা টাটকা ফুল রাখা। জানলার পর্দা গুলো আলাদা, এমনকি বিছানার চাদরটাও। ঘরের দরজাটাও বেশ চকচক করছে, যেন মনে হচ্ছে কিছুদিন আগেই পালিশ করা হয়েছে। খাটের পায়ের দিকের দেওয়ালের সামনে রাখা একটা আলনায় ঝুলছে কয়েকটা সালোয়ার।

আমি টলতে টলতে গিয়ে খাটের উপর বসে পড়লাম। একহাতে সজোরে চেপে ধরলাম নিজের কপালের দুপাশ।

স্বপ্ন দেখছি? নিশ্চয়ই তাই। কিন্তু...

হঠাৎ আমার পেছনে নড়াচড়ায় সম্বিত ফিরল আমার। মেয়েটা উঠে পড়েছে। চোখের পাতা বারবার ফেলে জোরালো আলোর সঙ্গে নিজেকে অভ্যস্ত করে নিতে চাইছে।

আমাকে দেখতে পাওয়া মাত্রই তার মুখের নিদ্রালু ভাবটা কেটে গিয়ে ফুটে উঠল একটা নগ্ন আতঙ্ক। চিৎকার করার জন্য হাঁ করলো সে। সেই মুহূর্তে আমার আমার ভিতর কি হয়ে গেল জানিনা, আমি কিচ্ছু না ভেবে চেপে ধরলাম তার মুখ। সে উঠে বসে ছিল। আবার পড়ে গেল বিছানায়। তার গলা দিয়ে একটা গোঙানির শব্দ বেরিয়ে আসতে লাগল শুধু। বিছানায় পড়ে যাওয়ার সময় তার হাত দুটো বেকায়দায় চলে গিয়েছিল শরীরের তলায়, তাই সে দুটোও ব্যবহার করতে পারছিল না সে। আমি কিন্তু তখনো প্রাণপনে তার মুখটা চেপে ধরে আছি। গোঙানির শব্দটা বন্ধ করার জন্য এবার নাকটাও চেপে ধরলাম। তার পা দুটো মরিয়া ভাবে ছটফট করতে লাগলো। আমি কিন্তু ছাড়লাম না। আমার মন বলছিল ছেড়ে দিলে সে চিৎকার করবে, আর তারপর যে কি হবে, আমার জানা নেই।

প্রায় মিনিটখানেক ধস্তাধস্তির পর তার শরীরটা স্থির হয়ে গেল, আর আমিও ছেড়ে দিলাম।

হঠাৎই মাথাটা ভীষণ ঘুরে উঠল আমার। সারা শরীরটা যেন অবশ হয়ে আসছে। সমস্ত পৃথিবীটা দুলছে। আর কিছু মনে নেই।


ঘুম যথারীতি ভাঙ্গল অ্যালার্মের পাখির ডাকে। উঠে চোখ রগরে চারপাশে তাকাতেই কালকের স্বপ্নটার কথা মনে পড়ে গেল। উফ! কি ভয়ানক! নাহ্, আজ থেকে একটা হালকা ঘুমের ওষুধ খেয়ে শুতে হবে। উঠে স্নান শেষ করে কোনরকমে নাকে-মুখে দুটো খাবার গুঁজে বেরিয়ে পড়লাম অফিসের উদ্দেশ্যে।

মাঝরাস্তায় আবার সেই ভদ্রলোকের সাথে দেখা। দু-একটা একথা সেকথার পর জিজ্ঞাসা করলেন, "তারপর? নতুন বাড়ি স্যুট করছে তো?"

"হ্যাঁ, করছে একরকম," আমি জবাব দিলাম, তারপর কি ভেবে বললাম, "আচ্ছা, ওই যে কালকে বলছিলেন না, এ বাড়িটার কি একটা ব্যাপার আছে... কি বলুন তো ব্যাপারটা?"

ভদ্রলোক একটু হাসলেন, "ইন্টারেস্ট জেগেছে বুঝি? আরে মশাই তেমন কিছু নয়, বছর দশেক আগে এক সদ্য বিবাহিত দম্পতি ওই বাড়িটা ভাড়া নেয়। ছেলেটা অফিস ট্যুরে গিয়েছিল বাইরে। মেয়েটা বাড়িতে একা ছিল। এই অবস্থায় এক রাত্রে কে বা কারা তাকে শ্বাসরোধ করে খুন করে রেখে যায়। সবচেয়ে আশ্চর্যের কথা হল, ঘরের দরজা জানলা সব ভেতর থেকে বন্ধ ছিল, একটা ইঁদুর পর্যন্ত গলার উপায় ছিল না। ইন ফ্যাক্ট, বাড়ির কাজের লোকটি এসে ডাকাডাকি করে সাড়া না পেয়ে ডেকে লোকজন জড়ো করে। পুলিশ অনেক তদন্ত করেছিল, জানেন! কিন্তু তারপর যা হয় আর কি‍! তো সেই থেকেই-- কি হলো? আরে ও মশাই...! রাস্তায় বসে পরলেন কেন? মৃগী-টিগি আছে নাকি? আরে! দেখো কান্ড! ও দাদা, শরীরটা খারাপ লাগছে? ডাক্তার ডাকবো...?..."



साहित्याला गुण द्या
लॉग इन

Similar bengali story from Abstract