AYAN DEY

Abstract Others

3  

AYAN DEY

Abstract Others

সেফটি ভোল্ট

সেফটি ভোল্ট

5 mins
222


দেবিকা যেদিন প্রথম আমায় একথা বলেছিল আমার সেদিন মোটেও বিশ্বাস হয়নি । আমার " ঠাট্টা করছিস আমার সাথে ? " এমন ভঙ্গি আন্দাজ করতে পেরে ও বলেছিল " দেখ সায়নী তোর বর তোকে দ্রব্য হিসাবে ব্যবহার করছে , সেখানে তুই প্রতিবাদ করলে আজকের দিনেও তোর গায়ে কালসিটে উপহার পাস । হাজারবার পুলিশে কমপ্লেন করার কথা বলেছি কিন্তু তুই বলেছিস তোর শ্বশুর - শ্বাশুড়ি নাকি খুব ভালো , তাঁরা এটা শুনলে খুব ভেঙে পড়বেন । আমি নিজে তো দেখেছি একটু একটু করে তুই কীভাবে একটা জড় পদার্থে পরিণত হচ্ছিস ! তুই শুধু একা নয় বহু মেয়ের ঘটনা শুনেই আমার এই জিনিস তৈরী করার চিন্তা মাথায় আসে । এই দেখ এই ১০০ জনের ওপর মেয়েরা যারা নিয়েছে এটা... কোনো অসুবিধেই হবে না । "

এমনিতেই দিনের পর দিন স্বামীর ভোগ্যপণ্য হয়ে থাকতে থাকতে কেমন যেন ছিবড়েতে পরিণত হয়ে গেছি । এর চেয়ে বড় কেবল চিরনিদ্রা । তাই তার চেয়ে অন্তত কম ক্ষতিকর হবে ভেবে দেবিকার কথায় রাজি হয়ে গেলাম গতকাল । অফিসের কাজে সুবীর দুদিনের জন্য হায়দ্রাবাদ গেছে । কাল এসে পৌঁছানোর কথা ।

সুবীর এসেছে সন্ধ্যের ফ্লাইটে । সোজা বাড়ি । মা ওকে বুকে টেনে স্নেহচুম্বন গোছের একটা কিছু দিলেন । সুবীরকে দেখা মাত্র বুকটা ঢিপঢিপ করতে শুরু করে দিয়েছে । ওর বোঝার কথা নয় । অতি সূক্ষ্ম অনুভূতিতেও ওর এটা ধরা পড়ার কথা নয় । আর যদি ও সত্যি করেই আজ আবার সম্ভোগে লিপ্ত হয় তবেই কিছু ফল পাবে । নইলে অপেক্ষা । কে জানে যাত্রার ধকল হয়তো ওর মুড নাও তৈরী করতে পারে ! কিন্তু তবুও তাসাপার্টির মতো বাজনা বাজছে বুকে । কে জানে কে মনের কোনো ঘাপটি কোণায় চুপটি করে " তবা তেরা জলওয়া , তবা তেরা প্যায়ার ... তেরা ইমোশনাল অত্যাচার " গাইছে ?

না যাত্রাপথের ধকল ওর শরীরের আগুন নেভাতে পারেনি । রাতে আমার কাঁধের পাশ দিয়ে কেঁচোর মতো ওর আঙুলগুলোর বিচরণ , ব্লাউজের জড়ভরত হওয়ার পথে বিরতি আনার চেষ্টা আর চেনা সেই বাক্সটা ওর হাতে নাচতে দেখে বুঝে নিলাম প্রতি সপ্তাহের তিনদিনের রুটিন অনুযায়ী আজ আবার আমায় তার উন্মাদনার আগুন রূপের জলে নেভাতে হবে । দেবিকার কথামতো কপালের মাঝবরাবর বুড়ো আঙুল লাগিয়ে ১০ সেকেন্ড মতো ঘষে নিলাম । সুবীর ভাবল আমি প্রতিদিনের মতো কিছু একটা অজুহাত তৈরীর চেষ্টা করছি । তাই কিরকম একটা খল হেসে ঝট করে প্রস্তুত হয়ে আমার কাঁধটা ধরল । আগের চেষ্টায় যে আমার কাপড়ের বাঁধন একটুকুও আলগা হয়নি তা দেখে যেন ও ক্ষেপে গেলো । ওর নখ বড় হয়েছে কিনা জানি না কিন্তু ওর একটানে শাড়ি ব্লাউজ সমেত অনেকটা বাঁ কাধ থেকে ছিঁড়ে এলো । 

" আজ প্লিজ বাদ দাও । শরীর আর সহ্য করতে পারছে না । এভাবে তো আমি মারা যাবো ... তখন কোথায় যাবে ? নতুন বিয়ে করবে নাকি রেড লাইট ... "

ওর চোখ রাগে লাল হয়ে গেছে । একটা চড় কষিয়ে আমার শরীরকে নিংড়ানোর চেষ্টায় ব্রতী হলো । পিঠের চুলগুলো বড় অসুবিধে করে সর্বদা । ওগুলো আগেই তাই ওর সামনের দিকে করতে হয় । গোটা শরীরকে জন্তুর মত যেন খেতে চায় সুবীর । কিন্তু আমাকে খাটে ফেলে ঝাঁপিয়ে পড়ে কামড়ে ছিঁড়ে খুঁড়ে ফেলার চেষ্টা করতে গিয়েই ওর মুখ দিয়ে আর্ত চিৎকারটা শুনলাম । দেবিকা বলেছিল প্রথম ঝটকাটা ৪৪০ ভোল্টের কাছেই হবে । তাতেও না হলে বেশী হতে পারে দ্বিতীয়বারে । কিন্তু প্রথমবারের শকেই ওর অচৈতন্য অবস্থা ... ভাবলাম প্রাণবায়ুটা না ... না ঠিক আছে ... হার্টবিট, পালস আছে । থাক খানিক ঘুমিয়ে ।

পরদিন সকালে ব্রেকফাস্ট না খেয়েই বেরিয়ে গিয়েছিল ও । এরপর থেকে কথাবার্তা প্রায় বন্ধই করে দিতে লাগলো । তা করুক । ওর মা - বাবা তো আমায় মেয়ের মতোই ভালোবাসেন ! পুরুষ মানুষ তো একটু গোঁসা হয়েছে । নিজের উপলব্ধি হলেই ক্ষমা চাইবে ।

দেবিকাকে জানিয়েছিলাম ব্যাপারটা । " হ্যাঁরে তোর ওই এক ড্রপেই কাজ দিয়েছে । মানুষের শরীর থেকে এত ভোল্টের শক তৈরী হলো কী করে তাই - ই তো বুঝছি না । "

" বায়োফিজিক্সের পড়াশুনাটা তাহলে ফেলনা যায়নি কী বল ? মানুষের শরীরে কিছু না কিছু কারেন্ট সর্বদা বইছে । রাগে বা কষ্টেতে বা আরও কোনো নেতিবাচক ইমোশনাল প্রবলেমে তার পরিমাণ অ্যাম্প্লিফাই করে দেয় এই ড্রপ । মস্তিষ্কে জাস্ট ফিঙ্গারটিপ দিয়ে অ্যাক্টিভেশন মেসেজ দিতে হবে । একেবারে পিটুইটারীর মাধ্যমে সোজা হাতের প্রতিটা আঙুলের ডগায় ১ মিনিটের জন্য ৪৪০ ভোল্ট বিদ্যুৎ তৈরী করে , দ্বিতীয়বারে ৭৬২ ভোল্ট ... প্রত্যেকবারে ৩ এর বর্গমূল হারে বাড়বে । এই সলিউশন পুরো বডির ভিতরের সব অঙ্গকে ওই মুহূর্তের জন্য ইনসুলেট করে রাখে । এই সলিউশনের এফেক্ট দুদিন পর্যন্ত কার্যকরী । "

" বিগ থ্যাঙ্ক ইউ রে । পেটেন্ট নিলে পার্টি যেন পাই । "

" অবশ্যই । আপাতত জামাইবাবু গোলাপের বোকে নিয়ে দাঁড়িয়ে গেটের বাইরে । ওকে ক্ষমা করে দিস । মানেটা পরে বলবো । বাই । "

 সুবীর সত্যি যেন পুরো বদলে গেলো । আমার কাছে গোলাপ দিয়ে সেদিনই ডুকরে কেঁদে উঠলো । পায়ের কাছে বসে ক্ষমা চাইলো । সে কাকুতি - মিনতি ফেরানো যায় না । 

দেবিকার মেসেঞ্জারে পিং পেলাম পরের দিন । সাসপেন্সে রাখাটা ওর স্বভাব । 

" এটা আমার নেক্সট ইনভেনশন । একটা ড্রিঙ্ক । গরম খাওয়ার পর শরীরের সব শিরা - ধমনী জাগ্রত হয়ে মস্তিষ্কের দরজায় টোকা মারে । সব পুরোনো ঘটনার রেকর্ড লোড করার ইনস্ট্রাকশন পৌঁছায় আর তাতে এই ড্রিঙ্কের সাথে থাকা একটা বিশেষ জিনিস ডিটেইলড অ্যানালিসিস করে ব্রেনকে জানিয়ে দেয় কোনগুলো মানুষটি ভুল করেছে । সেদিন একটা কফিশপে সুবীর দাকে ডেকে সবটা জানাই তোর ব্যাপারে । আর আড়ালে ওর কফির বদলে এই ড্রিঙ্কটা দিই । এর ফ্লেভারটাও কফি ছিলো আর ব্ল্যাককফির মতোই কালার তাই ধরতে পারেনি । রিসেন্ট ঘটনার ওপর কাজ খুব তাড়াতাড়ি হচ্ছে এখন । আরও কিছু রিসার্চ বাকি । থ্যাঙ্ক ইউ বলতে হবে না । শনিবার " সেফটি ভোল্ট " সলিউশনটার পেটেন্ট নেওয়া উপলক্ষে পার্টিতে আসিস দুজনেই । "

এইভাবে আমার জীবনটা পাল্টে দেওয়ার জন্য দেবিকাকে কী বলে ধন্যবাদ দেবো কে জানে ! আমার মতো কত মেয়ের বিবাহিত জীবন পুরোপুরি পাল্টে দিচ্ছে ও নিজের তৈরী এই আবিষ্কারে । মনের স্পেশ্যাল একটা কামরা ওর জন্য থাকবে সর্বদা ।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract