শেষ দেখা

আজ থেকে এক বছর আগে আমার সাথে দেখা হয় প্রিয়ার । প্রথম বার দেখেই আমার ওকে খুব ভালোলাগে , আমরা একসাথে একই অফিস এ কাজ করতাম ।

রোজ আমাদের দেখা হতো কথা হতো । এই ভাবেই আমাদের বন্ধুত্ব আস্তে আস্তে ভালোবাসতে পরিণত হয় । দুটো মন কাছাকাছি আসে ...

এই ভাবেই আমাদের দিন কাটতে থাকে ।

অনেকে আমাদের দেখে হিংসা করতো । প্রতি রবিবার আমি আর প্রিয়া আমার বাইক -এ করে ঘুরতে যেতাম ।

আমি আর প্রিয়া একে অপরকে চোখে হারাতাম ।আমার অফিস আস্তে একটু লেট হলে প্রিয়া আমাকে বার বার কল করতো ।

আমি বলতাম ওকে যে আমার যদি কিছু হয়ে যায় তাহলে তুমি কি করবে । ও এই কথা শুনে খুব রাগ করতো , কেঁদে ফেলতো ।

আমিও ভাবতাম যে প্রিয়া ছাড়া আমি বাঁচবো কি ভাবে ।

কিন্তু সত্যি সত্যি আমাদের এই সুখের সময়ে এক দিন ভাঙ্গন এলো ।

এক দিন আমাদের বস আমাদের বললো যে অফিস থেকে পুরো টিম কে দিঘা নিয়ে যাবে .....

আমি আর প্রিয়া যাওয়ার জন্য আপত্তি করলেও বস আমাদের কোনো কথাই শুনলনা । বললো যে সবাই কে যেতে হবে ।

যাক আমরাও রাজি হলাম । ভেবেছিলাম যে দুটো দিন আমরা এক কাটাতাম । যাইহোক সবার সাথে না হয় ওখানেই কাটাবো ।

ঠিক হলো যে রাত নয়টার সময় অফিস থেকে বাস ছাড়বে । আমি বাস ধরবো বালি হল্ট থেকে । আর প্রিয়া বাস এ উঠবে ডানকুনি থেকে ।পরের দিন যাত্রা ।

আমিও বাড়ি গিয়ে ব্যাগ গুছিয়ে নিলাম ।

পরের দিন আমি সন্ধ্যা বেলায় সাতটার সময় স্টেশন এ গিয়ে দেখি যে ট্রেন চলছেনা .....কোথায় নাকি মালগাড়ি উল্টে গেছে তাই দুই ঘন্টা ট্রেন চলবেনা ।

আমার তো মাথায় হাত । প্রিয়া কে কল করে বলে দিলাম যে আমার লেট হবে । কারণটা কি বললাম না, না হলে ও চিন্তা করবে ।

আমি সঙ্গে সঙ্গে বাড়ি গিয়ে বাইক নিয়ে বেরিয়ে পরি বাই রোড । তখন প্রায় সাড়ে সাতটা বাজে । আমি জোরে গাড়ি চালাচ্ছি । ঠিক যখন কোন্নগর পেরোছি, তখন হঠাৎ একটা মোটর ভ্যান আমার বাইক এর সামনে এসে গেল আর আমি পাস্ কাটাতে গিয়ে পরে গেলাম ।

কিছুক্ষন চোখের সামনে সব কিছু অন্ধকার হয়ে গেলো ....সব যেন ধোয়া চারিদিকে । তার পর আমি দেখতে পেলাম আমার হাত ঘড়ির দিকে । আর বেশি সময় নেই আমাকে বাস ধরতে হবে । তখনি আমি আবার বাইকে উঠে জোরে চলালাম । কোনো রকমে আমি যখন পৌঁছলাম বালি হল্টে, দিয়ে দেখি যে অফিস বাস ঢুকছে ...একটু শান্তি পেলাম ...তাড়াতাড়ি উঠে পড়লাম বাসে।এরপর শরীর ভালো লাগছিলো না ।

আমি কারোর সাথে কোনো কথা না বলে পিছনের একটা সিটে গিয়ে বসে পড়লাম । হাতে পায়ে অসম্ভব ব্যথা করছিলো । প্রিয়া কে কল করতে গিয়ে দেখি যে মোবাইল নেই পকেটে ...হয়তো সেই সময় পরে গেছে । মন খারপ করে প্রিয়ার জন্য অপেক্ষ করতে থাকি । ওকে সব কথা বলতে হবে কতক্ষন ওর সাথে কথা বলিনি ।

এর মধ্যে ডানকুনি ঢুকলো আমি দেখতে পেলাম যে প্রিয়া দাঁড়িয়ে আছে । ওকে দেখে আমার মনটা আনন্দে ভোরে গেলো । ও উঠলো বাসে আমি পিছন থেকে হাত নেড়ে ওকে ডাকলাম । ও আমার দিকে দেখলো কিন্তু যেন আমাকে দেখতে পায়নি, এমন ভান করে চারিদিকে তাকিয়ে একটা জানলার ধরে সিটে বসে পড়লো । আমার খুব কষ্ট হলো আমি ভাবলাম ও কী রাগ করেছে । দেখি ওর পাশে অনিল বসলো । ওরা কথা বলছে আমি বুঝতে পারলাম । আমার রাগ হলো , গিয়ে ওকে ডাকলাম ও যেন শুনতেই পেলোনা ...আমার কান্না পেলো । বাসের গেটে দাঁড়িয়ে আমি কেঁদে ফেলাম । তারপর শুনতে পেলাম যে প্রিয়া কাঁদছে । আমি তাড়াতাড়ি গেলাম ওর কাছে ...দেখি ও হাউ হাউ করে আমার নাম নিয়ে কাঁদছে ....ওর কানে ফোন । কি খবর পেলো ও ...আর আমার নাম নিয়ে কাঁদছে কেন , আমি তো এখনই আছি । আমি ওকে ধরতে গেলাম কিন্তু আমি ওকে ধরতে পারলামনা । আশ্চর্য হলাম , আমি আবার চেষ্টা করেও ওকে ধরতে পারলাম না ।

এবার আমি বুঝতে পারলাম । কেন প্রিয়া আমাকে দেখতে পাইনি...কেন ও আমার কথা শুনতে পাইনি । কারণ আমি যখন বাইক থেকে পরে যাই তখনি আমি মারা যাই ....আমার আত্মা শুধু ছুতে এসেছে প্রিয়া কে শেষ বারের মতো দেখার জন্য । তারপর .........আস্তে আস্তে প্রিয়ার কান্না মিলিয়ে গেলো দূরে ........আমিও হারিয়ে গেলাম ওর জীবন থেকে ................