Riya Singh

Abstract Classics

4  

Riya Singh

Abstract Classics

শেষ ঠিকানা তুমি (১৬)

শেষ ঠিকানা তুমি (১৬)

5 mins
502


অয়ন্তিকা কে চুপ করে থাকতে দেখে অরিন্দম আর কথা বাড়ালো না,ও জানে ও যা করেছে এইসব ই সহ্য করতে হবে ওকে। এছাড়া উপায় নেই যে!


আমি কোথায় শোবো? 


অয়ন্তিকার উদ্ভট কথা শুনে অরিন্দম বললো,


অফকোর্স বিছানায়। চিন্তা নেই আমি সোফাটাতে শুয়ে পড়ছি। আজকের দিনটা ম্যানেজ করে নাও এরপর থেকে আমি স্টাডি রুমে শিফট করে ওখানে ই শোবো তোমার অসুবিধে হবে আজকের দিনটা।


দুটো মানুষের ই ঘুম আসেনি দুজনের চোখের পাতায় ঘুম ধরা দেয়নি আজ। একজনের নতুন জায়গা নতুন ঘটনায় মন এলোমেলো আরেকজনের নিজের করা কাজগুলো তে কিরকম অনুশোচনাবোধে ভুগতে থাকা মন। আজকের ঘটনা দুটো মানুষের জীবনে বড় কিছু বলল এনে দিলো, না চাইতেও একটা সম্পর্ক জুড়েছে যেটা জীবনের সবথেকে বড় সিদ্ধান্তের মধ্যে পড়ে।


অয়ন্তিকা পরের দিন যখন ওর বাড়িতে গেল ওর মা স্বাভাবিক ভাবেই ব্যাপারটা মেনে নিলেন না, বরং মেনে নেওয়াটাই অস্বাভাবিক। কোন বাবা-মাই চাইবেন না তাদের মেয়ে তাদের কে না জানিয়ে বিয়ে করে তাদের বাড়িতে এসে ঢুকছে তাদের অনুমতি আর আশীর্বাদ চাওয়ার জন্য।


তুই এসব কি করে এসেছিস? এইজন্য তুই বিয়ে করতে চাইতিস না? এবার আমি স্পষ্ট বুঝতে পারছি কেন সেদিন আমাকে অপমান করালি , আমি বুঝেছিলাম একদিন এইভাবে মান সম্মান ধুলোয় মিশিয়ে তুই আমাদের মাথাটা নীচু করে দিবি। কিন্তু কে কার কথা শোনে তোর বাবা আজ যদি আমার কথা মাথায় নিতো এইসব দেখতে হতো না।


অনবরত মায়ের এই কথা শুনে অয়ন্তিকার মুখটা নিচু হয়ে গেল,ওর মুখটা থমথমে হয়ে আছে। তাই অরিন্দম এইভাবে ওর চুপ থাকাটা সহ্য করতে না পেরে বললো,


আপনি কিন্তু আমার স্ত্রী কে অপমান করছেন আমি জানি না আপনাদের মধ্যে আগে কি হয়েছে ? পারিবারিক ব্যাপার তো তাই কিন্তু এই মুহূর্তে আমি আপনার মেয়ের স্বামী ,সেটা আপনি মানুন আর না মানুন। ওর ভুল হয়েছে তাও আমার জন্য আমিই জোর করার পর বিয়েটা হয়েছে তাই যা বলার আমাকে বলবেন ওকে নয়।


আমি ভেবেছিলাম আপনারা আপনাদের মেয়েকে বিশ্বাস করেন সবটা শোনার পর ওকে মেনে নেবেন যেহেতু দোষী আমি কিন্তু এখন যাই করলেন। থাক অনেক হয়েছে অয়ন্তিকা আর দরকার নেই এখানে থাকার নিজের জিনিসপত্র বলতে দরকারি সব নাও আমি গাড়িতে ওয়েট করছি, তোমার বাবার অপেক্ষা করো না আমার পক্ষে তোমাকে অপমানিত হতে দেখা সম্ভব নয়। 


অয়ন্তিকা চোখমুখ মুছে নিজের সবকিছু নিয়ে বেরিয়ে আসার সময় পিছন ফিরে নিজের এতো দিনের চেনা বাড়িটাকে কেঁদে ফেললো, অরিন্দমের সাথে গাড়িতে উঠে বসার পরে বললো,


চলুন আমি আর আসবো না এখানে তবে আবার ও বলছি এসবের জন্য আপনিই দায়ী।


সেদিনের পর থেকে দুটো মানুষের ভিতরের সম্পর্কটা যতটুকু সামলে উঠেছিল সেটাই এখন অস্বাভাবিক ভাবে ভাঙতে শুরু করেছে। দুজনের মধ্যে কোনরকম কথাবার্তা নেই, একরকম হয়ে বিয়ের কটা মাস পরেও।


এরমধ্যে অরিন্দম হুট করেই কাজের মধ্যে আরো নিজেকে রেখে দিতে শুরু করেছে, আজকাল অফিসে দিন পার করে কদিন ছাড়া বাড়ি আসে নিজের মতো থাকে। অনু কলেজের ফাইনাল চলছে পরীক্ষা সামনে তারমধ্যে কাছের দুটো মানুষের এইরকম গা ছাড়া ভাব দেখে একদিন অরিন্দম কে জিজ্ঞেস করলো,


তোদের মধ্যে সবকিছু ঠিকঠাক আছে তো দাদাভাই? সত্যি করে বল আমাকে কিছু লুকিয়ে যাস না।বোন হই তো তাই জিজ্ঞেস করছি। দিভাই কিরকম গুম মেরে থাকে তুইও বাড়ি ফিরিস না সময়মতো।কি চলছে বলতো?


নিজের দোষেই সবকিছু, শাস্তি তো দোষ করলেই পেতে হয় সেটাই ভোগ করছি অপেক্ষায় আছি এই শাস্তি কবে শেষ হবে? ( অরিন্দম)


মানে কিসের শাস্তি? খোলসা করে বল দেখি। এরকম অর্ধেক করে বলবি না।বুঝতে প্রচুর অসুবিধা হয়।(অনু)


আসলে তোর সেদিন রাগের মাথায় তাকে ডেকে বিয়ে করেছিলাম এখানে ওর কোনোরকম দোষ নেই। তারপর তো...


সবকিছু শোনার পরে অনু একটাই কথা বললো,


তোর থেকে এগুলো আশা করিনি রে ,অন্তত ভেবে ভেবে তো দেখবি।রাগ করে হুটহাট করে সফট একাই ভাবিস অন্যদিকে মানুষ এর কিছু চাওয়া থাকতে পারে তো!


সরি সরি আমি সত্যি তখন রাগের মাথায় সবটা করেছি রে। এখন তো ভুলটা মানছি সেই থেকে ওর মুখোমুখি হতেও কিরকম লাগছে একটু হেল্প কর অন্তত। তবে যদি ও না চায় ডিভোর্স দিতেও রাজি আছি। কিন্তু আমি চাই ও আগের মতো হয়ে যাক। 


অরিন্দম এর উপর রাগ দেখিয়ে অনু বলে,


বিয়েটা ছেলেখেলা নয়? তুই বুঝতে পারছিস কতটা গুরুত্বপূর্ণ কারোর কাছে! কখন বললি করবো আবার বলছিস ছেড়ে দেবো। সবকিছু কেন একাই করে ফেলিস।এই অভ্যাসের জন্য এইসব হয়েছে আবার কোন ভুল করিস না।


তো কি করবো? বল এইভাবে চলতে থাকবে আজীবন? (অরিন্দম)


সবার আগে দির সাথে কথা বলার চেষ্টা কর, ভুলগুলো শুধরে নিতে পারবি তাহলে। সেটাই দেখ।দি রেগে আছে মা বাবা ভুল বুঝেছে বলে ওটাই আগে ঠিকঠাক করে দেখ।(অনু)


ঠিক বললি।(অরিন্দম)


আমি ঠিক ই বলি একটু পর দি ফিরবে একসাথে বসে খেয়ে নিস তারপর আলাদা করে কথা বলে দেখ হয়তো কিছু সমাধান পেয়ে যাবি।


বোনের কথাগুলো মন দিয়ে শুনে অয়ন্তিকর অপেক্ষা করাটাই ঠিক মনে হলো অরিন্দমের। অয়ন্তিকা ফিরে এসে দেখলো অরিন্দম খাবার টেবিলে খাবার সাজিয়ে বসে আছে, ও ফ্রেশ হয়ে এসে খেতে বসার সময় একবার ওর দিকে তাকিয়ে দেখলো তারপর চুপচাপ মুখ নিচু করে খেতে শুরু করে দিলো,


বলছি যে! আমি অনেক কষ্ট দিয়েছি তোমাকে তুমি যদি যা শাস্তি দিতে চাও দিতে পারো। আমি মানছি ভুল হয়েছে কিন্তু এইভাবে তো চলতে পারে না তা চাইবে তাই হবে দরকার হলে কখনো মনে হয় যদি এই সম্পর্ক তে থাকা সম্ভব হয়না বলে দিও। (অরিন্দম)


মানুষ তার কাছের মানুষের উপরেই এইধরনের রাগ বা অভিমান করে অরিন্দম। আমি কখনো বলিনি এই সম্পর্ক থেকে মুক্তি পেতে চাই বাকিটা তুমি বুঝতে পারবে নিজেই।


অয়ন্তিকা বলে চলে যাওয়ার পর অরিন্দম কিছুটা থমকে ওখানে ই বসে থাকলো, কিছুক্ষণ পরে ওর মুখে একটা হাসি দেখা গেল। ও বুঝতে পেরেছে অয়ন্তিকার কথার মানে,ও তাহলে কাছের মানুষ তবেই তো অয়ন্তিকার রাগ ওর উপরেও দেখাচ্ছে। সত্যি তো এতো দিন কেন বোঝেনি?


নিজের মনেই বলে উঠলো,


কাল থেকে তোমার মান ভাঙানোর চেষ্টা শুরু করবো ,দেখি এবার ভালোবাসি না বলে থাকতে পারো।


অয়ন্তিকা ঘুম থেকে উঠে দেখলো অরিন্দম ওর সোফাতে শুয়ে আছে। এতোক্ষণে তো ওর অফিসে থাকার কথা। কিছু না ভেবেই নিজের মতো উঠে দেখি হতে চলে গেল।


এসে দেখলো আজ অরিন্দম ফ্রেশ হয়ে একসাথে খেতে বসলো,


আজ আমি তোমাকে আনতে যেবো,কখন শেষ হবে একটু বলো ।


অরিন্দমের কথা শুনে অয়ন্তিকা বললো,


আমি নিজেই নিজের টা দেখতে পারি । কাউকে যাওয়ার দরকার নেই।


অরিন্দম কিছু বললো না শুধু হাসল।ও জানে ওকে কি করতে হবে, অফিসে গিয়ে নিজের কাজ সেরে অয়ন্তিকার নার্সিংহোমের দিকে গিয়ে পৌঁছে রিসেপশনে ওর কথা জিজ্ঞেস করতে বললো, অয়ন্তিকা এখন একটু ব্যস্ত। সাধারণত এই সময়েই বেরোয় তবে আজ একটু পেশেন্ট বেশি থাকায় দেরি হবে। অয়ন্তিকার সব পেশেন্ট দেখার পর একজন এসে বললো, এক ভদ্রলোক দেখা করতে এসেছে। ওর মাথায় এটাই ঢুকছে না কে আসতে পারে?


চলবে ...



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract