Nityananda Banerjee

Classics Inspirational

4  

Nityananda Banerjee

Classics Inspirational

সংশপ্তক ( বিংশতিতম অধ্যায় )

সংশপ্তক ( বিংশতিতম অধ্যায় )

4 mins
406


বিংশতিতম অধ্যায়।

টাটা মেডিক্যাল সেন্টার একটি বিখ্যাত হসপিটাল। মাননীয় শিল্পপতি শ্রীযুক্ত রতন টাটা মহাশয় বাম আমলে এই নন-প্রোফিট বেসড ক্যান্সার চিকিৎসালয়টির উদ্বোধন করেন । এখানে প্রাইভেটেও চিকিৎসা করা হয় অত্যন্ত ন্যায়মূল্যে। গরীবদের জন্য তো ফ্রি ট্রিটমেন্ট। এছাড়াও এখানে অত্যন্ত উন্নতমানের চিকিৎসা, ল্যাবরেটরি রয়েছে। আর রয়েছেন কয়েকগুচ্ছ বিশেষজ্ঞ। T I F R থেকে ইমেইলে যখন জানানো হল পেশেন্টকে টি এম সি কোলকাতায় দেখাতে নীলেশবাবু আর দেরী করেননি। সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য কথা হল এখানে বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশে চিকিৎসা দেওয়া হয় । দ্বাররক্ষী থেকে স্বনামধন্য ডাক্তারবাবুরাও অত্যন্ত নম্রতার সঙ্গে রোগীর প্রতি আচরণ করেন । আর খরচ সরকারি হাসপাতাল ছাড়া যে কোন স্থানের চেয়ে ভীষণ কম । নিতান্ত প্রয়োজন না হলে অহেতুক কোন ল্যাব-টেস্ট দেওয়া হয় না। সেদিক দিয়ে দেখলে নীলেশদের খরচ অনেক কমে গেছে। আর দীপু যেহেতু এখন অনেক ভালো আছে সেজন্য রুটিন টেস্টটুকু ছাড়া অন্য কিছু নেই। সবচেয়ে খরচসাপেক্ষ টেস্ট RT-PCR on BCR-ABL Gene যেটা বিভিন্ন ল্যাবরেটরি ভিন্ন ভিন্ন ভাবে অন্তত বিশ বাইশ হাজার টাকা নিত; সেই খরচও এই হসপিটালের নিজস্ব ল্যাবে মাত্র সাড়ে আট হাজার টাকা। আবার টেস্টিং মেশিনটি এতই আধুনিক ও উন্নত যে এগুলো মাইনাস জিরো রিডিঙও দেয়। আশার কথা অবশ্যই। নীলেশবাবুরাও এ নিয়ে ভীষণ খুশি। এই RT-PCR test ডাক্তারবাবু বলেছেন বছরে একবার করালেই যথেষ্ট।

এআনে অন্যান্য বিভাগও রয়েছে তবে সবক'টিই ক্যান্সারজড়িতদের জন্য ।

হরিপদ মোড়লের শরীরটা ভালো যাচ্ছে না । জেল থেকে ছাড়া পেয়ে বাড়ি আসার পর থেকেই কেমন যেন হয়ে গেছে । মাথা ঘোরানো, খাবার ইচ্ছে না থাকা ইত্যাদি ধরেছে। 

একদিন নীলেশবাবুর কাছে এসে বলল - নীলু! একবার আমাকে কলকেতায় নিয়ে যাবে ? এই মানে - তোমাদের তো এখন কলকেতা জলভাত। তাই বলছিলাম কোন ভাল ডাক্তারকে ধরে যদি আমার তিকিচ্ছাটা করিয়ে দিতে ? এখানের ডাক্তাররা তো কিছুই ধরতে পারছে না। মুখে বলে যাচ্ছে আমার শরীরে নাকি রক্তই তৈরি হচ্ছে না। 

নীলেশবাবু বললেন - বেশ , সে না হয় নিয়ে যাব । কিন্তু খরচ হবে বেশ ।

বিমলা এসে বলল - তা হোকগে। তুমি ওকে নিয়ে যাও। ও সব খরচ করবে।

নীলেশবাবু জানেন ওদের বাড়ি থেকে বিতাড়িত হয়ে বিমলা এখন হরিপদর রক্ষিতার কাজ করে। তাই মোড়লের সবকিছুতেই নাক গলায় ।

তিনি হরিপদকে বললেন - ঠিক আছে; আমরা তো দু'একদিনের মধ্যে কলকাতায় যাচ্ছি না। তুমি যদি চাও তো বল কবে যাবে ?

কালই চল । হরিসদ মোড়ল বলল। - বোধ হয় সময় ঘনিয়ে এসেছে ।

 নীলেশবাবু বললেন - তাহলে থাক। বুঝতেই যখন পেরেছ সময় ঘনিয়ে এসেছে; তখন শুধু শুধু কয়েক লাখ খসিয়ে কি হবে ?

- না না ভাইপো। খসানোর জন্য বলছি না। আমি দেখতে চাই আমার রোগটা আসলে কি ? টাকা যাই খরচ হোক, যদি নাও বাঁচি তবু তো জানব সারাজীবন ধরে যা যা করেছি তার কতটা ভালো ছিল আর কতটা খারাপ ।

- আমার তো মনে হয় খারাপটাই বেশি। 

নীলেশবাবু বললেন ।

- তাহলে কালই চল । দেখিয়ে নিয়ে আসি।

হরিপদ রাজী হল । বিমলা বলল - আর আমাকে সঙ্গে নেবে না বুড়ো ?

হরিপদ বলল - চুপ কর বিমলি। রাঘবের মা শুনলে তোর বাপান্ত হবে। সঙ্গে তো ওইই যেতে চাইবে - তাই না ?

নীলেশবাবু বললেন - তাহলে ওই কথাই রইল। তুমি লাখখানেক টাকা নিয়ে যাবে কিন্তু। নইলে ওখানে ফ্যাসাদে পড়বে। আমার মনে হচ্ছে তোমারও ক্যান্সার জাতীয় কিছু হয়েছে।

হরিপদ আঁতকে উঠল । 

- অমন বল না নীলু। পাপ না করলে ওসব হতেই পারে না।

- এটা পাপ পূণ্যের বিচারে হয় না । এটা ব্যাধি। মারণ-ব্যাধি।

ওরা কলকাতায় গেল। ডাক্তারবাবু দেখলেন। ইমারজেন্সি ব্লাড টেস্ট হল । হিমোগ্লোবিন ৪.৩, প্লেটলেট মাত্র ৫০০ , WBC 2000 , R B C প্রায় নেই। 

ডাক্তারবাবু বললেন - এনিমিয়া।

হরিপদ বলল - ভালো ভালো খাবার আর কুলেখাড়ার রস খাব তিনবেলা। তাহলেই ঠিক হয়ে যাবে । 

সাউথ ইণ্ডিয়ান ডাক্তার । কিছুই বুঝলেন না। নীলেশবাবুকে বললেন - ভেরি সিভিয়ার এপ্লাস্টিক এনিমিয়া। সারভাইভেল ম্যাক্সিমাম এ ফিউ মান্থস । তাও যদি এখনই চিকিৎসা করানো হয়। এডমিশন নিতে বললেন । চার পাঁচ বোতল ব্লাড এখনি দিতে হবে । নইলছ যে কোন সময় যে কোন স্থানে হ্যামারেজ শুরু হয়ে যাবে। আর তা হলে রোগীর মৃত্যু নিশ্চিত।

নীলেশবাবু প্রমাদ গণলেন । কেন যে বাহাদুরি দেখিয়ে আনতে গেলাম।

হরিপদকে বললেন - ডাক্তারবাবু তোমাকে এখনি ভর্তি হয়ে যেতে বলছেন। রক্ত চাপাতে হবে।

- আমার হয়েছেটা কি যে ভর্তি হব ? ও বাবা নীলু, চল বাড়ি যাই। আমার তিকিচ্ছার নিকুচি করেছে।

ওরা ফিরে এল । তার দুদিন পর হরিপদর অবস্থা করুণতম হয়ে গেল । 

ভুল বকছে হরিপদ । জীবনে বহু পাপ করেছি। অমন সতীসাধ্বি মেয়েকে কটুকথা বলেছি। বুড়ো বয়সে বিমলিকে নিয়েছি। তাই তো , তাই তো এমন হল ।

হঠাৎ হরিপদর কান বেয়ে রক্তক্ষরণ শুরু হল । রক্তের ধারা বয়ে যাচ্ছে। আর হরিপদ সেই স্রোতে ভেসে চলেছে অনির্দিষ্ট উদ্দেশ্যের দিকে।

বিমলার চোখে মুখে প্রশান্তি। কি ছলচাতুরি করে ওকে নীচে নামিয়েছে বুড়ো। আর তো পথে পা দেওয়ার উপায়টুকুও রেখে গেল না। হরিপদর ধর্মপত্নী কাঁদতে কাঁদতে নীলেশকে বলল - বাবা, আমার একি করলে ?

নীলেশবাবু অপরাধীর মত চেয়ে রইল । - ও খুড়িমা ! ডাক্তারবাবু দেখেই বলে দিলেন আর কিছুদিন। ওর শরীরটা যে রক্তহীন হয়ে গেছল। 

- তাহলে এই রক্তের বান কোথা থেকে এল। কলকেতা খেয়ে নিল আমার সিঁদুর। ও মা গো ....

নীলেশবাবু বললেন - এপ্লাস্টিক এনিমিয়ায় কেউ বাঁচে না, বাঁচতে পারে না। বয়স্কদের বাঁচা তো দুর্ভাবনা মাত্র ।

হরিপদ গত হল । সেই সঙ্গে গাঁয়ের কূটকচালিগুলোও বিশ্রাম পেল।

নীলেশবাবু আফশোষ করলেন কলকাতা যাবার জন্য। হায়, যদি না নিয়ে যেতামৎ! বোধ হয় যাতায়াতের ধকল সইতে পারেনি।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Classics