Nityananda Banerjee

Horror Crime Thriller

3  

Nityananda Banerjee

Horror Crime Thriller

আকাশের রঙ ফ্যাকাশে

আকাশের রঙ ফ্যাকাশে

6 mins
156


একশত ছয়তম অধ্যায়

পত্রটি লেখা হয়েছে বড়দাকে সম্বোধন করে ।

মান্যবর শ্রীযুক্ত উৎসব রায়চৌধুরী মহাশয় সমীপেষু,

আমি শ্রীহীন বীরেশ্বর রক্ষিত গতকাল রাত্রে আপনাকে যেভাবে জ্বালাতন করেছি তার জন্য আপনার নিকট ক্ষমাপ্রার্থী । অবশ্য বলতেই পারেন আমার জীবদ্দশায় আপনাকে এইরূপ জ্বালাতন তো তুচ্ছ ; যোগাযোগ হওয়া ইস্তক আপনাকে অজস্রবার হেনস্থা করেছি ।

           মরণটা আমার কাছে প্রত্যাশিতই ছিল । আমার ভাই - থুড়ি - ভাই বলে তাকে মহত্ব দিতে পারব না ; আমার মৃত্যু যে তারই হাতে বরাদ্দ ছিল - এটা আমি সেদিনই জেনে গেছি যেদিন সে আমার ছোট মেয়ে রূপাকে জবরদস্তি তার কন্যা বলতে বাধ্য করেছিল । আমি গোপার প্রতি যে অবিচার করেছি তার মার্জনা হয় না ; রূপাকে যে আপন সত্তা থেকে বিসর্জন দিয়েছি, তার জন্য আমি নিজেকেই ক্ষমা করতে পারছি না । সুতরাং তাদের সম্মুখে উপস্থিত হবার অদম্য ইচ্ছা থাকলেও কি জানি কেন তা করতে পারছি না ।

            আপনাকে আমার বড়ই আপনজন বলে মনে হয়েছে । আমি জানি আমার ভবিতব্যই এমনই যে , যে গাছের ডাল ধরে বাঁচতে চেয়েছি, সেই ডালটাই অকারণে ভেঙে পড়ে গেছে । বেঁচে থেকে তো কারও উপকারে আসিনি ; বরং অপকারই করে গেছি । সেইজন্য আপনার মহদাশয়কে স্বীকার করে মুক্তি পেতে চাই । কিন্তু এখনও সেই বাধা একটাই - আমার অসৎ কর্মের দম্ভ ওই বাড়ীটা ।

            আমার জামাই বাবাজীবন - মানে আপনার অনুজ ভাই পুলককে বলতে পারি না কারণ তার জীবনের মোড় আমিই ঘুরিয়ে দিয়েছি । তবু বলতে দ্বিধা নেই, গোপা তার বহু জন্মের পূণ্যফলে পুলকের মত ব্যক্তিত্বকে অনেক দেরীতে হলেও পেয়েছে। রূপা তো তাও পায়নি ।

         আমার মনে হয়েছে যত নষ্টের মূলে আমার অহংকারের সাক্ষ্য ওই প্রাসাদোপম বাড়ী - যা সকলে ইতিমধ্যে জেনে গেছে -' নষ্টনীড় ' ।

         সুতরাং আপনার নিকট বিনীত নিবেদন আপনি যথাযথ ব্যবস্থা নিয়ে আমার পরিবারকে রক্ষা করবেন।

ইতি

ভবদীয় বীরেশ্বর রক্ষিত প্রায়শ্চিত্তপ্রার্থী ।

বড়দার চিঠি পড়া শেষ হল । তিনি বললেন - বড় ক্লান্ত লাগছে । একটু বিশ্রাম নিয়ে নিই । তোমরা সকলে চিন্ত ভাবনা শুরু করে দাও ।

তিনি শুয়ে পড়লেন । আমরাও যে যার মত কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম। বাবলুদা বলল - আজ বড় আনন্দের দিন। যাই দেখি বউ রান্নাবান্নার কি ব্যবস্থা করল ।

আমি বললাম - বাবলুদা , বউদিদি যা খুশী করুন । তুমি এখানে বড়দার পাশে বসে থাক । উনি ঘুম থেকে উঠলেই আবার পরিকল্পনা করতে হবে ।

রূপা বলল - বাবার ভেতরে যে এমন মহান ব্যক্তিত্ব লুকিয়ে ছিল - আগে জানলে কত ভালো লাগত ।

গোপার বুক থেকে একটা চাপা দীর্ঘশ্বাস বের হল । সুনেত্রার বয়স কম হলে কি হবে বড়দাদুর এই পরিচয় পেয়ে ধন্য ধন্য করতে লাগল । আর বুকুন ? সে তো জেঠুমণির ভক্ত ! সেও বেশ গর্ব বোধ করতে লাগল । শুধু আমি আমার ভাগ্যকে ' সুস্বাগতম ' বলে ঈশ্বরকে একটি ভক্তিপূর্ণ প্রণাম নিবেদন করলাম।

বাবলুদা বলল - শোন হে ছোকরা ! তোমরা তো আমাকে এখানে বসিয়ে দিয়ে কেটে পড়ছ ; রান্নির যোগাড় দিতে পারবে তো ?

আমি এই বয়সেও কথায কথায় তার মুখ থেকে ' ছোকরা ' ডাক শুনে রেগে গেলাম। বললাম - বলি তোমার তো বয়স কম হল না ; তোমাকে যদি 'ছোঁড়া' বলে ডাকি রাগবে না ?

ওমা ! কোথায় রাগ ! হাসতে হাসতে বাবলুদা বলল - তোমার দেখছি ছোকরাগিরি এখনও কাটেনি, তাই বলি আর কি ! তবে যদি মানা কর নানা ভাবে তোমাকে আমি উত্যক্ত করব বলে দিলাম।

- তোমার যা খুশী কর ; যাও তো রান্নার যোগান দিয়ে এস । আমি ততক্ষণ বড়দার কাছে থাকি ।

বাবলুদা বলল - বাঁচালে ভাই । একা একা কি বসে থাকা যায় ? তার চেয়ে সেই ভালো যাই বউয়ের মুখ ঝামটা খাইগে' ।

গোপা এবং রূপা এসে বসল । বলল - তোমার যদি কাজ থাকে, আমরা বসছি, যাও সেরে এস ।

আমি চলে এলাম । ত্রিশ তারিখ পেরিয়ে গেছে ; এখনও একাউন্টে পেনশন ঢোকেনি । চিন্তায় পড়লাম । খেয়ালই ছিল না ; এটা মার্চ মাস । এ মাসে পেনশন আসবে না । সেই এপ্রিলের দুই বা তিন তারিখে আসবে ।

রূপা বলল - জামাইবু কি কিছু ভাবছেন ?

আমি হাঁ বা না কিছু না বলে ধীর পায়ে বারান্দায় এসে দাঁড়ালাম । গোবর্ধনকে এত তাড়াতাড়ি গোরু ছাগল মাঠ থেকে আনতে দেখে বললাম - কি রে ! আজ সকাল সকাল গোরুগুলো নিয়ে চলে এলি যে ?

- আর বলেন না দাদাবাবু ! ছেলেটার ভীষণ জ্বর । ভুল বকছে । বউটা সামলাতে না পেরে আমাকে ডাকল । আপনাদের কাছে বরফ আছে ?

গোপা ফ্রিজ থেকে বরফ এনে গোবর্ধনকে দিয়ে বলল - নিয়ে যাও , মাথায় চেপে ধর । একটু ঠাণ্ডা হলে আবার তুলে নিয়ে পরে আবার চাপিয়ে দেবে ।

আমাকে বলল - তুমি দত্ত ডাক্তারকে নিয়ে ওর বাড়ী যাও ।

আমি ডক্টর দত্তকে নিয়ে গোবর্ধনের বাড়ীর দিকে চললাম।

গিয়ে দেখি ছেলে নিথর পড়ে আছে । ডাক্তার দত্ত বললেন - ক'দিন থেকে জ্বর হয়েছে ?

গোবর্ধনের বউ বলল - দিন সাতেক তো বটেই ।

- সাত দিন ? তোমরা চুপচাপ বসে আছ ? ছেলের টাইফয়েড হয়েছে মনে হচ্ছে । যাক । ওষুধ পাতি দিয়ে যাচ্ছি । সারতে সময় লাগবে । খবর দিও ।

গোবর্ধনের ছেলেকে দেখে আমি ডাক্তারবাবুর সঙ্গে ফিরে আসছি । বাবলুদাকে দৌড়াতে দৌড়াতে আসতে দেখে আমার বুকটা ধস করে উঠল ।

- সর্বনাশ হয়ে গেছে । সর্বনাশ হয়ে গেছে ।

আমি কিছু বলার আগেই সে আমাকে পাশ কাটিয়ে দৌড়ে চলে গেল। ডাক্তার বাবুর নিকট বিদায় নিয়ে আমিও বাবলুদাকে অনুসরণ করলাম ‌।

দেখি বাবলুদা নিজের বাড়ী না ঢুকে উল্টোদিকের ওর শ্বশুরবাড়ীতে ঢুকে পড়ল । সেখানে তখন জ্যোৎস্নার গলা ফাটানো চিৎকার শোনা যাচ্ছে ।

- মা তুমি এমন করলে কেন ?

বুঝে গেলাম ওর মা অর্থাৎ মীনাক্ষী কাকিমারই কিছু একটা হয়েছে । দ্রুত পা চালিয়ে ঢুকে দেখি কাকিমা গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলছেন । আত্মহত্যা না মেরে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে - বুঝলাম না ।

বিষয়টি পুলিশকে জানাতেই হয় । যথারীতি পুলিশে খবর দিয়ে বাবলুদাকে প্রশ্ন করলাম - কি করে হল ?

বাবলুদা বলল - তুমি যেখানে আমিও সেখানে । কিছু বুঝতে পারছি না । পুলিশে খবর দেওয়া হয়েছে , দেখি ওরা কি বলে ?

বাবলুদা বডি নামিয়ে নিতে চাইছিল । আমি বাধা দিলাম - যা করার পুলিশ এসে করবে । সুইসাইড না মার্ডার না দেখে কেউ হাত দেবে না ।

বাবলুদা বলল - কেন কেন ? নীচে নামিয়ে দিলে কি হবে ?

- তোমার আঙুলের ছাপ পেয়ে গেলে পুলিশ তোমাকেই ধরে নিয়ে যাবে ।

সরলমতি বাবলুদা আর সে দিকে মাড়াল না । ইতিমধ্যে পুলিশ এসে ভিড় হটিয়ে লাশ তুলে নিয়ে গেল পোস্টমর্টেমের জন্য ।

বাবলুদা বলল - বড়দা এখনও ঘুমোচ্ছেন । ওঁকে এখনই কিছু জানাবে না । ভীষণ দুঃখ পাবেন ।

ঠিকই বলেছে বাবলুদা । একে তো নিজেরই শরীর খারাপ , তার সঙ্গে এমন দুঃসংবাদ পেলে হয়তো আরও খারাপ লাগতে পারে ।

বললাম - বডি আনতে বর্ধমানে কে যাচ্ছে ?

বাবলুদা বলল - জ্যোৎস্নাকে তো যেতেই হবে । আর আমিও যাব ।

বললাম - আরও দু' একজনকে সাথে নাও । আমি বড়দাকে ছেড়ে তো যেতে পারব না । নইলে যেতাম ।

আমি বাড়ী ফিরলাম । বড়দা ঘুম থেকে উঠে বললেন - কি শুনছি ভাই ? মীনাক্ষী....

আমি ওঁকে বুঝিয়ে বললাম ঘটনার কথা ।

বড়দা বললেন - এ কেস অফ পারফেক্ট মার্ডার । পোস্ট মর্টেম রিপোর্টে সব জানা যাবে ।

- কি বলছেন বড়দা ? খুন ? মীনাক্ষী কাকিমাকে কে খুন করবে , কেনই বা করবে ?

- আমার কথা সত্যি হলে তদন্তটা তুইই করিস ।

( চলবে )



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Horror