অদৃশ্য
অদৃশ্য
আমার নাম আকাশ বন্দ্যোপাধ্যায় , বাবা পুলিশের চাকরি করেন সেই জন্য বাড়ি কমই থাকেন এই ঘটনাটি হয়েছিল আমার ঠাকুমার মৃত্যুর পরে। তখন স্কুলে সামার ভ্যাকেশনে ছুটি কিন্তু এইবার ছুটিটা অন্যরকম।কারণ প্রায় এক মাস আগে আমার ঠাকুরমা মারা যায় এ কারণে সবারই মন খারাপ তাই আর প্রত্যেক বছরের মতো এবারের ছুটি টাকে enjoyকরা হচ্ছে না। সে যাই হোক এবার গল্পে আসা যাক,তোমাদেরকে আগেই বলেছিলাম বাবা পুলিশের চাকরি করেন তাই পোস্টিং নানান জায়গায়।প্রতিদিনের মতন আমার মা আমাকে বাড়িতে রেখে বাজারে চলে গিয়েছিলেন, ঘরে আমি একা বসে বসে স্কুলের হোমওয়ার্ক করছি। হঠাৎ রান্নাঘর থেকে কিসের যেন আওয়াজ ভেসে এলো, আমি তৎক্ষণাৎ রান্নাঘরে গিয়ে দেখলাম বাসনের রেক থেকে একটা ছোট্ট বাটি পরে গিয়েছে। সেটাতে আমি খুব বেশি নজর দিলাম না। এই ঘটনাটা প্রায় তিরিশ চল্লিশ মিনিট পরে কেউ যেন আমাকে ডাকছে, আমি ঘর থেকে কয়েকবার কে.....কে ... করলেও কোনো সাড়া পেলাম না সেইজন্য সোজা মেন গেটে চলে গেলম গিয়ে দেখলাম কেউ নেই,ঘরে এসে আমি হোমওয়ার্ক করছি ঠিক সেই সময়ে আমার মনে হলো কেউ যেন আমার ঘরের দরজার দিয়ে কেউ যেন সামনের ঘরে ছুটে চলে গেল, আমি সামনের ঘরে
ঢুকে দেখলাম কিছুই ছিল না, আমি আমার মনের ভুল ভেবে ঘটনা টাকে কাউকে বললাম না।
এই ঘটনার প্রায় এক দুই মাস পর, ঘটনাটা প্রায় ভুলেই গেছি সেদিন টিউশন ছুটি দিতে দেরি করেছে ঘড়িতে দেখি তখন প্রায় সাড়ে নয়টা, শীতের রাত ঘন কুয়াশা চারিদিকে লোকজন নেই তাই মেন রাস্তা দিয়ে না গিয়ে শর্টকাট রাস্তা দিয়ে যাব বলে ঠিক করলাম। কিন্তু সেই রাস্তা দিয়ে সন্ধ্যা ছয়টার পর কোন লোক যাতায়াত করে না তার কারণ সে রাস্তা নাকি অশরোরী দের রাস্তা তাই লোকজন যেতে ভয় পায়, আমি ছোটবেলা থেকে তেমন ভুতুড়ে জিনিসটাকে ভয় পেতাম না।তাই আর দেরি না করে কুয়াশা ভেদ করে সেই রাস্তার উদ্দেশ্যে রওনা হলাম, রাস্তায় পৌঁছে দেখি সারা রাস্তায় মাত্র দুটি ল্যাম্পপোস্ট তাও আবার জলে নেবে গোটা রাস্তা ঘাসে ভর্তি হয়ে গেছে মনে হয় তেমন কোন লোক যাতায়াত করে না। আমি রাস্তা দিয়ে সাইকেল নিয়ে যাচ্ছি কিছুদূর যেতেই রাস্তা ঠিক ডানপাশে এক পোরো রাজবাড়ী । এই রাজবাড়ি সম্বন্ধে এক কাহিনী আছে সেটা তো তোমাদের বলতেই হয়, প্রায় ১০ বছর আগে এই রাজবাড়ীতে আগুন লেগে যায় কিন্তু ব্যাপার হলো যে কিভাবে আগুন লাগলো তা আজও জানা সম্ভব হয়নি,এখানকার বাসিন্দারা বলেন যে এই রাজবাড়িটি নাকি অভিশপ্ত ছিল এখানে মানুষজনকে খুন করে পুতে রাখা হতো ।
আমি সাইকেল নিয়ে এগিয়ে চলছি কিছুদূর যেতেই আমার সাইকেল স্টপ হয়ে গেল কিছুতেই এগোচ্ছে না যেন মনে হচ্ছে সাইকেল নয় পাথর, আমি সাইকেল থেকে নেমে জোসনা আলোয় সাইকেলের সমস্যা কি হয়েছে দেখতে লাগলাম ঠিক তখনই এক মধ্যবয়সী লোক আমাকে ডাকছে আকাশ....... আকাশ........ আমি তার ডাকে সাড়া দিলাম কিন্তু কিছু না বলে সে সামনের দিকে হাঁটছে আমি ভাবলাম হয়তো কোন বিপদে পড়েছে আমি তাই তার পেছনে পেছনে যাচ্ছিলাম গিয়ে দেখলাম সেই অভিশপ্ত রাজবাড়ীতে প্রবেশ করল আমি প্রবেশ করতে দ্বিধা বোধ করলাম না রাজ বাড়ির দরজায় পা বাড়াতেই কেউ যেন আমার কানে বলে উঠলো চলে যা..... এই জায়গা অভিশপ্ত...... চলে যা..... আমার মনে আমার কান দিয়ে ঠান্ডা হাওয়া চলে গেল।আমি একটু ভয় পেয়ে গেলাম কিন্তু পিছু উঠলাম না সেই রাজবাড়ীতে প্রবেশ করলাম প্রবেশ করতেই কেমন যেন ধোঁয়াশা হয়ে উঠলো। এই কারণে ঠিকঠাক দেখতে পেলাম না ধোঁয়াশাএকটু কাটতেই গোটা বাড়িতে আগুন লেগে গেল চারিদিকে আগুন কত মানুষ চারিদিকে ছুটাছুটি করছে কেউবা সেই আগুন ঝলসে পুড়ে ছারখার হয়ে গিয়েছে। আমি কি করব ভেবে না পেয়ে সামনের দিকে করলাম সামনের দিকে ঘুরতে দেখি , কতগুলো অশরীরী আমার দিকে ছুটে আসছে কারো মূল্য নেই, কারো গোটা শরীর আগুনে ঝলসে গেছে, আমি কি করব বুঝতে না পেরে সামনে দিয়ে ছুটছি। বিরহ কোন উপায় নেই গোটা দরজাতে আগুনের গুন্ডি কাটা কি করব বুঝতে না পেরে আমি চেচিয়ে বললাম হেল্প ...হেল্প.... কিন্তু কেউ এলোনা। হঠাৎ দেখি এক বৃদ্ধা ঠিক যেন আমার ঠাকুরমা। আমাকে বলল তুই চলে যা এরা তোর কিচ্ছু করতে পারবে না। আমি দেখলাম সামনের দিকে একটা ভাঙা জানালা সেখান থেকে লাফ দিয়ে কোনরকম করে সাইকেল নিয়ে সোজা বাড়ি।আর বাড়িতে এসে মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলাম জীবনে কখনো সেই রাস্তাতে পা দেবো না, আর সেই বৃদ্ধা আত্মাকে ধন্যবাদ জানালাম।