Manab Mondal

Abstract Romance Inspirational

4.3  

Manab Mondal

Abstract Romance Inspirational

অর্কিড

অর্কিড

5 mins
283


রোজ সকালে ঘুম ভেঙেই আমি হেরে যাই ওর কাছে।জানালাতে "ও" অর্কিড গাছটার টবটা এমন করে রেখেছে। যেনো মনে হয় ওর ফুল গুলো হাসি মুখ করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। মানে ঘুম ভাঙ্গার সাথে সাথেই আমি আগে ওর জানালার দিকে তাকাই। আর ওর ফুল গুলো দাঁত কেলিয়ে বলে " good morning... রাজকন্যা এখনও ঘুমাচ্ছে। কিংবা কাজে ব্যস্ত। " ভালো লাগলে না, কোন দিন প্রথম good morning টা আমার বলা হয় না। রোজ রোজ হেরে যেতে কার ভালো লাগে। 

উপরের বিবরণ দেখে ভাববেন না, ও কি মিষ্টি প্রেম।আমার এটা একতরফা প্রেম। তাই আপনার ছাড়া আমার হাতে গোনা বন্ধু বান্ধব জানে আমার এই প্রেমে হাবুডুবু খাওয়ার গল্পটা। এমনকি আমার মা যে আমার মানি ব্যাগে কটা কয়েন আছে বল দিতে পারেন । সে কিন্তু জানে না আমার এই একতরফা প্রেমের গল্প। আমার এক বন্ধু আমাদের এই প্রেমের নাম দিয়েছে      "অর্কিড প্রেম' । এ রকম নাম দেবার কারণ অনুমান করা চেষ্টা করুন । পরে আমি বিস্তারিত জানাবো।

যদিও আমার সাহিত্যিক বামপন্থী বন্ধু বান্ধবরাও আমাকে অর্কিড এর সাথে তুলনা করতো। আসলে লিটলম্যাগজিন থেকে দুম করে পেজ ত্রির রিপোর্টার পেটের দায়ে। মানে বড়োলোকে সেবায় নিয়োজিত, বিক্রি হয়ে যাওয়া প্রতিভা , যে শুধু রূপালী পর্দার নায়ক নায়িকার বৃষ্টি ভেজা কোমর পিঠে র মাপ দেখে। মাটির সাথে কোন সম্পর্ক নেই এমন একটি মানুষ। অর্কিড পরজীবী বুদ্ধি জীবীদের মতো মাটির সাথে কোন সম্পর্ক নেই । এ সামাজে আমরা সবাই কিন্তু পরজীবী । অর্কিড পরজীবী হলেও একটু অন্য রকম বড়ো লোকের মতো শুধু ই শোক নয়, জানেন তো সে নির্ভর করে কিছু ছত্রাক উপর।তবে অর্কিড ঋণ রাখে না। ছত্রাকও নির্ভর করে অর্কিড এর ওপরে। মানে পরজীবী পরজীবী ওপর নির্ভর। বাস্তবে আমরা সবাই সবাইএর নির্ভর শীল। বলতে পারেন ঘর সংসার তৈরি হয় একে ওপরের নির্ভর করে।

মায়ের কাছে এই প্রথম কোনো কথা গোপন করেছি। তাই লড়াইটা বড়ো কঠিন। আজ দুপুরে ই মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে জিজ্ঞেস করলো, " বেলায় বাজার করতে তুই ভালোবাসিস। মানে দরাদরি করে পাচাধচা মাল আনতে তুই ভালো লাগে। বাইরে টোটো করে ঘুরে বেড়ালি সকাল থেকেই অথচ লেবু আনতে বললাম, তুই আনলি না কি হলো তোর? কেউ ছিলো নাকি? বলল না শুনেও শান্তি পাই।"

আমি মানুষ টা অনেক টা অর্কিড এর টব এর মতো। আমার সাথে অন্য কারোর তুলনা হয়না।প্রসঙ্গত বলে রাখি মহাভারতে ধৃতরাষ্ট্র শুধু পুত্রের স্নেহে অন্ধ ছিলেন বলা ভুল। বিবাহযোগ্য বয়স্ক পুত্রের পিতা মাতার এ রূপ অন্ধ। তাদের পুত্র সর্বশ্রেষ্ঠ , অথচো কোন কন্যাই তা বোঝে না। কয়েকটি সাদা চুল দেখে প্রত্যেক্ষান করে। অর্কিড এর সাথে এখানে আমার মিল পূজাতে লাগে না । মানে বংশে বাতি দেবার লোকজন থাকবে না আমার। তাই কন্যা দায়গ্রস্থ্য পিতা মাতার মতো তাদের হাল। মা অনেক দুঃখ করে বলতে শুরু করল " কালুর বৌটা খুব ভালো হয়েছে। একটা ধর্ষক জেলে খাটা আসামি । তারো এতো ভালো বৌ হয়েছে।আর তুই জোটাতে পারলি না একটা বৌ। ছাদে অতো গোলাপ গাছ পুতলি ।কাউকে জোগাড় করতে পাড়লি না যার চুলে একটা গোলাপ গুঁজে দিতে পারিস।"

আমি বললাম " আমি গোলাপ দেবো না। গোলাপ পাপড়ি গুলো যেমন জটিল । তেমন ই গোলাপ পছন্দ করা মেয়েরাও জটিল হবে। আমি অর্কিড দেবো। সুন্দর কিন্তু কোন ঘোরপ্যাঁচ নেই। যন্ত্রণা দেবার মতো কাঁটাও নেই।"

আমার বাগানের মতো ওর বাগানেও অনেক ফুল ফোটে।

কাক ভোরে আমার বাগানের ফুল চলে যায় , ঠাকুরের পায়ে। ওর বাগানের একটা ফুলে হাত দেবার সাহস নেই কারো । ওর বাড়িতে ওর মা ছাড়া ,বিলাসিতা জন্য বাগান করাকে সমর্থন করে না। নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের মানসিকতা যা আরকি। তবে কি বলি আর, আমার বাড়িতে যেমন গোলাপ গাছের, চেয়ে বেগুন উচ্ছে গাছের কদর বেশি। অর্কিড পুতবো বলে আনতেই সবার মুখ ভার হয়ে গেছিলো। শেষ মেষ প্রতিবেশীর বাড়িতে মানে , ওকে অর্কিড গাছটি দিতে বাধ্য হলাম। ফুল না দিতে পারি গাছ তো দিতেই পারি। অর্কিড ফুল দেখে ওর মা খুব খুশি। ওকে অনুরোধ করলো অন্তত একটি ফুল যেনো , তাকে দেওয়া হয় মাথায় গোঁজার জন্য। এই অনুনয়ের কথা বর্নণা দিতে গিয়ে , যে হাসিটা হেসে ছিলো । সেটা ঐ অর্কিড এর চেয়ে দামী ছিলো।

তবে বলে রাখি। মাথায় অর্কিড ফুল গোঁজা কিন্তু একটি আঞ্চলিক প্রথা। কপৌফুল নামে এক অর্কিড ফুল আসাম জাতীর কাছে খুবই প্রিয় ফুল, বৈশাখ মাসে ফোটে, নববর্ষের বিহু উৎসব আসাম বাসীরা তাদের প্রাণের উৎসবে প্রত্যেক প্রেমী তার প্রেমিকার খোঁপাতে কপৌফুল লাগিয়ে দিয়ে প্রেমের অভিব্যক্তি করে। আজকালকার রোজ ডের মতো গল্প আরকি ।

আমার সেই বন্ধুর কথায় আসি । সে আমার প্রেম কে অর্কিড প্রেম বলে তার একটি কারণ বলি। যেমন‌ আমাদের প্রথম লং ড্রাইভে যাওয়া , (মানে স্কুটিতে  যাওয়া , মধ্যবিত্ত গাড়ি কোথায় বলুন) এই অর্কিড গাছ কিনতে যাওয়া ঘিরে। তাছাড়া এই সম্পর্কটি ছিন্ন হতে হতে ছিন্ন হয় না। মৃত হয়ে গিয়েও জীবিত হয়ে যায় অর্কিড গাছের মতো।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য করা উচিত। অর্কিড এর মানুষ বা অন্যান্য প্রাণীর মতো অর্কিডেরও বিশ্রাম প্রয়োজন হয়। অনেক সময়ে দেখা যায়, সমস্ত পাতা ঝরে গিয়েছে। পাশাপাশি কাণ্ডটিতে খয়েরি রং ধরতে শুরু করেছে। মনে হয় সে যেন মৃত। তার মানেই কিন্তু অর্কিড মৃত নয়। যেমন যত্নআত্তি প্রয়োজন, তেমনই করতে থাকুন। অনেক সময়ে হয়তো মাসের পর মাস অপেক্ষা করতে হয়। কিন্তু অর্কিড রেস্টিং টাইম থেকে ফিরে এসে, ফের ফুলের জন্ম দেয় এরা। সে ক্ষেত্রে প্রয়োজন শুধু ধৈর্যের। আমি ও ধৈর্য ধরে বসে আছি। কোন সময় যদি ভালোবাসা হয়ে যায়।ও থেকে উনি হয়ে যায়। আর্কিড জানালায়, বারান্দায়, বাড়ির সেন্টার টেবিলে হোক বা বেডরুমের একপাশে স্বচ্ছন্দে জায়গা করে নেয় । জল মাটি , রৌদ্র নিয়ে দাবি দাবা করে না গোলাপ রজনীগন্ধার মতো। একটু কেয়ার করলেই চলবে। সব মেয়েরাই সেটা চায়। বেশ ঘরয়া আমার 'উনি' অর্কিড এর মতো ।

অন্যদিকে অর্কিডে ফুল ধরতে সময় লাগে। আমার বিশ্বাস একটু অপেক্ষা করলে উনার বা ওর মন জয় করতে পারবো। কিন্তু সুদীর্ঘ অপেক্ষার পর যখন অর্কিড রংবেরঙের ডানা মেলে ধরে, তখন কিন্তু তার সাথে কারো তুলনা হয় না। উনি যদি আমার জীবন সঙ্গী হয় দৃঢ় বিশ্বাস,কারো জীবন বোধহয় রঙিন হবে না আমার মতো।

তবে জানেন আমার মতে যেকোনো মেয়ে ই বোধহয় অর্কিড ফুল মতো । যতোই সুন্দরী হোক।

আসলে তারা পরাশ্রয়ী। বড় গাছের গলা ঝুলতে থাকা বোঝার মতন,,,,



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract