ফুলুই এর জয় দূর্গা
ফুলুই এর জয় দূর্গা
হুগলী জেলার গোঘাট থানার ফুলুই গ্রামে জয়দুর্গা দেবীর মন্দির আছে।প্রতি দিন নিত্যপূজা, ভোগ,ও সন্ধ্যারতি হয়।চক্রবর্তী কুলদেবী আজ ঐতিহাসিক কারনে এই গ্রামের ঐতিহ্য পরিনত হয়েছে।
ধর্মমঙ্গল কাব্যে ফুলুই জয়দুর্গার উল্লেখ মেলে :-
"ফুলুয়ের জয়দুর্গা বৈতালের ঝকড়াই।
ক্ষেপুতে খেপাই বন্দি আমতার মেলাই।।"
গোঘাটের ফুলুই গ্ৰামের জয়দুর্গার পুজো আগে বর্ধমানের মহারাজার দেওয়া কামান দেগে শুরু হতো । তবে এখনও পুজো শুরু হয় প্রতীকী কামান দেগে।
বহু যুগ ধরে দেবী দুর্গা এখানে পাথর প্রতিমা রূপে পূজিতা হয়ে আসছেন। বর্ধমানের মহারাজ বিজয়চাঁদ মহাতাব গ্ৰামের এই পাষাণশিলা আরাধনাকারী চক্রবর্তীদের দিয়েছিলেন দু’টি কামান ও একটি জয়ঘণ্টা।
বড় কামানটি গ্ৰাম থেকে চুরি হয়ে যাওয়ায়, পুজোতে এখন ছোট কামানটি প্রতীকী হিসেবে ব্যবহার করা হয়। তবে মহারাজের দেওয়া এই কামান বারবার চেষ্টা করেও সারানো যায়নি। তবে তাঁর দেওয়া জয়ঘণ্টাটি বাজানো যায়। চক্রবর্তী বাড়ির এই পুজো এখন গ্ৰামের সকল মানুষের পুজোতে পরিণত হয়েছে।
লোকমুখে কাহিনী অনুযায়ী প্রচলিত, একবার বর্ধমান মহারাজাধিরাজ এই গ্ৰামের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন।ব্রিটিশ রাজ সেইসময় তাঁর জমিদারি কেড়ে নিয়েছিল। তিনি মা পুজো দিয়েছিলেন । এবং কথা দিয়েছিলেন, জমিদারি ফিরে পেলে এখানে দেবী দুর্গার মন্দির বানিয়ে দেবেন।
তিনি ১৯৩৬ সালে ফিরে পেয়েছিলেন জমিদারি। তারপরেই ফুলুই গ্ৰামে বানিয়ে দিয়েছিলেন দেবীর মন্দির। মন্দির বানানোর সাথে সাথে দিয়েছিলেন দু’টি কামান ও একটি জয়ঘণ্টা। তারপর এই জয় ঘন্টার জন্য ফলুই গ্ৰামের এই পুজো জয়দুর্গা নামে পরিচিতি হয়। বর্তমানে নতুন করে তৈরি হয়েছে মন্দির। মন্দিরের সামনে তৈরি হয়েছে নাটমন্দির।
ফুলুই গ্রামের চক্রবর্তীরা, তান্ত্রিক উপেন ভট্টের বংশধর। বহুযুগ ধরে এখানে এই পাষাণশিলার পুজো করে আসছেন। আশ্চর্যজনকভাবে, আগে বর্ধমানের মহারাজার দুর্গাপুজ , গড়বেতার সর্বমঙ্গলা দুর্গাপুজো ও ফুলুই গ্ৰামের দুর্গাপুজো একই সময়ে সপ্তমীর দিন কামান দেগে শুরু হতো। তিন জায়গার পুজো একসঙ্গে শুরু হওয়ার কোনও ইতিহাস কারণ নিশ্চয়ই ছিল তা অনুসন্ধান করলে হয়তো জানা যাবে। এই পুজো এখন আর শুধু পরিবারের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। এটি এখন গ্ৰামের সকল মানুষের পুজো। পরিবারের বাইরেও এই গ্ৰামের বাসিন্দারা এই পুজোতে অংশগ্ৰহণ করেন। মাটির প্রতিমার পুজো এখানে হয় না।
দেবীর রূপ এখানে পাথরশিলা। সারাবছর ধরে এই পাষাণশিলার পুজো হয়। আশপাশের গ্ৰামের বাসিন্দারাও এই পুজোতে অংশগ্ৰহণ করেন। রাজার দেওয়া কামান ও জয়ঘণ্টা আমরা পুজোতে এখনও ব্যবহার করে চলেছে এরা। পুজোর সময় কামান দাগা না হলেও। কিন্তু বৃহৎ ঘণ্টাটি যখন বাজানো হয়।
ছবি