SATYABRATA MAJUMDAR

Tragedy Others

3  

SATYABRATA MAJUMDAR

Tragedy Others

অতৃপ্ত আত্মার ডাকে (চতুর্থপর্ব

অতৃপ্ত আত্মার ডাকে (চতুর্থপর্ব

3 mins
161



বাড়ি ফিরে জয় দেখে তার স্ত্রীর কল্পনার শ্বাসকষ্ট আবার বেড়ে গিয়েছে, বড় ছেলে "দুলান "বাবাকে বলে সকাল থেকে মা কষ্ট পাচ্ছে, শ্বাসকষ্টের জন্য ইনহেলার দেওয়া হয়েছে, নিঃশ্বাস নিতে পারছে না, তোমাকে ফোন করতে পারিনি, ফোনে ব্যালেন্স নেই বলে, 

মা উঠতে পারছে না, আমি আর বোন সকাল থেকে মুড়ি আর বিস্কুট খেয়ে আছি,  অবলা ছেলেমেয়েদের পরিস্থিতি দেখে জয়ের চোখে জল চলে আসে, পরক্ষণে মন শক্ত করে  স্ত্রীকল্পনার মাথায় হাত বুলোতে থাকে, রোগ যন্ত্রনায় কাতর  কল্পনা ইশারায় বলতে থাকে শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে, আমি তোমাকে ঔষধ খাইয়ে দিচ্ছি, কল্পনা অসহায়, দুলান আর তিতলির দিকে তাকিয়ে থাকে, কথা বলার মত অবস্থায় নেই, চোখ দিয়ে অনবরত জল গড়িয়ে যাচ্ছে, জয় তাড়াতাড়ি চোখ মুছিয়ে দিয়ে বলে," তোমাকে ঔষধ খাইয়ে দিচ্ছি,  তারপর ঔষধি গ্যাস পাম্প করবো, নিশ্চয়ই আরাম পাবে, প্রয়োজনে হাসপাতালে নিয়ে যাবো।এখনই আমি ভাত বসাচ্ছি, তোমাকে আর ছেলেমেয়েদের খাওয়াবো, বড় মন্দ কপাল আমার, বেসরকারি কাজ করি, পাবলিশার্স কোম্পানিতে, কাজে না গেলে পয়সা নেই, একার পক্ষে কত লড়াই করব, তবুও শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে আমি চেষ্টা চালিয়ে যাব, ছোট ছোট সন্তানদের ভবিষ্যৎ, তোমার চিকিৎসা,জান,প্রাণ দিয়ে লড়বো।


রাত্রে শুয়ে ঘুম আসেনা, মাঝে,মাঝে মানসিক অবসাদ দেখা দেয়, দুঃখ, ভার মনে পল্লবীর কথা মনে পড়লেই কেমন যেন মনে হিল্লোল খেলে যায়,মনে হয় তাঁর কাছে দ্রুত ফিরে যাই, তাঁর রূপ,স্পর্শ, ঠোঁটে ঠোঁট রাখা, জাপটে,জড়িয়ে বারে,বারে চুম্বন করে যাওয়া, এতো তৃপ্তি, যৌন ক্ষুদার আবেশকে গতি দেয়, যা স্ত্রী কল্পনার কাছ থেকে দাম্পত্য দেহ মিলনের যাপন চিরদিনের জন্য হারিয়ে গেছে।


রাত তিনটে বাজে, পল্লবী কি গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন, আমি আর পারছি না, তাকে একবার ফোন করতেই হবে, কিন্তু যদি ছেলে থাকে পাশে অথবা মা,বোন, পল্লবী কি বিরক্ত বোধ করবে ফোন নিতে, অথবা যদি সুইচ্ বন্ধ থাকে, অথবা এমনো তো হতে পারে সেও নিদ্রাহীন চোখে আমাদের শারীরিক মিলনের কথা ভেবে তৃপ্তি লাভ করছে, কারন সেও তো দীর্ঘদিন বঞ্চিত ছিল, তাই বর্তমানে সুদে- আসলে মিটিয়ে নিতে  উদগ্রীব হয়ে আছে।


না,আমাকে একবার ফোন করতেই হবে,রাত সারে তিনটে বাজে, এইতো মোবাইল ফোন বাজছে, পল্লবীর, কিন্তু ধরছেনা কেন? গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন, না! এইবার মনে হয় ধরেছে, বিরক্ত হচ্ছো না তো, শেষ রাতের ঘুম ভাঙ্গালাম বলে, কেন কি হয়েছে?

আমার কথা মনে পড়ছে, তা তো পড়ছে, কিন্তু তোমাদের ছেড়ে বাড়িতে এসে দেখি কল্পনার শ্বাসকষ্ট আবার বেড়ে গিয়েছে, সকালে কিন্তু ভালো ছিল, এরকম পরিস্থিতি থাকলে নিশ্চয়ই কাজে বের হতাম না, রান্না করতে পারেনি, ছেলেমেয়েরা মায়ের এই পরিস্থিতি দেখে মুড়ি আর বিস্কুট খেয়ে ছিল, যাইহোক আমি কল্পনার পরিচর্যা করে, দুটো গরম ভাত করে ছেলেমেয়েদের খাইয়ে কল্পনাকে খেতে দিলাম, শ্বাসকষ্টের জন্য খেতে পারল না, তারপর গরম দুধ দিয়েছিলাম, যাইহোক শ্বাসকষ্ট একটু কমই ছিল, না হলে তো হাসপাতালে নিতেই হতো।

তারপর অনেক রাতে শুয়েছি, ঘুম আসে না, অস্থিরতার মাত্রা দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে, অবসাদ গ্রাস করছে, কিন্তু এখনো পর্যন্ত তোমার কথা মনে পড়লে মনের ভিতরে একটা সাগরের ঢেউ বয়ে যায়, তাই অগত্যা তোমাকে শেষ রাতেই ফোন করলাম, একটু মনকে শান্ত করবার জন্য।

না না তোমার ব্যাপারটা আমি বুঝি, জয়, কোন সমস্যা হলে আমাকে ফোন করবে, তোমার আর আমার প্রেম বন্ধনের খুব প্রয়োজন আছে, নয়তো ভাসমান সংসার আরো তলিয়ে যাবে।

যাক এখন আমি তোমার সাথে, হয়তো ভার্চুয়ালি, কিন্তু বাস্তব, আর একটা কথা, তোমার ছেলেবেলাকার বন্ধু রথীন বাবু আমাকে ফোন করেছিল, আমি তখন নার্সিংহোম এর কাজে ব্যস্ত ছিলাম, বেশি কথা বলতে পারিনি, বারবার বলছিলেন রবিবারের কথা কিন্তু ভুলনা, আমি বলেছি মনের দিক দিয়ে পুরো মাত্রায় তাগিদ আছে, আপনার অসুস্থ বড় দিদিকে দেখার জন্য, যদি কোন বড় বিপদ নাই এসে পড়ে, সাথে সাথে  রথীন বাবু বললেন," তোমরা আসলে অনেক গল্প করা যাবে"। আমি আবার রাঁচিতে ফিরে যাবো খুব শীঘ্রই।

 ঠিক আছে পল্লবী, কাল এক সময় করে মিট করা যাবে? মনটা খুব চাইছে।

লক্ষী ছেলের মত এখন একটু ঘুমাও,  আমি  সকালে কাজে গিয়ে তোমাকে ফোন করবো, কেমন, শুভরাত্রি।

 


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Tragedy