অতৃপ্ত আত্মার ডাকে -----
অতৃপ্ত আত্মার ডাকে -----
অতৃপ্ত আত্মার ডাকে :-
ধারাবাহিক উপন্যাস :- তৃতীয় পর্ব
ডা: সত্যব্রত মজুমদার
তারিখ:-১৪/০৪/২০২৩
অতৃপ্ত আত্মার ডাকে
—----------
এরপরই হালিশহর স্টেশনের এক নম্বর প্লাটফর্মের পেছনের দিকে আরেকটি বেঞ্চিতে দুই যুবক যুবতী, হয়তো প্রেমিক প্রেমিকা ঘনিষ্ঠ হয়ে বসে গল্প করছিল, পড়ন্ত বিকেলে, দীর্ঘক্ষণ ধরে, হঠাৎ মেয়েটির কান্নার আওয়াজ, ফুপিয়ে কাঁদছে, ক্রমশ বাড়ছে, ছেলেটি অনবরত: মেয়েটির মাথায় হাত বুলিয়ে কান্না থামানোর প্রাণান্তকর প্রয়াস চালাচ্ছে, ক্রমশ বাড়ছে, আশেপাশের অল্প কিছু মানুষজন পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় উদাসীন মানসিকতায় হেঁটে যাচ্ছে,যেন বিভিন্ন স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে এইরকম বিরহী যন্ত্রণার খেলা হতেই থাকে।
পল্লবী জয়ের দিকে তাকিয়ে ইশারায় বলল," মেয়েটির কাছে যাব নাকি, এই বুক ফাটা কান্নার কারণ জানতে, কিন্তু জয় পল্লবীর কৌতূহল, সদিচ্ছাকে অসম্মতি জানালো, অন্য কোন সমস্যায় জড়ানোর আশঙ্কায়।
কিন্তু পল্লবীর মনটা উসখুস করতে থাকে পাশের ঘটনাবলীতে, রথীন বাবু পল্লবীর দিকে চেয়ে বলে উঠলো, এবার আমাকে ফিরে যেতে হবে দিদির কাছে, বিকেল পাঁচটা বাজে, বন্ধু জয়, পল্লবী দেবী, মোবাইল নাম্বারে সকলের সাথে যুক্ত হয়ে গেলাম, আগামী দিনের সশরীরে দেখা নাও করতে পারলে, ভার্চুয়ালি কথাবার্তা হবে।
আমাদেরও ফিরে যেতে হবে, বর্ণালী রথীন বাবুর মুখের দিকে চেয়ে বলে উঠলো, কিন্তু প্রতীক্ষায় রইবো।
জয় রথীনকে জড়িয়ে ধরল, রথীন জয় কে, জয় বলতে থাকে,"অনেক কথা বাকি রইল, তোমার আমার, পল্লবীর, অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ , জয় তোমাদের ঠিকানা? বন্ধুর প্রশ্নের উত্তরে জয় বলে উঠলো," আমি থাকি খড়দহে, আর পল্লবী বেলঘড়িয়া, প্রতিদিনের ট্রেনে যাতায়তের পথে পথে আমাদের আলাপ, পরিচয়, ভাব ভালোবাসা।
ধীরে ধীরে সব বুঝলাম, বন্ধু, রথীন বাবু পল্লবীর দিকে চেয়ে বলল "আমার বিশেষ অনুরোধ তোমাদের প্রতি, আগামী রবিবার তোমরা আমার দিদির বাড়িতে আসো, আমার অসুস্থ দিদি অবশ্যই খুব খুশি হবে তোমাদের পেয়ে, বাল্যকালের বন্ধু জয়, ওরফে বাদল, সেই গল্প একদিন হবে, সময়ের সাথে, দিদির বাড়িতে একসাথে খাওয়া দাওয়া হবে, ব্যারাকপুরের "আনন্দপুরীতে" যদিও সেখানে নিরানন্দের ঘেরাটোপ, তথাপি, তোমাদের উপস্থিতি কিছুটা আনন্দদায়ক অবশ্যই হবে।
আমরা নিশ্চয়ই যাবো, পল্লবী উৎফুল্লের সাথে জয়ের দিকে চাইল, তাঁর সম্মতির জন্য, জয় মৃদু হাসিতে সম্মতি জানালো, আমরা নিশ্চিত দুপুরের মধ্যে পৌঁছে যাব বড় দিদির বাড়ি, সত্যি বন্ধু রথীন, আমি এখনই কেমন আবেগ তাড়িত হয়ে পড়ছি আগামী দিনের কথা ভেবে, চলো আমরা একসঙ্গে এগিয়ে যাই, গন্তব্যস্থলের ফিরতি ট্রেন ধরার জন্য।
পড়ন্ত বিকেলে হালিশহর স্টেশনে হাঁটতে হাঁটতে রথীন পল্লবীর দিকে চেয়ে বলে উঠলো, একটা সত্যি কথা বলবো, পল্লবী, অবশ্যই রথীন বাবু,
তোমাকে প্রথম দেখে এবং এই সময়টুকু কাটিয়ে তোমার প্রতি মোহ আমার বেড়েই গেল, তোমার কথা বলার টেকনিক, গলার নিপুন স্বর, কোমলতা, হৃদয় জুড়ানো হাসি, গম্ভীরতা, আমাকে পলে পলে মোহিত করছে, তোমাকে কত আপন বলে মনে হচ্ছে, কত যুগের পরিচয়, কিন্তু অবাক করা মাত্র এক ঘণ্টার, আর বাদল, তার কত কথাই আজ মনে পড়ছে।
পল্লবী রথীন বাবুর দিকে চেয়ে বলল, জানেন আমরা দুজনে অবসরে এই স্টেশনে চলে আসি, নিরিবিলিতে একটু মনের কথা বলবো বলে, আমাদের ফিরতি ট্রেন এসে গেছে, ট্রেন দাঁড়ানো মাত্র জয় আর পল্লবী হাত ধরে ট্রেনে উঠতেই রথীন হাত নেড়ে তাদের বিদায় জানালো।
শিয়ালদহগামী কল্যাণী লোকাল ট্রেন মোটামুটি ফাঁকাই ছিল, জানলার পাশে দুইজনে ঘনিষ্ঠ হয়ে বসলো।
ট্রেন চলতে শুরু করল, জয় পল্লবীর দিকে চেয়ে বলল, মনে হচ্ছে আজকের দিনটা আমাদের কাছে বিশেষ দিন, কিভাবে ছোটবেলার বন্ধুর সাথে সাক্ষাৎ হয়ে গেল, সত্যি আজ তুমি আমার বন্ধুর হৃদয় জয় করে নিলে।
তুমি বলছো জয়, জয় মুখের দিকে তাকিয়ে পল্লবীর দুষ্টু মিষ্টি হাসি, সবই তোমার জন্য, আমার আমার ছন্নছাড়া সংসার, এক পুত্র রয়েছে তার দায়বদ্ধতা, তোমারও সংসার আছে দুই সন্তান আছে, আর আছে অসুস্থ স্ত্রী, তাদের প্রতি কর্তব্যের খামতি রেখোনা, তুমিও তোমার সন্তান আর মায়ের প্রতি, জয় পল্লবীর চোখের দিকে চেয়ে বলে উঠলো, তথাপি সমান্তরাল গতিতে আমাদের প্রেম, ভালবাসা বজায় রেখে যাব নিজেদের উজ্জবিত রাখার জন্য, নয়তো সব শেষ হয়ে যাবে।
সুন্দর বলেছো, তুমি, একদম আমার মনের কথা জয়, এইভাবে আমরা যেন সুস্থ সবল থাকতে পারি।
কল্যাণী লোকাল ব্যারাকপুরের জংশনের দিকে এগোচ্ছে, পল্লবী জয়ের হাত চেপে ধরে বলল, শোনো জরুরী কথা, কাল শুক্রবার আমাদের আর দেখা হবে না, কাজের চাপ আছে, শনিবারে পর রবিবার আমি সকাল এগারোটার মধ্যে ব্যারাকপুর লোকালে চলে আসব, তুমি সেই ট্রেনে উঠে পড়ো, কেমন, তা তুমি যেমন বলবে পল্লবী, খড়দহ স্টেশন এসে গেল, আমি আসি, তুমি বেলঘড়িয়ায় সাবধানে নেমে পড়ো।
ট্রেন থেকে নেমে হাঁটতে লাগলো জয়, পল্লবী হাত দেখিয়ে আজকের মত মধুর বিদায় জানালো।
এরপর পরের পর্ব:-