ভালোবাসি হয়নি বলা
ভালোবাসি হয়নি বলা
তিথি নিজে ড্রাইভ করে পাগলের মতো হয়ে খুঁজছে মিলনকে বারবার ওকে ফোন করছে কিন্তু ওর ফোন বন্ধ আসছে,গাড়ি করে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে পাগলের মতো কিন্তু পাচ্ছে না ওকে,, ওর মেসে ফোন করে সেখানে ও নেই ও তাহলে কোথায় গেলো মিলন?কি হয়েছিলো পূর্বে,মিলন আর তিথি এবার দুজনেই অর্নাস ৩য় বর্সে একসাথে পড়াশোনা করছে, ওরা দুজন খুবই ভালো বন্ধু,,,,,,একজন অারেকজনকে খুব ভালো করে চিনে আর জানেমিলন গরীব ঘরের ছেলেআর তিথি ধনী পরিবারের মেয়ে,কিন্তু তিথি ধনী পরিবারের মেয়ে হলেও ওর মধ্যে বিন্দু মাত্র অহংকার নেই,,,মিলন গরীব ঘরের ছেলে হলেও হাজার কষ্ট হলেও কখনোই তিথির থেকে টাকা নেয়নি,নিজে টিউশনি করে চালিয়েছে,মিলনের মা বাবা ওর ছোটবেলাতেই মারা গেছে,,পরিবার বলতে ও একাই,কেউ নেই ওর,,মিলন ছোটবেলা অনাথ আশ্রমে আর এখন টিউশনি করে নিজের খরচ চালায়,,মিলন ভালো ছাত্র হওয়ায় ওকে ভার্সিটি থেকে অনেক ছাড় দেওয়া হয়,,বৃত্তি প্রদান করা হয়,,,তাই ও সহজেই নিজের পড়াশোনা চালিয়ে নিতে পারছে,কখনো ভুলেও তিথির থেকে একটা টাকাও কখনো নেয়নি,,,,অর্নাস ১ম বর্ষ থেকেই শুরু হয় মিলন তিথির বন্ধুত্ত,কিন্তু তিথি কখোনো মিলনকে বুঝতে দেয়নি যে ও অনাথ,সবসময় হাসিখুশি ভাবে রাখার চেষ্টা করে মিলনকে,এভাবেই চলতে থাকে মিলন ও তিথির বন্ধুত্ত,,,,
কিন্তু মিলন তিথিকে খুব ভালোবাসে শুধু বন্ধুত্ব ভাঙার ভয়ে কখনো বলতে পারে নি,মিলন তিথিকে এখন থেকে নয় সে বন্ধুত্তের শুরু থেকে অনেক ভালোবাসে,,,,,,
একসাথে চলাফেরা, নদীর পাড়ে বসে সময় কাটানো সব চলতো ওদের মধ্যে,ওদের মিষ্টি বন্ধুত্তে চলতে থাকে সুন্দর ভাবে,,
একদিন মিলন ঠিক করলো তিথিকে তার মনের কথা বলে দেবে তাই তিথিকে সে নদীর পাড়ে ডাকলো,মিষ্টি বিকেলবেলায় মিলন একা একা নদীর পাড়ে চুপচাপ বসে অাছে,,নদীটা তখন খুবই নীরব,এমন সময় মিলনের কাঁধে এসে হাত রাখলো তিথি,বিকেলের পড়ন্ত রোদ্দুরে তিথিকে নীল শাড়ি পড়া অবস্থায় আরো মায়াবী লাগছিলো,,,,, হাতে নীল কাঁচের চুড়ি, ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক, কপালে লাল টিপ,, খোলা চুল গুলো দক্ষিনা হাওয়ায় উড়ছে,মিলন অপলকে তাকিয়ে আছে তিথির দিকে চোখের পলক যেন ফেলতেই পারছে না, বিকেলের পড়ন্ত সূর্যের আলোয় খুব মায়াবী লাগছে তিথিকে,মিলনের ঘোর কাটলো তিথির চিমটি কাটাতে,,,,,
তিথি মিলনের হাতে জোরে করে একটা চিমটি কাটলো,মিলনঃ আউউউ......কি করছিস তিথু,, ব্যথা লাগছে তো, এতো জোরে কেউ চিমটি কাটে বলতো,,,
তিথিঃ ঐ ব্যাটা,,, চিমটি কাটবো না তো কি করবো এভাবে তাকিয়ে কি দেখছিলি?
মিলনঃ এখানে তো আর কেউ নেই,,অবশ্যই তোকেই দেখছিলাম,তিথিঃ আমাকে তো রেগুলার দেখিস, নতুন করে দেখার কি আছে?
এই কথা বলতে বলতে মিলনের পাশে বসলো তিথি,তারপর,
মিলনঃ হুমমমম...জানি তোকে রেগুলার দেখি,,
কিন্তু আজ তোকে একটু অন্যরকম লাগছে,
তিথিঃ ওওওও... তুই কি এই সাজ দেখে বলছিস?
মিলনঃ হুমমম.....সত্যিই তোকে একদম মায়পরীর মত লাগছে,,,ভিষন সুন্দর
তিথিঃ হয়েছে,,,,,হয়েছে,,, আর ঢপ মারতে হবে না,
মিলনঃ না রে..... আমি ঢপ মারছি না একটুও,
তিথিঃ ছাড় ওসব....এবার কি বলার জন্য ডেকেছিস বল
মিলনঃ হুমমমম,,,,,,কিন্তু তুই আগে এটা বল আজ হঠাৎ এতো সেজেছিস কেন?
তিথিঃ বলছি,,, তোর সাথেও কিছু কথা আছে আমার,,, কিন্তু তুই আগে বল কি বলবি
মিলনঃ না তুই আগে বল
তিথিঃ এই দেখ....তোর কথাই আমি আগে শুনবো,,,,,,,বলবি তুই
মিলনঃ তুই আগে না বললে চলে যাবো বলে দিলাম,
তিথিঃ ওকে.....ওকে,, বলছি,
মিলনঃ হুমমম বল
তিথিঃ ভালোবাসি রে,
মিলন তিথির কথা শুনে ভাবলো,
(বাহ! আমি বলার আগেই তুই বলে দিলি তুই আমাকে ভালোবাসিস,,,,,
যাই হোক আমার আর এত কষ্ট করে আগে বলতে হবে না
মিলনঃ সত্যি ভালোবাসিস?
তিথিঃ হুমমম রে.......
মিলনঃ আগে বলিস নি কেন?? এতদিন কেন লুকিয়ে রাখলি?
তিথিঃ সরি রে দোস্ত,,,,, বলে সাহস পাইনি,,,
যদি তুই কিছু বলিস,,,, ভয় করছিলো,
মিলনঃ দূর পাগলী,,,, কি মনে করবো,,,,
আমিও তোকে ভা......
মিলন কিছু বলার আগেই তিথি বললো,,,
তিথিঃ সত্যি রে...ফাহাদকে সত্যি খুব ভালোবেসে ফেলেছি,
মিলন তিথির কথা শুনে যেন আকাশ থেকে পড়লো,
ওর পায়ের নিচ থেকে যেন মাটি সরে যেতে লাগলো,,,,,
সবকিছু যেন ওর সামনে এলোমেলো হতে লাগলো,,,
কি ভাবলো আর কি হলো
মিলন তো আর চোখের পানি ধরে রাখতে পারছে না,,,,
কষ্টে ওর বুকটা ফেটে যাচ্ছে,,,,,
কি বলবে বুঝতে পারছিলো না তবুও নিজেকে কোনরকম কন্ট্রোল করে কান্না চেপে রেখে বললো,,,,
মিলনঃ ফাহাদ মানে তোর বাবার বন্ধুর ছেলে?
মানে সেদিন যে কলেজে আসছিলো তোর সাথে দেখা করতে?
তিথিঃ হুমমমম
ওকে তো অনেকদিন হলো ভালোবেসে ফেলেছি,,,
কিন্তু ওকে বলে উঠতে পারছি না,,,,
কিন্তু আজ ফাইনালি ওকে বলবো,
মিলন নিজের চোখের পানি লুকিয়ে তিথির দিকে তাকিয়ে বললো,,
মিলনঃ এতো ভালো কথা
আর আমি এতে কি মনে করবো পাগলী,,
তুই কাউকে ভালো বাসিস,, এটা তো আমার জন্য খুশির খবর,,,
কিন্তু ফাহাদকে মনের কথা জানাবি তো আগে এখানে আসলি কেন??
তিথিঃ বা রে,, তোকে জানাবো না,,
তুই আমার জীবনের সবচেয়ে ভালো বন্ধু,,, তোকে না বলে কোনকিছু করেছি বলত
তাই তোকে বলতে এলাম,,, আর এ সাজ টা ওর জন্যই সেজে এসেছি
মিলনঃ হুমমম বুঝতে পারছি এজন্যই তো সাজ,,
ভালো ভালো
মুখে হালকা মুচকি হাসি দিয়ে বললো কথাটা মিলন,,,,
তিথিঃ হুমমম
এবার বলতো তুই কি বলবি,, যার জন্য আমাকে ডাকলি,
মিলন তখন কি বলবে বুঝতে পারছিলো না,,
তখন কিছু একটা ভেবে বললো,,,,
মিলনঃ না রো তেমন কিছু না ঐ আসলে সামনে ফাইনাল পরীক্ষা নাসেই বিষয়ে আলোচনা করার ছিলো তোর সাথে
নিজের মনের কথা আর জানাতে পারলো না মিলন তিথিকে,,
তিথিঃ কিইই বলছিস? এটা বলার জন্য আমাকে নদীর পাড়ে ডাকলি....এত জরুরী তলব?
মিলনঃ হুমমমম ভাবলাম নিরিবিলি জায়গায় আলোচনা করাটা ভালো হবে
তিথি তখন মিলনের মাথায় আলতো করে একটা থাপ্পড় দিয়ে বললো
তিথিঃ তুই না..সত্যি বদ্ধ পাগল
এটা তো লাইব্রেরিতেও আলোচনা করা যেত,
মিলনঃ ঐ আর কি এমনি,,,
নদীর পাড়ে মিষ্টি হাওয়া বইছে ভাবলাম এখানে কথা বললে মনটাও ফ্রেশ থাকবে আর কথাও হয়ে যাবে,,,
তিথিঃ সত্যিই কি এই কথা বলতো?নাকি অন্যকথা?দেখ একদম লুকাবি না বলে দিলাম,,,
মিলনঃ আরে না রে তিথু,,,, এ কথাই রে
আর তুই এখনো এখানে বসে অাছিস,, ফাহাদ ওয়েট করছে তো,,,
তুই এখন ওর কাছে যা
তিথিঃ হুমমমম,,, তুইও চল না,
মিলনঃ পাগল হলি? কাবাব মে হাড্ডি কেন হবো?
তুই যা.. আর ফাহাদ কি বললো এটা আমাকে অবশ্যই জানাবি,
তিথিঃ হুমমমম অবশ্যই তোকে তো সবার আগে জানাবো
এখন আসি রে,
পরীক্ষার বিষয়টা নিয়ে কাল আলোচনা করবো কেমন
মিলনঃ হুমমম
তিথি এই কথা বলেই মিলনের পাশ থেকে উঠে সামনের দিকে হাঁটতে লাগলো,
মিলন চুপচাপ তাকিয়ে তিথির যাওয়ার দিকে,আর চোখের পানি ফেলছে,,,,,এতক্ষন চোখের পানি আটকে রেখেছিলো কিন্তু তিথির যাওয়ার পর থেকে আর চোখের পানি আটকাতে পারলো না মিলন,অঝোরো গাল বেয়ে পানি ঝরতে লাগলো মিলনের তিথির যাওয়ার দিকে অনেকক্ষন তাকিয়ে থাকার পর মিলন নদীর পাড়ে গিয়ে চুপচাপ বসে রইলো,গাল দিয়ে অঝোরে বয়ে যাচ্ছে বেদনার নোনা জল,আর অপলকে নদীর জলের দিকে তাকিয়ে আছেআর নিজেই নিজেকে বলতে লাগলো,তোকে বলতে নিয়েও বলতে পারলাম না রে মনের কথা,,,,যাইহোক আমার হাজার কষ্ট হলেও তোকে তো আমি কষ্ট পেতে দেবো না, তুই তোর মনের মানুষের সাথে ভালো থাক,আমি তোর পথে বাঁধা হয়ে দাড়াবো না)
এসব বলতে বলতে কাঁদতে লাগলো মিলন,এবার জোরে জোরেই কাঁদতে লাগলো
চিৎকার করে কাঁদতে লাগলো,,,আর বলতে লাগলো মিলন হে খোদা.....আমাকে কি একটু শান্তি দেবে না, ছোটবেলা মা বাবাকে হারালাম তারপর অনাথ আশ্রমে বড় হলাম,কষ্ট করে কলেজ থেকে ভার্সিটি পর্যন্ত আসলামএকজন ভালো মনের মানুষ পেলাম,তাকেও পেলাম না, সেও হারিয়ে গেলো,,,,,,
এসব বলতে বলতে মাটির ওপর হাটুগেড়ে বসে বসে কাঁদতে লাগলো মিলন,ওর এই কান্নায় যেন আশে পাশের প্রকৃতিও কাঁদতে লাগলো, নীরব নদীর জল যেন মিলনের হাহাকার ভরা কান্না সহ্য করতে পারছে না, মিলনের এ বেদনা দায়ক চিৎকারে যেন পুরো পৃথিবীটাই অশান্ত হয়ে গেছে,,,,,
সূর্য ডুবে যাচ্ছে ধীরে ধীরে, চারদিক টা অন্ধকার নেমে আসছে,মিলন তখনো চুপচাপ বসে অাছে নদীর পাড়ে, তখন মিলন সম্পূর্ন নীরব,,,,,,,
একটা সময় পুরো পৃথিবীতে রাত নেমে আকাশে চাঁদ দেখা দিলো তখনো মিলন চুপচাপ নদীর পাড়ে আছে,চাঁদের আলোতে নদীর জল যেন ঝিকিমিকি করছে,,
চারদিকের পরিবেশটা অনেক সুন্দর হয়ে গেছে,আকাশ ভর্তি ঝিকিমিকি তারার মেলা, মিলন তখন ধীরে ধীরে নদীর পাড় থেকে উঠে চললো নিজের মেসের দিকে,রুমে এসে ধপাস করে খাটের ওপর শুয়ে পড়লো,রাত তখন বাজে ১০টা,এমন সময় মোবাইল এর স্ক্রিনে ভেসে উঠলো তিথির ছবি, মিলন বুঝতে পারলো তিথি কল করেছে,তারপর মিলন ফোন তুললো,
মিলন ভারাক্রান্ত গলায় ফোন উঠিয়ে বললো,,,
মিলনঃ হ্যালো, তিথু বল,,তিথিঃ কি ব্যাপার? তোর গলার আওয়াজটা এমন শোনাচ্ছে কেন বলতো?
কি হয়েছে তোর? সত্যি করে বলবি,,,,,
মিলন তখন নিজের গলার আওয়াজ ঠিক করে বললো,,,,
মিলনঃ কই না তো,, কি হবে,,
ঐ একটু ঠান্ডা লাগছে হঠাৎ করে,,,, গলাটা বসে গেছে,,
তিথিঃ কই আমার সাথে যখন ছিলি তখন তো ঠিকই ছিলি,,, হঠাৎ তোর ঠান্ডা লাগলো কি করে?
মিলনঃ আসলে আমি সন্ধ্যার পর আগে গোসল করছি সেজন্যই হঠাৎ ঠান্ডা লেগে গেছে,
তিথিঃ তুই কি কোনদিন আমার কথা শুনবি না বলতো
কতদিন বলেছি অসময়ে গোসল করিস না
তাও কেন করিস বলতো?
মিলনঃ আর করবো না রে,,,প্রমিস,
তিথিঃ তুই এই প্রমিসটা কতবার করছিস তোর কোন হিসাব আছে বলতো
আমি যাওয়ার পর যে তুই কি করবি আল্লাহই জানে,
তিথির যাওয়ার কথা শুনে মিলনের বুকের মাঝখানটায় যেন চিনচিন ব্যাথা অনুভব করতে লাগলো,,,
খুব কষ্ট হচ্ছিলো ওর,
তারপরও সব কষ্ট নিজের মধ্যে চেপে রেখে মিলন বললো,,
মিলনঃ সমস্যা নাই রে তিথু,, তুই শিখিয়ে দিয়ে যাচ্ছিস অভ্যস হয়ে যাবে,,
তিথিঃ হ্যা...সেই,,,মনে যেন থাকে
আর যেন প্রমিস না ভাঙা হয় নয়তো এসে কান মলে দেবো
মিলনঃ হুমম
তিথিঃ হ্যা যা বলার জন্য কল করছিলাম,,
ফাহাদ আমার প্রপোজাল এক্সেট করেছে রে
আমার যে কি খুশি লাগছে বলতে পারবো না
মিলন সমস্ত ব্যাথা চাপিয়ে রেখে মুখে এক চিলতে হাসি নিয়ে বললো,খুব ভালো তো রে,,,,
তোর খুশি তেই আমার খুশি,,,,, সবসময় হ্যাপি থাক তুই
তিথিঃ তোর মত বন্ধু যার আছে সে সত্যি ভাগ্যবান রে,, সবসময় তুই আমাকে
এভাবে সার্পোট করিস,
ইনশাআল্লাহ সারাজীবন আমরা বন্ধু হয়ে থাকবো
মিলনঃ হুমমমমম অবশ্যই থাকবো,
আর তোকে সার্পোট করবো না তো কাকে সার্পোট করবো শুনি,,,
তুইই তো আমার সবসময়ের সাথী,আমার আত্তার বন্ধু
তিথিঃ হুমমম তুইও
শুন একটা কথা বলি তোকে বল শুনবি,,,,
মিলনঃ তোর কোন কথায় আমি না বলেছি বলতো,,,
বলে ফেল কি কথা
তিথিঃ একটা ভালো চাকরী খোজ কর আর বিয়ে করে ফেল,আমি তোর জন্য ভালো মেয়ে দেখে দেবো,
মিলন এই কথা শুনে চুপ হয়ে গেলো,,,
ওর বুকের বামপাশে যেন ব্যাথাটা বাড়তে লাগলো,
সে ব্যাথা অনুভব করা অবস্থায়ই মিলন বললো,,,
মিলনঃ এসব কথা বাদ দে না,
পরে দেখা যাবে,,,,, তুই ফাহাদের দিকে একটু খেয়াল দে এখন,,,,অনেক তো খেয়াল দিলি আমার দিকে,,,,
তিথিঃ চুপ কর তো,,,
বাদ দেবো কেন??? বুঝলাম অনেক খেয়াল দিছি তোর উপর,কিন্তু আমার বিয়ের পর তোর খেয়াল রাখবে কে শুনি?
সেজন্য বলছি তারাতারি চাকরী খুজে একটা বিয়ে কর,
মিলনঃ সে পরে দেখা যাবে,,,
তোর নতুন সম্পর্ক একটু ফাহাদের দিকে খেয়াল দে,তোরা দুজন দুজনকে ভালোবাসিস তো নাকি,,
তাই এখন আমার খেয়াল কম করে ফাহাদের দিকে খেয়াল টা একটু বেশি দে,,,,
তিথিঃ চুপ করবি দুজনের দিকেই সমান খেয়াল দেবো,তুইও আমার আপন, ফাহাদও আমার আপন,তাই খেয়ালও সমান সমান,,🥰🥰
মিলনঃ তা কি করে..তখনি তিথি মিলনকে ধমক দিয়ে বললো,,,
তিথিঃ চুপ... আর একটা কথাও নয়,,,,
কিছু খেয়েছিস কি না বল?
মিলনঃ খাইনি এখনো,,, খেতে ইচ্ছে করছে না
তিথিঃ না খেলে এখন এসে পিটিয়ে খাইয়ে দিয়ে যাবো,,,
তারাতাড়ি খেয়ে নে বলেদিলাম
মিলনঃ আচ্ছা, আচ্ছা, খাচ্ছি রে,,,, রাগিস না
তিথিঃ হুমমমমম,,,,
শুন না ফাহাদ কল করছে এখন রাখছি,,,
সকালে কথা বলবো,
মিলনঃ হুমম ঠিক অাছে
তারপর তিথি ফোন কেটে দিলো,,মিলন তখন বিছানা থেকে উঠে বারান্দায় গিয়ে পকেট থেকে সিগারেট
বের করে খেতে লাগলো বারান্দায় গিয়ে দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে বসে,,,,
চাঁদনী রাতের আলোতে সিগারেটের ধোঁয়া স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে,,,,
চারিদিকে ঝিঝি পোকার গান শোনা যাচ্ছে,,,
আর মিলন নীবরতার সাগরে ডুবে সিগারেটের ধোয়া উড়াচ্ছে আকাশ পানে,
গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে নোনা জল,মিলনের নীবর কান্না যেন আরো নিস্তব্দ করে দিয়েছে রাতের পরিবেশটা চাঁদনী রাতের আলোর ঝলকে মিলনের চোখের জল স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে,,,একদিকে উড়াচ্ছে সিগারেটের ধোয়া আরেকদিকে চোখ নিয়ে ঝরাচ্ছে নোনা জল,এভাবেই বারান্দায় বসে পুরো রাত কাটিয়ে দিলো মিলন ফজরের আজানের আওয়াজে ঘুম ভাঙলো মিলনের,,ওযু করে নামাজ পড়ে বাইরে একটু হাটতে বের হলো মিলন,হাঁটতে হাঁটতে নদীর পাড়ে গিয়ে বসলো মিলন,,,
চুপচাপ বসে পড়লো নদীর পাড়ে, আর অপলকে তাকিয়ে রইলো নদীর জলের দিকে,এভাবে বসে থাকতে থাকতে সূর্য মামার উদয় হলো, চারপাশের পরিবেশটা আরো রঙিন হয়ে উঠলো,,এমন সময় মিলনের ফোনে কল আসলো,,,
পকেট থেকে ফোন বের করে দেখলো তিথি কল করেছে,,কল রিসিভ করার পর,
তিথিঃ হ্যালো...তুই কোথায় রে????
মিলনঃ এই তো নদীর পাড়ে বসে অাছি,,
তিথিঃ তুই তারাতাড়ি বসুন্ধরা শপিং মলে চলে আয় তো,,
মিলনঃঃ কেন? হঠাৎ ওখানে?
তিথিঃ এত কথা ভালো লাগছে না,,
তুুই আসবি কি না বল
মিলনঃ আরে রাগিস কেন,,
আসছি,,, আসছি,
তিথিঃ হুমমমম,,, এই তো গুড বয়,,,,
তারাতাড়ি আয়,,,,,
তারপর মিলন নদীর পাড় থেকে উঠে সোজা রওনা হলো বসুন্ধরা শপিং মলের দিকে,
বসুন্ধরা শপিং মলে পৌঁছানোর পর তিথিকে ফোন করলো মিলন,
মিলনঃ কই রে তুই...???
তিথিঃ ওও তুই এসে গেছিস,,,
তুই কোথায় আছিস????
মিলনঃ এই তো শপিং মলের ভেতরেই আছি,,
তিথিঃ ওকে....তুই দাড়া আমি আসছি,,,,,
মিলনঃ হুমমমম,,,
কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে থাকার পর মিলন দেখলো তিথি একজন সুর্দশন যুবকের সাথে ওর দিকে এগিয়ে আসছে,,,
মিলন ভাবলো হয়তো এটাই ওর বয়ফ্রেন্ড,,,
তারপর ওরা দুজন তিথির সামনে এসে দাড়ালো,,,,
তারপর তিথি বললো,,,,
তিথিঃ মিলনতোর তো ফাহাদের সাথে তেমন আলাপ নেই,,,,
তাই ভাবলাম ওর সাথে তোর আলাপ করাই,,,,
এ হলো ফাহাদ,,,
তারপর ফাহাদ মিলনের দিকে হাত এগিয়ে দিয়ে বললো,,,,,
ফাহাদঃ হ্যালো মিলন...কেমন আছো???
মিলনের তখন কষ্ট হলেও মুখে মুচকি হাসি দিয়ে ফাহাদের সাথে হাত মিলিয়ে বললো,,,
মিলনঃ আমি ভালো আছি...তুমি কেমন আছো???
ফাহাদঃ হুমমম আমিও খুব ভালো আছি,,,,,
তোমার সম্পর্কে তিথির কাছে সব শুনেছি,,,,,
তারপর ওরা তিনজন গিয়ে একটা কফিশপে বসলো,,,,,
অনেক ক্ষন কথা বার্তা হওয়ার পর মিলন বললো,,,,
মিলনঃ আমি এবার আসি,,,,
তোমরা কথা বলো,,,,,
তিথিঃ আরে এই তো আসলি....এক্ষুনি যাবি,
আরো একটু থাক না প্লিজ,,
ফাহাদ তুমি কিছু বলো,,,,
তখন ফাহাদ বললো,,,
ফাহাদঃ হেই মিলন,, আরো কিছুক্ষন থাকো তো,,,
তিথি এতবার করে বলছে,,,,,
মিলন আর ওদের কথ ফেলতে পারলো না,,,,
তারপর ওরা কফিশপ থেকে বের হয়ে শপিং মলের ভেতরে চলে গেলো,,,,,
একটা ওয়াচ শপে ঢুকলো ওরা,,
মিলন ওদের থেকে অনেকটা দুরেই দাড়িয়ে ছিলো তখন তিথি মিলনকে ডেকে বললো,,,,,
তিথিঃ মিলন তুই তো কোনদিন আমার থেকে কিছু নিস নি,,, কিন্তু আজ একটা জিনিস তোকে আমার থেকে নিতেই হবে,,,,
একদম না করবি না বলে দিলাম,,,,,
মিলনঃ ঠিক অাছে না করবো না,,
তোর যা ইচ্ছে দে,,,
তারপর তিথি মিলনের হাতে একটা দামি ঘড়ি পরিয়ে দিয়ে বললো,,,
তিথিঃ দেখতো এ ঘড়িটা পছন্দ কিনা তোর?
মিলনঃ তুই দিবি আর পছন্দ হবে না তা কখনো হয় নাকি,,, অবশ্যই খুব পছন্দ হয়েছে,,
তিথিঃ হুমমম ঠিক অাছে
মিলনঃ এবার তোমরা থাকো আমি এবার আসি কেমন,,🙂
তিথিঃ এখনি যাবি??
মিলনঃ হুমমমম...টিউশনি আছে
তিথিঃ হুমমম যাবি কিন্তু একটু আমার সাথে আয়
মিলনঃ কোথায়??
তিথিঃ আরে আয়তো,,,,
ফাহাদ তুমি একটু দাড়াও আমি আসছি,,,,
ফাহাদঃ হুমমমম,,,,
তারপর তিথি মিলনকে নিয়ে ফুড শপে গিয়ে দুই বক্স বিরিয়ানি কিনে মিলনের হাতে দিয়ে বললো,,,
তিথিঃ আজ রাতে এটা খাবি কেমন,,
মিলনঃ এতকিছু আমাকে দিচ্ছিস কেন?????
তিথিঃ কারন তুই আমার বন্ধু তাই,,,
আর কোন কথা নয়,,, চুপচাপ নিয়ে যা,,,,
মিলনঃ ঠিক অাছে
তারপর মিলন তিথির থেকে বিদায় নিয়ে শপিং মল থেকে বের হয়ে সোজা মেসে চলে আসলো,,,,
মেসে এসে রুমে ঢুকে বিরিয়ানির প্যাকেটটা আর হাতের ঘড়িট টেবিলের ওপর রেখে শাওয়ার নিতে গেলো,,,
শাওয়ার ছেড়ে দিয়ে শাওয়ার এর নিচে বসে অঝোরে কাঁদতে লাগলো আর বলতে লাগলো,,,,,
_তিথু রে....তোকে সত্যি খুব ভালোবাসি রে,,,
জানি না তোকে ছাড়া কি করে বাঁচবো,,,
তোর সাথে যে অন্য কাউকে আমার সহ্য হয় নারে,,,
তুই জানিস না কতটা কষ্টে আজ সারাদিন তোদের সাথে সময় কাটিয়েছি,,,,,
তোর সাথে ফাহাদকে দেখে সত্যি খুব কষ্ট হচ্ছিলো রে,,,
সত্যি খুব কষ্ট হচ্ছিলো,,,,
কথাগুলো বলতে বলতে অঝোরে নিজেকে কান্নার সাগরে ভাসিয়ে দিলো,,,,,,
এভাবে অনেকক্ষন থাকার পর ফ্রেশ হয়ে রুমে এসে একটু শুয়ে পড়লো,,,,,
ঘুম ভাঙলে জেগে দেখে ২০টা মিসডকল উঠে আছে ফোনে,,,
সবগুলো তিথির কল,,,,
মিলন তিথিকে কল ব্যাক করে,,,,,
তিথি কল উঠানোর পর,,,
তিথিঃ কিরে এতক্ষন ধরে ফোন করছি,,
ফোন উঠাস নি কেন????
ঘুমাচ্ছিলি নাকি???
মিলনঃ হুমমম রে,,, একটু ঘুমাচ্ছিলাম আরকি,,
তিথিঃ হুমমমম,,,, এখন কি করছিস????
মিলনঃ এই তো বেড থেকে নামি নি,,,
কেবল ঘুম ভাঙলো,,,
তুই কি করছিস????
তিথিঃ আমি বসে অাছি,,,
তারপর দুইপাশ থেকে চুপচাপ,,,,
কিছুক্ষন পর তিথি বললো,,,
তিথিঃ কিরে...এত চুপচাপ আছিস কেন রে???
কিছু হয়েছে????
মিলনঃ না রে,, কি হবে...কিছু হয়নি,,,,,
তা ফাহাদের সাথে কেমন সময় কাটলো??
তিথিঃ ঐ তুই তো ছিলি আমাদের সাথে,, দেখিস নি??? পাগল একটা,,,,
মিলনঃ আরে আমি আসার পর কেমন সময় কাটলো??? আর কোথাও কি গিয়েছিলি????
তিথিঃ হুমমমমম,,
ও ক্যান্ডেল লাইট ডিনারের প্ল্যান করেছিলো,,,
সেখানে গিয়েছিলাম ওর সাথে,,,,,
মিলনঃ ওহহহহ আচ্ছা,,, এখন রাখছি রে,,,,
পরে কথা বলি,,,,
তিথিঃ তোর কিছু হয়েছে??? সত্যি করে বলতো???
মিলনঃ না রে... আমার কি হবে,,,
ঠিক অাছি আমি
তিথিঃ সত্য বলছিস নাকি কিছু লুকাচ্ছিস??
মিলনঃ না রে,, কি লুকাবো,,, কিচ্ছু লুকাচ্ছি না,,,
আমি একদম ঠিক অাছি,,
তিথিঃ ঠিক অাছে....কাল কথা হবে,,,,,
বাই,,,
মিলনঃ হুমম বাই,,,,
মিলন ফোনটা রেখেই সোজা মেঝের ওপর বসে পড়লো আর আবারো কাঁদতে লাগলো আর বললো,,,,,,
_তুই সত্যি আমাকে অনেক বুঝিস রে তিথু,,
বুঝে গেলি আমার কিছু হয়েছে হয়তো,,
কিন্তু এটা বুঝলি না আমি তোকে ভালোবাসি,,, নিজের থেকেও বেশি ভালোবসি,,,,
কথাগুলো বলতে বলতে কাঁদতে লাগলো মিলন,,,
কাঁদতে কাঁদতে মেঝেতেই আবারো শুরু করলো সিগারেট খাওয়া,,,,
মিলন বারান্দায় এসে বসে সিগারেট টানতে লাগলো,,,,,,
পুরো ২ প্যাকেট সিগারেট শেষ করে দিলো পুরো রাতে,,,,,
সেদিনের মতো বারান্দাতেই ঘুমিয়ে গেলো মিলন,,,,
এভাবে সিগারেটের ধোঁয়া আর বারান্দাতে রাত কাটতে লাগলো মিলনের,,
সে কখনো তিথিকে বুঝতে দিতো না ও সিগারেট খায়,,,,,
পুরো নেশার মধ্যে ডুবে গেলো মিলন,,,
তিথির সাথে কথাবার্তা, দেখা করা এভাবে দেখতে দেখতে কেটে যায় ছয় মাস,,,,,
ছয় মাস পর,,,,
আজ তিথির ফাহাদের সাথে আংটি বদল ও তার পরের দিনই বিয়ে,,,,,
তিথির পরিবার ও ফাহাদের পরিবার এ বিয়েতে দেরী করতে চায় না,,,
তাই তারা আংটি বদলের পরের দিনই বিয়ের দিন ঠিক করে ফেললো,,,,,,,
তিথির মনে এখন শুধু খুশির মূর্ছনা,,,,
মিলনও শামিল হয়েছে তিথির খুশিতে,, মুখে এক রাশ মিথ্যা হাসি নিয়ে তিথির খুশির সাথে তাল মিলাচ্ছে,,,,
অনেক জমজমাট ভাবে হয়ে গেলো ফাহাদ আর তিথির আংটি বদল,,,,,
পরের দিন বিয়ে,,,,
তিথির বাড়িতে চলছে জমকালো আয়োজন,,,,
পুরো নাড়ি লাল, নীল, সবুজ মরিচবাতি দিয়ে সাজানো হয়েছে,,,,
তিথির গায়ে হলুদ হচ্ছে,,,,,
তিথি হলুদের মঞ্চে বসে আছে,,,,
মিলন শুধু তিথির দিকে তাকিয়ে আছে,,,
কাঁঠালি রঙের শাড়ি, গায়ে ফুলের গহনা, আর কাঁচা হলুদ লাগা অবস্থায় পুরো হলুদ পরীর মতো লাগছে তিথিকে,,,,,
মিলনকে এক কোণে দাড়িয়ে থাকতে দেখে তিথি ওকে ডাকলো,,,,
তিথির ডাকে মিলন এগিয়ে আসার পর তিথি বললো,,,,,
তিথিঃ কিরে দোস্ত,,, একটু হলুদ লাগাবি না আমাকে??? তুই হলুদ না লাগালে আমার ভালো লাগবে বল
মিলনঃ আরে মন খারাপ করছিস কেন,,,
অবশ্যই লাগাবো আমি তোকে হলুদ,,,,,
তারপর মিলন তিথিকে হলুদ লাগিয়ে দিলো তিথির গালে,,,
গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান শেষ হয়ে গেলো,,,,,,
সব আচার অনুষ্ঠান শেষ হতে হতে সন্ধ্যা হয়ে গেলো,,,,,
তিথি তৈরি হচ্ছে বধূ বেশে,,,,,
গায়ে লাল বেনাসরী, গা ভর্তি সোনার গহনা, কপালে লাল টিপ, ঠোঁটে গারো লাল লিপস্টিক,,,
পুরো লাল পরীর মতো লাগছে তিথিকে,,,
তিথি তৈরি হওয়া শেষে ও ওর রুমে বসে অাছে,,
ও খেয়াল করলো অনেকক্ষন হলো মিলনকে দেখা যাচ্ছে না,,,,
তিথি রুম থেকে বের হয়ে এদিক ওদিক খুঁজলো তিথিকে কিন্তু কিছুতেই ওকে খুঁজে পাচ্ছে না,,,,
তারপর বরযাত্রী চলে আসে,,,,,,,
ফাহাদের সাথে ধুমধামে বিয়ে হয়ে যায় তিথির,,,
তিথির মনে আজ শুধু আনন্দ আর আনন্দ,,,,
ওদিকে মিলন তিথির বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় তিথির বাড়ির দারোয়ান এর হাতে একটা রঙিন বড় শপিং ব্যাগ ধরিয়ে দিয়ে বলে,,,,,
মিলনঃ দারোয়ান কাকা,,,, এ ব্যাগটা আপনাদের তিথি ম্যাডামকে দিয়ে দেবেন,,,,,,
দারোয়ানঃ কেন বাবা?? তুমি থাকবে না বিয়ের অনুষ্ঠানে????
মিলনঃ না কাকা... আসলে আমার কাজ আছে কিছু,,
পরে ওর সাথে দেখা করবো,,,,
আর ওকে এ ব্যাগটা দিয়ে বলবেন বিয়ের পর যেন এ ব্যাগটা খোলে,,,,,
দারোয়ানঃ আচ্ছা, বাবা,,,
তারপর মিলন ব্যাগটা দারোয়ানের হাতে ধরিয়ে দিয়ে সোজা পথে হাঁটতে লাগলো,,,
সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার সময় তিথির বাড়ির দিকে একটিবার ফিরে তাকালো মিলন,,,,
তিথিকে একটিবার বধূ বেশে দেখার ইচ্ছে থাকলেও সে ইচ্ছে টা ও পূরন করলো না,,
এগিয়ে চললো সামনে অন্ধকারের দিকে,,,,
ধীরে ধীরে আলোকিত পথ ছেড়ে অন্ধকার পথের মধ্যে ঢুকে গেলো মিলন,,,,
ফোনে ডিসপ্লে তে তিথির ছবি সেট করা ছিলো,,,
ছবিটার দিকে তাকিয়ে মন ভরে দেখলো আর বললো,,,,
_তিথু সত্যি অনেক সুন্দরী......পুরো পরীর মত,,,,,
অনেকক্ষন ছবির দিকে তাকিয়ে থাকার পর ফোনটা সুইচ অফ করে ছুড়ে ফেলে দিলো জংগলের মধ্যে,,,,
যাতে তিথি আর ওর সাথে যোগাযোগ না করতে পারে,,,,,
তারপর মিলন সামনে অন্ধকারের দিকে এগিয়ে চললো,,,,,
হাঁটতে হাঁটতে একটা বড় ব্রিজের ওপর এসে দাড়ালো মিলন,,,,,,
ব্রিজের রেলিং এর একেবারে কাছে গিয়ে দাড়ালো মিলন,,,
নিচে পাথুরে নদীর জল যেন ওকে ডাকছে হাতছানি দিয়ে,,,,,
নীরব মনে দাড়িয়ে আছে মিলন ব্রিজের রেলিং এর
পাশে,,,,,,
অপেক্ষায় আছে মিলন কখন পাথুরে নদীর জল তাকে টেনে নেবে নিচে অন্ধকারের দিকে,,,,
এভাবেই একটা সময় দাড়িয়ে থাকতে থাকতে মিলন উঠে পড়ে ব্রিজের রেলিং এর ওপর,,,,,,
এদিকে,,,,,
তিথি মিলনের কথা এক মূহুর্তের জন্য ভুলে যায়,,,
সে তখন ফাহাদের সাথে পাশাপাশি বসে কথা বলছিলো,,,,,,
এমন সময় দারোয়ান এসে তিথির কাছে শপিং ব্যাগটা দিয়ে বললো,,,,,
দারোয়ানঃ তিথি মা,,,,, একটা ছেলে এই ব্যাগটা দিয়ে গেছে তোমাকে দেওয়ার জন্য,,,,,,
তিথি তখন কিছু বুঝতে পারলো না,,,,,
তিথি ব্যাগটা নিয়ে খুলে দেখলো একটা নীল শাড়ি আর একটা চিঠি,,,,,,
তিথি তখন বুঝতে পারলো এটা কার কাজ,,,,,
তিথি তখন নিজেই নিজেকে বললো,,,
_পাগল ছেলে একটা,,,,
বিয়েতেও থাকলো না,, সব অনুষ্ঠান মিটে যাক মজা দেখাবো ওকে,,,,,,
তারপর চিঠিটা খুলে পড়তে লাগলো তিথি,,,,,,
প্রিয় তিথু,,,,,
আশাকরি তোর বিয়ে সুন্দর ভাবে হয়ে গেছে,,তুই নিশ্চয়ই খুব খুশি তোর ভালোবাসার মানুষকে পেয়ে,,তুই খুশি থাকলেই আমি খুশি থাকবো,,,,, তোকে একটা সত্যি কথা কখনো বলতে পারিনিএই ভয়ে বলতে পারিনি তুই যদি রেগে বন্ধুত্তটা নষ্ট করে দিস সেজন্য,কিন্তু আজ তোকে তো বলতে বাধা নেই কারন তুই রাগ করলেও আমাকে আর খুঁজে পাবি না,যাইহোক বলেই দেই,, আমি তোকে আমার বন্ধুত্তের প্রথম দিক থেকে খুব ভালোবাসি রে,
সত্যি আমি তোকে খুব ভালোবা কিন্তু ভয়ে কখনো বলতে পারিনি,,,,
জানিস নদীর পাড়ে তোকে আমি পরীক্ষার কথা বলতে নয় তোকে আমার মনের কথা জানানোর জন্য ডেকেছিলাম কিন্তু তুই তার আগেই ফাহাদের সাথে সম্পর্কের কথা বলে দিলি,তখন তোর খুশির জন্য আমি আর আমার মনের কথা তোকে জানাতে পারিনি রে,,,,,
আর ঐ নীল শাড়িটা একবার পড়িস পারলে, তোকে ঐ শাড়িতে সত্যি সুন্দর মানাবে,,,
কিন্তু বিশ্বাস কর আমি তোকে নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসি, সেজন্য তোকো সুখীও দেখতে চাই,,,,,
তাই তো তোর সুখের জন্য আমার মনের কথা তোকে আর জানালাম না সামনাসামনি,সামনাসামনি বলিনি তে কি হয়েছে,,,
চিঠিতে তো বললাম, জানিস তোর সাথে ফাহাদকে দেখে খুব কষ্ট হতো আমার ঐ দিনের পর আমার প্রতিটা রাত কেটেছে নিকোটিনের ধোয়ার মাঝে,,,,,,
প্রতিটা রাত আমি বেদনার ধারা বইয়ে দিতাম দু চোখ দিয়ে,,,, কিন্তু তোকে তা বুঝতে দেইনি কারন তোকে যে আমি কষ্ট দিতে চাই না রে,,,,
জানিস তুই যেদিন ফাহাদকে সাথে নিয়ে আমার সাথে সারাদিন ঘুরলি তখন আমার প্রতিটা সেকেন্ড বুকের বামপাশে ব্যাথা করেছে,,,,, ঐ দিন মেসে ফেরার পর এত কষ্ট হচ্ছিলো যে চিৎকার করে কান্না করেছি,,আর তুই যে আমার ফোন করে আমাকে বলেছিলি আমার গলার আওয়াজ ওমন কেন???
আসলে তখনও আমি কান্না করেছিলাম,যাইহোক তুই ফাহাদের সাথে ভালো থাকিস, খুশি থাকিস সবসময়,,,, আর তোকে ভালোবাসার কথা বললাম বলে রাগ করলি না তো,, রাগ করলেও আর কিছু বলতে পারবি না আমাকে,,,,,,
কারন তুই যখন চিঠিটা পড়বি তখন আমি এ পৃথিবীর সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে চলে গেছি না ফেরার দেশে,, যে দেশ গেলে আর ফেরা যায় না সেখানে চলে এসেছি আমি,,,তবে চিন্তা করিস না,,,,,
তোর সাথে আমি রোজ কথা বলবো,,, ঐ দুর আকাশের তারা হয়ে,,,
তোর আমাকে চিনতে অসুবিধা হবে না কারন রাতের আকাশে সবচেয়ে যে তারা টা জলজল করবে সে তারাটাই হলো আমি,,,তোর সাথে সারাজীবন ইশারায় কথা বলে যাবো,,, রাতে একটু ছাঁদে আসিস,,
তোর সাথে ইশারায় কথ বলবো,,,
ইতি তোর অভাগা বন্ধু
মিলন,,,,,,
তিথি চিঠিটা পড়তে পড়তে কান্নায় ভেঙে পড়ে,,,
ফাহাদও বুঝতে পারে না কি হয়েছে,,,,
তিথি আর দেরী না করে বের হয়ে যায় বাড়ি থেকে গাড়িতে উঠে নিজে ড্রাইভ করে খুঁজতে থাকে মিলনকে,,,,,
এক হাত দিয়ে ড্রাইভ করছে আর এক হাত দিয়ে মিলনকে ফোন করছে,,
কিন্তু মিলনের ফোন কিছুতেই ঢুকছে না,,
বারবার বন্ধ বলছে,,,,,,
পাগলের মতো খুঁজছে মিলনকে তিথি,,,,,,
কি করে আর খোলা পাবে মিলনের ফোন????
কি করে আর তিথি খুঁজে পাবে মিলনকে,,,
""মিলন রেলিং এর উপর উঠার পর শেষ বারের মত ঘন কালো আকাশের দিকে চিৎকার করে বলে,,,
""আমি তোকে খুব ভালোবাসি রে তিথু""
এরপর.....এরপর মিলন হারিয়ে যায় পাথুরে নদীর গভীরে,,,,,
চলে যায় না ফেরার দেশে,,,,,
হয়ে যায় আকাশের ঝলমলে তারা,,,,,""
মিলন তো আর এ পৃথিবীর বুকে নেই
ওর কোন অস্তিত্ত নেই আর এ পৃথিবীতে,,,,,
ও যে চলে গেছে না ফেরার দেশে,,,
হয়ে গেছে দুর আকাশের তারা,,,,,,
সব ভালোবাসার গল্প Happy Ending হয় না
বেদনাদায়কও হয়,,,,,
মিলন তিথির এ ভালোবাসার গল্পেও ঠিক সেটাই হলো,,,,,
অসমাপ্ত রয়ে গেলো মিলনের ভালোবাসা,,,,,
তিথি পরে জেনেও আর কিচ্ছু করতে পারলো না,,,
শেষ হয়ে গেলো সব এক নিমেষে,,,