Shwagota Sayeed

Drama Classics Inspirational

5.0  

Shwagota Sayeed

Drama Classics Inspirational

"বংশের বাতি"

"বংশের বাতি"

15 mins
1.4K


(শেষ অংশ)

প্রশ্নটা ছুঁড়ে দিয়ে তীব্র দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো রেহনুমার দিকে আরশি। আর ওদিকে রেহনুমা একবার মাহতাবের মুখের দিকে, একবার আরশির মুখের দিকে তাকাচ্ছেন। দৃষ্টি বিহ্বল, মুখের প্রতিটা রেখায় ফুটে উঠেছে হতভম্ব অবস্থা উনার মনের। যা কোনদিন কল্পনা করাও প্রয়োজন হয় নি, আজ সেই প্রশ্নের সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে আরশি। উনার সারাজীবনের বিশ্বাস, আত্মতৃপ্তি, অহমিকা, সব কিছুই কাঠগড়ায় দাঁড়ানো যেন। বংশ তো বংশই হয়! আর সেটা প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মে বয়ে নিয়ে চলে তার পুরুষ উত্তরাধিকার। কিন্তু কিসের যোগ্যতায় বংশধারা বজায় রাখার জন্য এই প্রচন্ড প্রচেষ্টা, সেটা তো কোনদিন ভেবে দেখেন নাই!

উনার অবস্থাটা একটু উপভোগ করলো আরশি ৩০ সেকেন্ড। তারপর আবার জোর করলো, “কই বলুন!... সারাক্ষণ তো আমার ছোট বংশ, ছোট জাতের কথা তুলে খোঁটা শোনান... তা আপনার বংশের গরিমা কারা কারা রক্ষা করেছেন আমাদের বলবেন না? না বললে বুঝবো কি করে? আমার সামনে এই বংশের প্রদীপের তো নমুনা বলতে এই একজন!”, বলে হাত তুলে মাহতাবকে দেখালো ও। মাহতাবের মনে হলো মাথা ঘুরে পড়ে যাবে। ১০ বছরের অপমান, অবমাননার শোধ যে আরশি এভাবে তুলবে তা ও দুঃস্বপ্নেও চিন্তা করে নি কোনদিন। ভাবতে পারলে আজকের এই দিন দেখতে হতো না।

সারোয়ার সাহেব আবার বললেন, “আরশি... বাদ দে মা... তোর গোছগাছ সব হয়ে গেলে বের হওয়ার জন্য তৈরি হ... এগুলো নিয়ে আর ঘাঁটাঘাঁটি করিস না...”।

আরশি বললো, “তা হয় না বড়মামা!... উনাদের কোনও কথারই কোনও জবাব কোনদিন আমি দেই নি... কথা না বললে পরিষ্কার হবো কি করে?... মা! বললেন না? ... তা এই যে একজনকে উপহার দিয়েছেন আপনি সমাজকে... সে মন্দ লোক নয় এটুকু ক্রেডিট আমি তাকে দিতেই পারি... আজকের দিনে সৎ, সাধারণ ভালো মানুষই বা কোথায় পাওয়া যায়, তাই না? সেটাও তো আরেকটু হলে আমার গায়ে হাত তুলতে গিয়ে খোয়াতে বসেছিলো!... এতোক্ষণে স্ত্রী-নির্যাতনকারী পুরুষের লিস্টে নাম উঠে যেতো... সে ভালো মানুষ হলেও ভালো স্বামী সে হতে পারে নি... যে স্বামী স্ত্রীর শারীরিক অবস্থার কথা বিবেচনা না করে, স্ত্রীর মৃত্যু হতে পারে জেনেও একের পর এক সন্তান জন্ম দেয়ার জন্য জোরাজুরি করে, স্রেফ একটা ছেলে সন্তানের জন্য, সে আর যাই হোক স্ত্রীকে স্ত্রীর মর্যাদা যেমন দিতে শেখে নি, স্ত্রীর কাছেও উত্তম স্বামীর সার্টিফিকেট সে পেতে পারে না... ভালো সন্তান সে কিনা সে বিচার আমি আপনার উপর ছেড়ে দেবো... আর ভালো বাবা হওয়ার সুযোগ তার এখনও ফুরিয়ে যায় নি... কিন্তু... এর বাইরে? কি বিশেষত্ব তার? কি ক্যারিশম্যাটিক কোয়ালিটি তার আছে?... আপনার চোখে সে অসাধারণ... বুঝলাম... সেটা সব মায়ের চোখেই তার সন্তানেরা হয়... আপনার কাছে আপনার ছেলে যেমন... আমার কাছে আমার মেয়েরাও তেমনই অসাধারণ... মা হয়ে এটুকু আমি বুঝি... প্রতিটা মানুষ চায় দুনিয়াতে নিজের একটা সন্তান আনতে... নিজের একটা অংশকে নতুন একটা মানুষের আদলে বেড়ে উঠতে দেখতে... এবং সেই সন্তানের দিকে ধেয়ে যায় তার স্নেহ... এটা ন্যাচারাল রিজেনারেশন-এর প্রসেস এবং সাইকোলজি... কিন্তু বংশের গতি হওয়াটা এতো জরুরী কেন? তাও ছেলে সন্তান দিয়েই? এমন যদি হতো যে সে সন্তানের বাবা হতেই পারে নি, তাও নাহয় আমি বুঝতাম যে আহা!... বাবা হওয়ার বিশেষ ইচ্ছা ছিলো, হতে পারলো না... বাট হোয়াই বংশের গতি? হোয়াই বংশের বাতি?... সন্তান হওয়া আর বংশ রক্ষার মধ্যে কোনও পার্থক্য তো আমি দেখি না... পার্থক্য করেন আপনারা... ছেলে আর মেয়ে হওয়া দিয়ে... তাই আপনাকেই জিজ্ঞেস করছি...”।

থামলো আরশি। রেহনুমা বোধহয় কিছু বলতে চাইলেন। কিন্তু তাঁর গলা দিয়ে কিছুটা গোঁ গোঁ জাতীয় একটা আওয়াজ ছাড়া আর কোনও পূর্ণ শব্দ বেরুলো না। ঘরের সব ক’টা চোখ আরশির দিকে। এতোগুলো মানুষের জীবনভর আঁকড়ে ধরে রাখা বিশ্বাস, ভাবনার গোড়ায় আঘাত করে চলেছে আরশি একের পর এক। যে ভাবনা, যে বিশ্বাসকে এরা কেউ কোনদিন প্রশ্ন করার কথা ভাবেই নি! চিন্তাও করে নি যে এর বাইরেও কিছু ভাবার থাকতে পারে, চিন্তা করার থাকতে পারে। আরশি দম নিয়ে আবার বলতে শুরু করলো, “আর এই যে এই টাক মাথা, ৪০ বছর বয়স... সামনের দিকে বাড়ানো ভুঁড়ি... এগুলোসহ আপনি আবার তার বিয়ের কথাও বড় গলায় বলে যাচ্ছেন... একজন ৪০ বছর বয়স্ক ডিভোর্সি, ৩ বাচ্চার বাপকে বিয়ে করাবেন আপনি? কোনও রুচিশীল, সঙ্গতি আছে এমন পরিবারের মেয়ে আপনি পাবেন কিনা নিজেকেই প্রশ্ন করুন... হ্যাঁ পাবেন!... যেসমস্ত পরিবারে আপনার মতোই মেয়েদেরকে ময়লার বালতি মনে করে আর বাথরুমের ঝাঁটার মতো ব্যবহার করে... সেরকম কোনও পরিবার থেকে মেয়ে বিদায় করে তারা হয়তো বোঝা নামাবে...”। কথা থামিয়ে শব্দ করে হেসে উঠলো আরশি, হাসতে হাসতেই বললো, “আমার মায়ের আরও একটা মেয়ে থাকলে ভালো হতো অবশ্য... আপনার পাত্রী খোঁজার ঝামেলা কমলেও কমতে পারতো...”।

***

আরশি হেসেই চলেছে। আর রওশন আরার মুখটা টকটকে লাল হয়ে গেছে। তাঁর আজন্মলালিত বিশ্বাসে তো বরাবরই দফায় দফায় আঘাত করেছে তাঁর মেয়েরা, কিন্তু আজকের আঘাতটা তাঁর জন্যেও নতুন। আজকে আফসোস হলো, মেয়েদের সাথে ছোট থেকে এতোটা ভেদাভেদ না করলে হয়তো বা এতোটা ক্ষোভ জমতো না আরশির মনে, আর আজকের এই অপমানটা সইতে হতো না উনাকে।

রেহনুমার মুখে কথা সরছে না। চোখের দৃষ্টি বিস্ফারিত। আজকে তাঁর মনে পড়ছে, বহুবার তাঁর মৃত স্বামীর মুখে শুনেছেন, “এই মেয়ে লড়তে জানে... তেজী মেয়ে আমাদের বৌমা!... ওর এই তেজের জন্যই আমি ওকে পছন্দ করে আমাদের ঘরে এনেছি... আগুন আছে ওর ভিতর...”। বহুবার শুনেছেন, কিন্তু কথাগুলোকে গুরুত্ব দিয়ে বোঝেন নি। পরবর্তীতে বোঝার প্রয়োজনও পড়ে নি উনার, কারণ ১০ বছরের বিবাহিত জীবনে উনার সাথে কোনদিনই গলা তুলে কথা বলে নি আরশি। মতের অমিল হলে পরিষ্কারভাবে নিজের বক্তব্যটা জানিয়েছে, এবং নিজের সিদ্ধান্তে অটল থেকেছে, কিন্তু তার বিনিময়ে উনার গালিগালাজ আর অপমানজনক কথাবার্তার কোনও জবাব দেয় নি। এতেই উনার ধারণা হয়েছিলো যে উনার কর্তাটি যা জানতেন তা হয়তো ভুল জানতেন আরশি সম্পর্কে। 

উনার স্তম্ভিত অবস্থা দেখে এবার আস্তে করে আরশি বললো, “নিজের উপর আস্থা থাকা ভালো, মা!... কিন্তু তাই বলে নিজের ব্যাপারে অন্ধ হওয়াটা কোনও কাজের কথা না... অন্যকে ছোট করার আনন্দে আমার নিজের যোগ্যতা বা গুণ কতোটুকু, সেটাও যদি ভুলে যাই, তাহলে সেটা শুধুমাত্র আমার বোকামি না, সেটা আমার বোধের ঘাটতিও বটে।“

রাগে, নিষ্ফল আক্রোশে ফুঁসছেন রেহনুমা। চোখ দিয়ে এবার সত্যিকারের পানি ঝরছে। এই মেয়ে মুখের উপর দিয়ে একের পর এক ইনিংস জিতে নিয়ে যাচ্ছে সহ্য করতে পারছেন না সেটা কিছুতেই। কিন্তু এর যুক্তি কাটানোর মতো কোনও উপায়ও তো সে রাখে নি! চিৎকার করে যে উঠবেন ওর উপর, কথা যে থামাতে বলবেন, সেটাও এখন আর সাহসে কুলাচ্ছে না। আজকে এই মেয়ে যে ছেড়ে কথা বলবে না, তা তিনি বেশ বুঝেছেন। ওকে অপদস্থ করতে গিয়ে এতোগুলো মানুষ ডেকে এনে এখন নিজেই চরম হেনস্থা হয়ে গেছেন।

আরশি আরও একবার বলতে শুরু করলো, “একটু আগে কি যেন বলছিলেন মা? আমি কেমন মা? এখন আমি আপনাকে প্রশ্ন করছি, আপনি কেমন মা যে নিজের সন্তানকে তার পিতৃত্বের সুখ থেকে বঞ্চিত করার জন্য উস্কে চলেছেন? আমার মেয়েদের মাথার উপর থেকে বাপের ছায়া কি আমি সরিয়ে নিয়েছি নাকি আপনি দিনের পর দিন একটু একটু করে সরিয়েছেন? এতোটাই বিষাক্ত করে ফেলেছেন নিজের ছেলের পিতা হিসেবে মনটা যে নিজের মেয়েদের কাছে টানতে সে পারে না?... আমি আপনাকে প্রশ্ন করছি, আপনি কেমন মেয়েমানুষ যে নিজে মা হয়ে আরেকজন মায়ের মাতৃত্বকে অসম্মান করেন? ছোট করেন তার গর্ভকে?”

ঘরের ভেতর পিনপতন নিস্তব্ধতা। এদের অনেকের মনে অনেক কিছু চললেও মুখে কেউই কিছু বলে উঠতে পারছে না। বিস্ফারিত দৃষ্টি রেহনুমার। শরীর কাঁপছে অল্প অল্প। গলার স্বর অনেকটা নরম করে আরশি বলছে, “আর একটু আগে যে আমি বললাম না? যে আপনার ছেলের ভুঁড়ি হয়েছে, টাক বেরিয়েছে... একটা কথা কি জানেন? জীবনসঙ্গীর কাছেও হয়তো একটা মানুষের সৌন্দর্য্য কমে আসে একটা সময়, কিন্তু একটা মেয়ের কাছে তার বাবা আজীবন সব চাইতে হ্যান্ডসাম পুরুষ হিসেবে রয়ে যায়... ওর মেয়েদের জিজ্ঞেস করুন... আজকে করুন... আজকে থেকে আরও ২০ বছর পরে করুন... যতোবার জিজ্ঞেস করবেন, ততোবার ওরা বলবে যে ওদের চোখে ওদের বাবাই সেরা সুদর্শন পুরুষ... যেমন আমার চোখে আমার বাবা... এখনও... নিজের মেয়েদের সেই ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত করলেন আপনি নিজের ছেলেকে...”, ঠোঁটে বাঁকা একটা হাসি ফুটিয়ে আরশি বললো, “আফসোস! আপনাকে জিজ্ঞেস করলাম কি আছে এমন এই বংশে যে তা রক্ষা করাটা এতো জরুরী... আপনি একবারও আমার শ্বশুরের কথাটা বললেন না... যদি বলতেন, তোমার শ্বশুরের মতো মানুষের একটা লেগ্যাসি থাকা উচিৎ... সেটা ছেলে দিয়েই হতে হবে সেটা না মানলেও আমি মেনে নিতাম যে হ্যাঁ... এমন মানবিক, এমন উদার এবং জ্ঞানী মানুষের, এমন বংশের ধারা বজায় থাকা উচিৎ... দুঃখের বিষয়... আপনার ছেলে তার বাবার একশো ভাগের একভাগ গুণসম্পন্নও হয় নি... ছেলে হয়ে বিশেষ লাভ তার আমি দেখি না...”, তিক্ত একটা হাসি হাসলো আরশি।

কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে ঘরের আবহাওয়া বদলে দিয়ে এবার আরশি ওর শেষ অস্ত্রটা ছাড়লো, “আর মা! আপনি তো ডিগ্রী পাশ করেছেন শুনেছিলাম!... অতএব এই সামান্য একটা জ্ঞান তো আপনার থাকার কথা! তাও যদি না জেনে থাকেন তো আমিই বলে দিচ্ছি, আপনি জেনে রাখুন। সন্তানের জেন্ডার মায়ের কারণে নির্ধারিত হয় না... ওটা নির্ধারিত হয় বাবার স্পার্মের কারণে... X ক্রোমোজম আর Y ক্রোমোজমের কম্বিনেশনে হয় ছেলে সন্তান... আর মায়েদের শরীরে শুধুমাত্র X ক্রোমোজমটাই থাকে, ছেলে বাচ্চা হওয়ার জন্য Y ক্রোমোজম আসে বাবার শরীর থেকে… তাই আমার যে ছেলে হয় নাই, সেটা আমার গর্ভের… আপনার ভাষায় আমার পেটের দোষ মোটেও না…। দোষ যদি থেকে থাকে তো সেটা আপনার ছেলের টেস্টিকলসের… এর পরে তাবিজ টাবিজ কিছু ঝুলাতে হলে, বা অমুক জিনিস খেলে ছেলে হবে, অমুক পুকুরের মাঝখানে গিয়ে অমাবস্যার রাতে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে, এরকম কিছু নিয়ম কানুন মানতে হলে কাইন্ডলি আপনার ছেলেকে দিয়ে মানাবেন প্লিজ… নাহলে আরও ১০ টা বিয়ে দিলেও রেজাল্ট সেই একই থাকবে, কেমন?”

ওর কথা শুনতে শুনতে ততোক্ষণে আঁচলে মুখ আড়াল করেছেন নাহার আর নার্গিস। শারমিন অন্যদিকে তাকিয়ে। শিউলি আর আছমা অতোটা শিক্ষিত না বলে কথাগুলো বোঝেও নি তেমন, তাই ওদের তেমন সমস্যাও হচ্ছে না। মাহতাব ঘাড় নিচু করে দাঁড়িয়ে। আরশিকে থামাতে গেলেও এখন কি থেকে কি বলে বসে সেই ভয়ে কিছু বলা তো দূর, নিজে নড়তেও ভয় পাচ্ছে। পরশ প্রাণপণে হাসি চাপছে আর সারোয়ার সাহেব জানালা দিয়ে উদাস দৃষ্টিতে বাহির দেখছেন, যেন ঘরের কথা কিছু কানেই যায় নি উনার!

“নির্লজ্জ! বেহায়া কোথাকার!... ঘরের মধ্যে এতোগুলা মুরুব্বী মানুষ!... এই নোংরা কথাগুলো বলতে এতোটুকু বাধলো না তোমার!” রাগে বুক হাপরের মতো ওঠানামা করছে রেহনুমার। এই মেয়ের সাহস দেখে তাঁর বিস্ময় আজ সীমা ছাড়িয়েছে।

জবাব দিলো আরশি, “আপনিই তো সারাক্ষণ বলে বেড়াচ্ছেন ছেলে চাই ছেলে চাই! নাতি চাই নাতি চাই! তা কি পদ্ধতিতে নাতি হবে সেটাই তো আমি শুধু বললাম! … একই কথা আপনি কন্টিনিউয়াস বলছেন, আপনার লজ্জা করছে না ছেলে-ছেলের বউকে দুনিয়াশুদ্ধ মানুষের সামনে এই নিয়ে কথা শোনাতে, বাচ্চা হওয়ানোর কথা বলতে, আর আমি সায়েন্টিফিক ব্যাপারটা বললেই দোষ! নাতি কি আপনার আকাশ থেকে টুপুস করে পড়বে নাকি?”

***

দুই চোখ দিয়ে আগুন ঝরছে রেহনুমার। পাত্তা দিলো না আরশি। সামান্য আড়মোড়া ভাঙার মতো ভঙ্গীতে নড়েচড়ে সোজা হয়ে বসলো চেয়ারে। গলার স্বর একদম স্বাভাবিক রেখে এবার মাহতাবকে উদ্দেশ্য করে বললো, “মাহতাব, তোমার সাথে কিছু সেটেলমেন্টের ব্যাপার আছে আমার… সেগুলো এখনই শুনে নাও… আমার গাড়ি এসে যাবে একটু পরেই। আমার অফিস থেকে দেয়া গাড়িটা তো আমি নিয়েই যাচ্ছি… আর এই বাসার গাড়িটার জন্য যে কার লোনটা আমি এতোদিন ধরে দিচ্ছিলাম, সেটা তোমার নামে সেট করে দিয়েছি... আমি আর ওটা দেবো না এখন থেকে। গাড়ির কাগজপত্র তো এমনিতেই তোমার নামেই...”।

আরও কিছু বলার জন্য মুখ হাঁ করেছিলো কেবলই, এই সময় ওর শাশুড়ি বললেন, “কি করছ কি বৌমা! বাইরের লোকের সামনে এই সমস্ত সাংসারিক বৈষয়িক আলাপ কি কেউ করে!... এতোটুকু আক্কেল নাই তোমার?”

এবার আরশির অবাক হওয়ার পালা এলো যেন। বিস্মিতভাবে বললো, “তাই নাকি! আমি তো ভাবলাম আমার হাতে পড়ে আপনার সংসারের দুরবস্থাটা দেখাতেই আপনি উনাদের আসতে বলেছিলেন! আমার মতো অলক্ষ্মী বৌয়ের কারণে কি ভীষণ দুর্দশা, সেটা বোঝাবেন না উনাদের! আমার নামে বিচার পর্যন্ত দিলেন উনাদের কাছে! আর এখন বলছেন উনারা বাইরের লোক! তা কি করে হয়, মা! উনারা যখন আমার সম্পর্কে এতোটা জেনেইছেন... তখন বাকিটুকুও জানুন!...”

আবার মাহতাবের দিকে ফিরলো আরশি, এবং ওর চেহারার করুণ মিনতিটা সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে বলে চললো, “হ্যাঁ তো যা বলছিলাম... মিরপুরে যে ফ্ল্যাটের কিস্তি, সেটাও সামনের সপ্তাহেই তুমি আমাকে টাইম দেবে, একসাথে ওই বিল্ডার্সদের অফিসে বসে তোমার নামে করে নিতে হবে... আমি ওটাও আর দেবো না। এই ফ্ল্যাটটা নেয়ার পরে এটার কিস্তি দিয়ে আমার আর আরেকটা ফ্ল্যাটের কিস্তি টানার মতো সামর্থ্য নেই... আর তুমি তো দু’দিন পরে আবার বিয়ে করবে! তো তোমার নতুন সংসারে যদি বংশ প্রদীপ জ্বলে, তখন তো আর এই ফ্ল্যাটে আমার মেয়েদের কোনও শেয়ার নাও থাকতে পারে, তাই না? আর তাছাড়া আমার মেয়েদের জন্য আমি একাই যথেষ্ট... তোমার এই সমস্ত সম্পত্তি ওদের না পেলেও চলবে। তবে হ্যাঁ... গত দু’বছর যাবৎ এই ফ্ল্যাটের আর গাড়ির যা কিস্তি আমি দিয়েছি, সেটা তুমি আমাকে ফেরত দেবে... যা আমার বা আমার মেয়েদের না সেখানে আমি খামোখা ইনভেস্ট করতে যাবো কেন, বলো? পেমেন্ট নিয়ে কোনও এদিক ওদিক হবার সুযোগ নেই, প্রতিটা পেমেন্ট এর কাগজপত্র, ব্যাংক ডিটেইলস আমার কাছে আছে... দয়া করে আমাকে এই টাকাপয়সা নিয়ে আইনের আশ্রয় নিতে বাধ্য করো না... ভদ্রলোকের ডিল ভদ্রতার সীমারেখার মধ্যেই থাকা ভালো... ...শিউলি আমার সাথেই যাচ্ছে... রশীদ মিয়ার বেতন আর আছমার চাচীর বেতন এখন থেকে আমি আর দিচ্ছি না। তোমরা ওদের কোন চুক্তিতে, বা কতো টাকা বেতন দিয়ে কিভাবে রাখবে তা ওদের সাথে কথা বলেই ঠিক করে নিও।... ডিভোর্সের কাগজ সময় মতো পেয়ে যাবে... আমার খরচপাতি বা কাবিনের টাকা মেটানোর কোনও বিষয় নেই... মেয়েদের জন্য কিছু দিতে চাইলে সেটা তোমার অধিকার... কিন্তু সেটার কোনও প্রয়োজন নেই...“।

রেহনুমা এখন হাঁ করে চেয়ে আছেন আরশির মুখের দিকে। ওর বিয়ের পরপরই তিনি বলেছিলেন আরশির বেতনের পুরোটা উনার হাতে তুলে দিতে হবে সংসার খরচ বাবদ। কিন্তু তখন উনার স্বামী, মাহতাবের বাবা সেটার প্রতিবাদ করেছিলেন। তাঁর নিজের করা ফ্ল্যাট এটা, এখানে উনারা থাকেন, উনার পেনশনের টাকা আছে, ছেলে বেতন পায়, বউয়ের টাকায় কেন হাত দিতে হবে! উনার শক্ত অবস্থানের কারণে তখন রেহনুমা এ ব্যাপারে সুবিধা করে উঠতে পারেন নাই। সেই আক্ষেপ তাঁর ছিলো বরাবর। যদিও আরশি নিজে থেকেই মাসের শুরুতে সংসার খরচ বাবদ একটা বড়সড় টাকার অংক উনার হাতে তুলে দিতো। এমনকি বাসার এই হেল্পিং হ্যান্ডদের বেতন, ড্রাইভারের বেতন, সব শাশুড়িকে বুঝিয়ে দিতো, মুরুব্বী হিসেবে উনার হাত দিয়ে দেয়ার জন্য। এরপরে যদি আরও কিছু খরচ লাগতো, সেটা উনি ছেলের কাছেই চাইতেন, আর উঠতে বসতে আরশিকে কথা শোনাতেন যে আরশি কতো টাকা বেতন পায় সেটা পর্যন্ত উনাকে জানতে দেয় না! কোনরকমে একটা টাকার বান্ডিল ধরিয়ে দিয়েই দায়িত্ব শেষ বলে মনে করে। এতো বড় একটা সংসার টানতে কত খরচ হয়, তার কোনও ধারণাই নাকি আরশির নাই! আর নিজের সব টাকা সে গিয়ে দান করে দিয়ে আসে নিজের মা-ভাইদের সংসারে। আরশি কোনদিন উনার এই সমস্ত কথার জবাব দেয়ারও প্রয়োজন মনে করে নাই, আবার উনাকে জানানোর প্রয়োজনও বোধ করে নাই যে ঠিক কতো টাকা বেতন সে পায়।

পরের মেয়ে রোজগার করে এনে টাকা দিচ্ছে, সংসার চলছে, সুতরাং সেই হিসাব রাখারও কোনদিন প্রয়োজন উনি মনে করেন নাই, যে এই খরচগুলো আসছে কিভাবে। কিন্তু খরচে কখনও টান পড়লে সেটা নিয়ে খোঁটা দিতে কখনও ভোলেন নি। এই মুহূর্তে আরশি যে হিসাব দিলো, তাতে এই বিশাল খরচের উৎসটা হাতছাড়া হয়ে গেলে উনাদের যে কি অবস্থায় পড়তে হবে, সেটা একটু ভাবতে গিয়েই উনার মাথা ঘুরে গেলো। মুখের রঙ উবে ছাই রঙ হয়ে গেলো। বাইরের লোক সামনে বসে আছে, সেকথা ভুলে উনি প্রায় চেঁচিয়ে উঠলেন, “খরচ দিবা না মানে? কে দিবে এই সমস্ত খরচ তাইলে?”

আরশি যেন জানতোই উনি এভাবেই প্রতিক্রিয়া দেখাবেন। খুব ঠান্ডাভাবেই বললো, “কেন! আপনার বংশের বাতি... আপনার ছেলে দেবে!... আর যদি কোনও খরচ চালাতে কোনও সমস্যা হয়, তাহলে সেটা বাদ দেবেন!... গাড়ির লোন চালাতে না পারলে গাড়ি বিক্রি করে দেবেন!... আছমার বেতন দিতে না পারলে ওকে ছেড়ে দেবেন!... তাহলেই তো হয়! কিন্তু ক্ষমা করবেন মা! আমি এতোটা মহৎ হতে পারবো না যে নিজের প্রাক্তন স্বামীর সংসার খরচ টানবো, কারণ সে এখন চেষ্টা করবে আরেকটা ছেলে জন্ম দেয়ার... তাও অন্য কারও সাথে... “।

এইবার আছমা হাউ মাউ করে উঠলো, “ও খালা... খালা গো... আমারে সাথে নিয়া যান... আমি সোহা-নুহারে ছাড়া থাকবার পারুম না!...”

আছমা আর কিছু বলার আগেই হাত তুলে থামিয়ে দিলো আরশি, “পেটে টান পড়লে সবারই হুঁশ ফেরে, তাই না চাচী? এতোদিন ধরে আমি যাওয়ার জন্য গোছাচ্ছি, আপনি সবই জানেন... কিন্তু আপনার আমার সাথে যেতে ইচ্ছা হয় নাই... কারণ আমার সাথে গেলে বাচ্চাদের জন্য খাটনি বেশি... কিন্তু এটা ভাবেন নাই যে আপনার বেতনটা আমার হাত দিয়ে আসে, তাই না? হাহাহা... না চাচী... আপনি এখানেই থাকেন... আমার বাচ্চাদের জন্য ভরসার লোক দরকার... বাচ্চাদের রুমে সিসি ক্যামেরা আছে, জানেন তো? রাহার জন্মের পরে আমি যেদিন প্রথম অফিস করলাম মাস খানেক আগে, সেদিনই আমি প্রথমবার আপনাকে আমার সোহা-নুহার গায়ে আঘাত করতে দেখেছি... পরে কয়েক মাস আগের ভিডিও চেক করেও দেখেছি ওইদিনের মতো সরাসরি থাপ্পড় ওভাবে না দিলেও মাঝে মাঝেই আপনি ওদের গায়ে আঘাত করেন... মাথায় চাপড় মারা, হাত ধরে ঝাঁকি দেয়া, গালে ঠোনা মারা... তাই না? বাসায় এসে আমি বাচ্চাদের জিজ্ঞেস করেও অনেক কিছু জেনেছি... সেদিন থেকেই শিউলিকে বলে আমি বাচ্চাদের কোনও কাজে আর আপনাকে লাগতে দেই নি, আর ওকেও আমার অনুপস্থিতিতে বাচ্চাদের ছেড়ে কোনদিকে যেতে না করেছি। ... আমি চাইলে আপনার জন্য অনেক বড় শাস্তির ব্যবস্থা করতে পারতাম। কিন্তু গরীব মানুষ, আমার বাড়িতে এসেছেন কাজের জন্য... তাই এইবারের মতো মাফ করে দিয়েছি। কিন্তু তার মানে তো এই না যে একই ভুল আমি আবার করবো!...”

শান্তভাবে কথাগুলো বলে যাচ্ছে আরশি, কিন্তু ওর চোখের দিকে তাকানো যাচ্ছে না। সদ্য মা হওয়া বাঘিনীর মতো ধ্বক ধ্বক করে জ্বলছে চোখ। সেই চোখে স্রেফ এবং স্রেফ নিজের বাচ্চাদের রক্ষা করার জন্য জ্বলন্ত হিংস্রতা, পুরো দুনিয়ার বিরুদ্ধে একা লড়ে যাবার প্রতিজ্ঞা। ওর পরের কথাগুলো ওর কণ্ঠ দিয়ে হিস হিস করে বেরুলো, “আর আছমা চাচী তো এই সাহস এমনি এমনি পান নাই, তাই না, মা?”

প্রশ্নটার মধ্যেই উত্তর আছে। মাহতাব চমকে ওর মায়ের দিকে তাকালো। চোখে মুখে আঁকা অপার বিস্ময়। আছমার মুখ পুরো সাদা, আর রেহনুমার মাথা নিচু। আরশি বলে চললো, “ভাগ্য ভালো যে আমি সিসি ক্যামেরা শুধু বাচ্চাদের রুমেই দেই নি, যেহেতু আমার বাচ্চারা চঞ্চল, তাই লিভিং রুমেও দিয়েছিলাম... আর তাই এটাও দেখতে পেয়েছি যে দাদী হয়ে আপনার কাছে নিরাপত্তার বদলে কি ধরণের ব্যবহার পেয়েছে আমার মেয়েরা। মুখের কথার তো আর রেকর্ডিং নেই, আছে আপনার চড়-থাপ্পড়ের... নিজের অংশ হওয়া সত্ত্বেও নিজেই যদি তাকে দূরছাই করেন, তাহলে বাইরের মানুষের কি ঠ্যাকা যে তারা যত্ন করবে? আছমা চাচীও তাই এই সাহসটা আপনার কাছ থেকেই পেয়েছে... মুখে সারাক্ষণ গালাগালি করে হয় নি আপনার, গায়েও হাত তুলেছেন... কেন করেছেন, মা? যাতে আমার মেয়েরা আমাকে সেসব বলে আর আমি দ্রুত এই বাড়ি ছেড়ে চলে যাই, সেজন্য? নাকি স্রেফ নিজের রাগ মিটিয়েছেন এই মাসুম বাচ্চাগুলোর উপর?”

উত্তর দিলেন না রেহনুমা। কিছু বলার মতো নেইও আজকে তাঁর। আরশি নিজেকে সামলে নিয়ে মাহতাবের দিকে তাকালো, “মাহতাব! আমার কাছে এখন সব ধরণের প্রমাণ আছে যে আমার মেয়েদের সাথে এই বাসায় কি ধরণের আচরণ করা হয়েছে... এবং কেন আমি আলাদা হতে চেয়েছি... বাচ্চাদের কাস্টডি চাইবার কথা মাথাতেও এনো না... মনে রেখো... আমি এই যুগের মেয়ে... এই যুগের মা... আমার বাচ্চাদের উপর বিন্দুমাত্র আঁচ আসলে আমি কাউকে ছেড়ে কথা বলবো না...“।

আবারও রেহনুমার দিকে ফিরলো ও, “ কি যেন বলছিলেন মা? মেয়েরা আমার কাছ থেকে কি শিক্ষা পাবে!... আমার মেয়েদের, মানে আপনার নাতনীদের শিক্ষাদীক্ষা নিয়ে যদি আপনার এতোই দুশ্চিন্তা, তাহলে একবারের জন্য বলতেন ওদের নিজের কাছে রেখে দেবার কথা! সেই দায়িত্ব নেবার কথা তো মনে হয় একবারের জন্যেও মাথাতেই আসে নি আপনার, তাই না? সে যাক!... সেটা আমার জন্য শাপে বর হয়েছে... আমার কাছ থেকে কি শিখবে ওরা? শিখবে মাথা উঁচু করে বাঁচতে... অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে... যেকোনো জুলুমের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলতে... নিজেকে ভালবাসতে, নিজেকে সম্মান করতে... অন্তত আপনার মতো নারী হিসেবে নিজের অস্তিত্বকে ছি ছি করতে শিখবে না ওরা... আর এই রকম বাপ আর এই রকম বংশের পরিচয়ে পরিচিত হওয়ারও কোনও দরকার ওদের হবে না আশা করি... নিজের পরিচয়ে বাঁচবে ওরা... আর যদিওবা অন্য কারও পরিচয়ে পরিচিত হতেও হয়... তাহলে তাকেও সেই রকম উপযুক্ত পরিচয় নিয়ে আসতে হবে ওদের সামনে... বলছিলেন না একটু আগে? আমার এতো তেজ কেন? আমার মেয়েরাও যেন ভবিষ্যতে এই তেজ নিয়েই পিঠসোজা করে চলতে পারে, শুধুমাত্র সেই আশাতেই আমি আপনাদের ত্যাগ করলাম!...”

***

এগিয়ে গিয়ে দুই মেয়ের মাথার উপর দুই হাত রাখলো, “পেটে ভাত না থাকুক... হৃৎপিন্ড কাজ করা বন্ধ করে দিক... জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়েও যেন এই তেজ কোনদিন না হারায়...”। হাত বাড়িয়ে শিউলির কোল থেকে তুলে নিলো রাহাকে, কোন ফাঁকে যেন শিউলি গিয়ে নিয়ে এসেছে ওকে।

শেষ বিকেলের হলদে-কমলা আলোটা আজ যেন একটু বেশিই উজ্জ্বল হয়ে জানালা ঠেলে এই ঘরে প্রবেশ করছে। ঘরের প্রতিটা মানুষের গায়ের উপর পড়ে সেই আলো ঠিকরে যাচ্ছে যেন। মাহতাব আর মাথা তোলে নি। বুকের ভেতর আজকে অন্যরকম মোচড় দিচ্ছে তার। এই কষ্টের সাথে সে পরিচিত না। পরশের চোখের কোণে এক বিন্দু পানি চিক চিক করছে। সারোয়ার সাহেব স্নিগ্ধ-তৃপ্ত দৃষ্টিতে প্রাণভরে দেখছেন তাঁর প্রিয় বন্ধুর উত্তরাধিকার। যে বন্ধুর আদর্শ, ব্যক্তিত্ব, চারিত্রিক দৃঢ়তাকে বরাবর শ্রদ্ধা করে এসেছেন, সেই বন্ধুরই মূর্ত প্রতিফলন এই মেয়েটিকে, এই পরিপূর্ণ নারীকে, এই মা’কে দু’চোখ ভরে দেখছেন তিনি।

ঘরে উপস্থিত প্রায় সব কয়জন নারীর মাথা নিচু হয়ে ঠেকেছে বুকের কাছে। আর বহু যন্ত্রণা, বহু বঞ্চনা, বহু... বহু কান্নার বিষকে গিলে নিয়ে নির্ভয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আরশি। সূর্যের শেষ আলোর তেজোদীপ্ত আভাতে ওর অবয়ব দেখাচ্ছে এক জ্বলন্ত অগ্নিশিখার মতো। কোলে ছোট্ট শিশু, আর ওর দুই মেয়ে দুই পাশ থেকে শক্ত করে জড়িয়ে রেখেছে ওকে ছোট্ট ছোট্ট দু’জোড়া হাতের বেড়ীতে।

***

(সমাপ্ত)


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Drama