Nityananda Banerjee

Horror Crime

3  

Nityananda Banerjee

Horror Crime

ভোরের সূর্য্য পর্ব বাইশ

ভোরের সূর্য্য পর্ব বাইশ

4 mins
126


পর্ব বাইশ

দিল্লি থেকে খবর পাওয়া গেল যে লোকটিকে গাজী বলে ধরা হয়েছে ; সে আসলে গাজী নয় । গাজীর মুখোশ পরা এক ভারতীয় নাগরিক। নাম শ্যামল সামন্ত । জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে সে মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত আসামী শশাঙ্কর ভগ্নিপতি ।

হক সাহেবের বুক ঢিপঢিপ করতে লাগল । গাজীর হাত যে বেশ লম্বা সম্যক বুঝতে পারলেন ।আর সেদিন বোমা ফেলার জন্য নিজে নয়; শ্যামলকে গাজী ও শশাঙ্কর মুখোশ পরপর পরিয়ে দিয়ে নিজে কাজ হাসিল করে নিয়েছে ।

কিন্তু সবচেয়ে মারাত্মক ব্যাপার হল বর্তমানে সে মজ:ফরপুরে নেই । তবে কোথায় নিরুদ্দেশ হয়ে গেল ?

দিল্লি বা কাশ্মীরে যা ধরপাকড় চলছে তাতে ওদিকে যাওয়ার মত বেকুব গাজী নয় । সুতরাং পূর্বদিকে কোথাও যেতে পারে ।

ডক্টর অক্টারলোনী এবং বিপাশাকে বললেন - তোরা এখন কলকাতায় ফিরে যা । এদিকটা আমি ম্যানেজ করে নেব ।

আর হাইকোর্টে শুনানীর তো এখন কয়েকদিন দেরী আছে !

ডাক্তারবাবু বললেন - ঠিক আছে। আমরা তাহলে ফিরেই যাই । এখানে এমনি এমনি বসে থেকে তো লাভ কিছু নেই ।

হক সাহেব ওদের ফেরার বন্দোবস্ত করে দিয়ে থানায় প্রবেশ করলেন ।

ডাক্তার বাবু এবং বিপাশা মজ:ফরপুর থেকে বাঘ এক্সপ্রেসে কলকাতায় ফিরছিলেন ।

ট্রেন বর্ধমান জংশনে এসে থামল । বিপাশা জানালার পাশে বসেছিল । আচমকা চেঁচিয়ে উঠল - স্যার, গাজী যাচ্ছে । ওই তো ওই তো !

ডাক্তার বাবু গাজী নামটা জানেন এবং একবার রাঁচির হাসপাতালে দেখাও হয়েছিল । বিপাশাকে ভর্তি করার সময় দু'চারটে কথাও বলেছিলেন । গাজীর মুখটা তেমন ভালো করে মনে না পড়লেও অস্পষ্ট মনে পড়ছে ।

বিপাশার চিৎকারে চমকে না গিয়ে তিনি ওর মুখ চেপে ধরলেন । বললেন - নো শাউট প্লীজ । লেট আস গেট ডাউন এণ্ড ফলো হিম ।

ওঁরা নিজেদের হাল্কা লগেজ নিয়ে বর্ধমানে নেমে পড়লেন । একটু দূরত্ব বজায় রেখে চললেন । মোল্লার মত চেহারা নিয়ে গাজীসাহেব পাঁচ নম্বর প্লাটফর্মে নেমে ওভারব্রীজে উঠলেন ।

বিপাশাকে বলে দিলেন ওভারব্রীজ দিয়ে মেন এক্সিটের সামনে মুখ লুকিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে আর নিজে প্লাটফর্ম থেকে লাফ দিয়ে রেল লাইন, ট্রেন ছাড়িয়ে গাজী পৌঁছানোর আগেই মেন গেটে এসে দাঁড়ালেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই গাজী সেখানে পৌঁছাল । গেট পেরোনোর সময় দু'জনের চোখাচোখি হল ।

ডাক্তারবাবু ভালো করে দেখে নিয়ে বললেন - হাই সাব ! লগতা হ্যায় ম্যায় আপকো কহি দেখা হ্যায় । ম্যায় ডক্টর জেমস অক্টারলোনী, আপ ?

গাজীসাহেব একগাল হেসে বললেন - আপ ওহি ডক্টরসাব হ্যায় না ? জিন্হোনে এক পাগল লড়কিকি ট্রিটমেন্ট কর রহা থা ।

- ম্যায় তো এক সাইকিয়াট্রিস্ট হুঁ । কিতনা পাগলোকো ট্রিটমেন্ট কিয়া । আপ কৌন লড়কিকি বাত কর রহে হ্যায় ?

গাজী বলল - ওহি লড়কি ! কেয়া নাম থা উসকি - বিপাশা । ম্যায়নে হি উসকি ভর্তি করবাই । ও কেয়সা হ্যায় অভি ?

- ম্যাডনেস আউর বঢ় গিয়া জী। গেটিং নো রেসপন্স ইন ট্রিটমেন্ট ।তো বারদোয়ান মে আপ কোই কাম পর আয়ে হ্যায় ইয়া ইয়াহা আপকা নিবাস হ্যায় ?

- নেহি নেহি । ম্যায় মজ:ফরপুর কা রহনেবালা হুঁ। বারদোয়ান মে রিলেটিভ রহতে হ্যায়, মুলাকাত করনে কে লিয়ে আয়া হুঁ।

বিপাশা ওদের কথাবার্তা শুনছিল । মুখ ঢেকে রেখেছিল । ডাক্তারবাবুকে কি একটা ঈশারা করে চলে গেল ।

ডাক্তার বাবু বললেন - আইয়ে না । সাথমে চায় কফি কুছ পিয়া যায় ।

গাজী আপত্তি করল না । স্টল থেকে দু'কাপ কফি এবং নোনতা নিয়ে খেতে লাগলেন । কথাও চলতে লাগল । দু'পক্ষই অতি সাবধানী ।

বিপাশা নিকটবর্তী জি আর পি অফিসে গিয়ে উপস্থিত হল । ভারপ্রাপ্ত অফিসার তাকে কিছু বলার আগেই বিপাশা বলল - স্যার, একজন কুখ্যাত আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদীকে যদি গ্রেপ্তার করতে চান এক্ষুণি আমার সঙ্গে মেন এক্সিটে আসুন ।

পুলিশ অফিসারটি কিছু প্রশ্ন করবেন কি - নিজেই কেমন উদাস হয়ে গেলেন । মেয়েটা বলে কি ? সন্ত্রাসবাদী ? তায় আবার আন্তর্জাতিক ? ভেরি এক্সাইটিং।

বিপাশা বলল - স্যার জলদি করুন নইলে পালিয়ে যাবে । মজ:ফরপুর থেকে ওকে ফলো করে আসছি। প্লীজ।

- আপনি কে ?

- আমি বিপাশা । আমার কথা পরে হবে । আপনারা চলুন স্যার । প্লীজ ।

অফিসার দেরী না করে যারা ছিল তাদের নিয়ে এবং বর্ধমান আর পি এফ পোস্টের সাহায্য চেয়ে বিপাশাকে অনুগমন করলেন ।

তখন চা পান শেষ পর্য্যায়ে । ডক্টর বলছেন - গাজী সাব আইয়ে না মেরে সাথ অপনা বাসা মে । কোই নেহি হ্যায় । ম্যায় অকেলা রহতা হুঁ ।

গাজী ধন্যবাদ দিতে যাচ্ছিল । পুলিশ এসে ঘিরে ধরতেই গাজীর চৈতন্য হল । ডাক্তারবাবু বললেন - কি করছেন আপনারা । উনি গাজী সাহেব - অত্যন্ত মান্যগণ্য ব্যক্তি ।

পুলিশ অফিসার বললেন - সেজন্যই তো অভিবাদন জানাতে এসেছি ।

গাজীর ক্রোধ প্রকাশ করা ছাড়া অন্য কিছু করবার ছিল না । পিছমোড়া করে ওকে বেঁধে ফেলা হল । তারপর প্রায় টানতে টানতে নিয়ে গিয়ে লক আপে ঢুকিয়ে দেওয়া হল ।

বিপাশা গাজীর সম্মুখে দাঁড়িয়ে বলল - প্রতিশোধ ড়ই মধুর, তাই না ফকরুদ্দিন গাজী মোল্লা ?

( চলবে )


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Horror