pallab kumar dey

Drama

4  

pallab kumar dey

Drama

ব্রহ্মপুত্র যায় বয়ে-40-বিচিত্র মানুষ

ব্রহ্মপুত্র যায় বয়ে-40-বিচিত্র মানুষ

8 mins
4



 জীবনের এই চলার পথে সময়ের পাতাগুলো কোন অজান্তে অলক্ষ্যে যেন এক এক করে ঝরে চলে যাচ্ছে। অক্লান্ত অক্লেশে কত জল বয়ে যাচ্ছে ব্রহ্মপুত্রের বুক বেয়ে। বড়দা গুয়াহাটি থেকে বদলি হয়ে চলে গেল মেঘালয়ের রাজধানী শিলং আর ছোড়দা তো স্নাতক পরীক্ষা পেরোনো আগেই টেলিকমে চাকরি পেয়ে তেজপুরে। সেই কবে থেকে আমি অগ্রজ ভ্রাতা-ভগ্নীদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে বাবা-মায়ের সঙ্গে বাড়িতে একা। আমার ভবিষ্যৎ নিয়ে মায়ের মধ্যে যতটা দুশ্চিন্তা দুর্ভাবনা, আজকাল পিতৃদেবের মধ্যে আমাকে নিয়ে কোনও চিন্তা, গুরুতর ভাবনা কিছুই যেন সেরকম দেখি না।  

  আমি কলেজে যাচ্ছি আসছি। কলেজ কখনও এই খোলে তো, আবার বন্ধ হয়ে যায়। আজ এই প্রতিবাদ তো, কাল ওই আন্দোলন!

 দেখতে দেখতে চলে এলো ভোগালী বিহু। সারা অসম জুড়ে বেজে উঠল ভোগালী তথা মাঘবিহুর ডঙ্কা। আগামী পরশু থেকেই সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছুটি। বন্ধু বিশ্বজিৎ আমার খোঁজে হঠাৎ সেদিন কলেজে এসে হাজির।  

 আমার যে বেদুইনের মতো ছটফট একটা মন আছে আর সুযোগ পেলেই বেরিয়ে পড়ি সেটা বিশ্বজিৎ ভালো করে জানে। তাই আমার সঙ্গে দেখা হতেই সে উৎফুল্লে বলল, আরে ঔ ফুকন, তোকেই মই আবেলির পরা বিচারিছু! খবর আছে এটা। বিহুর ছুটিত মই ডিব্রুগড়ত গইআছু …আরে ওই ফুকন, তোকেই আমি বিকেল থেকে খুঁজছি! খবর আছে একটা। বিহুর ছুটিতে আমি ডিব্রুগড় যাচ্ছি। ডিব্রুগড় শহর থেকে আরও দূরে পুবের দিকে ব্রহ্মপুত্রের পারে এক চাবাগানের কাছে আমার মামারবাড়ি। তুই যাবি? তুই সঙ্গে গেলে খুব আনন্দ হবে রে ফুকন। 

 লাফিয়ে উঠলাম আমি, আরে উজানি অসমের ব্রহ্মপুত্রের পারে আমারও একবার ঘুরে দেখার খুব ইচ্ছে আছে! যাবো না মানে? যাব তো!   

 ‘তেনহলে আরু কি ভাবিছ? বোল মুর লগত।..তাহলে আর কি ভাবছিস? চল আমার সঙ্গে।’

 ‘কিন্তু যাওয়ার জন্যে তো টাকার দরকার। টাকা লাগবে তো। আর ঘরের থেকে অনুমিতও তো নিতে হবে।’ মুখ ভার করে ফেললাম আমি। 

 ‘আরে টাকার কথা কেন চিন্তা করছিস? এই বিশ্বজিৎ আছে না!’

 'সে তো তুই বলবিই। আমি তোর ভরসায় কেন যাব? তা কবে যাচ্ছিস?’ জিজ্ঞেস করলাম আমি।

 ‘কবে মানে? কালকেই রওনা হচ্ছি!’

 ‘অসম্ভব! আমার হবে না।' বলে আমি মুখ গম্ভীর করে খানিক চুপ হয়ে রইলাম। তারপর আবার বলে উঠলাম, বিশ্বজিৎ একটা কাজ করলে হয় না? ঠিকানাটা ভালো করে আমায় লিখে দিয়ে যা। বিহুর তো এখনও পাঁচছয়দিন দেরি আছে। আমি তার আগেই তোর মামারবাড়ি পৌঁছে যাব।

 বিশ্বজিৎ তার মামারবাড়ির সম্পূর্ণ ঠিকানা, রুট, কোথা থেকে কিভাবে যেতে হবে সমস্ত কিছু সুন্দর করে লিখে বুঝিয়ে দিয়ে আবার বলল, কথা দিচ্ছিস কিন্তু। কোনও নড়নচড়ন করবি না ফুকন। যদি করিস কপালে তোর দুঃখ আছে। 

 আমি মাকে অনেক বুঝিয়ে সুঝিয়ে অনুমতি জুটিয়ে নিতে পারলাম বটে, কিন্তু একটা শর্তে। মায়ের শর্ত এই যে, যাওয়ার পথে জোরহাটে আমার এক মাসির বাড়ি দেখা করে যেতে হবে। মায়ের এক মেসতুতো বোন থাকেন জোরহাট। বহু বছর সেই বোনের সঙ্গে মায়ের কোনও যোগাযোগ নেই। তাই মায়ের ইচ্ছে জোরহাটে নেমে সেই বোনের খোঁজখবর নিয়ে তারপরে যেন আমি ডিব্রুগড় যাই।   

 জোরহাটে নেমে সেই মাসির বাড়ি অনেক খোঁজাখুঁজি শেষে খুঁজে পেয়েছিলাম আমি। জীবনে একবারই আমি দেখেছিলাম এই মাসিকে। বেশ কয়েক বছর পর এক বোনপোকে দেখে মাসির যেরকম আনন্দ আর আহ্লাদ হওয়ার কথা সেরকম যেন কিছুই ফুটে উঠল না মাসির মুখে। উলটে কেমন যেন গোমড়া মুখ করে ফেললেন মাসি। গোমড়া মুখেই দুইদিন থেকে যাওয়ার জন্যে খুব জোরাজুরি করলেন।  

 দুইদিন দুইরাত থাকতে হয়েছিল সেখানে। দুইদিনই আমি দেখেছি, মেসো খুব সকালে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেছেন আর ফিরেছেন অনেক রাতে আকন্ঠ মদ্যপান করে। নানা রকমের আজেবাজে কথায় মাতলামি করার পর কিছু না খেয়েই শুয়ে পড়েছেন। মেসোর নাকি পান-সিগারেটের একটা দোকান আছে বাজারে। 

 মাসি লজ্জায় দুঃখ ক্ষোভে বলছিলেন, মায়ের কথায় মাসিকে দেখতে এসেছিস তো? দেখে যা ভালো করে, এই তোর মাসির সংসার! বলিস গিয়ে তোর মাকে, কিরকম সুখে আছি আমি! কত না দেখেশুনে বিয়ে দিয়েছিল তারা আমায়! সারা জীবন মদ-মাতলামি কাটিয়ে দিল ওই লম্পট লোকটা।

 এই তো গেল মেসোর কথা। তারপর আরও! দুই সন্ধ্যেতেই আমি দেখলাম সুটাম কালো চেহারার একটা লোক এসে মেসতুতো দিদির সঙ্গে বাইরের ঘরে দরজা বন্ধ করে গল্প করেই যাচ্ছে। অনেকক্ষণ ধরে গল্প চলল। কী জন্যে, কেন অত সময় ধরে তারা দরজা বন্ধ করে গল্প করল, আমি অতটা বুঝতে না পারলেও, অবচেতনে বোধহয় কিছু একটা অস্বাভাবিকতা আঁচ করতে পারছিলাম। লোকটার উদ্ধত হাবভাব, কাম-ক্রূরতা মিশ্রিত চোখ দেখেই যেন আমি আন্দাজ করতে পারছিলাম, দরজায় খিল আটকিয়ে সে মেসতুতো দিদির সঙ্গে কি ধরণের গল্পে মশগুল থাকতে পারে। একদমই ভালো লাগল না আমার সেই দমবন্ধ করা জঘন্য পরিবেশে। 

 সাহস করে জিজ্ঞেস করে বসলাম মাসিকে, বিদঘুটে ওই লোকটা কে গো মাসি, ডাকাতের মতো আসে আর চোরের মতো যায়?

 মাসি বললেন, আরে চুপ চুপ!..ওই মানুষটাই তো তোর জামাইবাবু!

 ‘অবাক কাণ্ড, জামাইবাবুই যদি তবে ওরকম লুকিয়েচুরিয়ে সন্ধ্যেসময় কেন আসবে?’

 মাসি অসহায়ের মতো বলে উঠলেন, খোকন তুই চুপ থাক! চুপ কর! আর কিছু বলিস না! ওই লোকটা না থাকলে আমাদের না খেয়ে মরতে হবে! 

 মাসির বাড়িতে অপরিচ্ছন্ন ক্লিষ্ট কদর্য সেই দুটোরাত কোনওরকমে কাটিয়ে তৃতীয় দিন খুব ভোরের দিকে ডিব্রুগড়ের দিকে রওনা হয়ে পড়লাম আমি। জোরহাটের স্টেট ট্রান্সপোর্টের ডিপো থেকেই ডিব্রুগড়ের বাসগুলো ছাড়ে। তখনও অব্দি স্টেট ট্রান্সপোর্টের বাসই একমাত্র ভরসা। 

 ভোরবেলা থেকে স্ট্যান্ডে এসে দাঁড়িয়ে আছি, টিকিট কাউন্টার খুলছিলই না।

 এরমধ্যেই ডিব্রুগড় যাওয়ার বাসটাও এসে দাঁড়িয়ে গেল কাউন্টারের সামনে। আর মাত্র পাঁচ-সাত মিনিট। তারপরেই নাকি গাড়ি ছেড়ে দেবে। যাত্রীরাও একজন দুজন করে উঠছে গাড়িতে। অবাক কাণ্ড, যাত্রীরা টিকিট পেল কোত্থেকে?

 জানালার ফোকরে উঁকি দিতেই আমি হতভম্ব হয়ে দেখি, ভেতর থেকে টিকিট দেওয়া হচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে আমি দৌড়ে গিয়ে ঢুকে পড়লাম ভেতরে। চেঁচিয়ে বলে উঠলাম, বাহিরত ইমান মানু থি হই আছে, আরু আপুনি ভিতরর পরা ব্ল্যাকত টিকিট দিছে?...বাইরে এত লোক দাঁড়িয়ে আছে, আর আপনি ভেতর থেকে ব্ল্যাকে টিকিট দিচ্ছেন?

 লোকটাও পালটা ধমকে উঠল, কোনে কইছে ব্ল্যাকত টিকিট দিছু? সিনেমার কাউন্টার নেকি?...কে বলছে ব্ল্যাকে টিকিট দিচ্ছি? এটা সিনেমার কাউন্টার নাকি?

 আমার গলার আওয়াজ শুনে ট্রান্সপোর্টের আরও দু’জন কর্মচারীও এসে হাজির, কী হোল..কী হোল?... কী হল..কী হল? কিসের গন্ডগোল এখানে?

 কাউন্টারের লোকটা ক্রুধ স্বরে আমাকে দেখিয়ে বলে উঠল, এই এটু লরা, কোর পরা আহিছে, তার ব্ল্যাকত টিকিট লাগে।…ওই যে ছেলেটা কোথা থেকে আসছে, তার ব্ল্যাকে টিকিট লাগে!

 কর্মচারী দু’জন যেন আমাকে মারতে উদ্যত হল। দ্বিগুণ ক্ষিপ্ত সুরে ধমকে বলল, তুর ব্ল্যাকত টিকিট লাগে? আমি চুর নেকি?...তোর ব্ল্যাকে টিকিট লাগে? আমরা চোর নাকি? আমরা ব্লেকার নাকি?

 টেনে নিয়ে এল তারা আমাকে বাইরে। আমাকে দেখিয়ে গলা চড়িয়ে তারা বলছিল, এইয়া ছাওক আপনালোকে, লরাটু কোর পরা আহিছে? হি ব্ল্যাকত টিকিট কিনিব বিছারিছে!....এই যে দেখুন আপনারা, ছেলেটা কোত্থেকে এসেছে? সে ব্ল্যাকে টিকিট কিনতে চাচ্ছে?

 তাদের মধ্যে একজন আবার আমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, কোত থাকো, কোর পরা আহিছ?..কোথায় থাকিস? কোথা থেকে এসেছিস?

 ‘মই যতেই থাকু আপানালোকর কী? কিয় মিছা কথা কইছে?’ আমি ভয় না পেয়ে আবারও চেঁচিয়ে উঠলাম...আমি যেখানে থাকি না কেন আপনাদের তাতে কী? কেন মিথ্যে কথা বলছেন? ভেতর থেকে টিকিট ব্ল্যাকে বিক্রি করছেন আপনারা, আর দোষ দিচ্ছেন আমাকে?

 ওই মুহূর্তেই একজন অফিসার গোছের কেউ জোরে জোরে পা ফেলে এদিকেই হেঁটে আসছিলেন। তাকে দেখা মাত্রই অসাধু কর্মচারীদের মধ্যে ঠারে ঠারে বোধহয় কিছু বোঝাপড়াও হয়ে গেল। ততক্ষণে টিকিট কাউন্টার থেকে টিকিট বিক্রিও শুরু হয়ে গেছে। লাইনে দাঁড়ানো লোকগুলোর দিকে তাকিয়ে একজন জিজ্ঞেস করল, আপনালোকে টিকিট পাইছে না নাই?... আপনারা টিকিট পাচ্ছেন কিনা?

 যাত্রী সাধারণের উত্তর, হয় টিকিট তু দিয়াছে কাউন্টারর পরা।…হাঁ টিকিট তো দিচ্ছে কাউন্টার থেকে।

 ‘বজ্জাত লরা, যা লাইনত গই থি হ।…বজ্জাত ছেলে, যা লাইনে গিয়ে দাঁড়া।’

 অফিসার এগিয়ে এসে একজনকে ধমকে জিজ্ঞেস করলেন, কি হোল, কি হুনিয়াছূ…কি হলো, কি শুনতে পাচ্ছি আপনারা নাকি আবার ব্লেকে টিকিট বিক্রি শুরু করেছেন?

 ‘নাই নাই স্যার!... না না স্যার! ওইতো কাউন্টার থেকে টিকিট দেওয়া হচ্ছে।’ ব্যস্ত হয়ে বলে উঠল সেই কর্মচারী।

 অন্যায়ের বিরুদ্ধে আমি সাময়িক একটু রুখে দাঁড়িয়েছি, আর তাতেই গোটা চত্বর তটস্থ। কাউন্টার থেকে টিকিট বিক্রি শুরু হয়ে গেল। আমিও একটা টিকিট পেয়ে গেলাম এই সুযোগে।

 ছেড়ে দিল গাড়ি। শাঁশাঁ করে ছুটে চলেছে উজানি অসমের উজার করা প্রকৃতির মধ্যে দিয়ে। 

 যথা সময়েই পৌঁছে গেলাম ডিব্রুগড়। ডিব্রুগড় শহর ছাড়িয়ে আরও পূর্বে মাইজান হৃদ পেরিয়ে ব্রহ্মপুত্রের পারে প্রত্যন্ত এলাকার এক চাবাগানের কাছে এক বাজারে গিয়ে যখন আমি পৌঁছলাম তখন সন্ধ্যে নেমে পড়েছে। আর সেখানেই দেখা হয়ে গেল বিশ্বজিতের সঙ্গে। 

 বিশ্বজিতের সঙ্গে তার মামারবাড়ি গিয়েই আমি বুঝতে পারলাম সে তাদের কাছে কত স্নেহ আর আদরের পাত্র। আর বিশ্বজিতের সহপাঠি হওয়ার সুবাদে মামা-মাসিদের উজার করা স্নেহ মমতার প্রতিটি কণা উপভোগ করলাম আমিও।

 একদিকে শুকনো মরশুমের ব্রহ্মপুত্রের বিস্তীর্ণ চরভূমি, আরেক দিকে দিগন্ত বৃস্তিত সবুজের সমাহার। গ্রাম্য জীবন সম্পৃক্ত ভোগালী বিহুর আনন্দোৎসব। সবুজ নিসর্গ প্রকৃতির কোলে ভরপুর আনন্দে কাটছিল বিহুর তিনটা দিন।

 মনে পড়ছিল আমার, এই তো কিছুদিন আগেও বন্ধু সৌম্যর সঙ্গেও গিয়েছিলাম আমি তেজপুরের অদূরে ঢেকিয়াজুলি শহরে ওর মামারবাড়ি বেড়াতে। সেই মামার বাড়িতে সৌম্যকে খুব একটা স্নেহ-আদরের পাত্র বলে মনে হল না আমার। তাছাড়া ছোট এক মাসির সঙ্গে সৌম্যর সম্পর্কটাও কেমন যেন বিসদৃশ ধরনের। আমাকে ঘরের ভেতরে একা অপ্রস্তুত বিড়ম্বনায় বসিয়ে রেখে সে মাসির সঙ্গে ঘন্টার পর ঘন্টা গল্প চালিয়ে গেল বাড়ির বাইরে আমগাছের নিচে অন্ধকারে বসে। মাসির সঙ্গে যে পবিত্র সম্পর্ক থাকা উচিত সেরকম কিন্তু কিছুই চোখে পড়ল না সৌম্য আর তার মাসির মধ্যে। তাদের সম্পর্কটা কেমন যেন লুকানো লুকানো অপরিচ্ছন্ন একটা ভাবের মতো। যা একটুও ভালো লাগেনি আমার।  

 আর এই বিশ্বজিতের মামারবাড়িতে প্রায় তারই সমবয়সি এক মাসির সঙ্গে সম্পর্ক যেন মায়ের মতো। একটি মানুষের সঙ্গে আরেকটি মানুষের সম্পর্ক কত রকমের যে হতে পারে তার বিশ্লেষণ কে করে দিতে পারে, কার সাধ্য? 

 আমাদের এক দূর সম্পর্কের আত্মীয়দের বাড়িতে যারা ভাড়া থাকে তাদের একটি সুশ্রী ও যৌবনবতী মেয়ে আছে। ভাড়াটেদের ঘরে হঠাৎ একদিন তাদের কিছু আত্মীয় চলে আসায় মেয়েটির ঘুমনোর অসুবিধে হয়ে গেল। তার মা তাকে পাঠাল বাড়ির কর্তাদের ঘরে ঘুমোতে। বাড়ির কর্তাদের ভেতর বাড়ির আলাদা একটি ঘরে বৃদ্ধা শাশুড়িকে ঘুমোতে দেওয়া হয়। সেই বৃদ্ধা শাশুড়ির সঙ্গেই মেয়েটি ঘুমোনোর ব্যবস্থা হল। 

 দিন পনেরো বাদে ভাড়াটেদের আত্মীয়রা চলে যাওয়ার পরেও মেয়েটি কর্তাদের শাশুড়ির সঙ্গে ঘুমোতে আসে। অভ্যেসে দাঁড়িয়ে গেছে যেন তার এই ঘুমোতে আসা। সেই ঘরে কর্তার এক জোয়ান ছেলেও ঘুমোয়। সকলের অজান্তে একটা সম্পর্ক তৈরি হয়ে গেল মেয়ে আর ছেলেটির মধ্যে। এই নিয়ে জনেজনে মুখরোচক কানাঘুষোও চলছিল কিছুদিন থেকে। মেয়েটির মায়ের কানেও চলে গেল কথাগুলো। তিনি তার মেয়েকে ঘুমোতে আসতে বাধা দেওয়ায় সে মালিকের শাশুড়ির অজুহাত তুলল। বলল, দিদার একা ঘুমোতে ভালো লাগে না, বলেছে আমাকে তার সঙ্গে ঘুমোতে।

 কিছুদিনের মধ্যে কানাঘুষো আবার থিতুও হয়ে গেল। কেউ আর এ নিয়ে ঘাঁটায়ও না। বেশ কিছুদিন পর আবারও নতুন এক কানাঘুষো। এবার কানাঘুষো বাপ-ছেলের রেষারেষি নিয়ে। ছেলেটির বাবাও নাকি মেয়েটির সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছে। এ নিয়ে বাপ-ছেলের মধ্যে শুরু হয়েছে ভয়ঙ্কর এক দ্বন্দ্ব। দুটি প্রাপ্ত বয়স্ক ছেলেমেয়ের ভালোবাসার সম্পর্কই নষ্ট হয়ে গেল বাবার সঙ্গে প্রেমিকার শারীরিক সম্পর্কের জেরে। কী ব্যাখ্যা আছে এসব আসুরিক সম্পর্কের মধ্যে? বিচিত্র মানুষ, আর ততোধিক বিচিত্র তাদের সম্পর্ক!

 next episode- সময় বয়ে যায়


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Drama