দুই কাপ চা আর কথোপকথন
দুই কাপ চা আর কথোপকথন
![](https://cdn.storymirror.com/static/1pximage.jpeg)
![](https://cdn.storymirror.com/static/1pximage.jpeg)
- "হ্যালো সুজি তোমাকে একটা কথা বলার ছিল। আসলে আমার এক বন্ধু আমার বাড়িতে যাচ্ছে। আমার একটু দেরী হবে গো যেতে। তাই তুমি একটু সামলে নিও প্লিজ সুজি!"
- "ঠিক আছে তুমি কোনো চিন্তা করো না আমি সব সামলে নেবো!!"
কথা শেষ হলো।
আমি হলাম সুজাতা চ্যাটার্জি। আর যার সাথে আমার এক্ষুনি কথা হলো সে আমার স্বামী সঞ্জয় চ্যাটার্জি। ও আমাকে ছোট করে সুজি বলেই ডাকে। আমিও ওকে ছোট করে সঞ্জু বলেই ডাকি।
হঠাৎ করে দরজায় কলিং বেলের আওয়াজ হলো। হয়তো ওর বন্ধুই এসছে। তাড়াতাড়ি গিয়ে দরজা খুললাম। অতিথি বলে কথা!! এভাবে তো গেটের সামনে দাঁড় করিয়ে রাখা যায় না!! কিন্তু দরজা খুলে যাকে দেখলাম তাকে দেখে খানিকটা চমকে উঠলাম আমি!! এ কাকে দেখছি আমি?? এ যে সমীর!! চোখটা ছলছল করে উঠলো! ওর চোখেও বিষ্ময়ের ছাপ ফুটে উঠেছে। হয়তো ও ও আমার মতোই চমকে উঠেছে আমাকে দেখে। ওকে বাড়ির ভেতর আনলাম। দিলাম একটা চেয়ার। জিজ্ঞেস করলাম
- "চা নাকি কফি??"
- "চা টাই নিয়ে আয়!!"
অবাক হয়ে গেলাম ওর মুখ থেকে তুই ডাকটা শুনে। এখনো ও আমাকে তুই করে ডাকছে। ও এখনো ভোলেনি আমার আর ওর তুই ডাকের সম্বোধনটা!! হঠাৎ ও নীচু স্বরে বললো,
- "নিজের জন্যও নিয়ে আসিস চা-টা।একসাথে বসে খাবো।"
চা বানিয়ে নিয়ে এলাম। এক কাপ চা ওকে দিয়ে আরেকটা কাপ আমার হাতে নিলাম। একটা চেয়ার টেনে ওর পাশেই বসলাম আমি। ওই প্রথম বলতে শুরু করলো,
- "কেমন আছিস??"
- "ভালো!! তুই কেমন আছিস??" আমি বেশ নীচু স্বরেই কথাটা বললাম।
- "এই চলে যাচ্ছে আমার!!" কথা শেষ হওয়ার পর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো ও।
কিছুক্ষণ নিস্তব্ধতার পর ও আবার বললো,
- "তা আজ তো জুলাই মাসের পনেরো তারিখ। দশ তারিখে তো তোর জন্মদিন ছিল। কেমন কাটলো ওই দিনটা তোর??"
আমি খানিকটা অবাক হয়ে গেলাম। এখনো ও আমার জন্মদিন ভোলে নি তাহলে!! চোখের জলটা যেন এক্ষুনি বয়ে যাবে। কিন্তু নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম,
- "হ্যাঁ ভালোই কেটেছে!! সঞ্জয় একটা পার্টি আ্যরেঞ্জ করেছিল। তারপর কেক কাটা। সবকিছু হলো ওই আরকি.."
- "হ্যাঁ সঞ্জয় বলেছিল যে ওর স্ত্রীর বার্থডে। আমিই আসতে পারি নি একটা প্রবলেম হয়ে গিয়েছিল বলে।"
- "ও আচ্ছা.." আমি নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম। সেদিন আসে নি হয়তো ভালোই হয়েছিল!! তবে আজকেও এলো কেন কে জানে?? এটাই হয়তো ভাগ্যের পরিহাস!!
ও আবার বললো,
- "তোর মনে আছে রে সুজি সেই কলেজের কথা!! সেদিন তোর জন্মদিন ছিল। আর তোর বাবা সবাইকে মিষ্টি খাওয়াচ্ছিল। সেদিনই তো আমাদের প্রথম বন্ধুত্ব হয়। আর তারপর ধীরে ধীরে ভালোবাসা.. তোর মনে আছে রে সুজি?? তোর জন্মদিনেই আমি তোকে নিজের মনের কথা বলেছিলাম!! আর তুই আমাকে জোর করে জড়িয়ে ধরেছিলি শুধু.. মনে আছে তোর??" ও কেমন মাতাল কন্ঠে কথাটা বললো। হয়তো আজও ও ওই পুরোনো কথাগুলো ভাবে।
- "মনে থাকবে না আবার!! সেই সব দিন কি আর ভোলা যায়??" কথাটা বলার পরেই অজান্তেই চোখ থেকে এক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়লো। তবে ওর অলক্ষ্যেই চোখের জলটা মুছে ফেললাম আমি।
- "তোর মনে আছে সুজি?? কলেজে সেকেন্ড ইয়ারের একদিন তুই এসে বললি, আমার মতো মধ্যবিত্তের পরিবারে তোকে বিয়ে দিতে তোর বাবা কখনোই রাজী হবে না!! আমি যেন তোকে ভুলে যাই!! ছেড়ে দিলি আমায় তুই!! আমিও আর কথা বলিনি। সত্যিই তো তুই কতো বড়ো ঘরের মেয়ে আমার মতো মধ্যবিত্তের সাথে তোকে মানায় না!! কেমন এক ভারী নিঃশ্বাস ফেলে ও কথাটা বললো। বুঝতে পারলাম ক্রমেই ওর গলাটা ভারী হয়ে আসছে। আমারো এই কথাটা শুনে কেমন জানি চোখটা ভারী হয়ে গেল। বুঝতে পারলাম ওর সেদিন কত কষ্ট হয়েছিল!!
হঠাৎ করে কি মনে হলো জিজ্ঞেস করে ফেললাম,
- "আচ্ছা তুই বিয়ে করে নিয়েছিস??"
ও মুচকি হাসলো। চায়ের এক কাপে চুমুক দিল।
- "না রে!! আসলে মাকে বলেছিলাম তোকে বাড়ির বউ করে আনবো। আর জানিস তো তোর সাথে ব্রেক আপ হওয়ার পরেই মায়ের এক বিরাট রোগ ধরা পড়ে। ডাক্তার বলেছিল যাতে সবসময় আনন্দে রাখা যায়। তাই মাকে এখনো বলি তোর সাথে আমার বিয়ে হবে। তুই এখন পড়তে বিদেশ গেছিস। মাও বিশ্বাস করে। হাসি খুশি থাকে!! জানিস মা এখন কিছুদিনের অতিথি মাত্র এই পৃথিবীতে!! তাই যতদিন আছে ততদিন নাহয় মিথ্যেটাকেই সত্যি করে দিই!!" বলেই এক দীর্ঘশ্বাস ফেললো সমীর।
হঠাৎ কলিং বেলের আওয়াজ!! সমীর বললো,
- "দেখ হয়তো তোর বর এসেছে!!"
সঞ্জয় ঘরে এলো। আর ব্যবসার কথা বলতে বলতে সমীরকে নিয়ে বাইরে চলে গেল। আমি এখনো স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছি!! নিজেকে খুব অসহায় লাগছে আজকে!! নিজেকেই কেমন অপরাধী মনে হচ্ছে!! চায়ের কাপে চাটা ঠান্ডা হয়ে গেছে!! সমীর এক চুমুক দিয়েছিল মাত্র!! আজ আমরা একা ছিলাম না ছিল দুই কাপ চা আর আমাদের কথোপকথন........