এ তুমি কেমন তুমি
এ তুমি কেমন তুমি
অষ্টাবিংশতি অধ্যায়
- দেবল নামটা কিন্তু সঠিক নয় । বড় অদ্ভুত পরিবার মনে হচ্ছে ।
মিঃ পাল বললেন - আমি নিজের কানে শুনেছি, নিজের চোখে দেখেছি । সাহেবের ঘাড় থেকে আরও দুটো মাথা বেরিয়ে আসতে । শুনেছি কিস্টন, মেথিলাল আর দেবল তিনভাই । তবে দেবল নামটা কি ভাবে এল সেটা ভাববার বিষয় । কোডার্মা যাবার পথে মেথিলালের মুখেও শুনেছি তার ডড় ভাইয়ের নাম কিষাণ - কিষাণলাল কিস্কু ।
মিঃ পাল বলেছেন । শ্রোতা সকলেই । তিনি বলছেন
- কিষাণলাল না হয় কিংস্টন সেজে রইল । মেথিলাল - সেও মেথিলালই থাকল কিন্তু এই নামদুটোর সঙ্গে দেবল নামটা একটু বেখাপ্পা লাগছে না ? মেথিলাল বলেছিল ওর আসল নাম দেওলাল; ছুটকি যাকে ভালবাসে আর ভালবেসেই ডাকত দেওলা বলে ।
" একদিন হুয়া কেয়া ; কিষাণ ভাইয়া দেওলাকো ছুটকি কি সাথ এক খাটিয়া পর নাঙ্গা শুতা হুয়া দেখা । কিষাণনে ছুটকিকো পানে কি লিয়ে বহোত কুছ কিয়া । ইস সময় ম্যায়নে ভী মওকা নেহি গবায়া " ।
পাল বাবু বলতে থাকলেন মেথিলালের কথায় ।
" বহোত দিনো সে ম্যায়নে ঘর-জমীন আপনে কব্জে মে লেনে কে লিয়ে শোচ রহা থায়। মওকা মিল গয়া । কিষাণ ভাইয়াকো বোলা অগর তুম ছুটকিকো পানা চাহতে হো তো চলা যাও কাশী । ওয়াহাঁ মেরা এক জানা পহচানা সাধুবাবা রহতে হ্যায় । মেরা নাম লেকে উনকো বতাও তুমরা অপনা কামনা । সাধুবাবা সব বন্দোভস্ত কর দেঙ্গে ।
পাল বাবু বলছেন - তারপর কিষাণলাল চলে যায় কাশীতে। খুঁজে খুঁজে ওই সাধুকে পেয়ে যায় । সাধুবাবা ওকে এমন দীক্ষা এবং শিক্ষা দেয় যে মন্ত্রবলে সে যে কারও রূপ নিতে পারবে ।
এ ক্ষেত্রে ছুটকির জন্য সে পাগল হয়ে যায় । ফিরতি পথে রাঁচিতে এসে জানতে পারে রেডিও শ্রীলঙ্কার ভারতস্থিত অল ইণ্ডিয়া রেডিও রাঁচির ঘোষণা । রেডিও শ্রীলঙ্কার পক্ষে চার্লস কিংস্টন যাবেন ঝুমরিতিলাইয়া আদিবাসী মেয়েদের নাচ এবং নাচনী সংগ্রহে।
মাথায় বিদ্যুৎ খেলে যায় কিষাণের । সেখানে কিংস্টন সাহেবের সঙ্গে দেখা করে কথা দেয় তাঁর সন্ধানে ঝুমরিতিলাইয়াতে উপযুক্ত মানের নাচনী জোগাড় করে দিবে । সাহেব খুশি হয়ে কাজটা সহজ হয়ে গেল মনে করেন।
কিষাণের দুষ্টু বুদ্ধি বিদ্যুৎ গতিতে মস্তিষ্কে ধাক্কা মারে । নিজের অজান্তেই মন্ত্র পড়ে মনে মনে । নিমেষে কিংস্টন হয়ে যায় সে । আর রেডিওর তরফে নাচনীর সন্ধানে চলে আসে । হাজারিবাগের জঙ্গলে আসল কিংস্টনকে বন্দী করে রাখে ; ভুলটা এখানেই করে ফেলে । মেরে দিলেই হয়তো বেঁচে যেত ।
ছুটকি এবং কালীচরণ পালের কথায় বিশ্বাস করে। কারণ ওরা ওই জঙ্গল থেকেই সাহেবকে উদ্ধার করেছে।
এরপর বাকিটা ছুটকি বলতে থাকে ।
- আমার মরদটো মানে দেওলাকে মেইরে দিল গ । আর লিজে দেখ কেমন সায়েব সেইজে রইছে !
মিঃ পাল বললেন - কিষাণ দেবলের রূপ নিয়ে সেদিন ছুটকির সাথে --
সেটা দেখতে পেয়ে কালীচরণের মাথা গরম হয়ে যায় । কাস্তে চালিয়ে কিষাণের মাথায় ঢুকিয়ে দেয় । দেবল রূপী কিষাণ মরে যায় ।
- অসম্ভব ! চিৎকার করে বলেন লাহিড়ী মশাই। কিষাণ মরে গিয়ে থাকলে এত অঘটন ঘটছে কেন ?
মিঃ পাল মাথা ঠাণ্ডা রেখে বললেন - মানুষ কিষাণ মরেছে স্যার ; কিন্তু পিশাচ কিষাণ দেবলের শরীরে থেকেই গেছে।
আর যেহেতু দেবল সাধুর শিষ্যত্ব নেয়নি সেজন্য কোন ভালো কর্মও করতে পারে না ।
ছুটকি বলল - তাইলে আমার দেওলা বেঁইচে আচ গ ? আমি যাব উয়ার লেগে সাধুবাবার কাছে।
মি: পাল বললেন - আগে দেবলের সঙ্গে দেখা হোক। তাকে সঙ্গে নিয়ে যেও ।
কালীচরণ বিস্মিত হল না । হতে পারে লোকটা হয়তো তাই।
পালের কথা শুনতে শুনতে রাত বাড়ে । বাগানের পুড়ে যাওয়া ভাঙা বাড়িটা থেকে একটা গোঙানির শব্দ শোনা যায় ।
পুলিশ এলার্ট হয়ে সার্চলাইটের আলোয় শব্দের উৎস সন্ধানে আসরে নামে ।
কোন ক্লু পাওয়া গেল না । অতএব রাত পাহারা দেওয়া ছাড়া তাদের আর তেমন কাজ রইল না ।
পৈতুণ্ডী মশাই বললেন - হেভী ইন্টারেস্টিং কেস ।
লাহিড়ী মশাই বললেন - তাই নাকি ? তোমার সাথে এমন কিছু ঘটলে কি করবে ?
- সোজা কাশী !
- কাশী ! বাবা বিশ্বনাথের চরণে আশ্রয় নিলেও পার পাবে না ।
- আরে ধূর ! আমি তাই বলেছি নাকি ? বলতে চাইছি সোজা কাশী গিয়ে ওই সাধুবাবাকে ধরে আনব ।তারপর দেখিয়ে দেব কেমন মালিশ দিতে হয় ; এক্কেবারে পালিশ করে ছাড়ব ।
লাহিড়ী মশাই একটা নরম পাশ বালিশ ছুঁড়ে দিয়ে বলেন - আইডিয়া তোমার ভালো । নাও এটা আরাম করে বোসো আর বলো কবে যাবে ?
( ক্রমশ )