জি ডি নম্বর ১৪৩
জি ডি নম্বর ১৪৩
আমাকে আমি আর্দশ মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই না কখনো। আপনিও নাই দেখতে পারেন আমাকে সৎ মানুষ হিসেবে। কিন্তু আমি দুশ্চরিত্র বা চরিত্রহীন না। কিছুটা ভিতু । বার বার প্রেমে পড়েছি, বলেই কি আমি চরিত্রহীন ? আমি কিন্তু কারো সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করি নি। সুস্মিতার বিশ্বাস আমি ভঙ্গ করতে চাই নি। রিয়ার যা ঘটেছে ওটা ছিলো একটা দূর্ঘটনা মাত্র। তাই সুস্মিতাকে সব কিছু বলে নিজেকে অপরাধ বোধ থেকে মুক্ত হলাম। কিন্তু জানি না আজকের পর আমাদের সম্পর্কগুলো কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে। তবে সুজন বাবুর তো কোন অপরাধ ছিলো না। তাই তাঁর মৃত্যুর জন্য যে দায়ী সে শাস্তি পাক আমি সেটা চাই।সে যতোই আমার কাছের মানুষ হোক। আমি নিজেকে অপরাধী ভাবি তাই থানায় বসে আছি সুস্মিতার অপেক্ষায়।
প্রথম এই বাক্য গুচ্ছ পরে আমার গল্পটার মাথামুন্ডু আপনারা কিছুই বুঝতে পারলেন না তাইতো? আসলে আমিও ভীষন ভাবে ঘেঁটে আছি। শুরুটা আমি কিভাবে করবো ভেবেই পারছি না। আমার জীবনে তিনটে প্রেম এসেছে কিন্তু ভালোবাসা কোনটা সেটা আজো বুঝতে পারি নি। প্রথম প্রেমটায় বেস মিষ্টি গল্প ছিলো, সরস্বতী পূজা প্রথম দেখা ভালোলাগা। গোটা একটা বছর ঘোরাঘুরি করে তারপর অনেক সাহস করে কথা বলা। তারপর সে রাজিও হলো, কয়েকটি দিন দেখা হলো। হঠাৎ আবিষ্কার করলাম ও আমার স্কুলের প্রধান শিক্ষকের মেয়ে। অমনি পিছু হঠলাম কারণ ঐ সম্পর্ক কোন দিন কেউ মানবে না । কারণটা ধর্মীয়। শিক্ষা নিলাম, নাম পদবী সাথে , ধর্মীয় পরিচয়টা জানা জরুরী।
ভেবেছিলাম অচেনা মেয়ের ভালবাসায় আর পরবোই না। ভাবনা আর কাজ এক হয় না দ্বিতীয় প্রেমটা হয় গেলো। কিন্তু বিপদ সেখানে এক উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্মকর্তা মেয়ে সে। কিন্তু পিছু হটতে চাইলেও এবার মেয়েটি আমাকে ছাড়লো না। একবারে বাড়িতে নিয়ে যাবার ব্যবস্থা করে ফেললো। প্রথমে আমার কোচিং সেন্টারে ভর্তি হলো। পরে ওর প্রাইভেট টিউটর চাকুরী নিযুক্ত করলো আমাকে। সম্পর্কটা বেশ মজাদার ছিলো। আমি তখন পূর্ণ যৌবনে পড়েছি। ফলে মাঝে মাঝেই "মামি ডেডি হে নেহি ঘরপে , পেছিলে ক্যামরে মে ঘুসকে" কুছুতো নিহে বেশ ভালো কিছুই হতো। ফলে এ সম্পর্কে ভালোবাসার অনুভূতি থেকে যৌবন উপভোগটাই বেশি প্রাধান্য পেয়েছিলো। ছাত্র অবস্থায় যেটা খুব একটা ভালো লক্ষণ ছিলো না। মেয়েটি উচ্চ মাধ্যমিকে ফেলে করলো। আমিও খুব একটা ভালো। রেজাল্ট করলাম না কলেজের পরীক্ষায়। মেয়েটির বাবা মেয়েটির বিয়ে ঠিক করে ফেললো , এক পুলিশ ইন্সপেক্টর সাথে। আমি সেরে এলাম মেয়েটার জীবন থেকে। মেয়েটিও আমাকে আটকালো না। কারণ সে জানতো আমার তার ভরনপোষণ দায়িত্ব নেবার ক্ষমতা নেই। তবে সে বলেছিলো। আমি আমার কেরিয়ার গড়ে তোলার পর , যে দিন আমি তাকে আমার জীবনে ফিরিয়ে নিয়ে আসতে চাইবো সে দিনই সে ফিরে আসবে সবকিছু ছেড়ে। সে নুন ভাত খেয়েও আমার সাথে থাকতে পারে। কিন্তু এই সব সিনেমাটিক কথা গুলোকে আমি কোন দিন গুরত্ব দিই নি। তাই জীবন চললো জীবনের গতিতে।
একটি সংবাদ পত্রের অফিসে সহ সম্পাদক হিসেবে চাকরি পেলাম। মাস্টার ডিগ্রী হয়ে গেছে। মোটামুটি ভাবে সাংবাদিক এবং নতুন লেখক হিসেবে একটা পরিচিত হয়ে গেছে বইপাড়ায়। মোটামুটি ভাবে চাকুরী পেতে অসুবিধা নেই আর। ক্যারিয়ার নিশ্চিত। এখন যে কোন মেয়ের ভাত কাপড়ের দায়িত্ব নিতে পারবো তাই, প্রেমে একটা করবো ভাবছিলামই।
সুস্মিতা যোগ দিলো আমাদের পত্রিকাতে । আমাদের ছোট প্রকাশনা সংস্থা। ফলে খাওয়া দাওয়া আড্ডা সব একসাথে।মনে মনে যে পচ্ছন্দ করতো সেটা আমি বুঝতে পেরেছিলাম। আর স্পষ্ট হলো যখন ওর জন্মদিনে ওর প্রিয় রঙ হলুদ ছেড়ে আমার পছন্দের রঙের গোলাপি রঙের চুরিদার পরে এলো। আমি ওকে কফি খাওয়াতে একটা রেস্টুরেন্টে নিয়ে গেলাম , জিজ্ঞেস করলাম ও সিঙ্গেল কিনা। ও বললো" কাউকে পছন্দ করে, ছেলেটাও হয়তো ওকে পছন্দ করে কিন্তু ভিতু খুব তাই ভয় ছেলেটা ওকে কথাটা বলতে ভয় পায়।বলে সম্পর্কটা ঠিক এ গাছে না "
আমি বললাম " তুমি বলে দাও না ছেলেটাকে তাহলে। মেয়ে জায়গা ছেলে মতো চাকুরী চাই মাইনে চাই । আর প্রোপজ বা প্রেম করতে গেলে ছেলেদের কেন আগে বলতে হবে মেয়েও বলতে পারে। "
সেইদিন ওকে বাইক করে ওর বাড়িতে ছেড়ে দিয়ে এলাম ও বললো " হঠাৎ করে ব্র্যাক চিপেবে না ঠিকই। যাতে মেয়েটা কাছে কাছে এসে চিপকে যায় তোমার সাথে। "
আমি বললাম " তোমাকে ছাড়াবো বলে আজ ভাইয়ের থেকে বাইকটা নিয়েছি। তবে ব্র্যাক চেপে কিভাবে বাইক ঠামানো যায় সেটা আমার জানা নাই।"
ও হাসলো বললো " নিজে একটা বাইক কিনে নাও তাহলে, মাঝে মাঝে ঘুরতে নিয়ে যাবে আমায়। ব্রেক চিপবে যতো খুশি। কিন্তু আমি যদি তোমাকে একবার চিপকাই তাহলে চুইংগাম মতো চিপকাবো ছাড়াতে পারবে না।"
শহরে ও একা থাকে তবে গ্রাম বাড়িতে ফিরে যায় ছুটির দিন গুলোতে। কারণ ওর জীবনে ওর দাদার গুরুত্ব অনেক খানি। ওর বাবা একজন সৎ পুলিশ কর্মী ছিলো। ফলে মরতে হয়েছিল তাকে দুষ্কৃতীদের হাতে। সাথে ওর মাও মারা যায়। তখন ওর দাদা ওকে কোলে পিঠে করে মানুষ করেছে তাই ও কাছে ওর দাদার গুরুত্ব অনেক খানি। তবে বেশি চাপ নেই ওর দাদা আমাদের সম্পর্কটা ঠিক মনে নেবে এমন দাবিটা করেছিল ওর বৌদি ও।
কিন্তু ওদের বাড়িতে গিয়ে আবিষ্কার করলাম ওর বৌদি আসলে রিয়া। আমার ও বাড়িতে যাওয়া আসা লেগেই ছিলো। কিন্তু যেটা ভেবেছিলাম সেটাই হলো। সুস্মিতা সামনে আমার সাথে ভালো ব্যবহার করলেও । আমাদের সম্পর্কটা ভেঙে দিলো ও । ওর দাদা আমাদের সম্পর্কটা মেনে নিলো না কোন কারণে। তবে আমিও সম্পর্কটা রাখতে চাইছিলাম না। কারণ আমি সুস্মিতা বিশ্বাস ভঙ্গ করে ফেলেছি তখন । রিয়া সাথে হঠাৎ করেই একদিন ঘনিষ্ঠ হয়ে পরেছিলাম। আর তাই জন্য আমিও সম্পর্কটা থেকে বেরিয়ে আসতে চাইলাম।
কিন্তু এর মধ্যে একটি ঘটনা ঘটলো যেটা আমাকে চমকে দিলো। সুজন বাবুকে কিছু মানুষ হুমকি দিতে এসে বাড়িতে ভাঙচুর করলো। সেই সুযোগে রিয়া সুজন বাবুকে খুন করলো। সারা পৃথিবীর কাছে খুব সহজেই প্রমানিত হলো দুষ্কৃতীদের হাতে মরা গেছেন সুজন বাবু। কিন্তু রিয়া দাবি ও সুজন বাবুকে খুন করেছে আমাকে ফিরে পাওয়ার জন্য। কিন্তু আমি অতোটা সার্থপর না। যে নিজের সুখের জন্য একটা মানুষকে খুন করে দেওয়াকে সমর্থন করবো। জানি হয়তো এই ঘটনা পুলিশকে জানালে আমি অপরাধী হিসেবে শাস্তি পাবো। কারণ আমি আবেগে ভেসে রিয়াকে অনেক কথাই বলেছি। তাছাড়া আইনের মারপ্যাঁচে আমি ঠিক অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত হবো। তাছাড়া মন থেকে আমি নিজেকে অপরাধী ভাবছি বলেই সুস্মিতাকে সব কিছু বলে , থানায় এসে বসে আছি ঘটনা খানেক।
কিন্তু সন্ধ্যাও হতে চললো।সুস্মিতা এলো না। আমি বাধ্য হয়ে ফোন করলাম। ও বললো " তুমি চলে যাও বাড়িতে , আমি কি করবো ভেবে পারচ্ছি না। একজন অপরাধীকে শাস্তি দিতে গিয়ে দাদার সম্মানটা নষ্ট করতে চাইছি না। তুমি রিয়ার জীবনে না ফিরে এলে ও অনেক বেশি শাস্তি পাবে। কারণ আমরা ওকে খুব ভালোবাসতাম।"
ও ফোন কেটে দিলো। আমি কি করবো বুঝতে পারছিলাম না। আমি আমার সিম হারানোর একটা জি ডি করলাম। আর থানা থেকে বেরিয়ে এসে । সিমটা ফেলে দিয়ে। নতুন একটা চাকরি জোগাড় করবো ভাবলাম। কারণ এ শহরের ভিড়ে ব্যস্ততায় সুস্মিতা , রিয়ারা ঠিক হারিয়ে যায়।