Shyamasree (শ্যামশ্রী)

Classics Others

4  

Shyamasree (শ্যামশ্রী)

Classics Others

One Trip ( পর্ব- তিন)

One Trip ( পর্ব- তিন)

9 mins
410


সীমাকে এমন করে কাঁদতে দেখে সবাই প্রথমে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে যায়, মালা আবেগে সীমা জড়িয়ে ধরে বলে " আমি কি তোকে আঘাত দিলাম বল? বল না। "

সীমা ওকে জড়িয়ে কেঁদে যেতে লাগলো। ওরা একে অপরের দিকে তাকালো, কেউই তেমন জানেনা ওর বিষয়। সত্যি বলতে ওরা কেউ কারোর বিষয় কিছুই জানেনা। আজকে যেন সবাই তার দুঃখ কষ্ট বিষাদ ভালোবাসা সবকিছুকে মিলিয়ে মিশিয়ে এক করে ফেলেছে। সীমা ওরা সবসময়ই হাসতে আমোদ করতে দেখেছে এমন করে কাঁদতে দেখে ওদের বুকটা কেমন করে উঠলো। যে সহজাতভাবে গম্ভীর তাদের গম্ভীরতা বা কান্না হয়তো মানুষকে ততটা বিচলিত করেনা, কিন্তু যারা নিজেরাও হাসে আর অন্যকেও হাসায় তাদের সামান্য গম্ভীরায় অন্যকে কষ্ট দেয়। এতো কান্না, যেন বেদনাতুর কান্না।

সবাই কিছুক্ষণ সীমাকে সময় দিলো। জল এগিয়ে দিলো ও কিছুক্ষণ শান্ত হবার পরে। এক ঢোক জল খেলো ঠিকই, কিন্তু কেমন হেঁচকি তুলতে লাগলো। শান্তা এবারে চোখ মুছিয়ে দিয়ে সীমার হাতখানা শক্ত করে ধরে বললো "সীমা তোকে এখন কিছু বলতে হবে না। তুই সময় নে। তবে ফেরার আগে মনের সব কষ্ট যন্ত্রণা এই সমুদ্রে ভাসিয়ে দিয়ে যাবো আমরা। রাত অনেক্ক্ষণই নেই, ভোর হয়ে গিয়েছে। তবুও বলব সবার একটু শুয়ে নেওয়া ভালো। সকাল সাড়ে এগারোটায় পৌঁছানোর কথা, কিন্তু দেরীও হয়ে যেতে পারে। ক্লান্তি এসে যাবে সবার।"

কেউ আর কথা বাড়ালো না, সবাই শুয়ে পড়লো যে যার স্থানে।


__________


" দারুণ লাগছে রে, ইস্ না আসলে জীবনের একটা বড় ভুল করতাম। "

" হ্যাঁ রে একটা বড় প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হতাম।"

" ধন্যবাদ শান্তা ম্যাডাম। "

সীমা এমন করে কথাটা বললো বাকিরা সবাই হেসে ফেললো।

আজ ওদের ট্রেন পৌঁছাতে ১২ঃ৩০ বাজিয়ে দিয়েছে। তবে ওরা ট্রেনেই মালার আনা পরোটা তরকারির সাথে যা যা মুখরোচক সব একটু একটু করা খেতে খেতেই কারো পেটে জায়গা নেই। ওরা হোটেলে গিয়ে পোশাক বদলে সোজা চলে এসেছে সমুদ্রে। সবাই চুড়িদার পড়েছে, মানে পড়ানো হয়েছে। শান্তা অবশ্য পড়েই, সীমা নিজেই কার কাছে থেকে জোগাড় করে এনেছে একটা চুড়িদার। বাকিরা কিছুতেই পড়বে না। সমুদ্রে শাড়ি পরে নামাটা ঝক্কি-ঝামেলার বিষয়। শেষে দেখা গেল মালার ব্যাগে চুড়িদার। মালা মেয়েকে ফোন করতে জানায় সেই দিয়েছে, সমুদ্রে শাড়ি পরে কি নামা যায়? আর কি করা বাকিরাও পড়তে বাধ্য হলো। শান্তার চুড়িদার রুমা স্বপ্না পড়লো আর অর্চনা নিলো মালার থেকে একটা। কেউই সমুদ্রের জল থেকে উঠতেই চায়না, একজন ভদ্রমহিলাকে অনুরোধ করে ওরা সবাই একসাথে একটা ছবি তুলালো।

হোটেল এক্কেবারে নতুন দীঘার পাশেই তাই পৌঁছাতে সময় লাগলো না। ওরা ছয়জন একটা বড় ঘরে ব্যবস্থা করেছে। এটা Homestay Hotel... মানে একদিকে Hotel, অন্যদিকে Homestay..

এই হোটেলের মালিক Homestay টা কিনে নিয়ে একসাথে চালাচ্ছেন। সবার অবস্থা খারাপ হয়ে গেল বালি পরিস্কার করতে গিয়ে। সবার পোশাক থেকে অন্তত অর্ধেক বালতি বালি বের হলো। সেই নিয়েও চললো হাসাহাসি, স্বপ্না বললো "ভুলই হলো পোশাকগুলো পরিস্কার করে.. "

" কেন কেন?"

" বাড়ি গিয়ে ধুলে বালি গুলো থাকত, জমিয়ে একটা ঘর তৈরী করে নেওয়া যেতো কি বলিস?"

সবাই শুনে হা হা করে হেসে উঠে "বেশ বলেছিস।"

" চল চল খেতে চল, বড় খিদে পেয়েছে। "

" ঠিকই বলেছিস শান্তা খিদে পেয়েছে, আনন্দ করতে গিয়ে বুঝতে পারিনি।"

নীচেই খাবারের ব্যবস্থা, সবাই খেতে গেল। খাওয়ার মেনু ভালোই ছিল। দুই ধরনের সামুদ্রিক মাছ, সাথে আবার চিংড়ি ভাপা।

খেয়ে দেয়ে উঠতে উঠতে সোয়া চারটা বেজে যায়।

মালা মাছ খেতে সংকোচ করবে সবাই ভেবেছিল।

রুমা জিজ্ঞেস করেই বসে " মালা একটা কথা বলব কিছু মনে করবি না। "

" আরে বলতো এতো সংকোচ করছিস কেন?"

" তোর সাথে আমার একবার দেখা হয়েছিল তুই বলেছিলি তোর শ্বশুরবাড়ির লোকেরা আমিষ খাওয়া তো দূর, আশেপাশেই ভিড়তে দেয়না।"

" হ্যাঁ রে আমাকে সব খাবার ছাড়তে হয়েছিল। কিন্তু মেয়েরা একটু বড় হতেই জানালো মেয়েরাও নাকি আর মাছ-মাংস কিচ্ছু খাবে না, আমি খাইনা দেখে খাওয়া ছেড়ে দিয়েছিল। তাই ওদের ও খাওয়া শুরু করেছিলাম আবার। শ্বাশুড়িও বাধা দিতে পারেননি কারণ মেয়ে দুটোর ভবিষ্যতের কথা ভেবে।"

" তোর মেয়েরা সত্যি ভালো রে.."

" তা আমি মানি সীমা, আমার মেয়েরা সন্তান হিসেবে আমার চেয়ে অনেক ভালো। "

" কেন এমন করে বলছিস?"

" থাক না এসব কথা, চল না গল্প করি।"

রুমা বললো " হ্যাঁ সে করাই যায়, সীমা তুই শুরু কর।"

সীমা কেমন একটা হেসে বলল " গল্প!! আমি আর কি গল্প বলব রে? আমার জীবনটাই একটা গল্প।"

সবাই পরস্পরের দিকে তাকালো। সীমা উঠে জানালার কাছে দাঁড়ালো, সেখান থেকে সমুদ্র ভালো করেই দেখা যাচ্ছে। তারপর নিজের মনেই বলতে শুরু করলো " তোরা জানিস আমি নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে। বাবার একটা দর্জির দোকান ছিল আমরা যখন ছোট, তবে আমি চার ভাইবোনের মধ্যে ছোট হওয়ার কারণে আমাকে তেমন বুঝতে দেয়নি কেউ। দিদি অবশ্য বিয়ের আগে পর্যন্ত মা-বাবাকে সাহায্য করত,দোকানেই দিদিকে দেখে ঘরের বৌ করে নিয়ে যান ওর কাকিশ্বাশুড়ি। তারপর দুইদাদা উচ্চমাধ্যমিকের পরে ব্যবসায় যোগ দিয়ে ব্যবসাটাকে বড় করে, পাশের দুটো দোকান ভাড়া নিয়ে নেয়। বড়দা পাশেই একটাতে পুরুষদের পোশাক তৈরী করে আর ছোড়দা মেয়েদের। মা-বাবা ছোট খাটো পিকো, ব্লাউজ, ফলসপার এসব। সব টাকা পয়সার লেনদেন বাবার হাতেই ছিল। দাদারাও আলাদা হতে চায়নি কখনো। তবে দাদাদের বিয়ের পরে বাবাই নিজে থেকেই বলে নিজেদের কাজের লেনদেন নিজেকে করতে। ছোট থেকে দাদাদের বিয়ের আগে পর্যন্ত আমি বাড়িতে একাই থাকতাম। যখন যা ইচ্ছে করতাম, তাছাড়া আমার দিদির বেশ অল্প বয়সে বিয়ে হয়ে গিয়েছিল, আর বেশ ভালোই ছিল। জামাইদাদাকে দেখতাম কত কিছু দিতো দিদিকে আর ছাড়তোও না বেশি বাড়িতে। এদিকে দাদারাও ততদিনে প্রেম করতে শুরু করেছে। আয় করে করবে নাই বা কেন? আমি আগে থেকেই অকালপক্ব ছিলাম, তারপর এসব দেখেই জীবনে প্রেম সংসার এসবই জীবনের সব মনে হতে লাগল। না তা বলে ভাবিস না এসব বলে আমি নিজের দোষ ঢাকার চেষ্টা করছি। বিষয়টা তা নয়, এখন মনে হয়তো এসবও কারণ হতে পারে। দুই দাদার বিয়ে একসাথে হয়, বৌদিরা একসাথেই ঘরে আসে। এবারে ওদের মা দোকানের কাজে ঢুকতে দিতে চায়না। চান ওরা সংসার সামলাক, কোনো দিনও মা আয় করতে হবে দেখে স্থিত হয়ে সংসার করতে পারেন নি। বৌদিরা ভালো ছিল এখন বুঝি, কিন্তু আমার তখন তাদের ভালো লাগতো না। দাদাদের মারফত আমার প্রেমের কথা সব জানাজানি হয়ে গেল বাবা-মায়ের কাছে।আমি অস্বীকার করলেও বৌদিরা যখন আমার এতোদিনে এতোজনের কাছে থেকে পাওয়া সব চিঠিগুলো এনে দিলো, তখন আমার মুখ চুন করে দাঁড়িয়ে থাকা ছাড়া কিছু করার ছিল না । সেই প্রথম বাবা আমার গালে একটা চড় মারে, তখন আমি ক্লাস নাইন। কেমন একটা মনের মধ্যে রাগ হতে থাকে। মনে হয় পালিয়ে যাব, এখানে কেউ আমাকে ভালোবাসেনা। আমি ভেবেছিলাম মা-বাবা বুঝি আমাকে বিয়ে দিয়ে দেবে। কিন্তু তা করলেন না তারা, আমাকে পড়াশুনা করতে দিলেও স্কুলে নিয়ে যাওয়া, নিয়ে আসবার দায়িত্ব আমার বৌদি দাদা কিংবা বাবা করতেন। আমার ছোট বৌদি গ্রেজুয়েট ছিলেন, তিনি আমার পড়াশুনা দেখিয়ে দিতে লাগলেন। আমার বড় বিরক্ত লাগছিল এসব, কারণ আমি বরাবরই নিজের মতো চলেছি এতোদিন। তিন বছর ওদের নজরে কাটলেও কলেজে ভর্তি হয়ে ভাবলাম এবার আমার স্বাধীন জীবন। এদিকে ওদের নজর এড়িয়ে প্রেম তেমন হয়ে উঠেনি। তবে একজনের সাথে সবে প্রেমটা জমেছে আর মনে হচ্ছে ছেলেটা সত্যি আমাকে সত্যি ভালোবাসে। আমার বিয়ে ঠিক হয়ে আশীর্বাদ হয়ে গেল। আমি সেদিন প্রথম জানতে পারলাম ছোট বৌদির সম্পর্কে মামা হয়, তবে খুব বড় নয় বৌদির থেকে, আমার চেয়ে বছর বারোর বড় ছিল তবে। আমাকে দেখে পছন্দ হয়েছিল বৌদির বিয়েতে। তখন থেকেই কথা বলে রেখেছিল আমার মা-বাবার সাথে। আমি যখন উচ্চমাধ্যমিক পাশ করবো তখন বিয়ে করবে। ছেলেটা গ্রেজুয়েট আর একটা বেসরকারি ব্যঙ্কে চাকরি করে। অন্তত উচ্চমাধ্যমিক পাশ মেয়ে ছাড়া কি বিয়ে করা সম্ভব? তাই বুঝতে পারি বাবা সেদিন সব কিছু জেনেও কেন লেখাপড়া বন্ধ করেনি।

আমি কি করবো বুঝতে পারিনা। আমি তখন সবে কুড়ি, কিছুতেই এতোবড় ছেলেকে বিয়ে করবো না। পালিয়ে গেলাম আমার প্রেমিকের সাথে। যে সবে গ্রেজুয়েট কিন্তু বেকার। শ্বশুরবাড়ি গিয়ে শুরু হলো অন্য রকম অত্যাচার। লেখাপড়া বন্ধ হলো, তার সাথে সাথে সম্পূর্ণ সংসারের রান্নাসহ সব কাজ আমার ঘাড়ে এসে পড়লো। কোনো দিনও আমাকে কাজ করতে হয়নি বা এতো কষ্ট সইতে হয়নি। মা-বাবার কাছে ফিরে যাবারও মুখ নেই।আমার বর একমাত্র ছেলে ছিল দেখে হয়তো শ্বশুরবাড়ির লোকেরা ঢুকতে দিয়েছিল, আর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্বশুর নিজের মানসম্মানের কথা ভেবে একটা ছোট অনুষ্ঠানও করেছিলেন। তখন বাড়িতে আমার দুই ননদ, বড় ননদ প্রাথমিক স্কুলে চাকরি পেয়ে গিয়েছিল বেসিক ট্রেনিং করে। মাধ্যমিকে ভালো রেজাল্ট ছিল, তখন তো মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েই প্রাথমিক স্কুলে চাকরি হতো। আর ছোট জন উচ্চমাধ্যমিক দেবে, ওর ইচ্ছে পুলিশের চাকরি।

আমার বড় ননদ আমার স্বামী চেয়ে মাত্র বছর খানেকের বড়। শ্বাশুড়ি ছেলে-মেয়েদের নিয়েই ব্যস্ত, আমাকে ওদের বাড়িতে প্রথম থেকেই বেমানান মনে হতো। আর পরবর্তীতে একজন ঝি ছাড়া কিছুইনা। তবে স্বামীকে কিছু বলেই লাভ হতোনা। সে রাগ করে বাড়িই থাকতো না। তারপর একটা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি নিয়ে চলে গেল শিলিগুড়িতে। বাড়ি আসার কথা বললেও আসতে চাইতো না। বড় ননদের বড় ঘরে বিয়ে হয়ে গেল বছর দুই পরে, ছোট ননদ দিদির কথা মেনে নার্সিং ট্রেনিংয়ে সুযোগ পেয়ে চলে যায় গ্রেজুয়েশন করতে করতেই। বাড়িতে আমি শ্বশুর আর শ্বাশুড়ি, তবুও কোনো ভাবে চলে যাচ্ছিলো। কিন্তু বছর ঘুরতে না ঘুরতে যখন বড় ননদ মা হলো তখন থেকে শ্বশুরবাড়ি সবাই কাছে আমি চক্ষুশূল হয়ে উঠলাম। এতোদিন সবাই যেন আমাকে ভুলেই ছিল। মামা ভাতের দিন আমার স্বামীকে সবার সামনে বলা হলো একটা বাচ্চা চাই সবার। স্বামী আমার দিকে তাকালো, ভাবটা এমন আমি চাইলেই হয়। শ্বাশুড়ি আরও ক্ষেপে গেলেন কথাটা আন্দাজ করে, বলেই দিলেন কথায় কথায় মা যদি না হয় এক বছরের মধ্যে বিয়ে দেবে ছেলেকে, আমিও তো মা হতে চাই কবে থেকেই কিন্তু সুযোগই বা পেলাম কই। আমার স্বামী সে বছর ওদের কোম্পানির ম্যানেজার হয়ে সেই শহরে এলো। তারপর অনেক চেষ্টা করেও মা হওয়া হলো না আমার। আমি ডাক্তার কাছে যেতে বললেও শুনতো না। বলতো নাকি আমারই দোষ। বছর তিনেক পরে বাধ্য ছেলের মতো আমার স্বামী আমার সাথে বিবাহ বিচ্ছেদ করে নিলো। তার বছর খানেকের মধ্যেই সহকর্মীর সাথে ধুমধাম করে বিয়ে হয়ে গেল আমার স্বামীর। আমি এদিকে অথৈজলে।খোরপোশ কিছু চায়নি, তবে এককালীন কিছু টাকা পেয়েছিলাম।কিন্তু সেটাও আর কতটুকু। কি করব? কোথায় যাব? জানিনা। তবে ছোট ননদ আমাকে কেন জানিনা ভালোবাসতো, আশা কর্মী বলে একটা পোস্ট বেড়িয়েছিল, সেটায় ঢুকিয়ে দিলো রায়গঞ্জের শহরের কাছেই মহারাজা হাটের প্রাথমিক গ্রামীণ হাসপাতালে আমার পোস্টিং হলো। খাটুনি অনেক, বেতন তেমন নেই। তবুও চলছে, একটা ঘর ভাড়া নিয়ে থাকি। ভাড়া তেমন নয়, তাই রক্ষা, একবেলা কিছু বাচ্চাকে পড়াই। চলে যাচ্ছে..." বলে চোখ মুছলো।

মালা উঠে এসে ওর পাশে দাঁড়িয়ে বললো "আমাকে ক্ষমা কর রে, আমি না বুঝে তোর ক্ষত স্থানে আঘাত দিয়ে ফেলেছি।"

" ধুর পাগলি, মা হতে পারিনি তো কি হয়েছে, মাসি তো হয়েছি। আর জানিস কত শত মেয়েকে আমার এই দুই হাত দিয়ে মাতৃত্বের সুখ দিয়েছি।"

রুমা বললো "তুই তোর মা-বাবার কাছে ফিরে যাসনি কোনো দিনও? "

" গিয়েছিলাম বিয়ের পরে কয়েকবার, বিয়ের বছর পাঁচেকের মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদের পরে আর ওদের সামনে দাঁড়াতে পারিনি।"

" তুই বিয়ে করলি না কেন আর, সবে তুই তখন পঁচিশ। "

" নারে শান্তা আর ইচ্ছে করেনি বিয়ের ঝামেলায় ঢুকতে। জীবনটায় প্রেম বিষয়টাই আমার এক্কেবারে শুকিয়ে গিয়েছিল। আমার কি মনে জানিস সময়ের কাজ সময়েই করতে হয়, আমি সময়ের আগে ছুটছিলাম। "

" এটা ভুল কথা, তুই আসলে ভুল মানুষকে ভালোবেসেছিলি।"

" হবে হয়তো। "

অর্চনা এতোক্ষণ চুপ করেই ছিল, এবারে প্রশ্ন করলো "আচ্ছা তুই তোর বরের খোঁজ রাখিস কোনো? "

স্বপ্না রাগত স্বরে বললো "বর, বর কিসের?"

সীমা বললো "ওকে কিছু বলিস না, কি বলে সম্বোধন করবে বল, না রে খোঁজ আমি রাখিনা, তবে খোঁজ আসে কানে। ওরা নাকি IVF পদ্ধতিতে একটা কন্যা হয়েছে। "

" মানে..."

" অর্চনা তোকে পরে বুঝিয়ে বলব। তাহলে সমস্যা তোর স্বামীর ছিল।"

সীমা মাথা দুলিয়ে হু বলে বললো "আমি হাসপাতালে চাকরির পরে টেস্ট করিয়েছিলাম।"

শান্তা এবারে রাগ করে বললো "তোর তবে সত্যি একটা বিয়ে করা উচিত ছিল, তুই নিজেকে কেন সন্তান থেকে বঞ্চিত করলি?"

সীমা এই কথার কিছু উত্তর না দিয়ে তাকিয়ে রইলো বাইরের দিকে।


চলবে...



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Classics