Bula Biswas

Classics

4.0  

Bula Biswas

Classics

#পরকীয়ায় পরী

#পরকীয়ায় পরী

4 mins
464


ছোটগল্প

বিষয়: প্রেম

কলমে: বুলা বিশ্বাস 

শিরোনাম:

#পরকীয়ায় পরী


         ভর দুপুরবেলায়, ভেজানো দরজাটা আলতো করে খুলে ঘরে ঢুকলো, পরী। আজইতো সেই স্মরণীয় তারিখ। ১০ই এপ্রিল, বারটাও এক পড়েছে, রবিবার।


খাটের উপর একটা নতুন আকাশি রঙের টি শার্ট রেখে, টেবিলের উপর একটা থালায় ভাত, পাঁচ রকমের ভাজা, ডাল, মাছের ঝোল আর পায়েসের বাটিগুলো নামিয়ে রাখতে গিয়ে দেখে, খাটের উপর গাদা গুচ্ছের বই ছড়ানো ছিটানো হয়ে পড়ে আছে। রান্নাঘরে উঁকি দিয়ে দেখলো, সেখানেও ও তপাদা নেই। 

পরী ভাবলো, হয় স্নানে গেছে, অথবা পাড়ার পাইস হোটেল থেকে খাবার আনতে গেছে। 


পরী খাটের উপর বইগুলো গুছিয়ে রেখে, বিছানার চাদর, বালিশ ঠিক ঠিক করে গুছিয়ে রেখে, চেয়ারের উপর বসে অপেক্ষা করতে থাকে। 

আজ কত কথাই ওর মনে পড়ে। তপাদার মা, বাবা, কেউ নেই। ও কখনো নিজের জন্য রাঁধে, কখনো রাঁধে না। আজ ওর জন্মদিন। পরী ওর কাছে পড়তে আসতো। ওর মা বেঁচে থাকতে এই দিনে ওর জন্মদিন পালিত হতো। পরীর মতো আরো যারা ওর কাছে পড়তে আসতো, সবাই হাতে করে তপাদার জন্য গিফ্ট আনতো। মা নেই, এখন আর কে করবে! 


বাবাতো ওর কবে গত হয়েছেন। তখনো তপাদার এই দুরবস্থা হয় নি। ওর মা ওকে কোনো কষ্ট দিতেন না। মা ওর বন্ধুর মতো। তপাদা ভালোই ছিল। কিন্তু মা চলে যাবার পর তপাদাটা কেমন হয়ে গেছে যেন। 


ওর মনে পড়ছে, ও তখন নবম শ্রেণীতে পড়ে। তপাদার কাছে ও পড়তে এসেছে। তপাদার সেদিন খুব জ্বর হয়েছিল। ও চাদর চাপা দিয়ে শুয়েছিল। ওর মা ওষুধের দোকান থেকে ওষুধ আনতে গিয়েছিল। সবাই বাড়ি চলে গেলো, শুধু পরী বসেছিল। তপা বলেছিল, 'পরী বাড়ি চলে যা। অন্যদিন পড়িয়ে দেব।'

পরী বলেছিলো, 'কী যে বলো তপাদা। দাও তোমার মাথাটা একটু টিপে দি।'

'দিবি? দে নারে। ভীষণ মাথা, গা হাত পা যন্ত্রণা করছে।'


পরী ওর ব্যাগটা টেবিলির উপর রেখে, তপার মাথার কাছে বসে, ওর কপালে হাত দিতে গিয়ে আঁতকে ওঠে। জ্বরে কপাল যেন পুড়ে যাচ্ছে। ও তাড়াতাড়ি জলপট্টি দিতে লাগলো আর টেবিলফ্যানটা মাথার কাছে চালিয়ে দিলো। তপা চোখ বুজে মুখ দিয়ে শুধু আওয়াজ করলো, 'আঃ, কী আরাম লাগছে রে। আচ্ছা, তুই আমার আগের জন্মে কে ছিলি বলতো?'

'তোমার বোন গো।'

'ধ্যুর! বোন কী করে হবি?'

পরী ঘাবড়ে গিয়ে ওর মুখের দিকে তাকাতেই, তপা কেমন একটা দুষ্টু হাসি দিয়ে ওকে বললো, 'দ্যাখ, মা যতক্ষন না আসছে, তুই এবার জলপট্টিটা রেখে, তোর নরম হাত দিয়ে আমার কপালটা টিপে দে দেখি।' বলে পরীর হাতটা চেপে ধরলো। 


সেদিনই পরীর মন তথা সারা শরীরে শিহরণ জেগেছিলো। ও চুপ করে তপার কপাল টিপে দিতে থাকলো, মাথার চুলে বিলি কাটতেই তপা ঘুমিয়ে পড়েছিলো। 

তপার মা হন্তদন্ত হয়ে ওষুধ নিয়ে ঘরে ঢোকেন। পরী উঠে দাঁড়ায়। বলে, 'আণ্টি, তপাদা ঘুমিয়ে পড়েছেন। এবার আমি যাই।'

সেদিন পরী বাড়ি চলে এসেছিলো। কিন্তু মনের মধ্যে যে বসন্তের রঙীন হাওয়া খেলে গেছিলো, তা মনের কোণায় লুকিয়ে নিজের জায়গা করে নিয়েছিলো। সেই লুকোনো প্রেম, বাস্তবে পরিণতি পেলো না। কারণ ছন্নছাড়া, ভবঘুরের সাথে আর যা হোক, সংসার করা চলে না। 


এরপরে দিন গেছে। তপা চাকরি পায় নি। ও ওর মা বাবার জমানো টাকা আর টিউশন করে যা পায়, তাই দিয়েই নিজের পেট কোনোমতে চালায়। পরীকে ওও হয়তো ভালোবেসেছিলো। পরীতো ওকে অবশ্যই ভালোবেসেছিলো। যদিও কোনো দিক থেকে এর কোনোই বহিঃপ্রকাশ ছিল না। 


পরীর বাবা মা ওই পাড়াতেই ওদের জানাশুনা একটি ভালো ছেলের সাথে পরীর বিয়ে দেন। ছেলেটি খুব কেয়ারিং। পরীকে ও ভীষণ ভালোবাসে, পরীও। তবে ওরা যতটা ভালো স্বামী স্ত্রী, ততটা কিন্তু ভালো প্রেমিক প্রেমিকা নয়। এর কারণ, সত্যি অজানা। তবে পরীর দিক থেকে বলা যায়, সত্যিকারের প্রেম কিন্তু একজনের সাথেই হয়। আর তা যদি প্রথম প্রেম হয়, তবেতো কিছুই বলার অপেক্ষা রাখে না। হয়তো ওই কারণেই, পরীর সাথে ওর স্বামীর প্রেমটা তত জমে নি। তবে দুজনেই দুজনের প্রতি কর্তব্য সঠিকভাবে পালন করে। তাই হয়ত ওরা সুখী।

এসব ভাবতে ভাবতে, পরী যেন অন্য জগতে চলে গিয়েছিল। পরীর গায়ের গন্ধ আজও তপা ভোলে নি। 'নিশ্চয়ই পরী এসেছিস? হুমম, তাইতো মনে হচ্ছে।' বলতে বলতে তপা ঘর্মাক্ত গায়ে একবাণ্ডিল কাগজ নিয়ে ঘরে ঢোকে।


লাল তাঁতের শাড়িতে পরীকে অপূর্ব লাগছিলো। গায়ের ঘেমো জামাটা খুলতে খুলতে ওর দিকে তাকিয়ে হাসতে হাসতে বলে, 'কার জিনিস, কে ভোগ করছে।' হাসির দমক যেন থামে না।

পরী বলে, 'নাও, আর আদিখ্যেতা দেখাতে হবে না। মা রান্না করে পাঠিয়ে দিলেন, স্নান সেরে খেয়ে নিও।'


টেবিলের উপর চোখ চলে যেতেই, তপা চমকে ওঠে। বলে, 'আরিব্বাস, আজ কার মুখ দেখে উঠেছি! একেবারে পায়েস পর্যন্ত!'

'তা পায়েসতো করতেই হবে।'

'সে কি! কোন খুশিতে?'

'আজ যে মহাপুরুষের জন্মদিন। সেটাও ভুলে বসে আছো?'

তপা মাথা চুলকে বললো, 'তো তোর কী করে মনে থাকলো? হ্যাঁ রে, আমি তোর কে হই যে, আমার জন্য আজও তুই এমন পাগলামি করিস!'

'শত্রু গো শত্রু! শুভ জন্মদিন, তপাদা।' বলে তপাকে প্রণাম করতে গেলে, তপার হাত দুটো ওকে জড়াতে চাইলেও, পারলো না। ও যে পরস্ত্রী!

শুধু এটুকুই বললো, 'পর জনমে হইও রাধা।'


পরী হাত দিয়ে চোখ দুটো চেপে এক দৌঁড়ে বেরিয়ে গেল। ওর অন্তরের লুকোনো প্রেমটা আজও যে মরে মরে জেগে ওঠে। আর তাইতো ও থেকে থেকেই মানুষটার জন্য খাবার দেবার অছিলায়, ওকে একটু চোখের দেখা দেখতে আসে।


              -----------

কলমে: বুলা বিশ্বাস 

ফোন নাম্বার: 7980205916

মেল আইডি:

bulabiswas60@gmail.com


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Classics