Goutam Nayak

Drama Romance

2.6  

Goutam Nayak

Drama Romance

প্রমিলা (দ্বিতীয় পর্ব)

প্রমিলা (দ্বিতীয় পর্ব)

11 mins
329


বিভুতি বাবুর কথাবার্তা শুনে পত্রটি আমার ঠিকানায় পোস্ট করে দেবার জন্য অনুরোধ জানালাম। কথাবার্তা শেষ হবার পর প্রমিলার প্রতি ভালবাসাটা আর দৃঢ় হয়ে উঠল। নিজেকেই বলতে লাগলাম ভালবাসার কথা কিন্তু এখনো হইনি অর্থাৎ প্রেম নিবেদন হইনি, তবে এটা অনুভব কি? এটাও কি ভালবাসার মধ্যে পড়ে ? সারাদিন কাজের মধ্যে প্রমিলার কথা বার বার মনে আসে,কিন্তু প্রমিলার মনের অবস্থা বোঝার জন্য নিজেকে নিঃশ্চুপ হয়ে যেতে হয়।

সেদিন টুকি বাবুকে নিয়ে কাজ সারা হতে প্রায় ২ টো বেজে গেল। ফিরার পথে বললাম, 

টুকি বাবু এইদিকে ভবনামুলক ভালো জাইগা কথাই আছে বলুন তো?

বাবু কথাই যেতে চান বাগানে না পাহাড়ে?

দুটোতেই যেখানে ভালো লাগবে সেখানে আবার যাব।

পাহাড়ে যেতে হলে আপনাকে কাংটো যেতে হবে।

সে তো আপনার আখান থেকে আনেক দূর?

না বাবু, মনে যদি ইচ্ছা থাকে তাহলে আর দূর, যদি কথাও যেতে চান তাহলে ওটি সবথেকে পছন্দের জাইগা হবে বলে বোধহয় আমার।

সে ঠিক আছে এখানেই আগে যাব না হয়,আর বাগান হলে কোথায় যেতে হবে?

বাগান সেরকম নেই, তবে আপনি ভালুকপঙ্গে যেতে পারেন।

ভালুকপং সেটি কোথায়

বাবু ওটি জায়গার নাম এবং হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত। ওখানে বাগান নেই কিন্তু কৃষকেরা নানান ধরনের চাষবাস করে যেগুলি বাগানের থেকে দেখতে কোন অংশে কম নয়।ওখানে গেলে আপনার মানসিক অবস্থা খুব ভালো হবে ওখানে শুনেছি অনেক প্রেমিক ও প্রেমিকারা যায়।

টুকি বাবু আপনি তো অনেক দুরের দুরের জায়গার নাম বললেন।ওখানে গিয়েছিলেন বোধহয়?

না বাবু রুক্মিণীর একবার ইচ্ছা হয়েছিল।সে বলেছিল একবার বাইরে কিছুদিন কাটিয়ে আসবো। কিন্তু বাবু টাকা পয়সার জন্য হয়ে উঠেনি। 

বুঝলাম, তবে কাছাকাছি কথাও কিছু নেই?

না বাবু নেই।

ও!কোন একদিন যাওয়া যাবে।


টুকিবাবু আর আমার বাড়ি ফিরতে ফিরতে প্রাই ৩ টা বেজে গেল।বাড়িতে ফিরে দুপুরের লাঞ্চ বিকালে সেরে আমার রুমে ডাইরিটা নিয়ে বসলাম। আজ বেশ উৎফুল্ল লাগছে। প্রমিলার চিঠির খবর পেলাম। সেই জন্যই বোধ হয়। ডাইরির পাতাটাও অসীম আগ্রহে আমার খুসির কারন জানার জন্য অপেক্ষা করছিল। সেদিন মনে মনে প্রমিলার প্রতি কিছুটা ঈর্ষাও হচ্ছিল। শুন্য হৃদয় বুঝেও যেন বোঝেনা।চিটি পাঠিয়েছে কয়েক মাস দেরিতে… 

চারদিন এইভাবেই কেটে গেল। কয়েকদিন আগেই জল পরিবর্তনের জন্য শরীর টা খুব খারাপ হয়ে গিয়েছিল তাই কাজের চাপ এই কদিনে অনেকটাই বেশি হয়ে গেছে।সেদিন আমি তেযুতে কাজ করছি। এমন সময় ফোন বেজে উঠল, ফোনের সেপাশ থেকে বিভুতিবাবুর গলা পেলাম।

অনন্ত বাবু আপনার চিঠি পেলেন? গত পাঁচ দিন আগেই পোস্ট করে দিয়েছিলাম।

না এখনো পাইনি।

বলেন কি? পোস্টে কল করেছিলেন?

না, করা হইনি। তবে হয়তো পিয়নের দিতে দেরি হচ্ছে।

তারপর আপনি কেমন আছেন বলুন।

ভালো আছি। তবে হালকা শরীরটা খারাপ জল পরিবর্তনের জন্য। তাছাড়া কাজের চ্যাপ্টা খুব বেড়েছে।

ঠিক আছে। পত্রটি পেলে আমাকে ফোনে জানাবেন। 

সেদিন কাজ সেরে বাড়ি ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে গেল। আগামীকাল ছুটি আছে। সন্ধ্যার টিফিন সেরে আমার ঘরে এসে বসলাম। একটুখানি বাদেই রুক্কিনী এসে একটি পত্র দিলো।বলল

বাবু দুপরে পিয়ন এসে দিয়ে গেছে। আমাকে সই করতে বলছিল, আমি সই করিনি। জোর করে আমার আঙুলের ছবি নিয়ে গেছে। কি ব্যাপারে আঙুলের ছবি নিয়ে গেল আমি জানতে চাইলাম কিন্তু বললেন না। কি ব্যাপার বলবেন?

ও কিছু না।পিয়নের কাছে চিঠি নিতে গেলে সই করতে হয়। যারা সই করতে জানে না তাদেরকে টিপ সই অর্থাৎ আঙুলের ছবি দিতে হয়। ওটা আপনি না করলে আমায় করতে হত, তবে আজ নয় অন্যদিন।

এবার বুঝেছি। আমি ভাবলাম অন্য কিছু, কি ব্যাপার,,,,

আমি মুচকি হাসলাম। রুককিনী দেবী বেরিয়ে গেলেন,।

পত্রের জন্য আমি অধীর আগ্রহেই ছিলাম।ডাইরি ও পত্রটি নিয়ে বসলাম টেবিলের সামনে। পত্রটির এনভেলাপটি খুললাম। দু পাতার চিঠি। কি লিখেছে এত,?

চিঠিটা এইরকম ছিল-----


প্রিয়, 

  অনন্ত বাবু, 

      

     আপনি কেমন আছেন। আমি মানসিক দিক থেকে খুব একটা ভালো নেই। আসা করি আপনি ভালো আছেন।


আমার পত্রটি যাতে অন্য কেউ না দেখে তাই আমি এনভেলাপটিতে দু চারটি বাক্য উল্লেখ করেছি। আপনি তার জন্য কিছু মনে করবেন না। আপনার চিঠিটি আসতে অনেক দেরি হয়েছিল। জানিনা আপনি আমার পত্রটি দেখছেন কিনা।মা বারবার আপনার খবর নেন। কেন জানিনা। আমার ল্যাব সিলেক্ট হবে।হয়তো ওখানে পৌঁছানোর খরচ অনেক। মা নিষেধ করছে তাকে ছেড়ে না যাবার জন্য। আমি আপনার কথা বলেছিলাম, হয়তো বিবেকে লাগছে আপনার কাছে টাকা নিতে।আমি কি করবো তা ঠিক করতে পারছি না।

আপনার সঙ্গে কিছুদিন সময় কাটানোর ইচ্ছা ছিল আমার। আপনার বোলেং জায়গাটি কেমন তা জানাবেন।আপনার সঙ্গে অনেকদিন দেখা হয়নি। মনে হয় একযুগ। সময় এখন সংকীর্ণ লাগছে। বালির চর এখন আমার দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গী হয়ে উঠেছে। কল্পনায় তা এখন সাহিত্যের রূপ নিয়েছে। প্রতিদিন সূর্যাস্ত আমার মনে একটি নুতন দিনের প্রারম্ভের অভ্যাস জাগিয়ে তুলে। পরিবেশ আপনার মতোই খুব কাছের হয়ে গেছে। আমার এখন বাড়ি আর ভালো লাগে না। সারাদিন অপেক্ষা করি, আর ভাবি কখন গোধূলি আসবে। চরে গেলে মনটা বেশ হালকা হয়ে যায়। রসায়নের সব চিহ্নগুলো কেমন যেন মাথায় হিজিবিজি কাটে।আপনি বলতে পারেন কেন এমন হয়?

প্রিন্সিপাল আমাকে আমার পছন্দমতো ল্যাব খুঁজে নিতে বলেছে। কোথায় নেব আপনি বলে দিন। বাড়িতে কবে আসবেন জানাবেন। আপনার সঙ্গে দেখা করতে চাই। মনটি খুব একটা ভালো নেই। হয়তো আপনার সঙ্গে দেখা করলে ভালো হবে। 


ময়নাগিরি                                  ৩/১২/২০০৫। 

ইতি                              প্রমিলা


আমি পত্রটিতে খুবই অভিভূত হয়ে পড়েছিলাম। তৃপ্তি হলো মনে হয় কিছুটা। আমি কিছুটা সংক্ষিপ্ত করেই তুললাম। প্রমিলা কি চালাক। ওর কোথায় পরিস্কার বুঝতে পারা যায় ও আমাকে ভালোবেসে ফেলেছে। কিন্তু মুখফুটে বলছে না। মেয়েরা কি এইরকমই হয়। ও তো এমন ভাবে কথাটা বলেছে যে আমার আগে বলা দরকার আমি তাকে ভালোবাসি। অর্থাৎ ও আমার মুখ থেকে আগে শুনতে চাই। কি অদ্ভুত ব্যাপার। শুধু প্রমিলা কেন কোনো মেয়ের উপর জোর করে কোনোদিন বলার সাহস হয়না আমার কেননা ওরা এক অনন্য প্রাণী বলে ভাবি। ওদের কাছে সমস্ত সমস্যার সমাধান থাকে যা ছেলেদের মধ্যে থাকে না। ভগবানের কি অপূর্ব সৃষ্টি।ওরা আমাদের একটা কথাতেই ভরসা পাই, মনে শান্তি পাই ও ভালোবাসা কে বুঝতে পারে।নিজেকে কিছুটা সংবরন করে রাখবো ভেবেছিলাম, ভেবেছিলাম আমিও বলবো না।আমি আগে ওর মুখথেকেই শুনবো।কিন্তু মনের ভাবনাটা বেশ জেগে উঠলো,মনে হলো মন থেকে মেয়েদের এত কষ্ট দেওয়া ঠিক নয়। ওদের অনেক ক্ষমতা। ওদের কষ্ট দেওয়া ঠিক নয়। তবে এটা কিন্তু ঠিক মেযারা আনন্দিত হয় ছেলেদের সাথে এইরকম মজা করে।তাই নিজেকে ছোট বড় না ভেবে ভালোবাসার কথাটা বলবো বলেই ভাবলাম। ঘুম আসছিল না। এনভেলাপটি তৈরি করে পত্রটি লিখতে লাগলাম।


  প্রিয়, 

 প্রমিলা,

    কেমন আছো? আসা করি তুমি ভালো আছো। আমি ভালো নেই, মনের অবস্থা সামান্য খারাপ। 

অন্যান্য দিনের মতোই আমার দিনগুলি কাটছে কাজের মধ্যে। কয়েকটি খুব সুন্দর জায়গা দেখে রেখেছি। একা যাওয়ার খুব ইচ্ছা নেই। জায়গাগুলি খুব অনুভব করছি।আপনি যদি এখানে আসতেন নিশ্চয়ই অনুভবটা আপনার কোন অংশে কম হতো না। কাজের অবসর সময়ে আপনার কথা খুব মনে পড়ে। আপনি আমার সঙ্গে কিছুদিন সময় কাটানোর কথা উল্লেখ করেছেন, যদি আপনার ইচ্ছা হয় আপনি আসতে পারেন ।তাতে আমারও মানসিক অবস্থা কিছুটা ভালো হবে ও সুন্দর সুন্দর জায়গা গুলি আপনার স্থিতিতে দেখা হয়ে যাবে। বিগত কয়েকদিন ধরে এই কথা আমি আপনাকে বলবো বলে ভাবছিলাম কিন্তু আপনার পত্রটি আসতে একটু দেরি হওয়ায় আমি নতুন করে পত্র লিখতে পাইনি। আপনি আপনার ল্যাব আমাকে সিলেক্ট করতে বলেছেন। আমার মনে হয় আমার সিলেক্ট করা ল্যাবরোটারি আপনার পছন্দ হবে না। আপনি যদি এখানে আসেন তাহলে না হয় আমার উপস্থিতিতেই আপনি আপনার ল্যাবরোটারি সিলেক্ট করবেন। এখানের জায়গাগুলি ও লোকগুলি এতই ভালো যে তা আমি আপনাকে পত্রে লিখে বোঝাতে পারবো না। যদি আপনি আসেন আমার অফিসের ঠিকানায় একটি পত্র লিখে দিবেন। আমার তাহলে আপনাকে স্টেশন থেকে আনতে সুবিধা হবে।

আপনার আসার অপেক্ষায় রইলাম

আপনার মাকে আমার প্রণাম নিতে বলবেন ও সকলে ভালো থাকিবেন।


বোলেং।                                   ইতি

১২/১২/২০০৫                                অনন্ত বাবু



সেই রাত্রে, সেই রকম আর ঘুম হলো না। এই যে প্রেমের বিভূতি লেগেছে মনে তা স্পষ্টতই। ডায়েরিতে যত্ন করে সেই রাত্রে চিঠিটি তুলে রাখলাম ও নিজের ভাবনা গুলির জড়তা কাটিয়ে উঠার চেষ্টা করছিলাম।

সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর এনভেলাপটি টুকি বাবুর হাতে দিয়ে, পোস্ট বক্সিং এ ফেলে দিয়ে আসতে বললাম। চিঠিপত্র গোছগাছ করে দিয়ে প্রতিদিনের ন্যায়, কাজের সমস্ত কাগজপত্র গোছগাছ করছি এমন সময় রুক্মিণী দরজার সেই পাশ থেকে বললেন,

অনন্ত বাবু গতকাল রাত্রে অনেকক্ষণ জাগিয়েছিলেন মনে হল,

হ্যাঁ, অনেকক্ষণ জানিয়েছিলাম,একখানি চিঠি লিখছিলাম।

বাড়িতে সব ঠিকঠাক আছে তো, চিঠি লিখছিলেন কি ব্যাপারে, আমি অত বুঝিনে,,,,

না না আমার বাড়িতে সেই রকম কোন লোক নেই শুধুমাত্র মা আছেন,তিনি ভালো আছেন।

গতকাল তাহলে বুঝি আপনার মাকে পত্র লিখেছিলেন???

না না মাকে না, প্ৰণয়িনী একজন আছেন.....

বাবু প্রণয়িনী মানে?

ও তুমি বুঝবে না,দিদি। আমি আপনাকে দেখিয়ে নিয়ে যাব প্ৰণয়িনী কে। তুমি যেদিন দেখবে সেদিন তোমার অনুভূতি সম্পূর্ণ অন্যধরনের হবে এবং তোমার মধ্যে আলাদা রকমের ভালোবাসার জন্ম নেবে।

রুক্মিণী হয়তো সবিই জানে, ও বুঝে কিন্তু আমি বোঝাই কি করে। আমার কথা গুলি শুনে মুচকি হেসে পুনরায় বলিলেন-

আপনি কি জানেন আপনার মনের লুকানো কথা যদি আপনি আলোচনা করেন মনটা যে অনেক হালকা হয় তাহলে।

কথাটি শুনে আমি নিশ্চুপ থাকতে পারলাম না প্রত্যুত্তরে বললাম,

রুক্মিণী দেবী আপনি খুব সুন্দর কথা বলেন আপনার কথার যথেষ্ট তাৎপর্য আছে। প্রণয়িনী কথার অর্থ হল প্রেমিকা এটা নিশ্চয়ই আপনাকে বোধহয় ভেঙে বলে দিতে হবে না।

না তা বলে দিতে হবে না।

রুক্মিণী দেবী আমার জন্য চা নিয়ে এসেছিলেন। কথায় কথায় অনেকটি সময় কেটে গেল আমার কাজে যাবার সময় হয়ে গেছে। আজ একটি নতুন জায়গাতে নতুন কিছু সংগ্রহ করতে হবে।টুকি বাবু সেই মুহূর্তে বাড়ি ছিলেন না কিছুদিন আগে আমি তাকে ভেষজ ঔষধ তৈরি করার একটি নতুন পদ্ধতি বলেছিলাম ও তাতে কাজ করার জন্য অনুরোধ করেছিলাম। আমাদের অফিসের সাথে যোগাযোগ করিয়ে ভেষজ গাছগুলো জঙ্গলে কি অবস্থায় পাওয়া যায়; সেই জিনিস গুলি ও সংগ্রহ করার পদ্ধতিগুলি যত্নসহকারে টুকি বাবুকে বুঝিয়ে দিয়েছিলাম। আজ সকালে টুকি বাবু সেই ভেষজ উদ্ভিদের সন্ধানে সামনের একটি জঙ্গলে বেরিয়েছিলেন। কাজে যাওয়ার কিছুক্ষণ আগে এসে উপস্থিত হলেন হাতে একটি বড় ব্যাগ ছিল সেই ব্যাগেতে এক ব্যাগ বিভিন্ন গাছের শিকড় নিয়ে এলেন।


সেদিন আমাদের রিগা যাবার প্রোগ্রাম হয়েছিল।বোলেং থেকে প্রায় 47 কিলোমিটার দূরে । জায়গাটি একবারও আমার দেখা হয়নি।এই প্রথম আমি সেখানে যাচ্ছি। টুকি বাবুকে বললাম

টুকি বাবু আপনি গিয়েছিলেন নাকি রিগান?

না বাবু আমার যাওয়া হয়নি, আপনি এখন এসেছেন তাই ― না হলে আমাকে সারাদিন খাবারের জন্য শরীর ও পরিস্থিতির সাথে যুদ্ধ করতে হয় বাবু।

চলুন আজ কাজ শেষ করে জায়গাটা কেমন দেখা এবং জানাও হয়ে যাবে।

বাবু একটা কথা জিজ্ঞাসা করবো বলবেন?

বলুন না ,আরে এইখানে আপনি এখন আমার সব, ভাই দাদা গাইড প্রিয় ব্যক্তি বন্ধু সবই তো নিশ্চিতরূপে আপনি আমার কাছে সবকিছু জানতে পারেন।

বাবু, রুক্মিণী বলছিল আপনি নাকি তাকে, প্রণয়িনীর কথা শুনিয়েছিলেন। রুক্মিণী আরো বলছিল আপনি নাকি তার কথা ভেবে অনেক চিন্তিত হয়ে বসেছিলেন আজ সকালে?

ওহ―হো ! রুক্মিণী তাহলে আপনাকে বলেছে, আজ আমি একটু চিন্তা করছিলাম তার ব্যাপারে, অনেকদিন দেখা হয়নি, তাছাড়া সে হয়তো আমার থেকে এবার অনেক দূরে চলে যাবে।

কেন বাবু, সে আপনার থেকে কেন অনেক দূরে চলে যাবে????


আমি মনে মনে ভাবছিলাম টুকি বাবুকে এই কথাগুলি বলা ঠিক হবে কিনা। আবার এও ভাবলাম আলোচনার মধ্যে থাকলে হয়তো মনটা একটু ফ্রি হবে। তাই ভাবলাম টুকি বাবুকে

কথাগুলো বলাই যায়।

পত্রে লিখেছে, তিনি নাকি রিসার্চ করবেন, তার জন্য আমাকে তার ল্যাবরোটারি পছন্দ করে দিতে হবে। সেখানে সে চলে গেলে হয়তো আর পত্র লিখতেও সময় পাবে না।

অনন্ত বাবু, আপনার দ্বিতীয় কথাটি বুঝতে পারলাম কিন্তু প্রথমের কথাটি বুঝতে পারলাম না।

আমি মনে মনে বেশ কিছুক্ষণ হাসলাম। আসলে হাসির কিছু নেই। টুকি বাবু একজন অশিক্ষিত ব্যক্তি। সে কী করেই বা ল্যাবরোটারি আর রিসার্চ এর ব্যাপার বুঝবে। আমি আর কোনো কথা না বলে চুপচাপ বসে রইলাম। টুকি বাবু বললেন--

আপনি তাহলে এখন কি করবেন ভেবেছেন???

পত্রে জানিয়েছি, ফাঁকা সময় টুকুতে বাড়িতে না থেকে যেন বলেঙ্গে চলে আসে। অনেক অনুরোধ করেছি এখানে অনেক জায়গা দেখার মত আছে। সেই জায়গা গুলি একা যেতে ভালো লাগবে না আমি তাকে সঙ্গে নিয়ে যেতে চাই। সে যদি আসে আমার ভ্রমণে খুবই সুবিধা হয়। তবে এটা জানি না আসবে কিনা যদি আসে অফিসে যোগাযোগ নাম্বার জানিয়ে দিতে বলেছি।

টুকি বাবু গাড়ি চালাতে চালাতে বললেন আপনাকে চিন্তা করতে হবে না,আমার মন বলছে সে অবশ্যই আসবে।


রিগাতে পৌছাতে পৌছাতে আমাদের প্রায় দুপুর হয়ে গেল পরিস্থিতি দেখে বুঝতে পারলাম একদিনে এখানে কাজ সারা যাবেনা। রিগা জায়গাটি খুব সুন্দর। ভাসমান স্বর্গ বলতে পারেন, ছোট ছোট পাহাড়ে ভরা তার চারপাশে কত সুন্দর সুন্দর গাছ দেখলে প্রাণটা জুড়িয়ে যায়। পাহাড় কেটে আঁকাবাঁকা রাস্তা গাড়িতে যাওয়ার সময় কি মজার অনুভূতি না হয় সামান্য একটু গোলমাল হলেই পাহাড়ের ঢাল বেয়ে এক্কেবারে মর্তে পৌঁছে যাবেন। গ্রামের ঘর গুলো খুব সুন্দর ছোট ছোট ঘর দারুন মনোরম পরিবেশ নিজের বিভূতি যেন হারিয়ে যায় এখানে এসে।

এখানের মানুষ গুলি কত পরিশ্রমী, জীবনের সাথে কত লড়াই করে বেঁচে থাকতে হয় এদের, তা আমরা যখন সেখানে গিয়ে পৌঁছালাম ও হান্ডিক্রাফট এর কথা বললাম তখনই মানুষের আগমনী দেখে অনুভব হয়। বিকালের দিকে যখন আমরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে জিনিসের সন্ধান নিছিলাম তখন প্রতিটি মানুষ খুব উৎসাহিত হয়েছিলেন। ওখানে আমরা প্রায় চার দিনের মত ছিলাম,, দ্বিতীয় দিন কেটে যাওয়ার পর ওখানে নিকটবর্তী একটি পাহাড়ে বিকালের দিকে ভ্রমণে বেরিয়েছিলাম। পাহাড়ে সূর্যাস্ত দেখছিলাম এমন সময় ফোনটি বেজে উঠল ফোনের বিপরীত পাশে বিভূতি বাবুর গলা শুনে আমি খুব আনন্দিত হলাম কেননা বিভূতিবাবুর ফোনেতে অফিসের কাজ কম প্রমীলার কোথায় বেশি জানতে পারা যায়।

হ্যালো, বিভূতি বাবু কেমন আছেন?

ভালোই আছি অনন্ত বাবু আপনি কেমন আছেন বলুন আর আমার মনে হয় আপনার এবারে বিয়েটা করে নেওয়া দরকার।

ছোট্ট করে আমি একটু হাসলাম ও বললাম কেন বিভূতি বাবু???

কেন আবার আমার অফিসে আজ কয়েক মাস ধরে একটি ভদ্রমহিলার ফোন বারবার ধরে আসছে যিনি আপনাকে বেশিরভাগ সময়ে রিপোর্ট দিতে বলেন কিন্তু সেটি কনফিডেনসিয়াল থাকার জন্য আমার মোটেই ভাল লাগেনা।আর আমরাও এক সময় প্রেম করেছিলাম আমরাও ভালোবেসেছিলাম কিন্তু অতটা কনফিডেনসিয়াল থাকেনি আমাদের সময়। ঠিক কিনা বলুন অনন্ত বাবু?

হ্যাঁ তা ঠিক অফিসের কাজ সারা হয়ে যাক বাড়িতে ফিরে যায় একদিন আপনাকে সমস্ত ঘটনাটা বলবো কি হয়েছিল আর কি ব্যাপার। তাহলে হয়তো আপনার মনে এত সন্দেহ থাকবে না।

আপনার কাজ কেমন চলছে অনন্ত বাবু।

ভালোই চলছে খুব শিগগিরই ফিরে যাব বাড়িতে।

অনন্ত বাবু ভদ্রমহিলা ফোন করেছিলেন― উনি 30 শে ডিসেম্বর আপনার ওখানে যাবে আমার কাছে ঠিকানাটি চেয়েছে এবং কিভাবে যাবে সে বিষয়ে তথ্য আপনাকে দিতে বলেছে।

বিভূতি বাবু আপনি এক কাজ করবেন উনি যদি আসতে চান তাহলে আপনি ওনাকে গাড়ির বন্দোবস্ত করে দেবেন এবং রাস্তাটি খুব সুন্দর করে বুঝিয়ে দেবেন গাড়িতে উঠার পর আমাকে একটি কল করে জানিয়ে দেবেন। আমি এখান থেকে আর কোনো খবর পাঠাচ্ছি না আপনি ওখান থেকে ব্যবস্থা করে পাঠিয়ে দেন।

ঠিক আছে অনন্ত বাবু তাই হবে।

বিভূতি বাবু ফোনটি রেখে দিলেন। ফোনের কথাতে আমি এতটাই খুশি হয়েছিলাম সেদিন আমার সূর্যাস্ত দেখার আনন্দটা ভুলেই গিয়েছিলাম । টুকি বাবু আমার সাথেই ছিলেন সেদিন দুজনে মিলে সেখানে সন্ধ্যার টিফিনটা সেরে বাড়িতে ফিরে এলাম।পরের দিন আমরা বলেং এ ফিরে এলাম।রুক্মিণী দেবী সমস্ত খবরই নিলো। রিগা থেকে ঘুরে এসে আমি কতটা খুশি দেখে রুক্মিণী দেবী আমার সাথে খুব মজা করতে লাগলেন।

পাহাড় কেমন দেখলেন অনন্ত বাবু?

আপনার প্রণয়িনীর কোনো খবর পেয়েছেন বোধহয়। আপনি মশাই কি করে একা আছেন বলুনতো আমি হলে তো থাকতে পারতাম না।

আমি আর থাকতে না পেরে রুক্মিণী দেবী কে বলেই ফেললাম, আপনাদের সময় আরো মজাদার কিছু হয়তো হত। আপনি কি মজা করেন নি?

ওরে ব্বাবা আপনিতো বেশ বলেন??

হ্যাঁ ঠিকই তো আপনাদের সময় যা মজা হতো এখন আর সেই মজা হয় না। এখন তো আর ছেলেমেয়েরা পছন্দ-অপছন্দ আগের মত নেই।সম্পূর্ণ অন্য ধরনের হয়ে গেছে পছন্দ-অপছন্দ প্রাধান্য পায় না এখন টাকা-পয়সা প্রাধান্য পায় বেশি। চিঠিপত্র প্রায় উঠে গেছে বললেই চলে।

তাই বুঝি আপনি নতুন করে চিঠিপত্র আদান প্রদানের ব্যবস্থা করছেন। প্রায় পনেরো কুড়ি দিন এক মাস ছাড়া ছাড়া তো আপনার বেশ চিঠিপত্র আসছে দেখছি।

হা রুক্মিণী দেবী, এই বিকৃত সমাজে অত সুন্দর একটি ভদ্রমহিলাকে আমার জীবনে আনতে পেরে আমি খুবই খুশি।

বাবু তাহলে একদিন নিয়ে এসে দেখিয়ে যান না আপনার প্রণয়িনী কে?

দেখাবো ঠিক সময় হলে আপনাকে দেখিয়ে নিয়ে যাব।

আমি বারান্দা থেকে রুমে গেলাম। রুক্মিণী দেবী চায়ের কাপটি আমার টেবিলে নামিয়ে দিয়ে গেল। আমি চা খেতে খেতে ডায়েরীটা নিয়ে বসলাম ফোনের সমস্ত কথোপকথনগুলো ও প্রমীলার প্রতি আমার যে অভিপ্রায় তা বৃহৎ করে না হলেও সংক্ষেপে তুলে রাখলাম। আমার প্রিয় প্ৰণয়িনী প্রমিলার আসার অপেক্ষায় রইলাম---------


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Drama