Khyali Sikdar

Horror Thriller

3.4  

Khyali Sikdar

Horror Thriller

রাতের পথে

রাতের পথে

6 mins
272


কাজের জন্য আমাকে প্রায় রাতেই লেট করে ফিরতে হয়। আজও তাই। গাড়িটা একটু ডিসটার্ব করছিল। সটার্ট করতে অসুবিধা হচ্ছিল। বাট্, এখন দিব্যি চলছে। অনেকটা পথ যেতে হবে। কিন্তু অন্ধকার রাস্তা বলে স্লো ড্রাইভিং করতে হয়। মফস্বলে আমার বাড়ি।শহর থেকে ফেরার জন্য এই জঙ্গলের রাস্তা ছাড়া অন্য কোনো রাস্তা নেই। শুনশান রাস্তাটা দিয়ে একলা আমার গাড়িটা ছুটে চলেছে। রাস্তার পাশের অন্ধকারের প্রাচীরগাত্রের মধ্যে দিয়ে যেন ঘষা খেতে খেতে এগিয়ে যাচ্ছে সেটা। কয়েকটা এগিয়ে আসা রাক্ষুসে বড়ো বড়ো গাছ যেন লতাপাতার কাপড় আর ঘাস-গুল্মের জুতো পড়ে ঘুমন্ত প্রহরীর মতো দাঁড়িয়ে আছে।প্রথম প্রথম এই পথ দিয়ে ফেরার সময় গা ছমছম করত। এদিকে কোনো কলিগের বাড়ি না থাকায় আমাকে একাই ফিরতে হত এই পথে। এখন অবশ্য এসব সয়ে গেছে। ভয়ডর এখন আর নেই-ই।ও কী! সামনে কেউ দাঁড়িয়ে আছে যেন... হ্যাঁ তো, হাত দেখাচ্ছে। থামতে বলছে আমায়। মানুষটা কাছে আসতেই আমি ব্রেক কষলাম। খানিকটা এগিয়ে গিয়ে থামলো আমার গাড়ি। আমার পাশের জানলায় এসে দাঁড়ালো মেয়েটা। একঝলক ভালো করে দেখে নিলাম ওকে। ।পরনে সাদা আনারকলি, খোলা একরাশ কালো চুল এলোমেলো হয়ে আছে, কপাল আর গাল বেয়ে লক্স্, চোখের কাজল লেপ্টে গেছে, কটা কটা চোখের মণি জ্বলজ্বল করছে, কেমন চঞ্চল অথচ মায়াবী করুন দৃষ্টি সে চোখে।আমার গাড়ির জানলার কাঁচে আঙুল দিয়ে টোকা মারছে আর ঠোঁট নেড়ে করুন চোখে কিছু বলছে


। আমি জানলার কাঁচটা নামালাম।-"আমি ভীষণ বিপদে পড়েছি। আমার বাস মিস হয়ে গেছে। বিলাসপুরে যাব। প্লিজ্ আমাকে একটু লিফ্ট দেবেন? প্লিজ্!"কথাগুলো এক নিঃস্বাসে বলে থামলো মেয়েটা। বলেই হাত জোড় করল।কয়েক ফোটা জলও বোধ হয় গড়িয়ে পড়ল চোখ দিয়ে।ভুতের সিনেমায় ঠিক এভাবে না হলেও, রাস্তার ধারে লিফ্টের জন্য দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছি বটে। কিন্তু একে দেখে সত্যি খুব অসহায় মনে হচ্ছে। আর ওই চাহনি - যেন মিথ্যে কিছুই বলছে না।"তা কোথায় যাবে তুমি?", জিজ্ঞেস করলাম আমি। জেনে নেওয়া ভালো। বলা তো যায় না। সাবধানের মার নেই।-"ওখানেই... এ. এন্. সি. কলেজ... ওখানের হোস্টেলেই। আমরা এখানে বাইরে থেকে এসেছি। আমি কিছু চিনি না। প্লিজ্ আমাকে একটু ছেড়ে দিন ওখানে।" এবার কেঁদে ফেলল সে। গলা ধরে যায় ওর।নাহ্, সাহায্য করা উচিত।"ভেতরে এসো।"- আমি ডাকলাম তাকে।এবার আনন্দে তার চোখে জল আর মুখে হাসি ছড়িয়ে পড়ল। দরজার লকটা খুলে দিতেই সে দরজা খুলে ভিতরে এসে বসল। গদগদ হয়ে বলল,"থ্যাঙ্ক য়্যু ম্যাম। থ্যাঙ্ক য়্যু সো মাচ। থ্যাঙ্কস্ আ লট..."-"আহা, ঠিক আছে। ইট্স্ ওকে।", মেয়েটাকে থামিয়ে দিয়ে হাল্কা হেসে গাড়ি স্টার্ট করলাম। ধীর গতিতে গাড়ি চলতে শুরু করল। কিছুক্ষণ চুপ করে থাকার পর জিজ্ঞেস করলাম,"তোমার ঘটনাটা ক্লিয়ার করো তো। মানে কিকরে এখানে, এই অবস্থায়...?"একটুখানি চুপ করে থেকে সে বলল,"আসলে... আমরা ক্যালকাটা য়্যুনিভার্সিটি থেকে প্রজেক্টের জন্য এসেছি। আমরা বট্যানির স্টুডেন্ট।তো ঘটনাটা হল - দুপুরের লাঞ্চ সেরেই আমরা বেরিয়ে পড়ি। জঙ্গলের কাছে বাস আমাদের নামিয়ে দেয়। অ্যাট ফার্স্ট, টিচার আমাদের গাইড করছিলেন। দেন্, আমাদের গ্রুপে ভাগ হতে হয়। আধ ঘন্টার মধ্যে সব গ্রুপ নিজেদের স্যাম্পেল জোগার করে স্যরের কাছে জমা করবে।আমরাও গেলাম।একটা জায়গায় গিয়ে একটা অদ্ভুত মিষ্টি স্মেল আমার নাকে আসল। সেদিকে যেতে মন চাইল। আমার ফ্রেণ্ডরা স্যাম্পেল খোঁজায় ব্যস্ত ছিল। তাই আমি এক বান্ধবীকে,'আমি একটু আসছি', বলে গন্ধের উৎস লক্ষ্য করে এগোলাম। কিছুটা যেতে দেখলাম একটা বড়ো আকারের লাল রঙের ফুল। বুঝলাম সেটা থেকেই আসছে অমন সুন্দর গন্ধ। এমন ফুল তো আমার চেনা নয়। কী হতে পারে?... আমি ফুলটার কাছে যেতেই সেটার রং ফ্যাকাসে হতে হতে একসময় শুকিয়ে, কালো হয়ে উবে গেল। অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখলাম, একটা নিম গাছ। দিনে দুপুরে ভুলভাল দেখছি। কী হল আমার? ফিরতে হবে টিমের কাছে। পিছনে ফিরে এগোতে লাগলাম। গন্ধের মোহে কতদূর চলে এসেছি খেয়াল নেই। আমি পথ হারিয়ে বসলাম। দিন শেষ হচ্ছে দেখে ওরা বোধ হয় তাড়াতাড়ি কাজ সেরে চলে গেছে। ফোনও কাজ করছে না এই জঙ্গলে। আমি পাগলের মতো বাইরে বেরোনোর রাস্তা খুঁজতে লাগলাম। সন্ধ্যা ততক্ষণে হয়ে গেছে। কতক্ষণ ছুটেছি জানি না। অন্ধকারের মধ্যে ভয়ে দিশেহারা হয়ে... অবশেষে একসময় আমি পিচের রাস্তাটা খুঁজে পেলাম। কোনদিকে যাব বুঝতে পেলাম না। হঠাৎ একটা লড়ি দেখলাম। আমি হাত পা ছুড়ে লিফ্ট চাইলাম। সেটা যেন দেখতেই পেল না আমাকে। আমি এগোতে লাগলাম। পা আর চলছিল না। অতি কষ্টে লড়িটা যেদিকে গেছিল সেদিকে এগোলাম। আরো একটা গাড়ি দেখলাম সামনে থেকে আসতে। দাঁড়াতে বললাম। সেটাও দাঁড়ালো না।


আর তারপর আপনি...।"তার কথা শেষ হলে আমি বললাম,"তোমার কথাগুলো কেমন যেন। আই মিন... গল্প বলছ?"“কেন বলুন তো? আমি কী বানিয়ে বলছি?”“এরকম হয় নাকি? সবাই চলে গেল আর তোমার হুস ছিল না! আর ওই ফুল ... ।”“কেন হবে না? আমার সাথে তো হল। ব্যাপারটা আমি নিজেও ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না।”“তুমি অনেকটা সিনেমার মতো কথা বলছ।”“সিনেমা!” হাহা করে হেঁসে উঠল মেয়েটা।“আচ্ছা, তুমি কি যেন একটা বললে ...”, আমার গলার স্বরটা নিভে আসে।“কী?”, সে সোৎসাহে তাকায় আমার দিকে।“ওই গাড়ি দু’টো তোমায় দেখতে পায়নি?”, আমি কিঞ্চিৎ ভয় আর বিস্বয় জড়িয়ে বললাম।“পায়নি কেন? আমায় অ্যাভয়েড করে চলে গেছে। উটকো ঝামেলা নেবে কেন বলুন!”, বিদ্রুপ করে বলে সে।“আচ্ছা, তোমার ব্যাগ বা কিছু নেই সঙ্গে?”, এতক্ষন পরে খেয়াল হতে সেটা বলি আমি।“এ বাবা!” সে যেন চমকে ওঠে। “কোথাও ফেলে দিয়েছি নাকি?”, বলে সে আশেপাশে তাকায়, “যাহ!”“আমার কিন্তু তোমার কথা অসংলগ্ন লাগছে”।“আচ্ছা আপনি কি আমায় ডাউট করছেন?”“এই রাস্তাটা কিন্তু ভালো নয়”।“মানে?”“আমি যা ভাবছি তুমি তাই নও তো?”, সভয়ে বলি।একটি চুপ করে সে হেঁসে ওঠে “আরে না। ... বুঝেছি, আমার আউটফিট দেখে তাই মনে হচ্ছে তো? ... না না, এটা এমনিই পরেছি। আপনি ওসব ভাববেন না”।, খিল খিল করে সে আবার হেঁসে ওঠে।“হতে পারে। কিন্তু এই রাস্তাটার বদনাম আছে, সেটা জানো?”“কীরকম?”, জিঞ্জাসু চোখে সে তাকালো আমার দিকে।গাড়ি এতক্ষন স্লো-ই চালাচ্ছিলাম। স্পিডটা এবার আরও একটু কমিয়ে দিলাম। তারপর একটু নিঃস্বাস টেনে নিয়ে শুরু করলাম – “ আমি প্রায় ছ’মাস এই রাস্তায় ড্রাইভ করি। ডিউটি থেকে ফিরতে লেট হয়। এই টাইমেই ফিরি। মাসখানেক আগে এমনই ফাকা রাস্তায় ফিরছিলাম। অনেকটা আসার পর পিছনের টায়ারটা পাঙ্কচার হয়ে গেল।একটা এক্সট্রা টায়ার সবসময় থাকে ডিকিতে। সঙ্গে কেউ নেই। অগত্যা সেটা ঠিক করার জন্য একাই নামলাম। পিছনের টায়ারটার কাছে যেতে মনে হল কেউ আমাকে ফলো করছে। এদিক ওদিক তাকালাম। কিছু চোখে পড়ল না। আমি সতর্ক হওয়ার জন্য গাড়ির ভিতর থেকে বড়ো ছুড়িটা নিয়ে বেরিয়ে এলাম। এবার কোনো ভয় নেই।কাজে মন দিতে যাবো, এমন সময় উল্টোদিকের ঝোপের আড়াল থেকে খচখচ্ আওয়াজ শুনতে পেলাম। বুকটা কেঁপে উঠল। মানে সাহস নিয়ে এগিয়ে গেলাম। ফোনের ফ্ল্যাশটা জ্বেলেছি। আওয়াজটা থেমে গেছে। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে ফিরে আসতে যাব...”কথা আটকে গেল। চমকে উঠলাম দুজনেই। বিকট একটা আওয়াজ এল পিছন থেকে। গাড়িটা কেঁপে উঠল। আমি ব্রেক কষলাম। টায়ারটা কাজে ইস্তফা দিয়েছে।“আমি দেখছি”।, বলে আমি বেরোলাম গাড়ি থেকে। পিছনের ডানদিকের টায়ারটা গেছে। আবার দরজা খুলে বললাম, “টর্চটা দাও তো। বক্সের ভিতরেই রাখা আছে, দেখো”।ও টর্চটা বের করে আমার হাতে দিল। তারপর নিজেও বেরিয়ে আসল। “বলছিলাম... একা পারবেন? আমি হেল্প করবো?”“না, আমি করছি। লাগলে বলবো তোমায়”।, বলে পিছনের ডিকিটা খুলতে লাগলাম।


“ওকে”, বলে ও দু-এক পা এদিক ওদিক করতে লাগলো।এমন সময় কীসের যেন একটা আওয়াজ পেলাম। খস্, খস্। মনে হল উল্টো দেকের ঝোপ টার কাছ থেকে আসছে। মেয়েটাও শুনতে পেয়েছে সেই আওয়াজটা। তাই এগিয়ে গেছে সেদিকে। একটুক্ষন দাঁড়িয়ে একদিকে তাকিয়ে থাকলো। ইতিমধ্যে শব্দটা থেমে গেছে। কিছুক্ষণ মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে থাকলো। তারপর কী মনে হতে চমকে উঠে ছুটে আসতে গেল পিছনে ফিরে। আর ঠিক তখনই বিস্বয়ে, ভয়ে, বাকরুদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে গেল সে। ওর হৃদপিণ্ডটা একবার লাফিয়ে উঠে লুটিয়ে পড়ল। আমার বিকৃত মুখে খেলা করছে এক অদ্ভুত পৈশাচিক হাসি। নিস্পলক অথচ ভয়ঙ্কর হিংস্র দৃষ্টি আমার চোখে। ওর মুখ দিয়ে একটাও কথা সরলো না। হতবাক হয়ে বিস্ফারিত চোখে তাকিয়ে রইল আমার দিকে। জানি, ওর শিরদাঁড়া বেয়ে নেমে আসছে ঠান্ডা স্রোত। কানের দু’পাশ গরম হয়ে যাচ্ছে। ও গলা দিয়ে আওয়াজ বের করতে পারবে না। পারবে না শরীরের কোনো অংশের সামান্য চলন ঘটাতে। ধাতস্ত হয়ে ওঠার সুযোগটা ও পাবে না।আমার হাতে ধরা ভোজালিটা নেমে আসল সজোড়ে। সুনিপুণভাবে মাখনের মতো তার গলার একপ্রান্ত ভেদ করে আরেক প্রান্ত দিয়ে বেরিয়ে আসলো। আমার চোখের লেলিহান অগ্নিস্পৃহা তৃপ্ত হল। এতক্ষণ অপেক্ষার পর আমার ক্ষুধা অবশেষে নিবৃত হল সুন্দর, পুষ্ট মাংসের আস্বাদে।ধীরে ধীরে বডিটা টেনে নিয়ে গেলাম গাড়ির দিকে। পিছনের সিটের নীচে সেটা ঢুকিয়ে দিয়ে দরজাটা বন্ধ করে দিলাম। তারপর ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়িটা স্টার্ট করে দিলাম।বলেছিলাম না – কাজের জন্য আমাকে প্রায় রাতেই লেট করে ফিরতে হয়।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Horror