বাস্তবের নায়িকা
বাস্তবের নায়িকা
"আমি অঞ্জু, একজন লেখিকা। লেখিকা বলা ভুল, আসলে ছোট থেকেই লেখালেখিটা আমার শখ, এখন ওটাই আমার পেশা। আমি ফিল্মের প্রোডাকশন হাউজ-এ চিত্রনাট্য লিখি, হ্যাঁ আমি খুব খুশি তবে....", ভাবনার মাঝে ডাক পড়ল, "অঞ্জু!!!! নায়িকা মেকাপ রুমে রেডি হয়ে বসে আছে। তুই স্ক্রিপ্টটা এখনো তাকে দিসনি?" ডিরেক্টরের চিৎকার শুনে অঞ্জু ছুটে চলে এলো মেকাপ রুমে।"
কোথায় ছিলে হ্যাঁ!!! এখন কি তোমার জন্য আমাকে অপেক্ষা করতে হবে স্টুপিড একটা" নায়িকা বেশ রেগে গিয়ে বলল। তবে অঞ্জু কোনো উত্তর দিলনা চুপচাপ বেরিয়ে এলো।
"এইটাই সমস্যা। আমি লিখি এতে আমি খুশি তবে সম্মান পাইনা কেন? রাতের পর রাত সবাই যখন ঘুমায় আমি তখন জেগে থাকি, নায়ক নায়িকার মুখে সুন্দর কিছু কথা বসিয়ে সাজিয়ে তুলি একটা সুন্দর চিত্র। মানুষ নায়ক নায়িকার মুখে কথা গুলো শুনে খুশি হয়, তার সঙ্গে আমিও খুশি হই যে আমার লেখা কথা গুলো মানুষের পছন্দ হয়েছে।
তবে আসল জীবনে এই নায়ক নায়িকাদের মুখের কথা, ব্যবহার একদম ভালো নয়। বড্ড হেনস্থা করে। না না আমি রাগ করিনা, তবে কখনো কখনো কষ্ট হয় এটা ভেবে যে কদর দিলনা কেউ" অঞ্জু এসব ভাবতে ভাবতে বাড়ির দিকে রওনা দিল।
সকালে ঘুম থেকে উঠে ঘড়ির কাঁটায় দশটা বেজে গেছে দেখেই অঞ্জু কোনো রকমের রেডি হয়ে দৌড়ে বেরিয়ে চলে গেল, মায়ের কথাও শুনলো না।
অঞ্জুর স্কুটি এসে থামলো 'ভৌমিক প্রোডাকশন হাউজ' এর সামনে। অঞ্জু ভিতরে আসতেই একটা মেয়েকে দেখে বলল, "এক্সকিউজ মি, মিস্টার রৌদ্র ভৌমিক আছেন?"
অঞ্জুর কথা শুনে মেয়েটা ওকে নিয়ে সেকেন্ড ফ্লোরে এসে একটা কেবিনে'র সামনে দাড়ালো। অঞ্জু দরজা নক করে ভিতরে চলে এলো।
"হ্যালো স্যার, আমি অঞ্জু। আপনি আমাকে আসতে বলেছিলেন" অঞ্জু সৌজন্যের খাতিরে মৃদু হেসে বলল।
"ও হ্যাঁ বসো, তোমার লেখা গল্পটা আমাদের খুব পছন্দ হয়েছে। ওটা নিয়ে কাজ করতে চাই" রৌদ্র বাবু হেসে বললেন।
"এতো খুব ভালো কথা স্যার, ধন্যবাদ" অঞ্জু খুব খুশি হয়ে বলল।
"তা তোমার কি মনে হয় নায়িকা হিসেবে কাকে ভালো মানাবে?" রৌদ্র বাবু প্রশ্ন করে বসলেন।
অঞ্জু আমতা আমতা করে বলল "স্যার এটা আমি কি করে বলব? এটা তো প্রোডাকশন হাউজের এক্সপার্ট টিম ঠিক করে তাই না!!! তাও আমি বলবো রুপসা ম্যামকে ভালো লাগবে।"
"কেন রুপসা কেন? তুমি তো নিজের নাম বলতে পারতে" রৌদ্র বাবুর কথা শুনে অঞ্জু হতবাক হয়ে গেল। তাও নিজেকে সামলে নিয়ে বলল "আমি!! আমি তো নায়িকা নই স্যার, তার মধ্যে এই গায়ের রং, রাতের পর রাত জেগে থাকার চিহ্ন হিসেবে চোখের নিজে জমে থাকা কালি। এসব নিয়ে নায়িকা হওয়া যায় না"।
"তোমার গল্পের নায়িকার চুলের বর্ণনাটা তোমার চুলের সঙ্গে মিলিয়ে লিখেছো তাই না? তোমারও তো বড় চুল আছে" রৌদ্র বাবু মৃদু হেসে বললেন।
"হ্যাঁ না মানে লেখার সময় নিজেকে নিয়ে ভাবলে লিখতে সুবিধা হয়" অঞ্জু মাথা নিচু করে বলল।
"যে কল্পনা শক্তি ব্যবহার করে খাতা কলমে চরিত্র ফুটিয়ে তুলতে পারে সে ক্যামেরার সামনেও চরিত্রকে জীবন্ত করতে পারবে" রৌদ্র বাবুর কথা শুনেই অঞ্জু মাথা নেড়ে বলল "না স্যার আমি পারবো না"।
"আমি বলছি অঞ্জু তুমি পারবে, একবার না হয় চেষ্টা করে দেখো। তোমার গল্পের ত্রিধা যে তুমি নিজে" রৌদ্র বাবু হেসে বললেন।
"আমি আমার গল্পের নায়িকা!!!" কাঁপা কাঁপা গলায় বলল অঞ্জু।
অঞ্জুর চোখটা জলে ভরে উঠেছে, আজ প্রথমবার কেউ ওকে এতটা সম্মান করেছে। নিজের লেখালেখিকে এত ভালোবাসার পর আজ শেষমেষ ভালো সময় এসেছে। ওর গল্পের নায়িকাতে ওর প্রতিচ্ছবি খুঁজে পেয়েছে এটা যে বিরাট পাওয়া....
"তাহলে তুমি রাজি তো! সিনেমা শুটিং শুরু করার ব্যবস্থা করি?" রৌদ্র বাবু প্রশ্ন করলেন। অঞ্জু হেসে মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো। আজ অঞ্জুর মুখে হাসিটা একদম গল্পের নায়িকা 'ত্রিধা'র' মত অবিকল এক।