Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!
Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!

Sonali Basu

Drama

3  

Sonali Basu

Drama

ক্ষমা

ক্ষমা

6 mins
3.0K


সকাল থেকেই আজ ভ্যাপসা গরম। এখনও শ্রাবণ মাস শেষ হয়নি তাতেই ভাদ্রের মতো আকাশে সাদা মেঘের ভেলা ভেসে বেড়াচ্ছে আর গরমও তেমনি পড়েছে। সকালের চায়ের কাপ হাতে বাইরের বারান্দায় বেরিয়ে অশোক টের পেলো। রাতে অতটা টের পায়নি কারণ কুলারটা চলছিলো। বারান্দার এক পাশে অলি পড়তে বসেছে আসন পেতে। ওকে দেখতে দেখতে চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছিল ও। অলি পড়াশোনায় এখনি বেশ মনোযোগী। ক্লাস টুয়ের ছাত্রী কিন্তু সেভাবে পড়ার কথা বলতে হয় না ওকে।

সানি কিন্তু ছোটবেলায় এরকম ছিল না, যথেষ্ট পেছনে লেগে থাকতে হত পড়া তৈরি করানোর জন্য। সানির কথা মনে পড়তেই চা’টা বিস্বাদ ঠেকলো ওর মুখে। এক’দুবার মুখে ঠেকিয়েই রেখে দিলো কাপটা বারান্দার এক পাশে। খানিক দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মেয়ের পড়া দেখল তারপর আবার ঘরে ঢুকল। এবার ও তৈরি হবে বাজার যাওয়ার জন্য। বাকি বাঙালিদের মতো ওর প্রতিদিন বাজার যাওয়ার কোন বাতিক নেই যেদিন দরকার পড়ে সেদিন যায়।

নন্দিনী রান্নাঘর থেকে ব্যাগ হাতে বাইরের ঘরে এসে দাঁড়ালো, অশোক বাজার যাওয়ার জন্য তৈরি। বাইরের ঘরে এসে ও দেখল অশোক বাগানের দিকের জানলার কাছে দাঁড়িয়ে সিগারেট ফুঁকছে। নন্দিনী কাছে এসে দাঁড়াতে অশোক হাতের সিগারেটটা জানলার বাইরে ছুঁড়ে ফেলে ঘুরে দাঁড়ালো তারপর হাত বাড়িয়ে বলল “দাও বাজার করে আসি। কি কি লাগবে?”

ও বলল “পটল বেগুন আর আলু আছে। এগুলো বাদ দিয়ে যা পছন্দ নিয়ে এসো”

“আচ্ছা” হাত বাড়িয়ে ব্যাগটা নিয়ে ও দরজার বাইরে পা বাড়ালো। সাইকেল নিয়ে রাস্তায় নামার আগে মেয়ে পেছন থেকে বলল “বাবা আমার জন্য একটা ললিপপ নিয়ে এসো”

“ঠিক আছে মামণি” বলে ও সাইকেল চড়ে এগিয়ে গেলো। পেছন থেকে শুনতে পেলো নন্দিনী বলছে “এ্যাই তোকে বলেছি না পেছন থেকে কাউকে ডাকবি না... দুর্গা দুর্গা”

অশোক ভাবছিল যেতে যেতে এই একই কথা খুশিও বলতো! কি মিল দুই নারীতে নাকি সব মেয়েরাই একই কথা বলে থাকে তাদের প্রিয়জনেরা বাড়ির বাইরে পা রাখলে! মাও কি বলতো না ঠিক মনে পড়ছে না।

তিন ভাইবোনের ও মেজো আর দুই ভাইয়ের মধ্যে বড়। মায়ের বরাবরই দিদি আর ছোট ভাইয়ের ওপর বেশি ভরসা ছিল সব ব্যাপারে তা সে পড়াশোনা হোক বা গানবাজনা বা খেলাধুলা। বাবার এসব দিকে সেরকম কোন ধ্যান ছিল না তার শুধু দুটো কাজ ছিল সেটা চাকরি করা আর ভালোমন্দ বাজার করা, ব্যাস! বাড়ির বাকি কাজ মায়ের, সেটা মা খুব মন দিয়ে করতো। আর করতো নানারকমের রান্না। বাবা নানা পদ দিয়ে খেতে খুব ভালোবাসতো। সারাদিন সংসারের কাজে ব্যস্ত থাকার কারণে ওদের পড়াশোনা নিয়ে বসতে পারতো না কামিনী। তাতে অবশ্য কোন অসুবিধে হতো না মায়ের ওদের পড়ার ব্যাপারে উন্নতির হিসাব রাখতে। ওদের পড়াশোনা দেখার জন্য মাস্টারমশাই ছিলেন। প্রতিদিন পড়ার শেষে মা ওনার কাছ থেকে জেনে নিতেন কে কেমন পড়ছে বা কার কি কি পড়া করতে বাকি আছে। তাই মাকে ফাঁকি দেওয়ার কোন সুযোগ ছিল না। আর বেশিরভাগ দিন পড়া না পারার শাস্তি হিসেবে ও মার খেত।

“ও দাদা আজ কি নেবেন?”

অতীতের চটকা ভেঙে অশোক বর্তমানে ফিরে এলো। নন্দিনীর কথামতো কিছু তরিতরকারি মাছ নিয়ে নিলো তারপর বাড়ির গলির মুখে ছোট গুমটীদোকান থেকে মেয়ের জন্য ললিপপ।

বাজার দেখে নন্দিনী হাসি মুখে বলল ‘বাব্বা তোমার মতো হিসেব করে বাজার কাউকে করতে দেখিনি’ তারপর রান্নাঘরের মেঝেতে সব ঢেলে দিয়ে ঝুড়ি বটি বাটি নিয়ে বসলো কিছুটা গুছিয়ে তোলার জন্য আর বাকিটা কেটে রান্নার জন্য।

অশোক কথা না বাড়িয়ে মেয়ের হাতে ললিপপ ধরিয়ে দিয়ে বাথরুমে ঢুকল। সময়ের মধ্যে কারখানায় গিয়ে ডিউটি ধরতে হবে নাহলে মানিকদা খানিক কথা শুনিয়ে দেবে। স্নান সেরে বেরিয়ে ঠাকুর প্রণাম করে সকালের জলখাবার খেয়ে সাইকেল চেপে কারখানার রাস্তা ধরল। এতো তাড়াহুড়ো করার পরও মিনিট দশেক দেরী হওয়ার জন্য কিছু অপমানজনক কথা শুনে কাজে লাগলো। কারখানার সিকিউরিটি অফিসার সে, মানিকদার পরেই তাই দায়িত্ব অনেক। মানিকদা তো মুখের ওপর বলেই দেয় ‘এককালে আর্মিতে কাজ করেছো তাই এই কাজটা পেয়েছ নাহলে তোমার মতো লেটলতিফকে কেউ এত দায়িত্ববান কাজ দেবে না’

দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে বুকের পাঁজর ফুঁড়ে। ওর এই সাড়ে ছয় ফুট পেটানো স্বাস্থ্য প্রতিদিন যোগব্যায়াম করা শরীর খুব সহজেই আর্মি স্বাস্থ্য পরীক্ষার বেড়া পার করে গিয়েছিল। তারপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। ট্রেনিং শেষে চাকরি পেলো পোষ্টিং মণিপুর। তারপর আরও বহু জায়গায় ঘুরেছে।

পাঁচ বছর চাকরির পর বাবার থেকেও মা ওকে চেপে ধরল বিয়ে করার জন্য। বাবা মায়ের দেখে প্রাথমিকভাবে বেছে রাখা তিনটি মেয়েকে দেখে খুশিকে ওর পছন্দ হয়েছিলো যদিও খুশির থেকেও বাকি দুটি দেখতে বেশি সুন্দরী ছিল দিতথুতোও বেশি। প্রথম ছুটিতে পছন্দ করে যাওয়ার পর পরেরবারের ছুটিতে চার হাত এক হয়ে গিয়েছিলো। খুশিকে অপছন্দ করার মতো সেরকম কোন ব্যাপার ছিল না। প্রেম করে বিয়ে না করে দেখেশুনে আনার জন্য মনের মিল হয়নি তাও নয়। বিয়ের সপ্তাহখানেক পর আবার ও চাকরির জায়গায়। কিন্তু ওর চাকরির জায়গায় যাওয়ার পর বাড়ি থেকে ওর নামে নানারকমের অভিযোগ যেতে শুরু করলো। ছোট থেকে যে বাবা মাকে দেখে এসেছে তারা মিথ্যা বলছেন তা বিশ্বাস করতে মন চায়নি আবার যাকে এক সপ্তাহ ধরে একটু একটু চিনেছে সে খারাপ এটাও মানতে কষ্ট হয়েছে। খুশিকে ফোনে জিজ্ঞেস করলে কিছুই প্রকাশ করতো না শুধু একবার বলেছিল সম্ভব হলে আমাকে তোমার ওখানে নিয়ে যাও। সংশয় মনের মধ্যে ঘোরাফেরা করতেই থাকতো চাকরিতে মন ঠিক বসতো না।

তারপর এক ছুটিতে এসে ও খুশিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য তৈরি হল কিন্তু বাবা মাকে বলাতে খুব নির্লিপ্ত জবাব পেলো ‘নিয়ে যাও’ সেবার যাওয়ার পরই খুশির কোলে এলো সানি। খুশি আবার ফিরে এলো শ্বশুরবাড়ি। তারপর কিছু মাস পর বাপেরবাড়ি গিয়ে উঠলো ছেলে হতে। তারপর থেকেই খুশির ভেতর কেমন যেন পরিবর্তন আসতে শুরু করলো। ও ছুটিতে এলে তবেই ও এবাড়ি আসে নাহলে নয়। বাবা মায়ের অভিযোগ ছেলের বৌ ওদের দেখাশোনা করতে আগ্রহী নয়। অভিযোগ শুনেশুনে বিরক্ত হয়ে খুশিকে কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে চাইলে সে উত্তর দিলো একদিন “তোমাদের বাড়িকে আপন করবো কি ভাবে? বাবা মা দুজনেই প্রতিটি কাজে খুঁত ধরে, কিছুই নিজের ইচ্ছেমতো করতে পারি না। পাড়ার কারো সাথে মিশতে দেয় না। কেউ যদি দেখা করতে আসে দরজায় কান পেতে থাকে শোনার জন্য কি গল্প করছি” যে খুশি মুখ খুলতো না তার এইরকম পরিবর্তন ওকে খুব অবাক করেছিল। বাবা মা বোঝাতে চেয়েছিল ওর স্ত্রী কতটা মুখরা ও এবার দেখুক। চাকরির জায়গায় ঠিকমতো কাজে মন না বসতে ওপরের অফিসারের কাছ থেকে কথা শুনতে হচ্ছিলো। কোনমতে চাকরির মেয়াদ শেষ হতেই ফিরে এলো। ছেলে ততদিনে বড় হয়েছে পড়াশোনা শুরু করেছে। এখানেও বাবা মায়ের অবিরত হস্তক্ষেপ শুরু হল আর তার সঙ্গে খুশির সরব প্রতিবাদ। চাকরি শেষে বাড়িতে এসে সবে বসেছে তার মধ্যে সংসারের এই রণক্ষেত্র চেহারা ওকে ক্ষিপ্ত করে তুললো। শুরু হল মনমালিন্য একতরফা শুনে বিচার করতে গিয়ে। খুশি চলে গেলো বাপেরবাড়ি। কিছুদিন কাটার পর বাড়ি ফাঁকাফাঁকা লাগতে শুরু করলে ও গেলো খুশিকে ফিরিয়ে আনতে। ওর বাবা মা ওকে চেপে ধরে এক গাদা কথা শুনিয়ে বললেন ‘যদি তুমি ওকে নিয়ে আলাদা সংসার করতে পারো তবেই ও যাবে নাহলে নয়’ তাই করেছিলো ও কিন্তু তাতেও ওদের মধ্যে দূরত্ব বেড়েই চলল।

এর মাঝে নন্দিনীর প্রবেশ। ও ওর পরিচিত এক দাদার স্ত্রী, দাদা অপূর্ণসঙ্গে অসুখী এক নারী। যদিও ওদের দুটি সন্তান ছিল। দাদা বাড়িতে না থাকার ফাঁকে কখন যে ওরা কাছাকাছি চলে এলো তা বুঝতেই পারেনি। একদিন হঠাৎ নন্দিনী ওকে বাধ্য করলো ওকে নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসতে, ওর সন্তান তখন নন্দিনীর গর্ভে! নন্দিনীর সাথে সংসার করছে ও পাঁচ বছর হল। এতদিন হয়ে গেলো ওকে ছেড়ে এসেছে তবু ভুলতে পারলো কই!

“এ্যাই যে” মানিকদার কথায় হঠাৎ অতীত রোমন্থন ছেড়ে অশোক ওনার দিকে তাকালো “এই ছোকরা নতুন ঢুকেছে। ওকে কাজ শিখিয়ে চোস্ত করুন। এখন আপনার নীচে কাজ করবে পরে অন্য জায়গায় দেওয়া হবে” তারপর ছেলেটাকে বলল “বুঝেছ ছোকরা, নাও কাজে লেগে যাও”

ছেলেটার দিকে তাকিয়ে অশোক খুব চমকে উঠলো। ওর মুখটা খানিকটা সানির সঙ্গে মেলে। ছেলেটা একবার ওর দিকে একবার মানিকদার দিকে তাকালো তারপর মাথা নেড়ে কাজে লাগলো। অশোক কৌতুহল থামাতে জিজ্ঞেস করলো “তোমার নাম কি?”

“মলয়”

তারপর কোথায় থাকে বাড়িতে কে কে আছেন বাবা কি করেন সব। কোনটাই মিলল না। ওর মন কেন এই মলয়ের সাথে সানিকে মিলিয়ে দেখতে চাইছিল ও নিজেই বুঝতে পারলো না। আজ এত বছর পর ওর মনে হল ও ভুল করেছে কিন্তু যে পথে ও চলে এসেছে সেখান থেকে ফিরে যাওয়ার বোধহয় আর রাস্তা নেই। কিন্তু চেষ্টা ও করতেই পারে আর করবেও যদি কিছু পালটায়। সেই কথা ভেবেই ও অফিসে চলল একদিনের জন্য ছুটি চাইতে, একবার খুশি আর সানির সামনে দাঁড়াবে যদি ভুলটার জন্য ক্ষমা চাইবে যদি পায়।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Drama