Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!
Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!

Manab Mondal

Abstract Fantasy Inspirational

3  

Manab Mondal

Abstract Fantasy Inspirational

মলুটি

মলুটি

4 mins
184


বীরভূম সীমান্তে ঝাড়খণ্ডের মলুটি গ্রামের দেবী অধিষ্ঠিত মৌলিক্ষা। এখানে দেবীর শিরোভাগের দর্শন মেলে, তিনি মো মৌলিক্ষা নামেই পূজিত হন। কথিত আছে, মলুটির মৌলিক্ষা মা তারা মা’য়ের বড় বোন।


মুলটি গ্রামের মৌলিক্ষআ অষ্টম শতাব্দীর বৌদ্ধ তান্ত্রিক শৈলীর। জঙ্গলে ঘেরা এই অঞ্চলে বিষ্ণুপুরের মল্ল রাজাদের শাসনে ছিল বলেই গ্রামের নাম হয় মলুটি। মলুটি অঞ্চল ছিল ছিলো বাংলার অন্তর্গত। দিল্লীতে সম্রাট শাহজাহানের শাসনের সময়, মলুটিতে রাজত্ব করতেন নানকরের তিন রাজ বংশধর রাজ চন্দ্র, রাম চন্দ্র ও মহাদেব চন্দ্র রায়। মল্লারপুরের শাসক কামাল খাঁর অতর্কিত আক্রমণে রাজ চন্দ্র নিহত হওয়ায়, তাঁর বড় ছেলে রাখড়চন্দ্র রায় রাজপুরোহিত দণ্ডিস্বামীর সঙ্গে মলুটির জঙ্গলে এসে। এখনে ভগ্নপ্রায় এক প্রাচীন মন্দিরে পাথরের এক মূর্তি আবিষ্কার করেন। এখানে নগর পত্তন করে তিনি১০৮টি শিব মন্দির গড়ে তোলেন। রাজবাড়ির বংশধরেরা আজও পুজো করেন। তবে রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে ভারতীয় পুরাতত্ত্ব বিভাগ। মন্দিরের গায়ে টেরাকোটার অভূতপূর্ব নিপুন শিল্পকর্ম , অসাধারন টেরাকোটার ছাঁচের কাজ রয়েছে। রামায়ণের কাহিনীর বিভিন্ন মুহূর্ত তুলে ধরা হয়েছে, রয়েছে দেবী দুর্গা মহিষাসুরমর্দিনী ও ছিন্নমস্তার মূর্তি।এই গ্রামে এতগুলি মন্দির তৈরি গল্প প্রচলিত আছে। বাজ বসন্ত রাজের রাজপরিবার নানা তরফে ভেঙে যায়, প্রতিটি তরফ মন্দির তৈরী করতে থাকেন পাল্লা দিয়ে । স্থাপত্য, অলঙ্করণ,বৈচিত্র এদের প্রতিষ্ঠিত ৭২টির ভেতর ৫৭টি চারচালা ঘরানার, ১৫ টি রেখ দেউল, রাসমঞ্চ, সমতল ছাদ বা একবাংলা।

 মন্দিরের দেশ মলুটি গ্রাম অতি প্রাচীন। ১৮৫ খৃ:পূর্ব - ৭৫ খৃ: পূর্ব, শুঙ্গ বংশের সময় মলুটি বলা হতো একে গুপ্ত কাশী । পাটলিপুত্র রাজা অশ্বমেধ যজ্ঞ করেছিলেন মলুটিতে শোনা যায়। আদি শঙ্করাচার্য কাশী বা বারাণসী যাওয়ার সময় বৌদ্ধ ধর্ম বিরোধী হিন্দু জাগরণ আন্দোলনের সূচনা তিনি এখান থেকেই শুরু করেন।বৌদ্ধ, তান্ত্রিক সাধকরা এখানে আসতেন।

শোনা যায় ১৮৫৭ সালে বাঙালি তান্ত্রিক সাধক বামদেব বা বামাখ্যাপা তারাপীঠে যাওয়ার আগে মলুটিতে আঠেরো মাস মৌলিক্ষ্যা মন্দিরে ছিলেন ।মৌলিক্ষা মায়ের কাছেই বাবা বামাখ্যাপা প্রথম সিদ্ধ লাভ করেন, মলুটি মৌলিক্ষা মায়ের মন্দির সিদ্ধপীঠ। 


 ‘মলুটির মা মৌলিক্ষা মূর্তি সম্পর্কিত আরো কিছু কথা জানাতে চাই এই মূর্তি খ্রিষ্টীয় অষ্টম শতাব্দীর বৌদ্ধ তান্ত্রিক শৈলীর । আগে বিষ্ণুপুরের মল্ল রাজাদের শাসিত ছিল তাই মলুটি নাম এই অঞ্চলের। দিল্লীতে সম্রাট শাহজাহানের সময় মলুটি তখন রাজত্ব করতেন নানকরের তিন রাজ বংশধর- রাজ চন্দ্র, রাম চন্দ্র ও মহাদেব চন্দ্র রায়। বর্তমানে রাজ বাড়ি আট শরিকে ভাগ হয়েছে।প্রত্যেক শরিকের নিজ নিজ বাড়িতে কালী পুজো রাজার বাড়ি, মধ্যম বাড়ি, শিকি বাড়ি, চৌকি বাড়ি, রাঘড়চন্দ্র বাড়ি এবং শশ্মান কালীর পুজোও হয় এখানে। রাজা রাঘড়চন্দ্র বাড়ির পূজা য় মোষ বলি হতো। কিছু পূজা তে এখনও মোষ বলি হয়। প্রথমে মা মৌলিক্ষার কাছে এয়োজা অর্থাৎ কালীপুজোর অনুমতি নিতে হয় এখানে। তখন দিঘির পাড়ে বাজি পোড়ানো হয়।


পুজো শুরু হয় রাত্রি ১১টা নাগাদ। পরদিন বতরণ হয় মায়ের ভোগ। বিকেলে মৌলিক্ষাকে প্রদক্ষিণ করানো হয়, একসঙ্গে আটটি কালী প্রতিমা নিয়ে নাচাতে নাচাতে । তারপর সব প্রতিমা একজায়গায় রাখা হয়। অবশেষে প্রত্যেক শরিকের নিজস্ব পুকুরে প্রতিমা নিরঞ্জন হয়। মধ্যম বাড়ির কালী প্রতিমা বিসর্জন হয় বুড়োর পুকুরে। ছয় তরফের মানিকচাঁদ পুকুরে এবং রাজ বাড়ির দিঘিতে। গ্রামের লোকেরা যারা বিদেশে কর্মরত তাঁরা ছাড়াও বহু বহিরাগত এই পুজো উপলক্ষে মলুটি গ্রামে আসেন। 

'ছোট মা বলতেন বাবা ক্ষেপা ঝাড়খণ্ডের মৌলিক্ষা কালী মাকে। কেউ বলেন একে মা তাঁরা বোন।সাধক বামাক্ষ্যাপা প্রথম জীবনে এখানেই কাটিয়েছিলেন। তাঁর আসল নাম বামাচরণ চট্টোপাধ্যায়। বাড়ি ছিল তারাপীঠের আটলা গ্রামে। কম বয়সে তাঁর বাবা মারা যান। ফতেচাঁদ মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে আটলার পাশের গ্রাম মহুলার এক মেয়ের বিয়ে হয়। এক অনুষ্ঠানে বামাচরণের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। আর সেখান থেকেই এখানে তিনি আসেন। বামাখ্যাপা দুই বছর যাব মা’য়ের ফুল তোলার কাজ করেছেন এই মৌলিক্ষার মন্দিরে । মা মৌলিক্ষার সঙ্গে বামাখ্যাপাও নিত্য পুজো পানবামাখ্যাপার ত্রিশূল এখন গ্রামে বর্তমান।

কথ্য ভাষায় মহুল গাছের বলা হয় মলুটি। মলুটি। একটা পাহাড়ি টিলা। একটু দূরে চন্দননালা নদী আর চুমড়ে নাম্নী আরেক ক্ষীণস্রোতা। অতি সুন্দর প্রকৃতির সভা নিয়ে ঝাড়খণ্ডের একখণ্ড বাংলা গ্রাম। সব কিছু ছাপিয়ে মলুটির পরিচয়, মন্দিরের গ্রাম যাকে নিয়ে আছে  ইতিহাস আর কিংবদন্তির । আগেই বলেছি ৭২টি মন্দির, আগে সংখ্যা টি ছিলো নাকি ১০৮টি মন্দির ছিল। হিন্দু দেব দেবীর মূর্তি পশ্চিম মুখে অধিষ্ঠিত হয় না , দুমকা জেলার মলুটিতে এর ব্যতিক্রম। শাল মহুলের জঙ্গলের মধ্যে মা তারার ছোটবোন বা কোথাও দিদি বলা হয় হিসেবে পূজিত মা মৌলিক্ষা। শিরোভাগ দর্শন অর্থাৎ মৌলি  তাই তিনি মা মৌলিক্ষা। মন্দিরের টান এবং জায়গাটার সৌন্দর্যের আপনার মন টানবে। 

কোলকাতা থেকে এটি বেশি দূর তো নয়। হাওড়া থেকে ট্রেনে রামপুরহাট। সেখান থেকে বাসে বা গাড়ি ভাড়া করে মলুটি। পুরনো দলিল-দস্তাবেজে এর নাম নানকার মলুটি।  বাঙালরা পুজোর ছুটিতে দল বেঁধে যেতেন এখানে । গ্রামের দু'দিক দিয়ে বয়ে যাওয়া ছোট গ্রাম মলুটির সৌন্দর্য বাড়িয়েছে দুটো নদী। । চুমড়ে আর চন্দননালা। 

কথিত আছে সপ্তদশ শতকে বসন্ত রায় রাজা হন আলাউদ্দিন হোসেন শাহের প্রিয় বাজপাখি উদ্ধার করে । নানকর রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা চলেন রাজবসন্ত রায়।

বাজবসন্ত রায়ের রাজত্ব প্রাপ্তি নিয়ে বহু প্রচলিত আছে লোককথা।বাজবসন্ত রায় রাজপুত্র ছিলেন না, বরং সামান্য রাখালের কাজ করতেন ব্রাহ্মন সন্তান হওয়া সত্বেও দারিদ্র্যতার জন্য । বাংলা বা গৌড়ের অধিপতি , আলাউদ্দিন হুসেন শাহ একবার বতিনি উড়িষ্যা থেকে বীরভূমের মধ্য দিয়ে ফিরছিলেন বাংলায় । বিশ্রামের জন্য ময়ূরাক্ষী নদীর তীরে এই মলুটির কাছাকাছি তাঁর তাঁবু ফেলেছিলেন। সেইসময় তাঁর বেগমের বাজপাখি পালিয়ে যায়। ঢেরা পিটিয়ে ঘোষণা হলো বেগমের সেই বাজপাখি এনে দিতে পারলে পুরস্কার দেওয়া হবে । বসন্ত রায় পাখিটিকে ধরে বাদশার কাছে নিয়ে গেলে আলাউদ্দিন হুসেন শাহ শর্তদিলেন,সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত বালক বসন্ত রায় ঘোড়ায় চেপে ছুটে যতখানি ঘুরে আসতে পারবে, ততখানি জমি তিনি তাকে নিস্কর দান করবেন। শর্তনুসারে  ১৬ কিলোমিটার ব্যাসের এক বিস্তীর্নভূমি নিয়ে বালক বসন্ত রায় 'রাজা' বাজবসন্ত রায় হলেন ।তাকে বসন্ত 'বাজ বসন্ত' নামে পরিচিত হন। আর নানকর মানে কর মুক্ত রাজ্য।

 


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract