এক কাপ কফি
এক কাপ কফি
শিয়ালদা স্টেশনে ট্রেনটা থামতেই, মরুভূমির পঙ্গপালের মত লোক গুলো ট্রেন থেকে বেরিয়ে ব্যস্ততার সঙ্গে এই দিকে ও দিকে মিলিয়ে গেলো, আবার বাকি কেউ কেউ পাশের বঁনগা লোকালে চেপে জানলা দিয়ে বাইরে ভিড় দেখতে লাগল।
কেউ যদি তাদের মধ্যে একটু ভালো করে ভিড়টার দিকে লক্ষ্য করত, তাহলে হয়তো দেখতে পেত সাদা রঙের টি-শার্ট পরা একটা মোটা ছেলে পিঠে একটা ব্যাগ এবং হাতে একটা ট্রলি নিয়ে কলকাতার ব্যস্তার ভিড়ের ঠ্যালা খেতে খেতে মেন গেটার কোণটাতে আশ্রায় পেয়েছে।
তার ট্রলির ঠিক পেছনে নেম প্লেটে বড় বড় করে লেখা তার নাম অনিন্দ্য মিত্র আর ফোন নম্বর ৯০০**** ।
কোন মতে পকেট থেকে মোবাইল বের করে একটি ক্যাব বুক করল অনিন্দ্য।
Pick up - শিয়ালদা স্টেশন
Destination- যাদবপুর
হয়ত অনেকে বলতে পারে শিয়ালদার সাউথ এর লোকাল ট্রেন গুলো সব যাদবপুরিত যায়। কিন্তু এই সন্ধ্যা বেলার শিয়ালদা থেকে যাওয়ার যেকোনো লোকাল ট্রেনে এত ভীড় হয় যে, আপনি যদি ভূল করে শ্বাস যন্ত্র থেকে শ্বাস বায়ু অতিরিক্ত ত্যাগ করে নিজের পেটকে সংকূচিত করেন তার পর মূহূর্তে আপনি জানতে পারবেন আপনার ওই সংকুচিত স্থান কেউ তার ভুরিওলা পেট বিস্তারিত করে সেই স্থান অধিকার করেছে।
কোন মতে স্টেশন থেকে বেরিয়ে ক্যাবে বসে হাফ ছাড়ল অনিন্দ্য। ক্যাবের ড্রাইভার তার গাড়ির দ্যাসবোর্ডে লাগানো স্ক্রীনের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করল স্যার ওটিপিটা।
অনিন্দ্য মোবাইলটা বের করে ওটিপিটা বলতেই গাড়িটা চলতে শুরু করল।
কোলকাতার এই ভিড় রাস্তায় দিব্যি হর্ণ মারতে মারতে গাড়িটা এগিয়ে যাচ্ছে তার গন্তব্যের দিকে। কিছু ক্ষণ আগে বৃষ্টি হওয়াই এই গরমে ও ঠান্ডা ঠান্ডা অনুভব হচ্ছে তার। অনিন্দ্য কানে হেডফোনটা লাগিয়ে আমির খান এর করা 3 idiots সিনেমার গান লাগিয়ে দিয়ে চোখটা বন্ধ করে মাথাটাকে এলিয়ে দিল হেড রেস্টের ওপর। সারা দিনের হয়রানি তার ওপর বৃষ্টি পড়ে ঠান্ডা হাওয়া তার ক্লান্তিটাকে আর বারিয়ে দিচ্ছে।
"Saari umar hum
Mar mar ke jee liye
Ek pal to ab humein jeene do
Jeene do"
গান আর সিনেমা টা এতোটাই ভালো লেগেছে অনিন্দ্যর যে এত বার দেখলেও তার এই সিনেমাটার প্রতি মন ভরে না।
স্যার স্যার!
আওয়াজটা শুনতেই অনিন্দ্য ধরফর করে সোজা হয়ে বসল। গানটা শুনতে শুনতে কখন যে অনিন্দ্য চোখটা একটু লেগে গেছে সে নিজেই বুঝতে পারেনি।
হ্যাঁ বলুন। স্যার পৌঁছে গেছি। আমি বাইরেটা দেখতেই দেখলাম বড় বড় করে লেখা আছে কলেজের নাম আর তার ঠিক নিচে আরো বড় করে লেখা আছে Boy's Hostels.
যেন মনে হয় এখানকার ছেলেরা মাঝে মধ্যে ভুলে যায় কোন দিকে বয়েস হোস্টেল তাই তারা যেন দূর থেকে দেখে চিনতে পারে তাই ভেবে হয়তো কলেজ কর্তৃপক্ষ এত বড় করে লিখতে বলেছিল।
গাড়ি থেকে নেমে নিজের জিনিস পত্র বের করে দাঁড়াতেই গাড়ির চালক তার কৃতঙ্গাতা স্বরে বলে উঠলো স্যার রেটিং এ থ্রি স্টার দিয়ে দেবেন, বলে গাড়িটা নিয়ে চলে গেল।
আমি ট্রলি আর পিঠের ব্যাগটা নিয়ে হোস্টেলে ঢুকতেই সামনের চেয়ারে ওয়ার্ডেন বসে। তিনি আমায় দেখে জিজ্ঞেস করল কোন ইয়ার?
- ফার্স্ট।
- আইডি কার্ড?
আমি আইডি কার্ডটা দিতেই তিনি তার টেবিলে থাকা লম্বা মোটা খাতাটা বের করে আমার নাম, আইডি, ফোন নম্বর, বাড়ির ফোন নম্বর ইত্যাদি খাতা টাতে লিখলেন তার পর খাতাটা আমার দিকে ঘুরিয়ে আমার নামের পাশে স্বাক্ষর করতে বললেন।
তোমার রুম নম্বর B20।
স্বাক্ষর করে হোস্টেলে B দিকে এগিয়ে গেলাম।
নিজের রুমে পৌছে দেখলাম আমার রুমে আর একজন আমাকে দেখে সে জিজ্ঞেসা করলো এই রুম।
আমি মাথাটা ওপর নিচে করে আমার উত্তর তাকে জানালাম।
সে এগিয়ে এসে আমার দিকে হ্যান্ডসেকের জন্য হাতটা বাড়িয়ে বলে উঠলো
-হ্যাই আমি প্রিয়ম গুপ্তা।