Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!
Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!

Njh Y

Classics

4  

Njh Y

Classics

থ্রিলার_নভেম্বর_রেইন ( চতুর্থ ও শেষ পর্ব)

থ্রিলার_নভেম্বর_রেইন ( চতুর্থ ও শেষ পর্ব)

13 mins
451


এই রুমের জানালা দিয়ে বাইরের অন্ধকার দেখা যাচ্ছে। জানালার কাচের উপর হালকা বৃষ্টির ফোটা এসে পড়ছে। আমি দরজায় দাঁড়িয়ে কাঁপছি । শীত আর ভয় মিশিয়ে কাঁপন। এই মুহুর্তে দরজার ওপাশে ড্রয়িং রুমে কেউ একজন এসে দাঁড়িয়েছে । আমার মন বলছে সে খুনি না হয়েই যায় না। ওই যে ওই পাশ থেকে নভেম্বর রেইনের মৃদু সুর ভেসে আসছে, আগের খুনগুলো করার সময়েও এই গান বাজানো হয়েছে। নিশ্চয়ই খুনি। এই ভয়ংকর খুনির হাত থেকে আমার আজ বাঁচার উপায় নেই। ভাবতে ভাবতে দরজার উপর প্রচন্ড লাথি পড়ল। আমি ছিটকে সরে গেলাম। দরজার ছিটকিনি অত শক্ত না। আর দু এক লাথি তে সেটা ভেঙ্গে পড়বে সন্দেহ নাই। আমি জোরে জোরে চিৎকার দিলাম, বাঁচাও, বাঁচাও। জানি চিৎকারে কাজ হবে না। তিনতলা এই বিল্ডিংয়ে শুনেছি কেউ থাকে না এখন, ট্রিপল মার্ডার ঘটনার পর সব ভাড়াটিয়ারা রাতারাতি বাসা ছেড়ে চলে গেছে। আশেপাশের বিল্ডিং গুলো দূরে দূরে, তাছাড়া এই বৃষ্টি ঠান্ডার মধ্যে রাস্তাঘাটও ফাঁকা। বুঝলাম ফাঁদে পড়ে গেছি। আর কিছুক্ষণের মধ্যেই খুনির হাতে পড়ে যাব। আচ্ছা একটা পুলিশ গার্ড দিচ্ছিল না নীচে, সে কোথায় এখন? আমার চিৎকার শুনে চলে আসার কথা। হঠাৎ মনে হল, খুনি নিশ্চয়ই তাকেও রেহাই দেয় নি, খুন করে এসেছে। আর একবার দরজার উপর প্রচন্ড জোড়ে ধাক্কা পড়ল। আমার গলা দিয়ে আবার চিৎকার বের হয়ে গেল।এই সময় রাস্তা থেকে তীক্ষ্ণ লম্বা একটা বাঁশির শব্দ শুনলাম। সাথে সাথে দরজার ওপাশের শব্দ বন্ধ হয়ে গেল। নিশ্চয়ই পুলিশ এসেছে আশেপাশে। আমি আরোও জোরে জোরে চিৎকার করতে লাগলাম। কিছুক্ষণ পর দরজা ধাক্কানোর আওয়াজ পেলাম। কেউ বলছে, ইমন ভাই আমরা পুলিশ , দরজা খোলেন ভয় পাবেন না। আমি তবুও ভয়ে কাঁপছিলাম। বুঝতে পারছি না কি করব। এর মধ্যে আবার ফোন বাজল। গুলজার আংকেলের ফোন এসেছে। --ইমন তুমি ঠিক আছ? ফোন যাচ্ছে না কেন তোমার মোবাইলে? পুলিশ পাঠিয়েছি আমি। তারা পৌঁছেছে? আমি কোনমতে হু বললাম। ফোন আবার কেটে গেল। সেই রাতে গাজীপুরের পুলিশ আমাকে যখন মোহাম্মদপুরের বাসায় পৌঁছে দিল তখনও আমি কাঁপছি। গুলজার আংকেল উদ্বিগ্ন মুখে বাসার সামনে দাঁড়িয়েছিলেন, আমাকে গাড়ি থেকে নামতে দেখে জড়িয়ে ধরলেন, বললেন, সরি ইমন আমি তোমাকে ভীষণ বিপদের মুখে ঠেলে দিয়েছিলাম। বুঝিনি । বাসায় গিয়ে মিলিকে কিছু বললাম না। মিলি আমার বিধ্বস্ত অবস্থা দেখে অবাক হয়ে গেল। মুখে কিছু বলল না। আমি ফ্রেশ হয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। পরদিন সকালে যখন ঘুম ভাঙ্গল তখন সকালের রোদ এসে আমার বিছানার উপর পড়েছে। কাল রাতে আমার আচরনের কথা ভেবে লজ্জা লাগল। এতো ভয় পাওয়াটা ঠিক পুরুষাচিত হয় নি। আমি উঠে তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে বের হচ্ছিলাম। মিলি পথ আটকালো। --কি হয়েছে তোমার? কাল বিধ্বস্ত হয়ে কোথা থেকে আসলে? এখন আবার অফিস না গিয়ে কোথায় যাচ্ছ?---গুলজার আংকেলের কাছে যাচ্ছি মিলি। আসল খুনি এখনো ধরা পড়েনি বলে মনে হচ্ছে। গুলজার আংকেলকে বলতে হবে। এসে তোমাকে সব খুলে বলব। গুলজার হোসেন বাসাতেই ছিলেন। আমাকে দেখে বললেন, কি অবস্থা তোমার ইমন। আমার জন্য ভীষণ বিপদে পড়ে গিয়েছিলে। আমি খুবই দুঃখিত। আমি লজ্জা পেয়ে বললাম, আসলে রাতের ওই পরিবেশের জন্য আমি একটু ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম আংকেল। এখন লজ্জা লাগছে। ঘটনা সামান্য। কিন্তু খুনি তো ঘুরে বেড়াচ্ছে মনে হয়। আপনি কিভাবে বুঝলেন আমার বিপদের কথা? উনি বললেন, তুমি যখন ফোন করে বাসায় গার্ড দেয়া পুলিশের সাথে কথা বলিয়ে দিলে তখনই খটকা লেগেছে। সে তার বসদের সাথে কথা না বলে আমার কথায় তোমাকে ঢুকতে দিয়েছে সেটাই মোটেই প্রফেশনাল না। আমি গাজীপুর থানায় ফোন করে শুনলাম তারা কাকন নামে কোন পুলিশ অফিসারকে চেনে না। আর ঐ বাসা তারা তালা দিয়ে রেখেছে কোন গার্ড ওই বাসার জন্য দেয়া নেই। তখনও আমি বুঝেছি তুমি বিপদে পড়েছ। পুলিশকে বলেছি আশেপাশের যে টহল দল আছে তাড়াতাড়ি তাদেরকে পাঠাতে। ভাগ্য ভালো তারা ঠিক সময়ে পৌঁছেছে। কিন্তু আংকেল এই ছদ্মবেশী পুলিশটা কে? সে কেন সেখানে গিয়েছিল? সে ই কি আসল খুনি? গুলজার হোসেন বললেন, আমি সব কিছুর একটা ব্যাখ্যা দাঁড় করিয়েছি। গাজীপুর পুলিশ আমাকে কিছু ভালো খবরও দিয়েছে। তুমি ধানমন্ডি থানায় যেতে পারবা এখন? --- পারব। কোন অসুবিধা নেই। ---তাহলে চল। ওখানে গিয়েই সব বলব।..ধানমন্ডি থানায় বসে আছি আমরা। ওসি রফিক একটু নিষ্প্রভ। সেটা অবশ্য স্বভাবিক। কারন সে আগে বলে দিয়েছিল খুনি কে তা জানা হয়ে গেছে। এখন যদি জানা যায় খুনি বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছে তাহলে তো মুষ্কিল। বড় হল রুমে পুলিশের একজন ডিআইজি বসে আছেন, রহমত উল্লাহ, গুলজার আংকেলের রিকোয়েস্টে এসেছেন। এছাড়া আমি আশ্চর্য হয়ে দেখলাম বসে আছেন মিসেস আনোয়ার তার পাশে একটা হুইল চেয়ারে বসে রিমাও এসেছে। আরোও কয়েকজন পুলিশ অফিসার বসে আছেন গোল টেবিল ঘিরে। গাজীপুর থানার ওসিকেও দেখলাম এসেছেন। ডিআইজি সাহেব বললেন, গুলজার ভাই বলেন আপনি কি জানতে পেরেছেন? গুলজার হোসেন চারিদিকে তাকিয়ে বললেন, আসল খুনির পরিচয় জানতে পেরেছি। রফিক বলল, স্যার আসল খুনি মানে? ---এই চারটা খুন যে ঘটিয়েছে সেই আসল খুনিকে আমরা চিনতে পেরেছি। রুমের মধ্যে একটা বিস্ময়ের গুঞ্জন উঠলো। কে সে? ওসি রফিক বললেন, কিন্তু স্যার......গুলজার হোসেন বললেন, যথা সময়ে খুনির পরিচয় জানাবো। আগে রফিকের মনে যত প্রশ্ন আছে একের পর সেই উত্তর দিয়ে যাই। গুলজার একটু থেমে বললেন, খুনি ধরার জন্য সবচেয়ে বড় অবদান ইমনের। সে গতকাল নিজের জীবনের রিস্ক নিয়ে গাজীপুরে গিয়েছিল, আমিই তাকে পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু ইমন গিয়ে খুনির খপ্পরে পড়ে। আমি খুবই দুঃখিত ইমনের সাথে এতো দ্রুত খুনির দেখা হয়ে যাবে আমি সেটা বুঝি না। ইমন , আই আম স্যরি। সবাই আমার দিকে তাকালো। আমি বললাম, কি বলেন আংকেল, আমার কিছুই হয় নি। কিন্তু খুনি যে রিমা না সেটা কিভাবে বুঝলেন? গুলজার আংকেল বললেন, আমার প্রথম থেকেই খটকা লেগেছিল, রিমা খুনি হলে সে তার হ্যান্ড ব্যাগে বিষের শিশি রেখে পুলিশে ফোন করার ভুল করত না। কিন্তু চিন্তা করতে লাগলাম কে খুনি হবে তাহলে? খুনের প্যাটার্নটাও মারাত্মক। একটা গান বাজিয়ে খুনি খুন করে যাচ্ছে। কি অদ্ভুত। আনোয়ার সাহেব খুন হওয়ার পর পুরা ব্যপারটয়া ভাবলাম, খোঁজ খবর করে কিছু তথ্য বের করলাম, এরপর মোটামুটি শিওর হলাম খুনি কে। মুষ্কিল হচ্ছে সে কোথায় আছে আন্দাজ করতে পারছিলাম না। আনোয়ার হোসেন খুন হওয়ার পর একটা জিনিস মাথায় এলো। মনে হলো গাজীপুরের বাসায় কোন আলামত থাকতে পারে , হয়ত সবার চোখ এড়িয়ে গেছে। ইমন পাঠালাম ওই বাসার আলিমিরাতে কি কি আছে সেটা দেখতে আর ছবি তুলে নিয়ে আসতে। ইমন গিয়ে দেখে কাঁকন নামে এক পুলিশ দাঁড়ানো আছে। আমি তার সাথে কথা বলার গাজীপুর থানায় ফোন করে জানলাম তারা গতকাল থেকে সেখানে কোন গার্ড রাখছে না। বাসা তালা দিয়ে রেখেছে, আর কিছু না। তখন বুঝলাম ওই কাঁকন ই খুনি। সে আসলে পুলিশের ড্রেস পরে ছদ্মবেশে এসে তার রেখে যাওয়া প্রামান গুলো সরাতে চেয়েছিল। নিশ্চয়ই দোতলার দরজা খোলার পর সে ইমনকে বিল্ডিং এর দিকে ঢুকতে দেখে পরে নিচে নেমে এসেছে। ইমন যখন উপরে গিয়ে ওই রুমে ঢুকে আলমারি খুলেছে তখনই সে বুঝতে পেরেছে কি দেখতে এসেছে ইমন। তাকে খুন করার জন্য সে প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছিল। ভাগ্য ভালো সময়মতো গাজিপুরের এক টহল পুলিশ দল হাজির হয়েছিল। ওসি রফিক বলল, কিন্তু কি দেখতে গিয়েছিল ইমন সাহেব? যার জন্য সে খুন হয়ে যাচ্ছিল? গুলজার আংকেলের ইশারায় গাজীপুর থানা পুলিশ একটা ব্যাগ রাখলেন টেবিলের উপর। আমরা সবাই ঝুঁকে এলাম ব্যাগের উপর।ব্যাগে কি আছে? গুলজার আংকেল বললেন, ব্যাগে আছে রিমার বিয়ের কাগজপত্র। ব্যাগে আছে খুনির যাবতীয় জিনিসপ্ত্র। এবং একটা ডায়রি। ওই ডায়রিটাতেই কিছু বিষের নাম লেখা আছে সঙ্গে আছে একটা এলবামের ভিতর কিছু ছবি। এই ব্যাগটা ওই বাসায় থেকে যাওয়াটা অস্বাভাবিক। আমার ধারনা ব্যাগটা সরিয়ে নেয়ার যে প্ল্যান ছিল খুনির সেটা কাজ করে নি। হয়ত পুলিশি নজরদারি বেশি ছিল বা সে কোন ঝামেলায় আটকে গিয়ে সময় পায় নি। তাছাড়া সে যখন দেখল এই গুরুত্বপূর্ন ব্যাগটা পুলিশের নজর এড়িয়ে গেছে সে তখন ভেবেছে সময় সুযোগ মত ব্যাগটা সরাবে। ইমন যেদিন যায় সেদিন সে ব্যাগটা নিতে এসেছিল।ডিআইজি রহমতউল্লাহ বললেন, কিন্তু খুনের পর ওই বাসা ঠিক মতো সার্চ করেনি পুলিশ? গাজিপুরের ওসি একটু বিব্রত হয়ে বললেন, স্যার করেছিলাম সার্চ। তদন্তকারি অফিসার ওই ব্যাগ দেখেওছিলো কিন্তু ব্যাগটা খুন হয়ে যাওয়া বাসার মালিকদের মনে করে ভালো করে খুলে দেখেনি। ডিআইজি বিরক্ত ভঙ্গীতে মাথা নাড়লেন। ওসি রফিক বললেন, কিন্তু স্যার খুনি টা কে? সে কোথায়? গুলজার আংকেল বললেন, খুনি গাজীপুর পুলিশের হাতে বন্দী। দারুন কাজ দেখিয়েছে এক্ষেত্রে গাজিপুর থানার ওসি রোকন সাহেব। খুনির পরিচয় পেলে আপনারা চমকে যাবেন। আমরা কয়েকজন এক সঙ্গে বললাম, কে..... কে খুনি?গুলজার হোসেনের ইশারায় গাজিপুর থানার ওসি রোকন সাহেব উঠে গেলেন। ফিরে এলেন হ্যান্ড কাফ পরা একজন আসামিকে নিয়ে। আমি দেখেই চিনলাম গতকালের সেই পুলিশ গার্ড কাঁকন। রুমের ভিতর একটা বিস্ময়ের গুঞ্জন উঠলো। রিমা খুনিকে দেখে একটা চিৎকার দিয়ে অজ্ঞান হয়ে গেল। তার মাথা এলিয়ে পড়ল হুইল চেয়ারের পাশে। মিসেস আনোয়ার তাড়াতাড়ি রিমার কাছে ছুটে গেলেন। সবার বিস্মিত চোখের সামনে গুলজার আংকেল ঘোষনা করলেন, এই হচ্ছে রিমার প্রেমিক কাম স্বামী আসিফ। যদিও বিয়ের নামে সেদিন সে ধোঁকা দিয়েছিল রিমাকে। আমি হতভম্ব। গতকাল এই জন্য ব্যাটাকে চেনা চেনা লাগছিল। টিভিতে ছবি দেখেছিলাম তার। কিন্তু কি অবিশ্বাস্য! আসিফ তো মারা গেছে। তার লাশ কাটাছেড়া করে ডোম পোস্ট মর্টেম রিপোর্ট দিয়েছে। তাহলে এ কে? সবচেয়ে বিস্মিত হয়েছে ধানমন্ডি থানার ওসি রফিক। সে বলল, আসিফের লাশ তো মর্গে কাটা হইছে, তাহলে এ কে? গুলজার হোসেন বললেন, আসিফ মারা যায় নি, তার লাশ কাটাও হয়নি। আসিফের ছোট ভাই তাসিফ খুব ভালো কেমিস্ট্র। রসায়নে মাস্টার্স করা ছাত্র। তাসিফ আর আসিফ মিলে এই প্ল্যান দাঁড় করিয়েছে, যার কিছু আন্দাজ ওই ব্যাগের মধ্যে থাকা ডায়েরী থেকে পাওয়া যাবে। আসিফ সেই রাতে তার ভাই তাসিফের তৈরি করা একটা লিকুইড খেয়েছিল। ওই ক্যামিকেল মানুষকে প্রায় চব্বিশ ঘন্টা মৃতের মতো করে ফেলে। শ্বাস প্রশ্বাস খুব ধীর হয়ে যায়, প্রেশার লো হয়ে আসে, শরীরের তাপমাত্রা কমে যায়। মানুষ অজ্ঞানের মতো হয়ে যায়। রিমা ভালো করে খেয়াল না করেই আসিফকে মৃত ভেবেছে, অন্য দুইজন সত্যি সত্যি মারা যাওয়ার বাকিরাও লক্ষ্য করে নি। আর আমার ধারনা পুলিশের ড্রেস পরে ওই সময় আসিফের দিকে নজর রাখছিল তার ভাই তাসিফ। কয়েক থানার পুলিশ ছিল সেদিন ফলে অনেকেই অনেককে চিনত না , সেই সু্যোগে তাসিফ পুলিশের ড্রেস পরে দলে ঢুকে গেলে অবাক হওয়ার কিছু নাই। হাসপাতালে যে ডাক্তার পরীক্ষা করে সার্টিফিকেট দিয়েছে তাকে কিভাবে ম্যানেজ করেছে আসিফরা সেটা বলা মুষ্কিল। মোটা অঙ্কের ঘুষ বা ব্ল্যাক মেইল হতে পারে। তাসিফই কাজটা করেছে সন্দেহ নেই। এরপর লাশ কাটা ঘরে ডোমকেও ম্যানেজ করেছে তাসিফ। সম্ভবত লাশ না কেটে অন্য দুই লাশের মতো একই রিপোর্ট দিতে কনভিন্স করে আসিফকে লাশ হিসেবে ছাড়িয়ে নিয়ে গেছে তাসিফ। ডোম ভেবেছে তেমন আর অসুবিধা কি, একই ধরনের বিষে মারা গেছে তো তিনজন। ওসি রফিক মৃদু গলায় বলল, কিন্তু ছোট ভাই তাসিফ আনোয়ার সাহেবকে খুন করল কেন? গুলজার আংকেল বলল, নাহ ছোট ভাই তাসিন খুন করে নি। খুন করেছে আসিফ নিজেই। তাদের প্ল্যান ছিল খুন করে চাকুটা ঘুমন্ত রিমার রুমে রেখে আসবে। সবাই তাহলে রিমাকে খুনি ভাববে। কিন্তু আসিফ তাড়াহুড়া করে চাকু নিয়েই পালিয়ে যায়। সম্ভবত সে বিল্ডিংয়ের ছাদ দিয়ে পাশের বিল্ডিংয়ের ছাদে উঠে পালিয়েছিল। ছোট ভাই তাসিফের সাথে দেখা হওয়ার পর যখন খেয়াল হলো চাকু নিয়ে এসেছে তখন নিজে না গিয়ে তাসিফকে পাঠিয়েছিল, যদি সু্যোগ হয় তাহলে চাকুটা রিমার রুমে চালান করতে। তাসিফ সেটা করতেই কনস্টবল রাহাতকে হাত করে ওই বাসায় ঢুকেছিল কিন্তু সে ভুল করে রিমার রুমের বদলে খুন হওয়া আনোয়ার ভাইয়ের রুমে ঢুকে পড়ে। অনেক রিস্ক নিয়েছিল তারা এই কাজ করতে গিয়ে সন্দেহ নেই। কিন্তু গাজীপুরের মার্ডারের পর তাদের সাহস বেড়ে গিয়েছিল। রুমের সবাই কিছুক্ষণ নিশ্চুপ হয়ে গেল গুলজার হোসেনের এই আকস্মিক আর অবিশ্বাস্য সব তথ্যের ধাক্কায়। এরপর সবাই একসংগে বলল, কিন্তু কেন ? কেন এতো খুন? গুলজার আংকেল কিছুক্ষণ চুপ থেকে তার সামনে থাকা ডায়রি থেকে একটা সাদাকালো ছবি বের করলেন। ডায়রি টা একটু আগে গাজীপুর থেকে আনা ব্যাগ থেকে বের করেছিলেন। ছবিতে একজন পুরুষ আর একজন মেয়ে দাঁড়ানো। তাদের দুই পাশে ছোট্ট দুইটা ছেলে, একটা আট বছর আর একটা পাঁচ বছরের শিশু। দেখলেই মনে হয় মায়া ভরা ফ্যামিলি। ছবি দেখে হ্যান্ডকাফ পরে দাঁড়িয়ে থাকা খুনি আসিফের চোখ দিয়ে পানি বের হয়ে এলো। গুলজার আংকেল ছবিটা মিসেস আনোয়ারের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললেন, দেখেন তো চেনেন কি না? যদিও বহু আগে দেখেছিলেন এদের। মিসেস আনোয়ারের মুখে ভয় খেলে গেল একটু তারপর তার চোখ দিয়েও পানি বের হয়ে এলো। গুলজার হোসেন বললেন, আমি খোঁজ খবর নিয়েছে। এই ডায়রিতেও কিছু লেখা আছে। বহু তথ্য মিলিয়ে যা পেয়েছি তা হচ্ছে, এইটা আসিফ আর তাসিফের বাবা মা। এক নভেম্বরে সন্ধ্যায় বৃষ্টির মধ্যে আসিফ তার বাবা মায়ের সাথে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়েছিল। একটা গাড়ি এসে চাপা দেয় তাদের। আমার আন্দাজ গাড়িটা চালাচ্ছিলেন মিসেস আনোয়ার। আসিফ আর তার মা গুরুতর আহত হয় তাতে। মিসেস আনোয়ার তার সঙ্গে থাকা ড্রাইভারের সাহায্যে আসিফ আর তার মাকে হাসপাতালে নেয়ার জন্য গাড়িতে তুলে নেয় , আমার ধারনা ওই গাড়িতে তখন নভেম্বর রেইন গানটা বাজছিল। কিন্তু কিছুক্ষণ পরই বোঝা গেল মহিলা মারা গেছেন। তখন ভয়ে তারা আসিফকে তার মায়ের লাশ সহ রাস্তার পাশে নামিয়ে দিয়ে পালিয়ে যায়। ঘটনা এখানে থেমে গেলেও হতো। আসিফের বাবা যে কিনা নিজেও কিছুটা আহত হয়েছিল, সে সুস্থ হয়ে এসে মিসেস আনোয়ারকে খুঁজে বের করে। মামলা করার হুমকি দিচ্ছিল সম্ভবত। আনোয়ার ভাই তখন ডিস্ট্রিক্ট জাজ। খুবই সৎ আর দৃঢ চেতা। মিসেস আনোয়ার ভয় পেয়ে যান আনোয়ার ভাই শুনলে কি হবে ভেবে। উনি সম্ভবত কোন অসৎ পুলিশ কর্মকর্তাকে হাত করে আসিফের বাবাকে জেলে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। জেলেই আসিফের বাবার মৃত্যু হয়। গুলজার হোসেন থেমে গেলেন। সারা রুমে নিশ্চুপ হয়ে গেছে। খেয়াল করলাম আসিফ কাঁদছে। মিসেস আনোয়ার চুপ করে আছেন। রিমার জ্ঞান ফিরেছে কিনা বোঝা যাচ্ছে না। ডিআইজি রহমতউল্লাহ সাহেব বললেন, কিন্তু গুলজার ভাই আপনি এতো তথ্য কিভাবে জানলেন? জানি আপনি মানুষকে স্টাডি করে অনেক কিছু বলে দিতে পারেন কিন্তু ......আমি খোঁজ নিয়েছে রহমত, রিমা যদি খুন না করে তবে কে খুন করল, ভিতর থেকে যেহেতু দরজা বন্ধ ছিল তাহলে খুনি বাইরেই বা কিভাবে গেল, সেই হিসেব মিলছিল না। এরপর ওই বিয়ের ঘটনা। রিমা বলছিল তাদের বিয়ে হয়েছে কাজি অফিসের নীচ তলায়, কিন্তু মগ বাজার কাজি অফিস তো দোতলায়। ওখানে গিয়ে দেখলাম নীচের তলায় একটা অফিস আছে তবে সেটা বন্ধ। দারোয়ানের কাছে জিজ্ঞেস করে জানলাম অফিসটা বেশ কয়েক মাস ধরে বন্ধ। তখনই মনে হলো রিমাকে হয়ত এই বন্ধ অফিস খুলে বসানো হয়েছে এবং ভুয়া কাগজ পত্র সই করিয়ে কাবিন করা হয়েছে। সম্ভবত আসিফ তার ভাই তাসিফকে বন্ধু সাজিয়ে নিয়েছিল। কাজি অফিসের ধোঁকা বোঝার পর থেকে আমার আসিফের প্রতি সন্দেহ হয়। কিন্তু সে তো মারা গেছে। আমি প্রথমে ডোমের কাছে গেলাম, চাপ দিতে সে স্বীকার করল একটা লাশ পোস্ট মর্টেম না করেই সে রিপোর্ট দিয়ে দিয়েছে। তখন ডেথ সার্টিফিকেট দেয়া ডাক্তারের সাথে দেখা করি, সে কোনভাবেই স্বীকার করছিল না। আসিফ বেঁচে আছে এবং পুলিশ তাকে খুনের দায়ে খুঁজছে এই কথা শোনার পর ডাক্তারও স্বীকার করে একটা লাশ মাত্র পরীক্ষা করেছে বাকি গুলো ভালোভাবে পরীক্ষা না করেই ডেথ সার্টিফিকেট দিয়ে দিয়েছে। পুলিশ নাকি খুব তাড়া দিচ্ছিল। ডাক্তারের কথায় ফাঁক আছে, সে হয়ত ভালো অংকের টাকা পেয়েছে তাসিফের কাছ থেকে কিন্তু তার বিরুদ্ধে প্রমাণ নাই। জাজ সাহেব খুনের ঘটনা রাহাতের মুখে শুনেই বুঝেছিলাম আসিফের ভাই খুন করেনি খুন করেছে অন্য কেউ। কারণ রাহাত বলেছিল সে আর তাসিফ যখন বাসায় ঢুকে তখন মিসেস আনোয়ারকে অজ্ঞান অবস্থায় ড্রয়িং রুমে পড়ে থাকতে দেখেছে। তারমানে তারা যাওয়ার আগেই খুন হয়েছে জাজ সাহেব, মিসেস আনোয়ার সেটা দেখেই অজ্ঞান হয়েছে। যখন তাসিফ মারা গেল আর তার হোটেল রুমে চাকু পাওয়া গেল তখন আমি কি ঘটেছিল পরিষ্কার হয়ে যাই। ওসি রফিক বলল , স্যার আসিফ মিসেস আনোয়ারকে খুন না করে তার নিরীহ বন্ধু আর বন্ধু পত্নী আবার নির্দোষ জাজ সাহেবকে খুন করল কেন? গুলজার আংকেল বললেন, সবই মিসেস আনোয়ারকে নির্মম যন্ত্রনা দেয়ার জন্য। মিসেস আনোয়ারের একমাত্র কন্যা খুনের দায়ে ফাঁসির আসামি সেটা তাকে কেমন কষ্ট দেবে সেটা দেখতে চেয়েছে তারা, শেষ বয়সে প্রিয় স্বামীকে হারিয়েও বা কেমন লাগে সেটাও দেখাতে চেয়েছে মিসেস আনোয়ারকে। আসিফ তার চোখের সামনে মাকে কষ্ট পেয়ে মরতে দেখেছে, বাবাকে পরে মিথ্যা অভিযোগে জেলে মরতে দেখেছে, তাদের অভাবে নিশ্চয়ই ভীষণ কষ্ট হয়েছে তাদের বড় হতে। কষ্টের তীব্রতা আসিফ আর তাসিফকে অমানুষ করে দিয়েছে। নিরীহ বন্ধুকেও বলি দিতে বাধে নি। আমার ধারনা এক সময় সে মিসেস আনোয়ারকেও মেরে ফেলত অথবা তাকে আরোও কষ্ট দেয়ার জন্য রিমাকে মারত। কে জানে!আমি বললাম, কিন্ত আংকেল খুনের সাথে নভেম্বর রেইন গান বাজানোর সম্পর্ক কি?গুলজার হোসেন কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললেন, আমার ধারনা সেদিন রাতে আসিফ যখন গাড়িতে তার মাকে কষ্টে আর্তনাদ করতে করতে মরে যেতে দেখে তখন গাড়িতে নভেম্বর রেইন গানটা বাজছিল, ঠিক না আসিফ?আসিফ কোন কথা বলল না কিন্তু মাথা নাড়ল। বোঝা গেল গুলজার হোসেনের কথা ঠিক। উনি আবার বললেন, এই বিষয়টা নিয়ে আমি সাইকোলজিস্টদের সাথে কথা বলেছি। ওই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি ছোট্ট শিশু মনে ভীষণ রকম প্রভাব ফেলে গেছে। রাস্তায় আহত ছোট্ট আসিফ তার মৃত মাকে নিয়ে সেই অন্ধকার রাতে কিভাবে বেঁচে ফিরেছে সেটা এক রহস্য। পুরো ঘটনা তাকে সারা জীবনের ট্রমার মধ্যে নিয়ে গেছে। ওই পরিবেশ আর ওই গান তাকে ট্রিগার্ড করে, উন্মাদ করে তোলে । সে হিতহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলে, খুনি বনে যায়। এই জন্য খুনগুলো করার আগে সে ওই গান চালিয়ে নিত, সুস্থ মাথায় তার পক্ষে হয়ত খুন গুলো করা সম্ভব হতো না। কিন্তু তার ভাই ছিল ঠান্ডা মাথার, আমার ধারনা প্রতিশোধ নেয়ার এই পরিকল্পনা, রিমার সাথে প্রেম থেকে সবকিছু তাসিফের মাথা থেকে বের হয়েছে, আসিফ শুধু কিলারের ভূমিকায় ছিল। তাসিফের এই ডায়েরি থেকে এই রকম কিছুর ধারনা পাওয়া যায়। যদিও ডায়েরি সে খুব সতর্ক হয়ে লিখেছে, কোন বর্ননা নেই, শুধু কিছু নোট করা। বেচারা তাসিফ, অনেক কৌশলী ছিল। ওভার কনফিডেন্সের কারনে শেষ পর্যন্ত নিজেই মারা গেল। -সবাই চুপচাপ। শুধু আসিফ কাঁদতে লাগল। আমি তার দিকে তাকিয়ে থাকলাম। গতকাল এই লোকটাই আর একটু হলে আমাকে খুন করে ফেলত, আজ এখন শিশুর মত কাঁদছে। বাবা মাকে অন্যায়ভাবে মারা যেতে দেখেছে , ভাইও মারা গেছে, নিজে খুনের দায়ে জেলে যাবে, জীবন মাঝে মাঝে কত নিষ্ঠুর হয়ে দেখা দেয় তার চেয়ে ভালো আর কেউ জানে না।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Classics