Neha Ruidas

Horror Thriller

3  

Neha Ruidas

Horror Thriller

আত্মার প্রতিশোধ

আত্মার প্রতিশোধ

11 mins
263



আমার গ্রামের বেশির ভাগ গরীব চাষী মানুষের বাস ।চাষবাস ই এখানকার মানুষের প্রধান জীবিকা । কিছু কিছু মানুষ বড় জমির মালিক দের জমিতে মজুর খেটে পেট চালায় । আবার কিছু গরিব মানুষ ধরনের সময় বা অকাল গন্ডার দিনে অগ্রিম টাকা নেয় জমির মালিক দের কাছ থেকে সংসার চালানোর জন্য । চাষ বাসের মরশুম এলেই সেই টাকা খেটে শোধ করে দিত । (এটা সত্য ঘটনা অবলম্বনে রচিত গল্পঃ তাই স্থান কাল পাত্র সবই পরিবর্তন করা হল। গল্পের খাতিরে কিছুটা রং চড়িয়ে সাজানো হয়েছে)

 গ্রামের নাম শিবপুর । এটা এই গ্রামের এক গরিব পরিবারের উপর হওয়া বলতে পারেন নৃশংস অত্যাচারের কাহিনী । 


কিছু বর্গাদার ভুক্ত চাষীরাও আছে এই গ্রামে । তো এইরকমই এক বর্গদার ভুক্ত চাষীর কাহিনী আপনাদের কাছে তুলে ধরার চেষ্টা করছি ।

(অনেক দিন ধরে কিছু লেখালেখি করিনি । নতুন বছরের শুরুটা আমার একদম ভালো যায়নি । 1জানুয়ারি থেকে 10 জানুয়ারি পর্যন্ত মাথাব্যথা ও একরাশ জ্বর নিয়ে আমার এবছরের শুরু । তখন থেকে লেখা লেখি কমে গিয়েছে , কাজের সুত্রে সময়ও পায় কম) 


ভুবনের বাবার নামে বর্গাদার ছিল । ভুবনের বাবা মারা যাবার পর বর্গাদার টি ছেলে ভুবনের নামে করে যেতে পারেনি । এই খানেই ওই জমির মালিক সুযোগ পেয়ে যায় এবং বর্গাদারকে উচ্ছেদ করার জন্য উঠে পরে লাগে । জমিটি বেচে দেওয়ার চাপ দিতে লাগল ভুবনকে । কিন্তু ভুবন বলে যেতে লাগলো জমি আপনি আপনার অংশ যাকে বেচবেন আপনি বিক্রি করতে পারেন । আমি কিন্তু চাষ করে যাব ।  ভুবনের এইরকম মতামত একদমই পছন্দ হয়নি জমির মালিকের ।এদিকে ভগবানের মারই বলুন আর যাই বলুন সেই বছরই আবার ভালো বৃষ্টিপাত না হওযাই একদম চাষ হল না দেখুন । এই চাষ না হওয়ার সুযোগ টা কাজে লাগাবার চেষ্টা করলো মালিক পক্ষ । জর্জ কোর্টে কেস উঠলো । সেখানে মালিক পক্ষ দেখাল আমার বর্গাদার দীর্ঘ দিন হল মারা গেছে । আমার জমি লোকে চাষ করে লুটে পুটে খাচ্ছে । আমাকে আমার জমি ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করুন হুজুর


 । এদিকে ভুবন সরকার পক্ষের উকিল দিয়ে বলালেন যে , হুজুর এবছর ভালো বর্ষা না হওয়ায় চাষীরা চাষ করতে পারেনি সেইরকম আমিও পারিনি । আরো একবছর কি দুবছর চান্স দেওয়া হোক ভুবন কে । সরকারি উকিলের কথামত জজ সাহেব রায় দিলেন । আপাতত ভুবন ডিগ্রি পেল । মন দিয়ে জমিতে চাষের কাজে লেগে পড়ল । তার পরের বছর কোনক্রমে চাষ করে ধান তোলার জন্য খেতে ধান গাদা করে রাখলে মালিক পক্ষ লোক দিয়ে ধান চুরি ও মাঠের অর্ধেক ধান মাঠেই নষ্ট করে দেয় । সকালে ভুবন গিয়ে দেখে মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ে এবং কাঁদতে থাকে । সে কিছু ভাবলো এবং বুঝতে পারলো এটা কার কাজ । ভুবন ভেবে ছিল থানায় ডায়রি করবে কিন্তু পরক্ষণে আবার চিন্তা করলো ডায়রি করলেও কোন ভাবেই খুব একটা কাজ হবে না কারণ তো বোঝাই যাচ্ছে। মনে মনে হায় তুলে ভুবন গরীবের কেউ নাই গো হে ভগবান ! বাড়ির সারা বচ্ছরের খাবার নষ্ট করে দিল শয়তানরা । এই অন্যায়ের প্রতিশোধ তুমি নিও প্রভু । তোমারই বিচারের আশায় মুখ চেয়ে রইলাম ঠাকুর । ভুবন চুপ চাপ মুখ বুঝে রইল । 


ভুবন তার পরেও নিয়মিত মাঠে যেতে লাগলো। জমিতে সব রকম ফসল লাগিয়ে টেনে টনে চলা সংসারের একটু সুখের মুখ দেখার আশায় ।  

যেখানে যেখানে ভুবনের জমি আছে সেই জায়গায় প্রতিবেশী চাষীদের হাত করে জমির মালিক । ভুবনকে অতিষ্ঠ করে তোলে তারা যেমন, ভুবন রোপা হয়ে যাওয়া ধান মাঠের এক পাশে আপন মনে কাজে ব্যস্ত । নন্দ নিজের মাঠে হাল বাওয়া হয়ে গেলে সেই হাল জুড়ে বাড়ির পথে রওয়ানা দিয়ে ছেড়ে দেয় বা ইচ্ছে করেই ভুবনের মাঠ সোজা করে দেয়। সেই মোষের হাল ভুবনের মাঠের রোপা ধানের ক্ষতি করে এগোই । 


তারপর , গরু চড়ানোর সময় ইচ্ছে করে গরু মাঠে ছেড়ে দেওয়া । তারপর, জমির আল ফুটো করে (যাকে গ্রামীণ ভাষায় গুগাল বলে) দিয়ে জল চোরা পথে বের করে দেওয়া বা লুকিয়ে আল কেটে জল বের করে দিত । এইভাবে ভুবন কে অতিষ্ট করত উমাচরনের হাত করা প্রতিবেশী চাষীরা । অনেক সময় তুমুল ঝগড়া হোত। ভুবনকে চেঁচাতে দেখে আশেপাশের প্রতিবেশীরা মজা নিত ইঙ্গিত করে হাসতো । তারপর ভুবন আপনিই নিজ মনে চুপ করে যেত আর সহ্য করত।


ভুবনের জমির মালিকের নাম উমাচরণ দত্ত । উমাচরণের তিন ছেলে এক মেয়ে । বড়ো ছেলে লাল্টু ,ছোট বিল্টু । লাল্টু আর বিল্টু উমাচরনের মতোই উগ্র স্বভাব পেয়েছে । তারাও বাপের মত ভাবতে থাকে যে দো ফোসলি জমি ডবল দামে কিনতে চাই সনাতন মোড়ল। প্রায় হাফ হাফ লাভ এত বড়ো মৌকা কোনমতেই হাতছাড়া করা যাবে না। লাল্টু আর বিল্টু বাপ উমাচরনের সাথে আলোচনা করে একটা সিদ্ধান্তে এলো ছলে বলে কৌশলে যে কোন উপায়ে ভুবনকে বর্গা থেকে উৎখাত করতে হবে। তাতে আমাদের যা করতে হয় করব । যেমন সোজা আঙ্গুলে ঘি না উঠলে আঙ্গুল ট্যারা করতে হয় ।


এই জমিটি আছে বলে ভুবন তার পরিবারের মুখে দুমুঠো মাড় ভাত তুলে দিতে পারে। মাঝে মাঝে উমাছরণের লোক যায় ভুবনের কাছে যাতে ভুবন রাজি হয়ে যায় জমিটা বেচতে । বর্গাদারের ভাগ যা বটে তার থেকে বেশি দেওয়ারও প্রস্তাব পায় ভুবন তাও ভুবনকে কোন ভাবেই তার সিদ্ধান্ত থেকে একচুলও নড়ানো গেল না। তার সিদ্ধান্তে অটল রইল ভূবন। 

এবছর সরিষা লাগিয়ে ছিল ভুবন ফসল ভালো হয়েছিল মালিকের ভাগ দিতে গেলে ভুবনকে দুর দুর করে তাড়িয়ে দেয় উমচরণের বেটারা। ভুবন ভেবেছিল ফসলের ন্যায্য ভাগ দিয়ে মালিককে খুশি করি যদি সোজা রাস্তায় আসে । কিন্তু না হল তার উল্টো । হুমকি দিল ভুবনকে এবার হাইকোর্টে গিয়ে ফসলের ভাগ দিয়ে আসবি । কিন্তু ভুবনের ভাগ্য সহায় ছিল হাইকোর্টের রায়ও ভুবনের পক্ষেই গেল । উমাচরন দেখলো কোনমতেই কোন কিছু করা সম্ভব হল না দেখে তারা বাপ বেটা মিলে ফন্দি আটলো ভুবনকে এইভুবন থেকে চিরতরে সরিয়ে 

 দেওয়ার ।


 মাঠে চাষ দেওয়ার জন্য খুব ভোরে হাল গরুনিয়ে মাঠে পৌঁছেছিল ভুবন । তখন ভোর প্রায় তিনটে দশ পনেরো ।তখনো ভোরের আলো ফুটতে বাকি ছিল ও অন্ধকার ছিল । পাশের গ্রামের কালু শেখ আর মন্টু মিয়া পিছু নিল ভুবনের । ভুবন জানতেও পারলো না যে দুপেয়ে জানোয়ার দুটো কখন তার পিছু নিয়ে ছিল । হাল আগে চলেছে পিছনে ভুবন । গ্রামের শেষ মাথা সবে পেরিয়েছে সামনে শুনশান ডহর ধরে এগোচ্ছে ভুবন । দুই ধারে ঘন ঝোপঝাড় একটু দূরে লিলি পুকুরের বটগাছ । সেই পুকুরের বট গাছে চেপে ছিল কালু আর মন্টু । সেই গাছের নিচে ভুবন হাল নিয়ে পৌঁছলে তার উপর ঝাপিয়ে পড়ে কালু শেখ আর মন্টু মিয়া । ভুবন দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য ও হতভম্ব হয়ে যায় ।


খানিকক্ষণ পর বুঝতে পারে যে তার ঘাড়ের উপর দুইজন কালো পোশাক পরিহিত দুষ্ট লোক ঝাপিয়ে পড়ে ফলে ঘাড়ে ও কোমরে ব্যথায় যন্ত্রণায় কাতরায় ভুবন । চোখের নিমেষে ঘটে যায় ব্যাপারখানা। দশ পনেরো মিনিট পরে সম্বিত ফিরল ভুবনের । কিছু বলারাগেই ভুবনের মুখ আর হাত পা বেঁধে দিয়ে ছিল কালু আর মন্টু মিয়া। শুধু ভুবনের মুখে গোঙানির আওয়াজ বার হচ্ছিল ভুবনের । অসীম সাহসী ও শক্তি ধর ছিল কালু আর মন্টু মিয়া। তারা ভুবনকে চ্যাংদোলা করে কাঁধে নিয়ে গ্রামের সীমানা পার করে এক কিলোমিটার দূরে একটা ছোট কান্দরের কালভার্ট এ উপস্থিত হয় দুজনে । সেই কান্দরে জল ছিল না । কালু শেখ নিচে মাটি কোপাতে লাগলো। সময় বেশি নাথাকায় তিন চার ফুট গর্ত করে ছেড়ে দিল । কালু শেখের চোখের ইশারায় ভুবনের গলায় হাতিয়ার চালিয়ে দেয় মন্টু মিয়া । তরতরিয়ে ফিনকি দিয়ে ভোরে গরম তাজারক্ত বেরোতে থাকে ভুবনের গলা দিয়ে । সামনের জায়গা একদম রক্তে ভেসে যায়। ভুবন বিস্ফোরিত চোখ দিয়ে কালু শেখ আর মন্টু মিয়া কে দেখছিল । কিছুক্ষণ পর ভুবন নেতিয়ে পড়ল। 

কালু আর মন্টু দুজনে মিলে ভুবনের মৃতদেহকে ধরাধরি করে কালভার্টের নিচে গর্ত করা হয়ে ছিল সেখানে ফেলে দিয়ে মাটি চাপা দিয়ে দেয় । ব্যাস কাজ হাসিল দেখে মন্টু মিয়া ও কালু শেখের মুখে কোণে বাঁকা হাসি ফুটে উঠল।  


চব্বিশ ঘন্টা পেরোতে না পেরোতে একরকম আশ্চর্য হল কালু শেখ । কালু যখনই কোন জায়গায় একা থাকে তখনই একটা গোঙানি কানে আসে । সে ভাবতে থাকে এইরকম গোঙানি তো ভুবনের মুখ থেকে শুনেছিল । মন্টুর ও সেই একই অবস্থা তারা একত্রিত হয়ে আলোচনা করলো । যখন তখন গোঙানির আওয়াজ শুনতে পায় তারা । কালু একজন গরু পাইকারি ছিল । হাটে গরু মহিষ বেচা কেনাও করত ।তাই খুব ভোরে ওঠা অভ্যেস ।সেদিন ভোরে উঠে প্রাতঃকার্য সারতে গিয়ে ছিল কালু । সেদিন বুধবার ছিল হাটবার ছিল । হটাৎ গোঙানি আওয়াজ কানে আসায় কালু একটু ভয় পেয়ে যায় । সে ভাবে প্রতিদিনই এই আওয়াজ সে শুনতে পায় তাই সে আরামসে কাজ সারতে থাকে অত টা গা করেনা। 

কিছুক্ষণ পর তার কিমনে হল পশ্চিম দিকে তাকিয়ে ভাবতে থাকে। মনে হল ঝোপের অন্ধকারের আড়ালে একটা আবছা ছায়ামূর্তি দাড়িয়ে আছে ।


আবছা আলো অন্ধকারে ছায়ামূর্তি টিকে দেখে তার শরীরে শীতল শিহরণ খেলে যায় । সে তাড়াতাড়ি পুকুর থেকে বাড়ির দিকে পা বাড়ানোর জন্য উদ্যত হয়। তার পর কালুর মনে হয় গোঙানির আওয়াজ টা তীব্র থেকে তীব্রতর হতে হতে তারই দিকে এগিয়ে আসছে। কালু তার মনের ভয়টা কাটানোর জন্য হাতে থাকা টর্চ লাইট টা জ্বেলে সেই ছায়া মূর্তির উপর ফোকাস করতেই এক অজানা আতঙ্ক গ্রাস করে নিল তার পুরো শরীর কে । কালুর শরীর ভয়ে ভারী হয়ে এল সে দেখতে পেলো ভুবনকে । তার চোখ দুটি ভয়ংকর লাল ভাটার মত জ্বলতে দেখা যায় আর তার গলা থেকে ছোপ ছোপ করে রক্ত পড়ে সারা শরীর ভিজে লাল হয়ে গেছে। সে কোন মতে চোখ বুজে বাড়ি অভিমুখে যাত্রা করার জন্য ঘুরে দাঁড়ায় কিন্তু কোনভাবে পা ফেলতে না পারায় সে এগোতেও পারে না। ভয়ে সামনে চোখ খুলে দেখে তার সামনেই ভুবন দাড়িয়ে ।


সকাল বেলায় পাড়ার লোক দেখতে পায় কালুর মুন্ডহীন রক্ত শূন্য দেহ টা পুকুরের পাহাড়ের ওপর। মন্টু মিয়ার কানে খবরটা যেতেই এক দৌড়ে পুকুর পারে গিয়ে দেখে আসে কালুর রক্ত শূন্য মুণ্ডুহীন দেহ টা কে । গ্রামের লোক কালু আর মন্টুকে ভাল ভাবেই জানত তাদের আসল পেশা কি ! চোখের আড়ালে রাতের অন্ধকারে মানুষ খুন করা তাদের আসল পেশা । তবে গ্রামের লোক এটাও ভালভাবে বুজে গেছিল এটা কোন মানুষের কাজ হতে পারে না যেভাবে কালু শেখের লাশটি মুন্ডহীন রক্ত শূন্য অবস্থায় পাওয়া গেছিল ।

মন্টু মিয়াও তার দোস্ত কালু শেখের লাশ দেখার পর দিনরাত এক হয়ে গেছিল । না রাতে ঘুম আসে না দিনে শান্তি পায় । খালি মনে হয় বহু দুরে কে যেন রাগত স্বরে গোঙাচছে। এই রকম আওয়াজ সর্বদা শুনতে পেত সে । 


সে নিজেকে সর্বদা ঘরের মধ্যে লুকিয়ে রাখে । একটা অজানা আতঙ্কের মধ্যে ভোগে সে । তার বউ ছেলে তাকে এত বুঝিয়ে পারেনা । সে সবসময় বলে আমি ঘরের বাইরে বেরোলে আমায় সে মেরে ফেলবে । এই ভাবে দিন যায় মন্টুর । সে রাতে নিজেও ঘুমোয় না আর তার জন্য ঘরের কেউ ঘুমোতে পারেনা তার জ্বালায় । এইভাবে দিন কতক পেরোয় ।অবশেষে সে একজন মানসিক রোগীতে পরিণত হয় । এই ভাবে দিন যেতে যেতে বাড়ির লোকের কাছে দুর্বিষহ হয়ে মন্টু । তার বাড়িতে মন্টুকে খুব এক একটা আমল না দিয়ে আর মন্টুর স্ত্রী পুত্র মানসিক রোগী বা পাগল ভাবায় মন্টুকে খুব একটা গুরুত্ব দিত না । নিজের খামখেয়ালিকতাই  যেখানে খুশি মল মুত্র ত্যাগ করত । এর জন্য স্ত্রীর কাছে বেদম মারও খেত। কখনো বাড়ির উঠোনের মধ্যেই পড়ে থাকত বা তার বাড়ির বাউন্ডারির মধ্যে আম গাছের নিচে শুয়ে থাকত । এইরকমই একদিন মন্টু (কালুর মরার একমাস পর) মন্টু সারারাত উঠোনের আমগাছের নিচে শুয়ে ছিল ।সকাল বেলায় মন্টু মিয়ার দেহটা গাছের নিচে পড়ে থাকতে দেখা যায় আর মাথাটা গাছে ঝুলে ছিল । এই ঘটনা দেখার পর গ্রামের লোকের ভয়ভীতি বেড়ে যায়। 

উমাচরণও এসব ঘটনার কথা জানার পর সেও উদ্বেগে ছিল সে ভেবে নিয়ে ছিল এটা নিশ্চয় ভুবনের আত্মার কাজ । বয়স হয়েছে কেন যে এই বুড়ো বয়সে উটকো ঝামেলায় পড়তে গেলাম এই রকম চিন্তা ভাবনার মধ্যে ডুবে ছিল । তার কদিনের মাথায় খবর এল লাল্টুর গাড়ি অ্যাকসিডেন্ট করে রাতের বেলায় । অফিস থেকে ফিরছিল সে গাড়ির স্পীড ছিল ব্রেক ফেল হয়ে ছিল। আগে ডাম্পর দাড়িয়ে ছিল । ডাম্পারের পিছনের মাঝে ঢুকে যায় মরুতি ভ্যান টি । ছাদ টি উড়ে যায় সাথে লাল্টুর মাথাটি নিয়ে । 


 খবরটি পাওয়া মাত্র উমাচরনের হার্ট অ্যাটাক হয় । এযাত্রায় বেঁচে গেলেও শরীরের ডান সাইড হাত ও পা অকেজো হয়ে পরে ।

বিল্টু গ্রামেই থাকত ছোট খাটো ব্যবসা ছিল উমাচরণের সেইসব দেখাশোনা করত সাথে স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তি র টোটাল দায়িত্ব ছিল তারই উপর । তার একটু দুর্বলতা ছিল তা হলো নারী আসক্তি আর মদ্যপান । লাল্টুর মৃত্যুর পর গোটা দায়িত্ব টা তার উপর পড়ে গেছিল তাই একটু শুধরে ছিল । তার কিছুদিন পর উমাচরনের গোটা সম্পত্তি হাতে আসায় বিল্টুর বন্ধু বান্ধব তার সাথে ভিড়ে গেছিল । শুরু হয় আবার আগের মত নারীতে মেতে উঠা । 


কিছুদিন থেকে বিল্টু একটা মেয়েকে দেখছে প্রতিদিন তাকে পূর্ব পাড়ার পুকুর ঘাটে তাকে দেখে হেসে চলে যায় আর পাত্তা দেয়না । ওই পাড়ার একটু দূরে খেলার মাঠ আছে আর তার পাশেই রাস্তা । সেই রাস্তা দিয়ে মেয়েটি পুকুর যায় সেদিন আবার দেখল মেয়েটিকে যেতে । আজ বিল্টু মনে মনে স্থির করে ফেললো আজ মেয়েটিকে ধরেই ছাড়বে । তাই আজ বন্ধুদিকে ডেকে খবরটি জানাল আর তাদেরকে পার্টি দিল । বন্ধুদের সাথে মদ খেয়ে বন্ধুদিকগে বিদায় করে অপেক্ষা করতে থাকে মেয়েটির জন্য । মেয়েটি এই রাস্তা হয়ে পেরোবে। তখন সন্ধ্যে হয়ে অন্ধকার হয়ে গেছিল । তাও বিল্টু অপেক্ষা করেই ছিল তার জন্য । তখনও বিল্টু আন্দাজ করতে পারেনি তার কি হতে চলেছে। নারীত্বের লোভ মহালোভ । এইনারীর নেশায় বুদ হয়ে কত রথী মহারথী রসাতলে তলিয়ে গেছে। 


অবশেষে মেয়েটি আরো আধা ঘন্টা পর এলো । বিল্টু মদের নেশায় মেয়েটিকে দেখে রূপের মাদকতায় হারিয়ে যায় ।তখন ঐ পুকুর পাড়ে খেলার মাঠ জনমানবশূন্য চারিদিক অন্ধকার । বিল্টু খালি একা এমনিতেই গ্রাম্য এলাকা সন্ধার পর এইপুকুর পাড়ে কেউ আসে না। 


একসময় এইজায়গায় বিশাল আমের বাগান ছিল আজ যেখানে খেলার মাঠ। আর পুকুর পাড়ে একডজন বিশাল তালগাছ ছিল ।আমগাছ আর তালগাছ মিলে এত গভীর ছিল যে দিনের বেলাতে সূর্যের আলো প্রবেশ করতে পারত না । এর ফলে দিনেও আঁধার থাকত। এই জায়গায় নাকি দিনে দুপুরে মানুষ ভুত দেখত ।


এইজায়গার বাগানটার নাম শেলো । এইনামে একটা পুকুর রয়েছে এখনও । বাগানটি তো আর নেই কিন্তু তার নাম রয়ে গেছে ।

মেয়েটির পিছু নিল বিল্টু । আগে মেয়েটি পিছনে বিল্টু ।বিল্টুর কোন ভ্রুক্ষেপ পর্যন্ত নেই কোনপথে হাঁটছি ।মেয়েটি যে পথে যাচ্ছে ওই সোজা করে

বিল্টু ও চলেছে। অন্ধকারে বিল্টু উচুনিচু কাঁটা ঝোপ কিছু মানছে না খালি এগিয়ে যাচ্ছে । 


একটু পরে মেয়েটি ঘুরে দাঁড়িয়ে বিল্টু কে দেখল । অপরূপ সুন্দরী বিল্টুকে মধুর হাসির রেখা দিয়ে ভালোবাসার ইশারা করে ডাকতে লাগলো । "এসো বিল্টু এসো, আরো একটু এগিয়ে এলেই তুমি আমায় ছুঁতে পারবে চলে এস সোনা" বিল্টু আরো একটু এক থেকে দুপা নিতেই গভীর পাথর খাদানে পড়ে যায় । তখনই অপরূপ নারী মূর্তি পুরুষে রূপে রূপান্তরিত হয় আর তখনই রাগে গোঙাতে শুরু করে । আর ওই মূর্তি আর কেউ নয় স্বয়ং ভুবনের আত্মা ছিল। 


সকালে ঘুম থেকে উঠেই ওই বদ্যকর পাড়ারই একজন ভোরে ভোরে কাজ সারতে যায়। সেই বিল্টুর মাথাটি থেতলে যাওয়া রক্তাক্ত বিল্টুর দেহটা প্রথম দেখে তারপর গোটা গ্রাম্য রাষ্ট্র হয়ে যায় খবরটি । 


উমাচরনও খবর টি পেয়ে তার বাম দিকটি চিন চিন করতে থাকে ।ভাবতে থাকে তার বংশের বাতি জ্বালানোর কেউ রইল না শেষ প্রদীপ ছিল বিল্টু সেও চলে গেল । উমাচরণএমনিতেই সে জীবন্ত লাশ হয়ে ছিল বিল্টু মরে যাওয়ার পর তার আর বাঁচার তাগিদ কমে যায়। দুই তিনমাস প্রচণ্ড কষ্ট যন্ত্রণা অবশেষে তারও মৃত্যু ।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Horror