Neha Ruidas

Horror Thriller

3  

Neha Ruidas

Horror Thriller

অবিনাশ পুরের রহস্য সন্ধানে।

অবিনাশ পুরের রহস্য সন্ধানে।

5 mins
166



   প্রথম পর্ব 


আমার নাম সুনীল, মানে সুনীল দাস , বাড়ি নিবারণপুর ,আমার একটা খুব বাজে নেশা আছে যেটা হলো অজানা কে জানার শখ বা ইচ্ছা । অন্য একটা পেশাও আছে বটে ,যেটা হলো ডাক্তারি,একটা চেম্বার ও আছে গ্রামের মধ্যে । গ্রামের চেম্বার বুঝতেই পারছেন ,গ্রামের বেশিরভাগ মানুষই গরীব ।সেরকম টাকাপয়সা ও নেই মানুষের হাতে । তারপর এবছর ভালো বর্ষাও হয়নাই তাই চাষও হয়নি। মানুষের ধান্দা বা ইনকাম বলতে এমন খুব একটা নেই বললেই চলে । মানুষের দুর্গতির শেষ নেই।

 সামনে বর্ষার জন্য কোথাও বেরুতে পায়নি ,একটু ব্যাস্ত ও ছিলাম ,।  

একটা কথা বলি , আমার সম্বন্ধে আরো একটু জানার দরকার আপনাদের , পরিবারে মা ছাড়া আমার বলতে এমন কেউ নেই । বাবা ছিলেন চাকুরী জীবি , সেই সুবাদে বাবা দোতলা বাড়ি টি করে গিয়েছিলেন । পড়াশুনার গণ্ডি কবেই পেরিয়ে এসেছি , চাকরি বাকরি তো কিছুই পেলাম না তাই এই ডিসপেনসারি , টুকটাক কোনরকম চলে যাচ্ছে । তারপর গ্রামের যেকোন সমস্যার সমাধানও করে থাকি ,এইজন্য মানুষ আমাকে খুব ভালো ও বাসে এইভাবে জীবনটা কোনরকম চলে যাচ্ছে।


এবার আসি আসল কথায় , বিশাল আমার ছোট বেলার বন্ধু ,স্কুল ফ্রেন্ড । একদিন আমায় ফোন করলো ,একটা কাজ আছে , মানে ঝাড়খণ্ডের একজায়গায় যেতে হবে , অবিনাশপুরে । অবিনাশ পুর বিশালের মামার বাড়ি ,তার মামার দুই ছেলে কাঞ্চন ও নিরঞ্জন । 

ফোন করে যেটা বললো বিশাল ,কাঞ্চন নিয়মিত পাশের গ্রামে টিউশন পড়াতে যায় ,কোন কোন দিন সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত ও হয়ে যায় বাড়ি ফিরতে ।একদিন বাড়ি ফিরছিল টিউশন পড়িয়ে ,রাস্তায় আসছিল তখনই সে গায়েব হয়ে যায় তার পর সারা রাত নিখোঁজ ছিল ।বাড়ীর লোক রাতে খোঁজাখুঁজির করে তার সাইকেল টি উদ্ধার করলেও তার খোঁজ পায় নি । সকালবেলায় তাকে অচৈতন্য অবস্থায় পাওয়া যায় একটা পোড়ো বাড়িতে । তারপর থেকে সে আজব কীর্তি কলাপ করতে থাকে ,যেমন একা একা নিজের মনে কথা বলা ,নিজেই নিজের মনে বলে উঠে ,নরবলি চাই নরবলি চাই এইরকম । বিশাল বললো কাল আসছি গাড়ি নিয়ে তোমাকে নিতে রেডি হয়ে থেকো ।পড়ে কথা হবে সামনা সামনি ঠিক আছে ,রাখছি ।

বিশাল এলো গাড়ি নিয়ে সকাল নয়টা সময় ,যথারীতি গাড়িতে বসলাম । যে রাস্তা দিয়ে আমরা গাড়ি নিয়ে যাচ্ছি ,সে রাস্তা এখান থেকে কুণ্ডহিত ,কুণ্ডহিত থেকে বামদিকে সোজা একটা রাস্তা গেছে  ,ডানদিকে দুমকা । বামদিকে রাস্তা দিয়ে সোজা  অবিনাশ পুড়ে পৌঁছলাম বেলা দুটো সময়।

গ্রামে ঢুকেই যেটা দেখলাম গ্রামের খুবই সুন্দর দৃশ্য ।গ্রামের দুই পাশে দুটো পাহাড় ,পাহাড়ের কোল ঘেঁষে একটা ছোট্ট নদীও বয়ে গেছে ।সামনে একটা প্রাইমারি স্কুল ,স্কুলে একটা বাগান দেখতে পাচ্ছি তার মধ্যে কিছু আমগাছ আর মহুল গাছ ,মুগ্ধকর পরিবেশ ।

সোজা গিয়ে উঠলাম বিশালের মামার বাড়িতে । বাড়িতে একটু ভীড় এবং কিছু মানুষের কোলাহল । বারান্দায় চেয়ারে বসে বিশালের মামা ,দাদু, বিশালের ছোট মামা ।আমাকে বসতে বললো ,বসলাম তারপর সব কথা খুলে বললো।

 

।চলো বিশাল তোমাদের গ্রামটা ঘুরে দেখাও ,দেখলাম বিশাল অন্য মনস্ক হয়ে বললো ,হ্যা চলো ।

সেই স্কুল ,সেই বাগান তাপর নদী ।বিশাল কে বললাম ,আরকিছু দেখার আছে তো চলো ,

আমাকে নিয়ে বিশাল এগিয়ে চললো পূর্ব দিক করে ,আমি চলে চলেছি সেই জায়গাটার খোঁজে যেখানে থেকে কাঞ্চন নিখোঁজ হয়ে গেছিলো 


।বিশাল কে জিজ্ঞাসা করলাম ,সেই জায়গাটা কোথায়!, বিশাল বললো ওদিকে কেউ খুব একটা

 যাই না ,তবে আমরা যাবো ,আমাদেরকে যেতেই হবে ,আমি বললাম ভয় কি আমি তো আছি তুমি শুধু ঐ জায়গাটা আমায় দেখিয়ে দাও ।

এগিয়ে চললো বিশাল ,কিছুদূর গিয়ে একটা বটগাছ পেলাম ,এখানেই নাকি কাঞ্চনের সাইকেলটা পড়ে ছিল । ভেতরে দিক করে একটা মেঠো রাস্তা চলে গেছে,কিছুদূর গিয়ে একটা সুন্দর চাতাল ।চাতালের পুবে সেই ভয়ানক পোড়ো বাড়িটা দেখলাম ,তারপর ডান দিকে ছোট পুরনো ভাঙ্গা মন্দির ,মন্দিরের ভেতরে একটা দেবী মূর্তি, তবে মূর্তিটি কোন দেবীর সেটা বোঝা গেলো না ।তবে জায়গাটা অপরূপ সুন্দর। দেখে বোঝা যায় এই দেবীর এখনো পুজো অর্চনা হয় । একটা হাড়ি কাঠ দেখলাম রয়েছে ,দেবীর উদ্যেশ্যে বলিও হয়। দেবী আকারও দেখছি ভয়ানক ।দেবীর সম্মুখপানে বেশিক্ষণ তাকানো যাচ্ছে না ,তাকালেই মনে হচ্ছে সম্মোহিত হয়ে শরীর অবশ হয়ে আসছে ।কিছুক্ষনের মধ্যে একটা হি হি করে হাসির আওয়াজ পেলাম,কে যেনো আস্তে করে বলছে আমার নরবলি চাই ।আওয়াজ শুনে মন্দিরে ভেতর থেকে একেবারে ঠান্ডা শীতল বাতাস আমার গায়ে এসে লাগলো ।আমি যেটা বুঝলাম এই মুহুর্তে মন্দির থেকে চলে যাওয়াটা সমীচীন । 

বিশাল কে বললাম ,এদিকে কোন মানুষ বা আদিবাসী গ্রাম আছে ? বিশাল বললো হ্যা একটা আদিবাসী গ্রাম ছিল ,সে গ্রাম এখন প্রায় নিশ্চিন্য ।এই দেবির অভিশাপে এক এক করে সবাই মারা যায়।  বিশাল কে বললাম কোন পুরোহিত পূজা করে, সে তো বললো সম্ভত আদিবাসীরা বহুকাল আগে পূজা করে আসতো ।এখন শোনা যায় পূজা করার কেউ নেই ।দেবী ও অভিশপ্ত তাই ভয়ে এইদিকে কেউ আসে না

একটু দূরে সেই নদীটি বয়ে চলেছে ,নদীর দিকে যাবার পথে একটা আস্তানা বা ছাউনী দেখতে পেলাম ।কেউ না কেউ তো এখানে আসে, মানুষ থাকার লক্ষণ স্পট। পোড়ো‌বাড়ী‌ টা একবার দেখা যাক চল ,গিয়ে দেখলাম কোনকালে ভালো ভাবে মানুষের বসবাস ছিল । জমজমাট ভাবে পুজা টা হতো।

আরো একটা।কথা বলা হয় নি ,আমি সুনীল আমি পেশায় ডাক্তার কিন্তু মানুষের কিছু সমস্যার সমাধান করে থাকি ।বলবেন কি করে করেন, তাহলে বলবো ,আমার যখন জন্ম হয় ছিল তখন আমার কপালে অপরূপ আলো রেখা ফুটে উঠেছিল ,যেটা ডাক্তাররা দেখে অবাক হয়ে ছিল ।আমার জন্ম হবার আগে আমার মাকে এক সাধু বলে ছিল ,তোমার পেটে যে জন্ম নিতে চলেছে সে কোন সাধারণ বাচ্চা নয় ।সে হবে হাজারে মধ্যে এক ,তার কি না অলৌকিক ক্ষমতা থাকবে ।


এবার আসি মূল প্রসঙ্গে ,আমি এখানে এসে যে টুকু বুঝলাম সমস্যার সমাধান হতে খুব বেশি সময় লাগবে না, এইসব চিন্তা ভাবনায় ব্যাস্ত ছিলাম,  তখনই দেখলাম বিশাল ভয় পেয়ে বললো, সুনীল দা এখানে আর বেশিক্ষণ থাকা চলবে না ,সন্ধ্যা প্রায় আসন্ন ,একটু পরে রাত ও হবে তখন আমাদের বিপদ হতে পারে । বেশ চলো তবে, আরো একটা কাজ আমার বাকি থেকে গেলো সেটা হলো আদিবাসী গ্রামটা সকালে একবার ঘুরে দেখতে হবে ।

বিশাল এর মামার বাড়িতে আসতে রাত হয়ে গেলো ।বিশালের বড়মামা জিজ্ঞাসা করলেন  কিছু বুঝতে পারলেন সুনীল বাবু ? 

সুনীল চুপ করে থাকে কিছু বলে না !

বড়ো মামা , এতক্ষণ আপনারা গিয়ে ছিলেন তা কিছু বোঝা গেলো সুনীল বাবু ,কিছু তো বলুন ।

সুনীল, বলবেন তো আপনি !

বড়মামা,  আমি , আমি কি বলবো 

সুনীল, আপনারই জন্যই ত আপনার ছেলে আজ মৃত্যুর মুখে ।

বড়মামা, আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না কি বলতে চাইছেন ।

সুনীল ,  আপনার দেশের বাড়ি কোথায় ?

বড়মামা , বীরভূমের খয়রাশোল ।

সুনীল, আবিনাস্পুরে কতদিন এসেছেন ?

বড়মামা, চল্লিশ পঁয়তাল্লিশ বছর আগে।

সুনীল , কি সূত্রে এখানে আগমন এখানে ?

বড়মামা , ফরেস্ট এর চাকরি সূত্রে এখানে আসা ।

সুনীল , এবারে কি কিছু মনে পড়ছে না কি আরো কিছু মনে ঝালিয়ে নেবেন , না আমিই সব খুলে বলব।

বড়মামা , বলতে শুরু করলো, আমি সস্ত্রীক পরিবার সমেত এখানে চলে আসি চাকরি সূত্রে ,আমার বয়স পঁচিশ কি ত্রিশ হবে । আমার ডিউটি ওই আদিবাসী জঙ্গলে তখন 

চলবে,। 

(কেমন লাগছে বলবেন) 


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Horror