অভাগার আর্তনাদ
অভাগার আর্তনাদ
-রাতের বেলা কল দিলাম আমার টাকা লাগবে,,
-মা বলল ভাইয়া একটু অসুস্থ,,
-আমার টাকা লাগবে এই মাসের মেচ বিল বাকি একটু রাগ করে (কল কেটে দিয়ে চলে গেলাম ক্রিকেট খেলতে, নাইট খেলা ছিল সারারাত খেলে ৩ টার দিখে বাসায় এসে মোবাইল অফ করে ঘুমিয়ে পড়লাম,,)
-ঘুম ভাঙলো বেলা ২ টায়,। ফ্রেশ হলাম নাস্তা করলাম মোবাইল হাতে নিলাম সন্ধ্যা ৬ টায় সাথে সাথে বোনের কল,,
আমি কলটা রিচিভ করেই বললাম,,
-আম্মাকে বল আমার টাকা আসেনি,,
মোবাইলের অফর পাশ থেকে উত্তর আসলো,,
-ভাইয়া আর নেইরে ভোরে মারা গেছেন,,
তকে এতবার কল দিলাম তর ফোন অফ ছিল আসরের নামাজের পর জানাযা হয়েছে ভাইয়া তুই তাড়াতাড়ি বাসায় আয়,,
ততক্ষনাৎ মনেহলো পৃথিবীটা কেমন জানি নিরব হয়ে গেছে,,
মদ,গাঁজা,আফিম,বোফাম,স্টিক,মারিজুয়ানা,এইসব নিয়েই আমি থাকি এক কথায় লাস্ট বেঞ্চার,,
কিন্তু রেজাল্ট ভাল হতো,,
কিছুটা সময় হলেও মনোযোগ দিয়ে পড়তাম মাস শেষে ভাই কটা টাকা বেশিই দিতো,,
--বাড়িতে পৌঁছাতেই দেখি,,
বাড়িতে মানুষজনে গিজমিজ করছে রাস্তাটা ঠিকটাক,উঠানের ভাইয়ার হাতের পেঁপে গাছটাও আছে,বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে দেখলাম কিছুই বদলায়নি,,
কিন্তু বদলে গেছে আমার মায়ের ভাষা,আমার বোন জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলল -ভাইয়া আমাদের ছেড়ে চলে গেছেরে,,
আম্মা ফ্যালফ্যাল করে বলছিলো বাপরে তকেতো জীবনে কিছু বলনি,
আজ বলছি,,আমার খোকাকে এনে দিবি,
আমার খোকা অন্ধকারে ভয় পায় ওরা সবাই রাস্তার পাশে রেখে এসেছে,,
আমার খোকাকে এনে দেনারে বাপ,।
-বোন বলতে থাকে কত করে বললাম ছোট ভাইয়া আসুক কিন্তু কেউ শুনেনি,ওরা মেজু ভাইয়াকে নিয়ে গেছে,,।
-মা আবার হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে বলতে শুরু করলো,,
আমার খোকাটা এত ছোট জায়গায় থাকতে পারবে না,,অন্ধকারে ভয় পাবে,,।
একটা মোমবাতি নিয়ে আমি কবরের পাশে দাঁড়িয়ে দেখছি আর ভাবছি ওই মাটির নিচে শুয়ে আছে আমার ভাই,,
আজ আমায় একটুও কেউ বকেনি,,
আব্বা বেঁচে থাকার পরেও মনেহলো আমি যেন এতিম হয়ে গেছি,,
আমি এতটা অভাগা ভাইয়ার মুখটাও দেখতে পারলাম না,,
শূন্যতা আমায় ঘ্রাস করছে,এতক্ষন একটুও কাঁদিনি,,,
কিন্তু হঠাৎ কেমন জানি কাঁন্না পেতে লাগলো,,
-আর কেউ গ্রামের বাড়িতে আসলে,,
দেড়ি করে ঘুম থেকে উঠলে আর বলবে না এত সময় কিসের ঘুম,,
-শাসন শেষে ছোট ভাই বলে কাছে ডেকে কেউ নিবে না,।
-এই কথাগুলো ভাবতে ভাবতে
ভয়ানক একাকিত্ত্ব আমায় ঘ্রাস করে নিয়েছিল।
-অত:পর মনেহলো ভাইয়াটা সারাজীবন কষ্টই করে গেল,,
ভাইয়াটা খুব বোকা ছিল,,
নিজের কষ্টের টাকা আমাদের দিয়ে দিতো মাঝে মাঝে মাকে বলতো,,
আম্মা,,আমাদের কষ্টের দিন থাকবে না,,
আমার ভাই বোন,একদিন অনেক বড় অফিসার হবে,।
হাতের মোবাইল ফোনটা হাতে নিতেই দেখলাম
-মেসেজ ৬ হাজার টাকা বিকাশে এসেছে,,
(৬ মাস পর)
আজ কুরবানীর ঈদ -ভাইয়ার খুব পছন্দ ছিল গরুর মাংস,,
আজ ভাইয়ার পছন্দের গরুর মাংস রান্না হয়েছে,,
সবাই যখন খেতে বসেছি
-আম্মা তখন,,একটা প্লেট বের করে পাশে দিয়ে রাখলো আর বললো এটা আমার মেজু খোকার,,।
বলেই আম্মা আমায় জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে দিলো,,
আবার বলতে লাগলো,,
বাপরে তুই কী পারবিনা আমার খোকাকে এনে দিতে,,
না খেয়ে চলে আসলাম ভাইয়ার কবরটার পাশে,,
-বৃষ্টি হচ্ছিলো দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে চোখ দিয়ে কান্না জড়ছিলো আর মনেমনে বলতে থাকি আমি এতটাই অভাগারে ভাইয়া,,
তোমার সাথে শেষ কথাটা আমি বলিনি শেষ দেখাটা দেখিনি,,,
ভাল থাকিস ভয় পাবিনা একদম,,
আমি ভাল হয়ে যাবো তুমি অন্ধকারে ভয় পেয়ো না,,
আমি তোমার জন্য কোরআনের আলো জ্বালিয়ে রাখবো,,।
শেষ কথা হয়নি শেষ দেখা হয় নি,,
দেখা হবেরে ভাইয়া,,
হাশরের ময়দানে এই অভাগার সাথে...