ছায়া
ছায়া
খুব লক্ষ্মীমন্ত, সুশীলা,লজ্জাবতীলতা হতে চেয়েছি;কিন্তু হয়ে পড়েছি লাগামছাড়া, নারীবাদী, ঠোঁটকাঁটা,বিবাগী,অসতী।।মেকি ভদ্রতায় আর কুলোয় নাঠিক পোষায় ও না আমার।একবিংশের নারী হয়ে পুরুষতন্ত্রের আঘাতে আজ আমি জর্জরিত।আমার সেই জন্মলগ্ন থেকে অনেকগুলো ‘না’ এর মধ্য দিয়ে আমাকে প্রতিনিয়ত বেড়ে উঠতে হয়েছে। হয়ে উঠতে হয়েছে না- রী;হয়তো আমার জন্মটি ও এই পুরুষতান্ত্রিক সমাজে খুব বেশী কাঙ্খিত ছিলো ও না।লিঙ্গ কে কেন্দ্র করে ভ্রূণহত্যার মতো অনিশ্চিত মৃত্যুসে ও আমাকে টেনেছে বহুবার।আমার কোনো অভিযোগ নেই আছে কিছু কৌতুহল,কিছু প্রশ্ন!রাজা-প্রজা,ধনী-দরিদ্র সবই বিধাতার তৈরি,তবে কেন এই আমাকেই শৃঙ্খলিত হতে হলো?কেন আমি নিজের সত্ত্বার অধীন হতে পারলাম না?কেন আমি দাসী থেকে ঠিকঠাক পুরোদস্তুর মানবসত্ত্বা হতে পারলাম না?অনেকগুলো ‘না’ আমাকে কেন গিলে খেলো?কেন?জানি!এসব চিন্তার দ্যোতনা ও ভারী অপরাধ আর মিছে ও মনে হয়,যখন আমি রোজ খাবার খাই,রোজ ঘুমোয়,রোজ স্বপ্ন দেখি।আমি তো ভালোই আছি,অন্তত এই পুরুষতান্ত্রিক কলুষিত সমাজে নারী হয়ে ঠিকঠাক শ্বাসপ্রশ্বাস নিচ্ছি।এই তো ঢের!অতোশতো অনুযোগ আমার থাকা কেন?তবুও রাস্তায় যখন বের হই-তখন অসংখ্য নোংরা চাহনি,হীন মানসিকতা আমায় বুঝিয়ে দেয় আমি কোনো মানুষ নই।আমি স্রেফ একটা কথা না- বলাপ্রতিবাদ না-করা মেয়েমানুষ।অসংখ্য অপবাদ,বৈরি উপদেশ, ভর্ৎসনা,টিপ্পনী আমার রোজকার টনিক।এই সমাজ আমাকে বুঝিয়ে দেয়আমি হাজার হাজার বছর ধরে ক্রমাগত ক্ষয়ে যাওয়া একটা অবকাঠামো,গঙ্গার অববাহিকা কিংবা নরম মাটি।শক্তিমানের আইন আমাকে আজো কথা বলতে দেয় না,পীড়ন করে মানসিক ও শারীরিক ভাবে।কিন্তু আমার মনেও তো মানুষ হয়ে উঠার ইচ্ছে হয়!হয় না?আমার ও তো বাধাহীন,ভয়হীন, ইচ্ছেস্বাধীন কেউ হয়ে বাঁচতে সাধ হয়।কিন্তু,কিন্ত গুমড়ে উঠা বিষাদ আর অব্যক্ত কথা নিয়ে আমি অপ্রকাশিত থেকে যাই।আমি নদী হয়ে যাইমাটি হয়ে যাইপ্রকৃতিও হই।কেবল মানুষ হতে পারি না।তাই হয়তো, আজকাল আমার দুঃখ ছায়াবৃত হয়েছে।আর আমি হয়েছি ছায়াসন্ন্যাসিনী নিয়মমাফিক সর্বংসহা না-রী।