ডাইরির সেই পাতা গুলো
ডাইরির সেই পাতা গুলো
সেদিন দরজার কাছে গিয়ে জানতে পারি আম্মু আর আব্বু নাকি ভূবনেশ্বর যাবেন। কথাটা শুনেই কেমন একটা মন খারাপ হয়ে গেল। বুঝতে পারলাম আম্মুর শরীরটা দিন দিন খারাপ হয়ে যাচ্ছে। তবে এখন যাবেন না। আমার ফাইনাল এক্সাম এর পর। আর ভালো লাগলো না তাই ওপরে চলে এলাম নিজের রুমে। তারপর geography টিউশন থাকায় চলে এলাম। টিউশনে যাবার জন্য অমৃতা ডাকতে এলো। (অমৃতা আমার খুব ভালো ফ্রেন্ড। যদিও আমদের স্কুলে পড়ে না। কাছাকাছি এক গ্রামের স্কুলে পড়ে। তবুও টাউনে থাকে আর খুব ভালো ফ্রেন্ড আর খুব ব্রিলিয়ান্ট পড়াশোনায়।) । দিয়ে চলে গেলাম টিউশনে।
এদিকে অ্যানুয়াল পরীক্ষাও এগিয়ে এল। পরীক্ষা মোটামুটি হল । তারপর আব্বু-আম্মুরও ভূবনেশ্বর যাওয়ার সময়ও এগিয়ে এল। জানতে পরলাম আমার ছোটো চাচাও যাবে।
দিনটা ছিল শনিবার Life Science টিউশনের পর নোট xerox করার সময় মনে হল আব্বু-আম্মুর সাথে যাবার আগে দেখা হবে না। দিয়ে অমৃতা আর লালা বলল মন খারাপ করিস না । এই তো আর একটু বাকি আছে। দিয়ে কাজ শেষ হয়ে তারাতারি ফিরে এলাম বাড়িতে। বাড়িতে ফিরে দেখি আম্মু-আব্বু রেডি হয়ে গেছে। ওনাদের দেখে মনটা বড়ো খারাপ হয়ে গেল। সব থেকে বেশি খারাপ লাগল বোনের মুখটা দেখে। কোনো দিন আব্বু-আম্মুকে ছাড়া থাকেনি। তাই ওর মুখটা সব থেকে গোমড়া হয়েছিল। আম্মু চোখটাও ছলছল করে উঠল। বাড়িতে বাকি সব ভাড়াটেরা চলে গেছে। শুধু ম্যাম ছাড়া। তখন ম্যাম ও চলে এসেছেন স্কুলের কাজ শেষ করে। ওনি আম্মুকে বললেন --
---- দিদি মন খারাপ করো না। আমি তো আছি নাকি। আমি দেখে রাখব ওদের।
মা বলল --
---- জানো আরেশা আমার আর তোমার স্যারের জান হচ্ছে ওরা দুজন। সানা আমাদের থেকে দূরে আমাদের দু-জনকে ছাড়া থাকলেও সাইরি কখনো আমাদের কাছে থাকেনি। ছোটো কারোর সঙ্গে কখনো মানিয়ে চলতে পারে না। ওকে নিয়ে আমার বড়ো টেনশন হয় জানো। বড়ো ওকে সামলে উঠতে পারে না। সানা হচ্ছে শান্ত ধাচ্ছের চুপচাপ যে সবার সাথে মানিয়ে নীতে পারে কিন্তু সাইরিকে নিয়ে বড়ো চিন্তা হয়। একটু সামলে নিবে। খেয়াল রাখবে যেন মারপিট না করে দেখেছো তো আমরা থাকলেই সাপে-নেউলে লেগে যায় আর না থাকলে কী করবে।
ম্যাম বললেন --
---- চিন্তা করো না দিদি আমি আছি তো। আর সানা তো শান্ত। আর ও তো বেশির ভাগ সময়ই
টিউশান নিয়ে বিজি্ থাকবে। আর সাইরি বাচ্চা। তুমি এতো চিন্তা করো না তো। আল্লাহ র নাম নিয়ে বেরিয়ে পড়ে।
আর কিছু বলতে যাবে তখনই আব্বু ডাক দিল এবং জানাল টোটো চলে এসেছে। ওনাদের এখুনি বেড়িয়ে যেতে হবে।
নীচেরতলার বারান্দাতে দাড়িয়ে নিঃশব্দ চোখের জল ফেলছিলাম আমি। যাবার সময় আম্মুর চোখটা ছলছল করে উঠল। নানু( নানিজান) এসেছিলেন আমাদের দেখভাল করার জন্য। ওই মুহূর্তে কাউকে দরকার ছিল । আমি নানুকে জরিয়ে ধরে ছিলাম। একফোটা জল চোখের কার্নিশ বেয়ে গতীয় গেল। ওদিকে আব্বু-আম্মু চলে গেছে স্টেশনের উদ্দেশ্যে। আর বুনু ম্যামের হাত ধরে দাড়িয়ে ছিল। দিয়ে বড়ো গেট লাগিয়ে ম্যাম এগিয়ে এসে বললেন --
---- সানা মন খারাপ করো না। শুধুমাত্র সাতটা দিনই তো। ও দেখবে আসতে আসতে পেরিয়ে যাবে। এখন চলো চলো লাঞ্চ টাইম হয়ে গেছে।
আমি বললাম --
---- হুম । বুনু চল খেয়ে নিবি।
এটা শুনে বুনু বলল --
---- আমাকে খাইয়ে দিবি। আমার নিজের হাতে খেতে ইচ্ছা করছে না।
ম্যাম ব্যাপারটা দেখে হেসে ফেললেন। এটাও বুঝতে পারলেন যতই ঝগড়া করুক না কেন আমার সাথে। দিন শেষে সেই আমার কাছেই আসে।
সে যাই হোক ওকে খাইয়ে দিলাম তারপর ঘুম পাড়িয়ে দিলাম।
দেখতে দেখতে সাতটি দিন কেটে গেল। এই কয়েকটি দিন পেরিয়ে গেল। ম্যাম এই কয়েক দিন একেবারে আগলে রেখেছিলেন আমাকে। কোথায় যাচ্ছি না যাচ্ছি সব খেয়াল রেখেছিলেন। তারপর দেখতে দেখতে কেটে গেল আরো দু সপ্তাহ । চলে এলো পরীক্ষার রেজাল্টের দিন। সেদিন