ডাইরির সেই পাতাগুলো
ডাইরির সেই পাতাগুলো
দিনটা আর পাঁচটা দিনের মতোই স্বাভাবিক ছিল। ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময় শীত যাবে আর বসন্ত আসবে এমন একটি সময়। সত্যিই যেন সেদিন বসন্ত আমাদের ঘরে চলে এসেছে। সকাল থেকে পাখিদের কলরব শোনা যাচ্ছে। সবাই বলে উঠছে --- ' বাতাসে বহিছে প্রেম, নয়নে লাগিল নেশা,
ঝরাপাতা উড়ে বলে--
বসন্ত এসে গেছে, বসন্ত এসে গেছে... '
আজকের অনুভূতিটাই আলাদা ছিল। বাড়িতে প্রথম বিয়ের দেখাশোনা। তাও আবার নিজের ম্যামের। সে যাই হোক আজ বেশ ভোরে ঘুমটা ভাঙল। তো যাইহোক খাঠ থেকে এক ঝাপে নেমে পড়লাম । দিয়ে ব্রাশ করে সোজা ব্যালকনিতে চলে এলাম। বেশ ঠান্ডা হাওয়া দিচ্ছিল।
আমার রুমটা ছিল সিড়ির পাশে যার জন্য উপরতলার সদর-দরজা আর কাঁচের জানালা দেখা যায়। ওখানে দাড়ালে ভিতরে কী চলছে সেটা স্পষ্টভাবে যে কেউ বুঝতে পারবে। ওখানে দাড়িয়ে দেখলাম ম্যাম উঠে পড়েছেন। ওনা দেখেই বললাম---
----- মর্নিং ম্যাম।
তখন ওনি বললেন----
----- মর্নিং সানা। কি ব্যাপার আজ দাদা আসবে বলে তাড়াতাড়ি উঠে পড়েছো!!
----- না ম্যাম এই যাস্ট ঘুমটা ভেঙে গেল। তাই উঠে পড়লাম।
---- তাই! তোমার মতো ঘুমকাতুর মানুষেরও দেখি সকালে ঘুম ভাঙে তাহলে। যদিও আমি নিজেও করে
খুব ঘুম কাতুর তোমাকেই আর কি বলি বলো!!!!
আচ্ছা যখন ঘুম ভেঙেছে তখন তড়িৎ চেপ্টারটা শেষ করে নাও। যাও যাও।
-----হুম যাই। (চলে এলাম রুমে)
ব্যাস হয়ে গেল। কি আর করার লাইফটাই বিচ্ছিরি। পড়াশোনা যেন আমার পিছনে চিপকু আঠার মতো লেগে থাকে। যেখানেই যাই না কেন এর থেকে মুক্তি নাই।
আমি ঘরে তো গেলাম কিন্তু পড়ায় মন বসলো না।ভাবতে লাগলাম ম্যামের যদি সত্যিই আরিয়াল ভাই-এর সাথে বিয়ে হয় তবে ম্যাম থেকে হবে উনি আমার ভাবি হবেন। ইয়ে ইয়ে, খুশিতে লুঙ্গি ড্যান্স করবো আমি।
এবার বলি আরিয়াল ভাই-এর সাথে আমার সম্পর্ক। আরিয়াল ভাই-এর বোনের হাসবেন্ড হল আমার মায়ের দূরসম্পর্কের ভাইপো।(বোহুত বড়ো সম্পর্ক😁🥴 )। তার মানে ওনি ভাবিই হবেন। এছাড়াও আরিয়াল ভাইয়া আব্বুর স্টুডেন্ট(😪)।
হঠাৎ আম্মুর ডাকে ভাবনার জগৎ থেকে বেরিয়ে এলাম। আম্মু খেতে ডাকছিল। গেলাম ব্রেকফাস্ট কম্প্লিট করলাম। দিয়ে আম্মু বললেন যা স্নান করে কিছুক্ষণ পরে দাদারা চলে আসবে। আতো সকালে স্নান করে নিলাম দিয়ে ঠান্ডায় জুবুথুবু হয়ে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এলাম। সঙ্গে সঙ্গে একটি হাচি দিলাম। এটা দেখে আব্বু আম্মুকে বললেন----
-----এতো সকালে ওকে স্নান করতে বললে কেন??
এক্ষুনি ঠান্ডা লেগে যাবে তো।
-----কিছু হবে না। গেস্ট আসলে দেখবে ওর হাঁচি কমে গেছে।
-----মা হা-হাঁচিইই গরম জল দাও না হাঁচিইইইই। (মা বললাম)
----- যাও ওকে গরম জল দাও।
----- আয় তোকে গরম জল দি নয়তো তোর পাপা আমার মাথা খারাপ করে দেবে।
----- পাপা আমাকে ওষুধ দাও না। তারাতারি ঠিক হয়ে যাবে।
---- হুম আয় তোকে ওষুধ দি। নয়তো আবার বেড়ে গেলে পড়াশোনা করতে চাইবি না।
---- চলো। ( এই বলে রুমে গিয়ে ভাবতে লাগলাম আবার পড়া। ভাই এই পড়া কবে আমার পিছন থেকে ছাড়বে !!!)
দেখতে দেখতে দাদারা চলেই এলো আমাদের বাড়ি। সব কুশলাদি বিনিময়ের পর । এবার টাইম এলো ম্যামকে আনার। মা ম্যাম কে একবার ফোন দিলেন এবং বললেন নীচে আসতে।
উনি নীচে নেমে এলেন একটি মিষ্টি রঙের সালওয়ার কামিজ পড়ে। ওনাকে একটা জ্যোৎস্নার রাতের স্নিগ্ধ চাঁদের মতো কিংবা সদ্য ফোঁটে ওঠা শিশিরে ভেজা ঘাস ফুলের মতো লাগছিল। তাকে দেখার পর মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে পড়েছিল দাদা। তখনই ম্যামও তাকালেন ওনার দিক। এই সময়টাই হয়ত ছিল সেই মূল্যবান সময় যা ক্ষণস্থায়ী হলেও এর প্রভাব অনেক প্রগাঢ়ছিল। ব্যাস কিছুক্ষণই হয়ত সময়টা ছিল কিন্তু তার মধ্যেই মানুষ দুটির দু জোড়া চোখ হয়ত একে অপরকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছিল যে তারা কতটা তৃষ্ণার্ত। তারা কতটা সময় ধরে নিজেদের পরিপূরককে খুঁজেছে কিন্তু পাইনি তবে আজ পেয়েছে।
তখনই মা জলখাবার নিয়ে ঘরে ঢুকল। আর মায়ের ঘরে ঢোকার আওয়াজে দাদা সম্বতি ফিরে পেয়েছিল। এরপর আলাপ চারিতা হল। দুজনকেই দেখে বোঝা যাচ্ছ একে অপরকে খুব পছন্দ করেছেন। তারপর দাদা একটা মিষ্টি নিয়ে ম্যামের মুখে ভরে দিলেন। ম্যাম তো লজ্জায় শেষ। ফরসা গাল দুটি কাশ্মীরি আপেলের মতো লাল হয়ে গেছে।
এরপর.......