ইন দা মিরোর্স
ইন দা মিরোর্স
সৌরদীপের কেনাকাটা করতে শপিং মলে ঢোকে। কমপ্লেক্সটায় তারা বেশিরভাগ লাঞ্চ করতেই দেখা করে। কিন্তু পুজোর আর মাত্র কয়েক সপ্তাহ বাকি তাই সৌরদীপের ইচ্ছা আগে শপিংটা শেষ করে নেওয়া। কিন্তু তার বন্ধুরা নাছোরবান্দা, তাই সবার দাবিতে আগে লাঞ্চে বসতে হয়। মেনু দেখে যে যার মতো অর্ডার দেয়। তারপর একসময় বিল মিটিয়ে তিনতলার গার্মেন্টসের সেকশন দেয়া যায়। জামা কাপড় হাতে নিয়ে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে একদম ভালো লাগেনা সৌরদীপের। গ্রীনরুমের সামনে চারটে বড় বড় লাইন পড়েছে। তার বন্ধুদের কোন অসুবিধা না হলেও তার আর বিরক্তির শেষ নেই। এমনিতেও ভর পেটটা খেয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে খুবই কষ্ট হয়। তার উপর এত লম্বা লাইন দেখে তার মাথাটাই খারাপ হয়ে যাওয়ার যোগার। সম্ভব হলে সে বাইরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই চেঞ্জিং রুমের কাজটা সেরে ফেলতে পারতো। কিন্তু চোখ লজ্জা বলেও তো একটা ব্যাপার আছে, তাছাড়া সে নিজেও জানে এমন একটা কাজ করলে গার্ডরা তাকে ধরে ছুঁড়ে ফেলে দেবে শপিং মলের বাইরে। সে একবার পকেটে হাত দেয়, লাইটার টাই হাত লাগে, সিগারেটের প্যাকেটটা অনুভব করে না, তখন খেয়াল হয় গতরাত্রে পুরনো প্যাকেটটা শেষ হয়ে গেছে কিন্তু সকালে আর নতুন প্যাকেট কেনা হয়নি। তার পেছনে বছর বাড়ার একটা বাচ্চা ছেলে দাঁড়িয়ে ছিল, তাকে তার জায়গাটা রাখতে বলে, জামা প্যান্টের ক্যারি ব্যাগটা একটা বন্ধুর হাতে দিয়ে বাথরুমের দিকে এগিয়ে গেলো। যদিও তার বন্ধুরা জানে সে এখন মলের বাইরে বেরোবে, তারপর একটা ফ্লেকের প্যাকেট কিনবে, তারপর জেমস টয়লেটে গিয়ে দু-একটা কাঠি জ্বালাবে, অবশেষে কয়েকটা সুখ টানের পর সে ফিরবে আবার লাইনে। আর হলেও ঠিক তেমনটাই। ফলের লাইনটা বেশ অনেকটা এগিয়ে যায়। কিন্তু এরই মধ্যে বাথরুমে ঘুরে যায় একটা অবিশ্বাসক ঘটনা। সৌরদীপ বাথরুমে কাজটা সেরে প্যান্টের জীপটা টেনে দেয়। বেল্ট টাইট করতে করতে আয়নার সামনে এসে একটা সিগারেট ধরায়। কয়েকটা সুখ টান দেয়ার পরে সে খেয়াল করে আয়নার পিছনের কালচে আবছায়াটাকে। পিচণ ঘুরতেই দেখে কিছু নেই। ফাঁকা একদম শুন্য। মনের ভুল ভেবে আবার সামনের ফিরে দু একটা টান দেয়, তখনই আবার সেই কালচে আবছায়াটা ফুটে ওঠে, কিন্তু সৌরদীপ পিছন ফিরলেই জায়গাটা আবার শূন্য দেখে। অতএব সে আবার সামনে ফিরে সিগারেটটা টানতে যায় আর দেখতে পায় সিগারেটটা প্রায় শেষ। সেটাকে ছুঁড়ে ডাস্টবিনে ফেলে দিয়ে আরেকটা ধরায়। ব্যাস আবার সেই কালচে আবছায়াটা তার নজরে পড়ে। সে ভয়ে আয়না থেকে আর চোখ সরাতে পারে না কিন্তু এই ভয়ের মধ্যে সে বুঝতে পারে বাঁচতে গেলে তাকে এই বাথরুম থেকে বেরোতেই হবে। তাই সে কোনো দিকে না তাকিয়ে এক ছুটে দরজাটা টান মেরে খুলে ফেলে, তারপর তিন তলার সেই গার্মেন্টসের সেশনটায় পৌঁছে যায়। সেখানে গিয়ে দেখতে পায় লাইনটা কিছুটা এগিয়েছে, কিন্তু খুব যে এগিয়েছে এমনটা নয়। অতএব সেই বাচ্চাটাকে লক্ষ্য করে সেখানে গিয়ে আবার দাঁড়িয়ে পড়ে সৌরদিপ। বাচ্চাটা তাকে দেখে হাসে, সেও পকেট থেকে রুমাল বের করে ঘাম মুছে একটু হাসে তারপর পাশের বন্ধুটার থেকে জামা কাপড়ের থলেটা নিয়ে ধৈর্য সহকারে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকে। যখন তার পালা আসে সে চুপচাপ কোনো কথা না বলে গ্রীনরুমে ঢুকে যায়। একটা ট্রাউজার আর টি শার্ট পড়ে আয়নায় নিজেকে দেখে। তাকে বেশি স্মার্ট আর হ্যান্ডসাম দেখাচ্ছে। তারপর আরেকটা আউটফিট ট্রাই করতেই আয়নায় সেই কালচে আবছা অবয়বটাকে দেখতে পায়। তিন দিকে ঘেরা আয়না তাই সে ঠিক ঠাউর করতে পারেনা অভাবটা ঠিক কোন আয়নায় উপস্থিত। তাও ভয় ভয় পেছনের আয়নাটার দিকে তাকায় কিন্তু সেখানে কিছুই নেই তারপর দরজা বরাবর আয়নাটার দিকে তাকায় সেখানেও কিছু দেখতে পায়না। সে আর কোন ড্রেস ট্রাই করে না। মনে মনে ভেবে নেয় তার নিজের জামাপ্যান্টটা গলিয়ে এই দুটো জামার বিল মিটিয়ে এই শপিং মল থেকে সে পালাবে। সে কি আজ প্রথম আসছে বন্ধুদের সঙ্গে শপিংমলে, আগে কতবার এসেছে। অবশ্য প্রথমবারই শপিং মল থেকে তারা গার্মেন্টস কিনতে এসেছে। এর আগে তারা এখান থেকে কখনো জামা কাপড় কিনেনি, শুধু লাঞ্চের জন্য আসতো।
কোন মতে ট্রাউজারটা গলিয়ে শার্টটা পরে। ফেলে বোতাম-ফতাম কিছু লাগায়নি, ওসব পরে হবে। আগে তো জীবন হাতে নিয়ে বের হোক। সে যত আয়নাটা এড়িয়ে যেতে চাইছে বারবার তার চোখে পড়েই যাচ্ছে অবঅবটা যেন আয়নাগুলো পেরিয়ে পেরিয়ে তার দিকেই আসছে, আর সে সেটা বুঝতেও পারছে কিন্তু তার কিছু করার ক্ষমতা নেই। তাও শরীরে শক্তি সঞ্চয় করে সে দরজাটা টান মেরে খুলে দিতে গেল কিন্তু বাথরুমের পুল-পুস দরজাটা লক না করলেও সে ভুলে গেছে যে, সে গ্রিন রুমের দরজাটা ভিতর থেকে লক করে রেখেছে। তাই শত টানাটানি করেও দরজাটা সে খুলতে পারলো না। এমন সময় পিছনে কিছু একটা বা কাউকে অনুভব করে সে। আড়চোখে সে ডানদিকের আয়নাতে টাকায়। সেটি ফাঁকা। আড়চোখে বাঁদিকের আয়নাতে টাকায়। সেটিও ফাঁকা। কিন্তু গরম স্বশের অনুভব সে এখনও করছে, ফলে ভয়ে গর্মাঝত হয়ে উঠেছে তার শরীর। তাই ভীত সন্ত্রস্ত চোখে পিছন ঘুরে সে দরজা বরাবর আয়নাটায় তাকায় কিন্তু তার দৃষ্টি দেখে যায় কালচে আবছায়া অবয়বটায়।