Dhoopchhaya Majumder

Drama

3  

Dhoopchhaya Majumder

Drama

কিছুক্ষণের গল্প

কিছুক্ষণের গল্প

3 mins
1.6K


"তখন থেকে বলছি ডান পা টা নামিয়ে পাপোশের ওপর রাখো, নড়াচড়া কোরো না, কথা কানে নেওয়ার নামই নেই! নাও, এখন সামলাও! বেশ খেলছিল, সেঞ্চুরি হয়ে যেতো দিব্যি, দিলে সব ভণ্ডুল করে। যাও, প্যাড পরে মাঠে নামো এবার!"


কাল : বিশ্বকাপ ক্রিকেট টুর্ণামেন্টের ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের দিন। বিভিন্ন নিউজ চ্যানেলের নজরকাড়া বিজ্ঞাপনে দেশভক্তি উরি আর ওল্ড ট্র্যাফোর্ড মিলেমিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে, অভিনন্দন ভিকি আর বিরাট, এঁদের আলাদা করে চেনা যাচ্ছে না, এরই মাঝে বিরাট কোহলি আউট হয়ে গেলেন ঝপ করে। 


স্থান : রাঙাদিদাদের বাড়ির বসার ঘর। দেওয়ালে আটকানো টিভিতে উচ্চস্বরে ধ্বনিত হচ্ছে ধারাভাষ্যকারের আফসোস, আর গ্যালারিতে বসে দেশের হয়ে গলা ফাটানো অনুরাগীদের হতাশা। 

টিভি ছাড়া ঘরে রয়েছে তিনটে সোফা, আর সেণ্টার টেবিল। এককোণের দেওয়ালের গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে একটা শেলফ, তাতে নানান সাইজ আর নানান রঙের গণেশমূর্তিরা শোভা পাচ্ছেন। সোফা আর সেণ্টার টেবিলের মাঝে মেঝেতে রয়েছে একটা পাটকিলে রঙের পাপোশ, আর তার ওপরে গ্যাঁট হয়ে বসে লেজ নাড়ছে একটা সাদা বেড়াল। 


পাত্র : রাঙাদিদা, রাঙাদাদু, আমি আর ফেলিসিয়া।


ওই যে পাপোশে বসা সাদা বেড়ালটা, ওরই নাম ফেলিসিয়া। বেশ নাম না? আমার মায়ের দেওয়া নাম, বছর বাইশ আগে। না না, বাইশ বছর ধরে এই ফেলিসিয়া বেঁচে আছে, ভাববেন না যেন! সে ছিল এর মা কিংবা দিদিমা। অরণ্যদেবের শোনেননি? একুশ প্রজন্ম ধরে সবারই নাম কিট ওয়াকার! এর ফাণ্ডাও তেমনই। ফেলিসিয়ার চোদ্দগুষ্টির সবার নামই ফেলিসিয়া।


রাঙাদাদু ডান পা টা সোফার ওপর হাফ তুলে ভারি অপ্রস্তুত হয়ে বসে আছেন। এই যে এক্ষুনি বিরাট কোহলি ঝপ করে আউট হয়ে গেলেন, তাঁর জন্য রাঙাদাদুই যে দায়ী, রাঙাদিদা সেটা বুঝিয়ে না বললে বোঝাই যেতো না।


রাঙাদিদা পাশের সোফায় বসে সমানে বলে চলেছেন,


"এমন মানুষ, একটু অন্যের সুবিধে অসুবিধে বুঝবে না। তুমি জানো খেলার সময় একটু নড়াচড়া হলেই গণ্ডগোল হয়, কোন আক্কেলে পা টা তুললে? স্রেফ তোমার জন্য সাড়ে তিনশো হবে না, দেখে নিও!


দাদু এখন ভয়ানক অপরাধবোধে ভুগছেন। আহা রে, পাপোশটার ওপর পা রাখলেই ছেলেটা সেঞ্চুরি করে ফেলতো, টিমের রানও সাড়ে তিনশো পেরিয়ে যেতো। দাদু এতটাই মরমে মরে আছেন, আর দিদা এতটাই তড়পাচ্ছেন, দেখে মনে হচ্ছে কোনও নিউজ চ্যানেলকে ডেকে ব্যাপারটা জানাই। 


"কোটি কোটি অনুরাগীর প্রার্থনাকে ব্যর্থ করে বিরাটের হঠাৎ আউট হয়ে যাওয়ার নেপথ্যে রয়েছে বিরাট এক ঘটনা। জানেন কি? আসুন দেখে নিই এক্সক্লুসিভ এই খবর, শুধুমাত্র নিউজ অমুক চ্যানেলে..."


আহা, রাঙাদিদাদের বাড়িটাকে নিউজ চ্যানেলে দেখাবে, ভাবলেই আনন্দ হচ্ছে। আমরা সবাইও নিশ্চয়ই ক্যামেরার সামনে আসব? ঘটনার মূলে যদিও দাদুর পা আর একটা পাপোশ, তবে শুধু পা আর পাপোশ কি এক্সক্লুসিভ নিউজ মেকিং-এর জন্য যথেষ্ট? না বোধহয়। পা আর পাপোশ তো দেশের আম আদমি রোজ দু'বেলাই দেখছে, ও দিয়ে কিস্যু হবে না। তেমন জোরালো গল্প না হলে পাবলিক খাবে না মোটেই। আচ্ছা, গল্প তৈরির জন্য চ্যানেল থেকে রাঙাদিদাকেও ডাকবে কি? মানে, উনিই তো মাস্টারমাইণ্ড এব্যাপারে, নাকি গল্প আউটসোর্সিং ওদের চ্যানেলের প্রফেশনাল এথিক্সের বিরোধী?


কাদের ডাকা যায়, ভাবতে ভাবতে টিভির দিকে তাকিয়ে দেখি, যাহ্, বৃষ্টি পড়ছে। এ পোড়া দেশে নয়, বিলেতের মাটিতে। খেলা বন্ধ আপাতত। ছাপার অযোগ্য দুটো শব্দ মনে মনে উচ্চারণ করে সোফায় গা এলিয়ে বসতেই কানে এলো রাঙাদিদার উত্তেজিত গলা,


"মুখে আগুন মুখপোড়া বিষ্টির! এখেনে মানুষের ছাতি ফাটছে, মেঘের দেখা নেইকো, আর বাচ্চা বাচ্চা ছেলেগুলো একটু শান্তিতে খেলে কাপ আনবে, তাও দেবেনাকো এমন অনামুখো বিষ্টিবাদলার দল!"


দাদুর বোধহয় একটু ঝিমুনিমতো এসেছিল, তাঁকে ঝাঁকিয়ে দিদা জিজ্ঞেস করলেন,

"হ্যাঁ গো, তোমার বাতের তেলটা আনব? পায়ের ব্যথা বেড়েছে?"


তারপরেই আমার দিকে তাকিয়ে,

"অ দিদভাই, চা খাবি? সেই দুকুরে দুটি মুখে দিয়েছিস ত! আয় আমার সঙ্গে, দুটি মুড়ি মেখে দিই।"


কারও উত্তরেরই অপেক্ষা না করে খুরখুর করে রান্নাঘরের দিকে এগোলেন তিনি। আমি আর কোন আক্কেলে বসে থাকি, আমিও পিছু নিলাম। বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচ, দাদু আর ফেলিসিয়া বসে রইলেন এ ওর সঙ্গী হয়ে।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Drama