মধুমিতা দেবনাথ

Drama Romance Tragedy

4.1  

মধুমিতা দেবনাথ

Drama Romance Tragedy

নষ্ট ফুল

নষ্ট ফুল

10 mins
473


আমি ধারা, বাড়িতে আমরা চারজন থাকি। বাবা মা আর আমরা দুই বোন।আমি বড়, বোন কলেজে পড়ে, বাবা মাঠে কাজ করে,এক কথায় নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবার।

   আজ বৃহস্পতিবার,মা বললো ঠাকুরের থালাবাসন ঘট ধুয়ে মেজে ফুল দূর্বা তুলে রাখতে।ভোর রাত থেকে প্রচন্ড ঝড় বৃষ্টি হ‌ওয়ায় চারিপাশটা প্রচন্ড কাদা জল, গাছের ভাঙ্গা ডালপালা পড়ে আছে।তাই বারান্দা তেই থালাবাসন গুলো ধুয়ে রাখলাম।ঠাকুরঘর থেকে সাজি নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম ফুল তুলতে। বাড়িতেই অনেক ফুল গাছ আছে, তিন রকম জবা, সাদা ফুল, নীলকন্ঠ, গোলাপ, শিউলি। খুব ভালো লাগে গাছে ফুল ফুটে থাকা অবস্থায় দেখতে, ভীষন কষ্ট হয় ফুল গুলোকে গাছের থেকে একটা একটা করে আলাদা করে ফেলতে। মনে হয় মৃত্যুর সময় আসার আগেই মেরে ফেলা হচ্ছে, মনে হয় ফুল গুলো তুলে গাছটায় যেন অ্যাসিড ছুঁড়ে মারা হলো-সমস্ত সৌন্দর্য মুছে গেছে গাছের।

যাইহোক ফুল তোলা হয়ে গেছে, মা স্নান করে ঠাকুর ঘরে যাচ্ছে.. আমিও চটপট স্নান সেরে মায়ের পাশে পুজো দিতে বসে পড়লাম।

       (মায়ের সাথে কথোপকথন)

- আচ্ছা মা, ফুল তো গাছের সৌন্দর্য, তাহলে কেনো ফুল গুলো তুলে গাছটাকে ন্যাড়া করে দেওয়া হয়। শুধু শুধু কিছুক্ষনের জন্য আসন সাজিয়ে আবার জড়ো করে কোণায় জমিয়ে রাখা।

- কি যে বলিস, জানিস না- ফুলের জীবন তখন সার্থক হয় যখন সে ঠাকুরের পায়ে সমর্পিত হয়, তা না হলে সেই জীবন বৃথা।

আমি চুপ করে বসে রইলাম, পুজো শেষ শঙ্খ উলু ধ্বনি করে..

- ও মা ওই ফুলটা তো এখনো সাজিতেই পড়ে আছে দাড়াও আমিই দিয়ে দেই..

- আরে ওটা কি করছিস ওই ফুলটা দিসনা

- কেনো মা!

- আরে দেখছিস না ওই ফুলটার একটা পাপড়ি ছেঁড়া, ওটা নষ্ট ফুল পূজোর যোগ্য না (বলে মা বেড়িয়ে গেল ঘর থেকে)

আমার ভিতর থেকে কি যেন একটা বেরিয়ে আসতে চাইছে, দুমরে মুচড়ে ভেঙ্গে যাচ্ছে একটা নিঃশব্দ ঝড়ের দাপটে। চোখের সামনে যেন গাঢ় কালো মেঘ জমাট বাঁধছে, আবছা থেকে থেকে দেখতে পারছি ওই ওই তো আমি- দৌড়াচ্ছি,হাসছি, কেউ যেন আমাকে ভালোবাসছে.. আমিও তার ভালোবাসায় ডুব সাঁতার দিচ্ছি।যন্ত্রনা হচ্ছে বড্ড,বুক চিরে কান্না বেরিয়ে আসতে চাইছে,অবশ হয়ে যাচ্ছে সমস্তটা.....

          

             স্মৃতি মন্থন

            (ধারা কাহিনী)

সকাল সকাল মনটা ভীষন খুশি।আজ ফেসবুকের একটা লেখনী গ্রুপে আমার কবিতা সর্বপ্রথম স্থান পেয়েছে। আজকে আমি ভীষন খুশি কিন্তু এই আনন্দটা কাউকে বলতে পারছি না,কি করে বলি আমি তো লুকিয়ে লুকিয়ে ফেসবুক করি কবিতা লিখি। উফ্ কি যে করি নাহ্ আরও একবার দেখি ফেসবুক খুলে আমার পোস্ট টা..

  (নেট অন করতেই মেসেঞ্জার এ একটা কল)

-হ্যালো..কে বলছেন?

-অনেক অনেক শুভেচ্ছা ম্যাডাম, আমি অর্পন। বলতে পারেন আপনার লেখার একজন বড় ভক্ত।

- ধন্যবাদ

-আপনি রাগ করেন নি তো, আসলে আপনার সম্মতি না নিয়েই কল করে ফেললাম, আপনার লেখা গুলো আমার খুব ভালো লাগে। আপনার সাথে কথা বলা যাবে?

তারপর থেকে রোজ সন্ধ্যে হলেই ফোন আসতো,রোজ কথা হতো..

কে এই অর্পন, হঠাৎ করেই আসলো আমার জীবনে,যাকে চিনি না.. ঠিক মতো জানি না, তবুও কেন এতো অপেক্ষায় থাকি ওর ফোনের,যেনো একটা অদৃশ্য টানে বাঁধা পড়ছি ধীরে ধীরে...

(ভাবতে ভাবতেই ফোনটা বেজে উঠলো)

- হ্যালো.. এতো দেরি হলো আজকে আপনার ফোন করতে! ঠিক আছেন তো? কোথায় ছিলেন? কি করছিলেন?

-আরে বাবা, দাঁড়াও দাঁড়াও.. একটু দম নিয়ে নাও (দুষ্টু হাসির সুরে)

-ইসস্ কি করলাম আমি এটা (জিভ কেটে ভাবনায়)

-অপেক্ষা করছিলে?

-আমি চুপ..

-ওই মেয়েটা অপেক্ষা করছিলে খুব..

 ভালোবাসো আমায়?

-সারা শরীর জুড়ে বিদ্যুৎ বেগে কি যেন একটা বয়ে গেল,কি হচ্ছে এটা আমার..

-ওই মেয়েটা..

-কিছুক্ষন চুপ করে থেকে ফোনটা কেটে দিলাম..

      পরের দিন..

উফ্ কি যে করি আমি, ও তো আজকেও ফোন করবে.. যদি আবার কালকের কথার উত্তর জানতে চায়, কি বলবো কি করে বলবো। ধুত ধুত কালকেই কোনরকম এ মিটিয়ে দিলেই হতো.. কেনো যে ফোনটা কাটতে গেলাম, ধুর ভাল্লাগে না..

ঠিক একই সময়ে ফোন টা বেজে উঠলো প্রতিদিনের সন্ধ্যার মতো..

-(ফোনটা রিসিভ করে কিছুক্ষণ চুপ থেকে) হ্যালো..

- কাল কিছু বললে না তুমি ধারা, ফোনটা রেখে দিলে..!

- কি বলবো তোমাকে অর্পণ, হুম ভালোবাসি ভালোবাসি খুব (মনে মনে)

- কি হলো ধারা চুপ করে আছো, কিছু বলবে না তুমি!

- না মানে, আসলে হ্যাঁ .. মানে না.. মানে হ্যাঁ..

- থাক আর কিছু বলতে হবে না তোমায়, বুঝেছি আমি..

- সমস্ত লজ্জা যেন একেবারে ঘিরে জাপটে ধরছে আমায়, ও বুঝে গেছে আমি ওকে ভালোবাসি, উফ্ কি লজ্জা কিছু বলতে পারছি না, কথা বেরোচ্ছে না আমার.. আর কতক্ষন এভাবে চুপ করে থাকবো তাই দুম করে ফোনটা কেটে দিলাম।

তারপর থেকে বেহিসাবি কথা হতে লাগলো রোজ, সকাল, দুপুর, রাত, ঘণ্টায়- ঘণ্টায়, মিনিটে- মিনিটে সবসময়। এক মুহুর্তও একা থাকতে পারতাম না। ছয় মাস কেটে গেল দেখতে দেখতে, এবার দেখা করতেই হয়, সিদ্ধান্ত নিলাম দুজনেই আমার জায়গার দিক থেকে কাছে এমন একটা মন্দিরে দেখা করবো।


          (প্রথম দেখা)

- ধারা একটা কথা বলবো?

- হুম বলো..

- তোমার হাতটা ধরতে পারি..?

- অনেকটা লজ্জার সাথে মাথা নিচু করে সম্মতি দিলাম..

- ধারা.. এই মন্দিরে দাঁড়িয়ে ঠাকুরের সামনে কথা দিচ্ছি সারাজীবন এই ভাবে তোমার হাতটা ধরে রাখবো।

- অর্পণ, আমি তোমাকে কিছু বলতে চাই। আসলে আমি একটা শিব ঠাকুরের লকেট সমেত একটা চেন কিনে রেখেছিলাম, ভেবেছিলাম যেদিন তোমার সাথে আমার দেখা হবে, তুমি ঠাকুরের সামনে আমার গলায় পরিয়ে দেবে। পরিয়ে দেবে আমায় অর্পণ?

- ওই মেয়েটা, বড্ড পাগল তুমি, দাও...

- এটাই আমার মঙ্গলসূত্র অর্পণ, কোনোদিন খুলবো না এটা আমি।

তারপর কিছুক্ষণ গঙ্গার জলে সূর্যের অস্তরাগ এঁকে দুজন দুজনের আলিঙ্গনে বিদায় জানালাম। ট্রেন এ ওঠার আগে ঠোঁট দুটোকে পুড়িয়ে দিয়ে পালিয়ে গেলো.. প্রথম এমন একটা স্পর্শ পেয়ে সারা শরীরটায় যেনো বিদ্যুৎ বয়ে গেলো... চোঁখ খুলতে পারছি না লজ্জায়... যখন তাকালাম তখন ও ট্রেন এ...চেয়েই রইলাম যতক্ষণ না ট্রেনটা মিলিয়ে যায়। ভালোবাসি ...বড্ড ভালোবাসি অর্পণ তোমাকে।

এভাবেই লুকিয়ে লুকিয়ে দেখা করতে লাগলাম আমরা দিনের পর দিন.. থাকতে পারতাম না আমি ওকে না দেখে পাগল পাগল লাগত, মনে হতো কোনো একটা অদৃশ্য সুতো দিয়ে আমায় বেঁধে রেখেছে ও যার টানে আমি বারবার ছুটে চলে যেতাম কাউকে কিছু না বলে ওই আঠেরো টা স্টেশন পার করে, হুম্ পাগলই তো প্রথম ভালোবাসা তো পাগলই করে মানুষ কে। স্টেশন থেকে স্টেশনে, পার্ক এ, সিনেমা দেখতে নির্ভয়ে চলছি যেখানে যেখানে নিয়ে যেত, কোনোদিন কোনো প্রশ্ন ও আসেনি মনে চিনি না জানি না একটা অজানা শহর.. শুধুই চলতাম। শুধু মনে হতো না জানি কতো জনম ধরে একসাথে চলছি আমরা এভাবেই। সবসময় ওই হাতটাকে শক্ত করে জড়িয়ে রাখতাম, এক মুহুর্তের জন্যও ছাড়তাম না। কেউ দেখে ফেলবে সেই ভঁয় ও পেতাম না, ও পাশে থাকলে অনেক অনেক সাহস চলে আসতো মনে এই পৃথবী জয় করার। ভালোবাসি.. চিৎকার করে বলতে পারি সবাইকে, ভালোবাসি... আমি তোমাকে ভালোবাসি অর্পণ।

এরই মাঝে একদিন পাড়ার একজন দেখে ফেলে আমাদের, সারা পাড়া শুদ্ধ রটে যায় আমি চরিত্রহীন, ছেলে ধরে খাই। মা, বাবা আমাদের দুই বোন কে দিয়ে ব্যাবসা করায়..

- ধারা.. এটা তুই কি করলি মা, সারাজীবন এমন কোনো কাজ করিনি যে লোকে আঙ্গুল তুলে কথা বলে, না খেয়ে থাকলেও কারো কাছে হাত পাতিনি, আজ তোর জন্য আমাদের এতো কথা শুনতে হচ্ছে, এর জন্যই তোকে এতো স্বাধীনতা দিয়েছিলাম।(রাগে কান্নায়)

মা, বাবা দুজনেই খুব কাদছিল, সহ্য করতে পারছিলাম না, প্রচণ্ড রাগ হচ্ছিলো নিজের ওপর।

- মা.. ও বাবা ক্ষমা করে দাও আমাকে (হাত ধরে), আমি ওকে খুব ভালোবাসি বাবা, আর ওউ আমাকে ভালোবাসে।

- লোকে অনেক রকম কথা বলছে ধারা, পাড়ার লোকে একঘরে করে দেবে আমাদের..

- লোকে যা বলছে বলতে দাও না মা, আমি তো কোনো অন্যায় করি নি, ওদের বাড়ির মেঁয়েরা কি কাউকে ভালোবাসেনি কোনোদিন, আর যেদিন ওর সাথে আমার বিয়ে হবে সেদিন সবাই এমনিতেই চুপ হয়ে যাবে..

- অর্পণ কে ফোন করে ওর মা বাবা কে নিয়ে আসতে বল, কথা বলবো (বাবা)

- সত্যি.. সত্যি বলছো বাবা তুমি কথা বলবে ওর সাথে.. আমি আজকেই জানাবো ওকে।

ভীষন আনন্দ হচ্ছিলো মা বাবা মেনে নিয়েছে, আর কোনো বাধা নেই..

- হ্যালো অর্পণ, জানো একটা ভালো খবর আছে..

- কি খবর, আর তুমি বাড়ি পৌঁছে আমাকে জানাও নি কেনো, চিন্তা হয় আমার..

- হুমম সরি, একটু অসুবিধে ছিলো, আসলে এখানে সবাই জেনে গেছে আমাদের সম্পর্কটার ব্যাপারে আর পাড়ার লোকে খুব বাজে কথা বলছিল, বাবা মা কাদছিলো খুব তাই ফোন করতে পারিনি এসে, তবে চিন্তা কোরো না আমি মা বাবা কে বুঝিয়েছি, ওরা আমাদের সম্পর্ক টা মেনে নিয়েছে, ওরা তোমার আর তোমার বাবা মায়ের সাথে দেখা করতে চায় , তুমি কবে আসবে অর্পণ..

- হুম্ আসবো (ফোনটা কেটে দিলো)

- হ্যালো.. হ্যালো অর্পণ, ফোনটা কেটে দিলো অর্পণ! না না কি সব ভাবছি, নিশ্চই আনন্দে তাড়াতাড়ি বাড়ির সবাইকে জানাতে গেছে..

তারপর গোটা একটাদন কেটে গেছে ফোন করে নি অর্পণ.. রিসিভ ও করছে না.. কোনো রিপ্লাই ও দিচ্ছে না..

- ধারা.. অর্পণ ফোন করে জানিয়েছে ওর মা বাবা কে নিয়ে কবে আসতে পারবে, বলেছে কিছু (মা)

- মা ও তো আজকে একটা ট্রেনিং এ গেছে তাই বেশি কথা হয় নি, কাল জানাবে বললো..

- ঠিক আছে জানাস, বুঝতেই তো পারছিস যতোদিন পাড়ার লোক কে জবাব না দিতে পারছি এই অপমানের শান্তি হচ্ছে না, আর তাছাড়া ওরা আসবে.. বাবাকে তো আগের থেকে বলতে হবে, কাজের ওখানে জানাতে হবে, যে তোর বাবা সেদিন কাজে যেতে পারবে না।

- হ্যাঁ... হ্যাঁ মা আমি জানি, যাও গিয়ে ভাত বাড়ো তো.. খুব খিদে পেয়েছে।

- হুম যাই যাই.. তুইও আয় (ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো)

মাকে তো কিছু একটা বলে সামলে নিলাম কিন্তু নিজেকে সামলাই কি করে। কি করি আমি.. অজানা একটা ভয় যেনো জাপ্টে ধরছে চারিদিক থেকে..

(হঠাৎ ই ফোন এ রিং বেজে উঠলো)

- হ্যালো.. হ্যালো অর্পণ কোথায় ছিলে তুমি, গোটা একটা দিন কেটে গেছে, একটা ফোন ও করলে না, মেসেজ এর রিপ্লাই ও দাও নি একটা, রিসিভ ও করছিল না, কি হয়েছে অর্পণ, ঠিক আছো তো তুমি?

- এতো ন্যাকামো করো কেনো সবসময়, আমার কি কোনো কাজ থাকতে পারে না?

- হুম সরি.. তোমার কাজ হয়েছে তো ঠিকঠাক, খেয়েছো কিছু?

- হুম্ খেয়েছি..

- অর্পণ.. একটা কথা ছিলো, না মানে মা জানতে চায়ছিল তোমরা....

- উফ্ দেখো সারাদিন খুব ধকল গেছে আমার, ঘুম পেয়েছে খুব, কাল কথা বলছি..

- আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে..

- গুড নাইট

- হুম গুড নাইট

- ধারা..... ধারা খেতে আয় ভাত বেড়েছি (রান্নাঘর থেকে চেচিয়ে মা)

- মা... পেটে ব্যথা করছে খুব, আমি খাবো না, শুয়ে পড়েছি, ডেকো না আর।

খুব কান্না পাচ্ছে কি হলো হঠাৎ করে, ঠিকই তো ছিলো সব, কেনো হলো? কেমন একটা ঝিম ধরে আসছে সারা শরীর টায়.. চোঁখ বন্ধ হয়ে আসছে..

কি সুন্দর ওই গ্যাস বেলুন টা, কিনে দেবে আমায় অর্পণ.. আমি এই বেলুন টাকে খুব যত্নে রাখবো। একি এতো ঝড় উঠলো কখন, বেলুনটা যে উড়ে যাচ্ছে, ধরতে পারছি না আমি.. কেউ ধরো.. অর্পণ কোথায় তুমি .. দেখো বেলুনটাকে উড়িয়ে নিয়ে চলে যাচ্ছে অনেক দূর... অর্পণ কোথায় তুমি ? দেখতে পারছি না আমি কিছু.. তোমার হাতটা দাও অর্পন...আমি ধরি.. ভয় লাগছে আমার, অর্পণ.... অর্পণ ....অর্পণ...অর্প.......ণ......।

ঘুমটা ভেঙ্গে গেলো ঘামতে ঘামতে, উফ্ কি দুঃস্বপ্ন...

ফোনটা হাতে নিয়ে কটা বাজে দেখতেই দেখি একটা মেসেজ..... অর্পণ..

-"আমি আর টানতে পারছি না এই সম্পর্ক, ছুটি নিলাম তোমার থেকে, আজ থেকে তুমি আমার কাছে মৃত, আমি স্বাধীন থাকতে চাই, এই দুনিয়া ঘুরতে চাই, আমি এভাবে বাঁধা পরতে পারবো না। আর তুমি.. তুমি তো মেয়ে মানুষ ক্ষতি তো কিছু হয় নি, শরীর তো আছে.. নতুন কাউকে ঠিক পেয়ে যাবে, অভাব হবে না, আমাকে আর ফোন করে বিরক্ত করো না, যোগাযোগ করার চেষ্টাও করো না কোনোদিন, ব্লক করছি সব জায়গা থেকে, আর তারপর ও যদি দেখা করার চেষ্টা করো- আমি সবাই কে বলবো তুমি টাকার বিনিময়ে আমার সাথে সম্পর্কে ছিলে, তোমার আমার সব ছবি দেখিয়ে দেবো সবাইকে, বলবো তুমি একটা নষ্ট মেয়েছেলে। গুড বাই।"

- কোনো আওয়াজ বের করতে পারছি না মুখ থেকে.. যেনো সবটা শরীর জড় পদার্থ এ পরিণত হয়েছে। অর্পণ.. কেনো এমনটা করলে আমার সাথে কেনো! কি দোষ করেছি আমি.. চেঁচিয়ে কাদতে ইচ্ছে করছে, আকাশটা যেনো ভেঙ্গে পড়ছে, একটা তীব্র ঝড়ো হাওয়ার সাথে সমস্ত টা ভেঙ্গেচুরে মাটিতে মিশিয়ে দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু চিৎকার করে কাউকে ডাকতে পারছি না, কিছু বলতে পারছি না.. জিভ টা যেনো কেউ কেটে ফেলে দিয়েছে। বিছানা থেকে ওঠার মতো কোনো শক্তি নেই সারা শরীর টায়, যেনো কেউ আমার হাত পা গুলো থেঁতলে দিয়ে গেছে। নিঃশব্দে ভিতরটা চুরমার হয়ে যাচ্ছে কিন্তু কেউ দেখতে পারছে না... কাউকে জানাতে পারছি না। উফ্ প্রচন্ড যন্ত্রণা হচ্ছে, বুকের ভিতর থেকে কিছু একটা ঠেলে বেরিয়ে আসতে চাইছে....


- ধারা... ধারা.. আরে ঠাকুর ঘরে কি করছিস এতক্ষণ, প্রদীপটা নিভিয়ে আসিস আসার সময়, নইলে সলতের বুক পুড়ে যাবে, আজ কিন্তু বৃহস্পতিবার।

- ...........

- কিরে কথা কানে গেছে তোর....

- হ্যাঁ মা আসি।অনেক কটা দিন পার হয়ে গেছে মাঝে স্মৃতি গুলো তবু এখনো এতোটাই জীবন্ত (দীর্ঘশ্বাস চোখের জলে)


ভালোবাসলাম, সংসার করলাম, না কোনো বৈবাহিক সংসার হয় নি আমাদের মধ্যে.. ভালোবাসার সংসার করলাম তার সাথে, আমার উপর ভালোবাসার অধিকারের দাবিতে আমার সমস্ত টা নিগড়িয়ে নিয়ে যেতে দিলাম। সবশেষে ফিরে আসলাম নোংরা নাম নিয়ে, চরিত্রহীন পরিচয় নিয়ে। কারণ, সে আমাকে আমার ভালোবাসা থেকে মুক্তি দিয়েছে। সে তো অল্প জায়গায় আবদ্ধ থাকতে চায় না, সে নাকি হাওয়া, সবকিছু ভেদ করে কোণায় কোণায় প্রবেশ করবে আবার চলেও যাবে, আটকে রাখা যাবে না তাকে..। আর কি করেই বা আটকাবো তাকে.. আমার তো কুড়ে ঘর... সমস্ত টাই ফাঁকা.. আটকে রাখার বৃথা চেষ্টা..।


শুধু গাছের ওই ফুলটা জানে তার আর আমার মধ্যে মিল টা কোথায়..। গাছের ওই ফুল টা জানে হাওয়া আর তার মধ্যের সম্পর্ক, যে বাতাস কে ভালোবসে কাছে টেনে নিয়েছিল- সেই নিজের তীব্রতার জোরে তার কাছে এসে তাকে কিভাবে ছিন্নভিন্ন করে দিয়ে গেছে।

হুম্, ওই ফুলটা জানে.. বৃষ্টি আর তার মধ্যের সম্পর্ক- যাকে মাথা তুলে ভালোবেসে নিজের কাছে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল, ভিজতে চেয়েছিলো ভালোবাসার স্পর্শে, সেই বৃষ্টিই তার উপর দানবের মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে তাকে আরও নিস্তেজ করে দিয়ে গেছে। আর এই সমাজ ওই ফুলটাকে ধিক্কার জানায়, সবাই তার কাছে এসে মুখ ঘুরিয়ে চলে যায়.. বলে যায়- এই ফুল আর পুজোর যোগ্য নয়, ঘরে সাজিয়ে রাখারও নয়, এ একটা নষ্ট ফুল।।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Drama