সারপ্রাইজ
সারপ্রাইজ
অনেক দিন কোথাও যাওয়া হয়নি ,আত্মীয়দের বাড়ি যেতে তেমন একটা ভালো লাগে না, আত্মীয়দের প্রশ্নের বানে জর্জরিত হওয়ার খুব একটা ইচ্ছে নেই, একা একা দূরে কোথাও যাবো তারও সাহস নেই। তাই ভাবলাম কাছে পিঠে কোথাও থেকে ঘুরে আসি, আমার খুব বেশি বন্ধু-বান্ধব নেই , গুটি কয়েকজন আছে যদিও, তারাও আবার বলে সংসারের চাপে সময় পাই না যোগাযোগ করার, তাই আমি ও আর বিরক্ত করি না তাদের, সাদে - স্বপ্নে মেসেজ করে এই পর্যন্ত । থাক এসব কথা আসি আসল কথায়, আমার এক বন্ধু কাম দিদি আছে , সে আমায় খুব ভালো বাসে , শুধু সে না তার পরিবারের সবাই আমাকে খুব ভালোবাসে , বার বার ফোন করে যাওয়ার জন্য এমনকি বাড়ির অনুষ্ঠানেও অনেক করে যেতে অনুরোধ করেছিল কিন্তু আমি অনুরোধ রাখতে পারি নি ,আসলে আমার ভিড় পছন্দের নয়।
ভাবলাম বয়স্ক মানুষ গুলো এতো করে যাওয়ার জন্য বলেছে এই ভাবে অবহেলা করা ঠিক হবে না , এই স্বার্থের দুনিয়ায় আপনজন খুব কম জনই হয় যারা তোমার থেকে কিছু পাওয়ার জন্য না শুধু মাত্র তোমার সাথে সময় কাটানোর জন্য তোমায় খোঁজে।
আমি ভাবলাম একটু সারপ্রাইজ দিলে কেমন হয় , আনন্দ টা আর ও দ্বিগুণ হয়ে যেতে পারে, তাতে ক্ষতি কি আনন্দ পেতে সবাই ভালোবাসে। তাই কোনো মেসেজ না কোনো ফোন , একদিনের জন্য পরিকল্পনা করে নিলাম। তার পর তাদের সবাইয়ের পছন্দের সব খাবার ব্যাগে ভরে গাড়িতে চড়ে বসলাম । আমার বাড়ি থেকে বাসে ট্রেনে করে প্রায় ৩ ঘন্টার রাস্তা । বাসে বসে আমি মনে মনে ভাবতে লাগলাম, সবাই যখন হঠাৎ আমাকে তাদের বাড়ি গেটে দেখবে তাদের Reaction কেমন হবে, তারা আমাকে দেখে প্রথমে হয়তো বিশ্বাসীই করতে পারবে না, কারন গত ৮ বছর ধরে যাওযার জন্য বলেছে তবুও আমি যাইনি অথচ আজ না জানিয়ে পৌঁছে যাবো এটা প্রথমে ভাবতে পারবে না। যখন ব্যাগে তাদের পছন্দের খাবার গুলো দেখবে তখন তাদের কেমন আনন্দ হবে, (কিছু খাবারের জায়গা অনুযায়ী তার নিজস্ব বৈচিত্র্য থাকে)। এসব ভাবতে ভাবতে বাস থেকে ট্রেন, ট্রেন থেকে টোটো অবশেষে পৌঁছে যাই আমার গন্তব্য স্থলে।
প্রথমে বাড়িটা চিনতে পারিনি, ৮বছর আগে শেষ বার এসেছিলাম, বর্তমানে এত দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে যে এক বছরেই কত কি পরিবর্তন হয়ে যায় এতো দীর্ঘ ৮ বছরের ব্যবধান। কত নতুন নতুন বাড়ি হয়েছে, গাছ পালা কেটে ফাঁকা করে দিয়েছে, অনেক Develop হয়েছে জায়গাটার। ফোনটা করলে এতোটা অসুবিধা হতো না কিন্তু সারপ্রাইজ দিতে হবে তাই ফোনটা করতে পারছি না, অগত্যা পথচলতি মানুষ কে জিজ্ঞেস করতে বাড়ির গলিটা দেখিয়ে দিল। এখন আমার মনে একটা এক্সাইটমেন্ট কাজ করছে সারপ্রাইজ দেব কি মজা হবে ,ওফ্ আর ধৈর্য ধরছে না তাড়াতাড়ি পা চালালাম, বাড়িটা চিনে নিতে কোনো অসুবিধা হয়নি একতালা বাড়িটা এখনো একতালাই আছে তাছাড়া বাড়ির বাইরের গেটে বড় বড় করে নাম লেখা আছে , সবই ঠিকঠাক আছে কিন্তু গেটে তালা দেখে ভাবলাম ,হয়তো বাজারে গিয়েছে তাই বাইরের গেটে তালা লাগিয়ে চাবি সঙ্গে নিয়ে গিয়েছে। আমি ফোনটা বের করে জামাই-দাকে কল করলাম দু বার, দুইবারই রিং হয়ে কেটে গেল , মনটা যেন কু গাইছে , মনকে ধমক দিলাম যেটা ভাবতে চাইছো ওটা নয় সবাই বাড়িতে আছে, আবার একবার কল করলাম এবার দিদির ফোনে করলাম একবার রিং হতেই ফোনটা তুলল, ওপার থেকে ভাঙা ভাঙা গলায় আওয়াজ এল, এখন গাড়িতে আছি কিছু শুনতে পাবো না তোকে পরে কল করছি । আমি কিছু বলার আগেই ফোনটা কেটে দিল। আমার সাথে এটা কি হচ্ছে বুঝতে না পেরে হাঁ করে বাড়ির দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছি , এ
সেই সময় একটা মহিলা পেছন থেকে বলল , বাড়িতো কেউ নেই, দুপুরে সবাই ব্যাগ পত্র নিয়ে বেড়িয়ে গেছে, কোথায় যেন যাবে বলল। মহিলার কথা শেষ হতে না হতেই ফোনে একটা মেসেজের শব্দ এল, ফোনের লকটা খুলে স্কিনে চোখ রাখতে দেখতে পেলাম , লেখা আছে" আমরা ২ টার ট্রেনে সপরিবারে পুরী ঘুরতে এসেছি , প্রি- প্লান ছিল না হঠাৎ ই কালকে সন্ধ্যায় তোর মাসিমা বলল, পুরী ধামে নিয়ে যেতে, বাচ্চাদের ছুটি তাই তাই সবাই মিলে বেড়িয়ে পরেছি। ওখানে পৌঁছে তোকে ফোন করব"
মেসেজ টা পরে বুঝতে পারলাম দু দিনের আগে কেউ বাড়ি ফিরবে না। এই অবস্থায় আমি কাঁদবো না হাঁসবো বুঝতে পারছিলাম না, তবে সচরাচর আমি কাঁদি না , কিন্তু বিপদে পড়লে আমার খুব হাসি লাগে তখন যেন মনে হয় এটাই আমার প্রাপ্য ছিল ।
অন্যকে সারপ্রাইজ দিতে গিয়ে নিজেকেই যে সারপ্রাইজ হতে হবে এটা কখনোই ভাবিনি।