Sampa Maji

Abstract Inspirational Others

3.0  

Sampa Maji

Abstract Inspirational Others

রিতাদি#theinspiringwoman

রিতাদি#theinspiringwoman

7 mins
234


প্রতি দিনের মতো শিখা দেবী বিকেলের পড়ন্ত রৌদ্রে বারান্দায় বসে রাস্তায় পথ চলতি মানুষের ব্যস্ততার ছবি আঁকছেন মনে মনে।এই মানুষ গুলো কতোই না ব্যস্ত অথচ তাঁর কোনো ব্যস্ততা নেই আজ।আজ দুবছর হলো এই বৃদ্ধ আশ্রয়টা ইচ্ছে আগে এখানে বাড়ি ছিল। তবে কেউ তাকে তাড়িয়ে দেয়নি বা তাকে দেখার কেউ লোকজন নেই। এসবের কোনোটাই নয় তিনি তার জীবনের দায়িত্ব কর্তব্য পালন করে সংসার জীবন থেকে অবসর নিয়েছেন , সংসারে থেকেও সংসার জীবন থেকে অবসর নেওয়া যেত পারতো কিন্তু বাধক্য জীবনকেও যে উপভোগ করা যায় তা তিনি এই আশ্রমে একসাথে থেকে  বুঝেছেন এবং সবাইকে বুঝিয়েছেন।আজ রিতা দিদিকে খুব মিস করছে শিখা , ইচ্ছে ছিল শেষ বয়সটা একসাথে থাকবে কিন্তু সম্ভব হয়নি তার আগেই এই পৃথিবী ছেড়ে চলে গিয়েছে । এখানে যারা আছেন তারা সবাই শিখা দেবীকে খুব সম্মান করেন। তাঁর মতো এমন বিদূষী মহিলার কথা শুনেছেন সবাই কিছু কাছ থেকে দেখার সৌভাগ্য সবার হয় না। কিন্তু শিখা দেবী ভাবেন রিতা যদি তার পাসে এসে না দাঁড়াতো তাহলে হয়তো জীবনটা অন্য রকম হতো

 

শিখা  ,বাবা মায়ের আদুরে মেয়ে।দুই ছেলের পর এক মেয়ে তাই পরিবারের খুব আদুরে, বাবা বেসরকারি অফিসে কাজ করতেন তাই অর্থ কষ্ট কি তা কোনো দিন ছেলে মেয়েদের অর্থ কষ্ট কোনো দিন বুঝতে হয়নি। পড়াশোনার খুব ভালো নয় শিখা তবে কোন ক্লাসে ফেল করেনি । বাবা মায়ের বয়স হয়েছে তাই মেয়ের উচ্চ মাধ্যমিক দেওয়ার পর বাবা মা পাত্র দেখা শুরু করে দেয়। এক আত্মীয় দেখা পাত্র অমিয়ের সাথে শিখার বিয়ে হয় । মেকানিকেল ইঞ্জিনিয়ার সদ্য চাকরি পাওয়া অমিয় মা বাবার একমাত্র সন্তান, বাবা দু বছর হল মারা গিয়েছে । দেখতে দেখতে দুবছরের মাথায় কোল আলো করে আসে নিলয় এবং তিন বছরের মাথায় নিখিল। ছোট্ট ছোট্ট দুই ছেলে এবং আত্মীয় পরিজন এই নিয়ে যেন এক স্বর্গ রাজ্যে বাস শিখার। কিন্তু সুখ পাখি অতীথির মতো সবার জীবনে বেশি দিন থাকে না।এমনই এক দুপুরে অফিসের এক বন্ধু খবর দেয় অমিয় পথ দূর্ঘটনায় মারা গিয়েছে ।বাস থেকে নেমে যখন ফুটপাত দিয়ে হাঁটছিল তখন একটা লরি এসে ধাক্কা দেয়, হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার আগেই মারা যায়।এই খবর শুনে শিখার মাথায় বজ্রঘাত নেমে আসে। অমিয়র মৃত্যু সংবাদ শুনে সবাই এসেছিল কিন্তু কেউ পাসে দাঁড়ায় নি সবাই সান্ত্বনা দিয়ে চলে যায়। এই পরিস্থিতিতে শিখা কি করবে কিছুই বুঝতে পারে না। একদিকে স্বামীর বাড়িতে বৃদ্ধা শাশুড়ি ছাড়া কেউ নেই অন্যদিকে বাপের বাড়িতে সবাই আছে কিন্তু কেউ নেই , বাবা দু বছর হল গত হয়েছেন আর মা দুই দাদার সংসারে পালা ভাগির অংশীদার।এই অবস্থায় দাদাদের সংসারে শিখা অনাকাঙ্ক্ষিত আত্মীয় তাই না আসলেই ভালো হয়। তবে দাদা বৌদি পরামর্শ দিয়েছিল অল্প বয়সে বিধবা মানুষ এই সমাজে বাস করা খুব কঠিন তাই বাচ্চারা তো খুব ছোট, যদি রাজি থাকে তবে আবার বিয়ের জন্য পাত্র দেখা খোঁজ খবর শুরু করবে। কিন্তু শিখা রাজি হয় না দাদাদের মুখের ওপর বলে দেয় ,তোদেরকে সাহায্য করতে হবে না চারটে পেট আমি ঠিক চালিয়ে নেব। পারলে যোগাযোগ রাখবে এতেই হবে ,আর মা যতোদিন আছে তোমরা না চাইলেও আমি আসবো মাকে দেখতে।

 

শিখা বৃদ্ধা শাশুড়ি এবং দুটো ছোট ছোট বাচ্চাদেরকে অথৈই সমুদ্রের ভাসিয়ে কিছুতেই নিজের জীবন খুশি করার জন্য আবার বিয়ে করতে পারবে না। বিয়ের আগে সবাই প্রতিশ্রুতি দেয় কিন্তু কেউ রাখে না বলেই চলে, তাই বাচ্চাদের শৈশব নষ্ট করে জীবন সুখী করার কথা ভাবতে পারবে না , এই জীবন এই বৃদ্ধ শাশুড়ি আর দুটো বাচ্চাকে নিয়েই । তখন আত্মীয় স্বজন সবাই বলেছিল, শিখা তুই ভুল করছিস ছেলেদের মুখ চেয়ে আবার বিয়ে কর, এদের লেখাপড়া আছে এদের ভবিষ্যতের কথা ভাব , এদের খাওয়া পড়ার জন্য তো টাকা চাই তুই মেয়ে মানুষ কি করে একা এই তিনজনকে দেখবি , বিয়ে করলে তোর নতুন বর বৃদ্ধ শাশুড়ি আর ছেলেদের মেনে নেব। না হলে তো দুদিন বাদে তোরা সবাই না খেতে পেয়ে এমনি মরে যাবে, এসব কথা শুনে শিখা শুধু বলেছি আমি আর বিয়ে করবো না আর এদের ও না খেয়ে মরতে দেব না।

শিখা জানে অমিয় এর অফিস থেকে যা টাকা দিয়েছে এবং জমানো যা টাকা আছে তা দিয়ে কয়েক মাস চলবে মাত্র তার আগেই একটা কাজ জোগাড় করতে হবে। কিন্তু এই বাজারে কাজ পাওয়া মুশকিল তার ওপর কম পড়াশোনা জানা সুন্দরী বিধবা মেয়ে মানুষ যতো সৎপথে রোজগার করলেও লোকে বলবে অসৎ পথে রোজগার করছে।যে যা বলুক তাতে শিখার কিছু যায় আসে না। এখন একটা কাজের দরকার।অমিয় এর অফিসে গিয়ে যোগাযোগ করে যদি একটা কাজ পাওয়া যায়, কিন্তু  অফিসের বস  বলে দেয় এখন কোনো পোস্ট খালি নেই খালি হলে বলবে , একমাস বাদে খবর নাওয়ার জন্য বলে ।শিখা অমির এর  বন্ধু দের বলেছে কাজ খুঁজে দেওয়ারও জন্য সবাই বলে চেষ্টা করছি , হলো বলব ইত্যাদি ইত্যাদি। কয়েক মাস এই ভাবে ঘুরতে ঘুরতে শিখা বুঝতে পেরেছে এই সমাজে কেউ কারো উপকার এমনি এমনি করে দেবে না, তার জন্য কিছু না কিছু চাই ।তার ওপর শিখার বেশি দূর পড়াশোনা নেই এক্সট্রা কলিফিকেশন কিছু নেই কেই বাএমন কাজ দেবে । তবে সবার কথা বলার ইঙ্গিতে বুঝতে পারে সেটা বস হোক আর বন্ধু সবাই শিখার শরীর চায় ।

 

এই ভাবে প্রায় 6 মাস কেটে যায় একদিন ট্রেশনে যখন হতাশ হয়ে ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছিল তখন বাপের বাড়ির এক দিদির সাথে দেখা হয়। অনেক দিন বাদে রিতাকে দেখে প্রথমে শিখা চিনতে পারে না ।তার পর  কথা বলতে বলতে জানতে পারে সে সবজি বিক্রি করে বাড়ি ফিরছে। শিখার অবস্থা শুনছে আগেই । কি ভাবে সংসার চলছে জানতে চাইলে শিখা বলে,৬ মাস ধরে একটা কাজের জন্য ঘুরছি কিন্তু শুধুই ঘুরছি কিন্তু এখানে পেলাম না কোনো কাজ কথা।রিতা দিদি তখন বলে, শিখা তুই সবজি ব্যবসা করবি আমার মতো। রিতা আর বলে আমি তো নিজেও করি তোর কোনো অসুবিধা হবে না আমি তোকে শিখিয়ে দেব ।আর এখানে বেশি পুঁজিও লাগবে না। প্রথম প্রথম একটু কষ্ট হবে ঠিক ই কিন্তু ধিরে ধিরে শিখে যাবি আমার মতো। তোর মনে আছে আমার বাবার বাড়ির অবস্থা। আমি বাবা মায়ের কতো আদুরে মেয়ে ছিলাম বল, কোনো দিন বাজারে কিনতে পর্যন্ত যেতে দিতো না আর আজ আমি সেই বাজারের বিক্রেতা হয়েছি ।এরই নাম জীবন আর জীবন মানেই সংঘর্ষ। আমার স্বামী যখন ভালো ছিল তখন সে ও আমায় কোনো দিন বাজারে যেত দিত না বাইরের কাজ নিজেই করত কিন্তু যখন থেকে পঙ্গু হয়ে বাড়িতে বসে তখন থেকে আমাকেই সব করতে হয় । তবে আমি তখন এই কাজ শুরু করি তখন আত্মীয় পরিজন কেউ ভালো বলেনি এমনকি শশুর শাশুড়ি কিন্তু যখন থেকে দেখলো ঘরে টাকা আসছে তখন থেকে তাদের মুখ বন্ধ হয়ে গিয়েছে।।

শিখা আমি অনেক কথা বলে ফেললাম , কিছু মনে করিস না , মনে রাখবি কোনো কাজ ছোট না ।তোর যদি মনে হয় এই কাজ করতে চাস তবে আমার সাথে যোগাযোগ করবি । এক সপ্তাহ ভেবে দেখ বাড়ির লোকেদের বল আমার মনে হয় না তারা মেনে নেবে তবে এই কাজে তোর আত্ম-সম্মান নষ্ট হবে না একটু বলতে পারি।আজ আসিরে অনেক কথা বলে ফেললাম , আসা করি আবার দেখা হবে। রিতা দিদির ট্রেন এসে যায় তাই আর দাঁড়ায় না।শিখাও বাড়ি ফিরে আসে।

শিখা সবজি ব্যবসা করবে শুনে শাশুড়ি বা মা তেমন কিছু বলেনি তবে দাদা বৌদি রা বলেছিল সবার কাছে শুনতে হবে তোদের বোন বাজারে সবজি বিক্রি করে। দাদাদের কথার উত্তর দেয়নি সেদিন। মনে মনে বলেছিল সময় সব উত্তর দিয়ে দেবে । শিখা এখন একটাই ইচ্ছে ছেলেদের মানুষের মতো মানুষ করতে হবে তবেই সবাইকে সব উত্তর দেওয়া হয়ে যাবে।

 

শুরু হয় শিখার নতুন জীবন সংগ্রাম, ভোর ৪টায় উঠে গ্রামের বাজার থেকে সবজি কিনে ট্রেন করে শহরের বাজারে বিক্রি করে বাড়ি ফিরতো দুপুরে অথবা কোন দিন দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে যত। তবে একটাই ভরসা এক নয় রিতা দিও সাথে থাকে প্রথম প্রথম শিখা শুধু সঙ্গে যেত সবজি দরদাম করে কেনা থেকে শুরু করে খরিদ্দারের সাথে কথা বলা সব রিতাই করত, তার পর একদিন রিতাদির স্বামী খুব অসুস্থ হওয়া রিতাদি আহতে পারেনি সেদিন শিখা সাহস করে নিজেই দরদাম করে সবজি কিনে একাই বিক্রি করে আসে । তার পর থেকে আর কোনো অসুবিধা হয়নি । জীবনে রিতা দিল মতো সঙ্গী পেয়ে শিখা তার জীবন কে নতুন করে বাঁচতে শিখেছে।সবাই বলে মেয়েদের পাসে ছেলেরা না থাকলে মেয়েরা জীবন দাঁড়াতে পারে না কিন্তু শিখার জীবনে রিতা সেই জায়গা নিয়েছে। রক্তের সম্পর্ক সব হয় না শিখার দাদারা কোনো দিন টাকা দিয়ে সাহায্য করেনি কিন্তু রিতা সব সময় পাসে থেকেছে সাথেও থেকেছে ।ব্যবসায় লাভ লোকসান আছে যখনই টাকার দরকার হয়েছে তখনই রিতা দি হাত বাড়িয়ে দিয়েছে তবে শিখা বেশি দিন ধার বাকি রাখেনি যখনি টাকা পেয়েছে ফিরিয়ে দিয়েছে, শিখাও সময়ে অবসরে রিতাদিকে টাকা দিয়ে এসেছে।

এই জীবন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে শিখা দেবী বৃদ্ধ শাশুড়ি কে দেখেছে , দুই ছেলেকে মানুষ করেছে বড় ছেলে নিলয়কে ইঞ্জিনিয়ার এবং ছোটকে এম বি এ পড়িয়েছে । ইচ্ছে ছিল ছোটকে ডাক্তারি পড়ানোর তবে অতো টাকা জোগাড় করতে পারবে ভেবেই ছোট ছেলে নিখিল পড়তে চায়নি। জীবন সংগ্রামের অনেক কিছু পেয়েছে আবার হারিছে । মাকে হারিয়েছে, শাশুড়িকে হারিয়েছে। বৌমা,নাতি নাতনিদের পেয়েছে।এখন আর সবজি ব্যবসা করে না। শেষের দিকে আর শহরে গিয়ে বিক্রি করতো না স্টেশনের কাছে একটা দোকান করে নিয়েছিল। এখনো সেই দোকানটা আছে তবে সেটা ছোট ভাইপো দিয়ে দিয়েছে। দুই ছেলেই আজ মানুষের মতো মানুষ হয়েছে তাই আর শিখা দেবীকে কাজ করতে দেয় না । ছেলেদের মধ্যে একজন দিল্লিতে আর একজন মুম্বাইয়ে থাকে । তারা মাকে নিজেকে কাছে রাখতে চেয়েছিল কিন্ত মা যেতে চায় নি ।শিখা দেবীর ইচ্ছে শেষ বয়সটা গ্রামের বাড়িতে কাটিয়ে দেবে। বৃদ্ধ বয়সে এখানে সবার সাথে থাকবে । তাই  ছেলেরা মায়ের ইচ্ছে মতো তার জমানো টাকা দিয়ে নিজেদের বাড়িটাকে বৃদ্ধ আশ্রম করে দিয়েছে । গ্রামের বয়স্কারা বিশেষ করে বৃদ্ধারা নিজেদের ভিটে ছেড়ে যেতে চায় না । এখন এখানে ১৫ জন থাকে যাদের ছেলে নেই, মেয়েদের বিয়ে হয়ে গিয়েছে অথবা ছেলেরা বাইরে থাকা তারা কেউ শেষ বয়সে গ্রাম ছেড়ে শহরে যেতে যান না তার এখানে থাকে খাওয়া খরচা সবাই মিলে দেয় আর ডাক্তারি খরচার জন্য একটা তহবিল আছে সেখান থেকেই হয় । কিছুর অভাব সেই ভগবানের সংসারে খুব আনন্দ করেই দিন কাটে এই বয়স্ক মানুষ গুলোর।

এই গ্রামে শিখা দেবী মেয়েদের অনুপ্রেরণা । শিক্ষিত হয়ে বা বড় কিছু করেই যে মানুষকে অনুপ্রানিত করবে এমনটা নয় । নিজের জীবনকে নতুন করে বাঁচতে শিখেও অন্যের কাছে অনুপ্রেরণা হয়ে যায় ,তেমনই একজন শিখা দেবী।প্রত্যেকের জীবনে কেউ না কেউ অনুপ্রেরনা হয় । শিখা দেবী তার জীবনে রিতা দেবীকে তার অনুপ্রেরণা ভাবে।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract