স্বভাব যায় না ম'লে
স্বভাব যায় না ম'লে
নির্মলবাবু ছিলেন এক ছাপোষা সমাজসেবী - দরিদ্র কিন্তু সেবায় মগ্ন এবং প্রচারবিমুখ। বাবা লোকচক্ষুর আড়ালে থেকেই সকলের জন্য যে কত কিছু করে গেছেন সেটা সুজয় জানতে পারলো - তাঁর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার আসা তার অপরিচিত মানুষের ভিড় দেখে। বাবাকে সে নিজেই কখনও চিনতে পারে নি বলে, চোখ ফেটে জল আসছিলো তখন সুজয়ের।
মাস খানেক পর, আজ ভারি কালো দিন সুজয়ের জীবনে। এক তো সকালে তার স্বর্গীয় বাবার পোষ্যগুলোকে একটু খাবার দিতে পারেনি, তারওপর আবার খাবার দোকানের মালিকের সঙ্গে বৃথা ঝামেলা করে, জেলে বন্দী হয়ে থাকতে হলো গোটা দুপুরটা। ঈশ্বর তাঁর মঙ্গল করুন, যিনি রবাহুত হয়ে তার জামিন করিয়ে গেছেন থানায় এসে!
ছাড়া পেলেও, বাড়ি ফিরতে মন চাইছিলো না তার। কি করবে বাড়ি ফিরে? বাবার অবাধ্য হয়ে চাকরিটা ছাড়ার পর, তার খামখেয়ালি জীবন যাপনের পথে সব থেকে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে - এই বাবার পোষ্যগুলোই। একা সুজয় যেন কিছুতেই পেরে উঠছে না, এই কটা পেট ভরাতে। আজ বাবার অভাবটা তাই বোধ হয় আরও বেশি করে ভাবাচ্ছে তাকে।
সেই টানেই বাধ্য হয়ে অবশেষে বাড়ি ফিরে দেখে - ঘরে রাখা অনেক খাবার আর পানীয়ের প্যাকেট। কে বা কারা কেনই বা রেখে গেছে সেগুলো জানতে না পারলেও, এটুকু বুঝলো - আগামী দুদিনের জন্য ওদের খাবার চিন্তা করতে হবে না!
দুহাত তুলে সেই অজ্ঞাতনামা দাতার উদ্দেশ্যে লাখ লাখ প্রণাম জানিয়ে খাবারগুলো তুলে রাখতে থাকে সুজয়। ঘরের কড়িকাঠে বসে, পা দোলাতে দোলাতে মুচকি হাসেন সুজয়ের বাবা নির্মলবাবু।