Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!
Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!

Xr Rahul

Abstract Romance Action

4  

Xr Rahul

Abstract Romance Action

মানসিক সুখ

মানসিক সুখ

9 mins
361


'তুমি বাবাকে বলো, আমি বিয়েটা এখন করতে চাচ্ছি না।'


'কেন বিয়ে করবি না তুই? কী সমস্যা তোর?' মা প্রশ্ন করলেন।


'আমি পড়াশোনা শেষ করে নিজে কিছু করতে চাই।'


'বিয়ের পরেও পড়াশোনা শেষ করা যাবে। আর আমরা কী তোর বিয়ে কোনো বেকারের সঙ্গে দিচ্ছি যে তোরও কিছু করতে হবে! আমরা যা করছি তোর ভালোর জন্যই করছি।'


কথাটা বলেই মা হনহন করে ড্রয়িংরুমে বাবার কাছে গিয়ে বললেন, 'তোমার মেয়েকে তো কোনোমতেই রাজি করাতে পারছি না।'


বাবা বেশ চটে গেলেন। রাগত্ব স্বরে আমায় ডাকলেন।

আমি তার সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই জিজ্ঞেস করলেন, 'বিয়ে করতে সমস্যা কী তোমার?'


আমি থতমত গলায় জবাব দিলাম, 'আমি নিজের একটা পরিচয় তৈরি করতে চাই। আমি নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাই।'


কর্কশ কন্ঠে বাবা বললেন, 'তুমি খান বাড়ির মেয়ে, কয়েকদিন পরে তুমি তালুকদার বাড়ির পুত্রবধূ হবে। আর কিসের পরিচয় লাগবে তোমার?'


আমি অসহায়ত্বের দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম। বাবা বলে চলছেন, 'হানিফ ভালো ছেলে। ব্যবসায়ী পরিবারের ছেলে। ও তোমাকে সুখে রাখবে। ভালো থাকবে তুমি ওর কাছে। ভালো টাকা ইনকাম করে ছেলেটা। ওর সঙ্গে তোমার বিয়েটা হয়ে গেলে, তোমার নিজের আর কিছু করতে হবে না কষ্ট করে।'


আমার গলাটা ভারী হয়ে এলো। কিছুতেই বাবা-মা'কে বোঝাতে সক্ষম হলাম না। চোখের কোণে জল জমেছে কষ্টের। বাবার এক রোখা কথার পরে বলার মতো আরকিছু ছিলো না আমার। চুপ করে বারান্দায় চলে এলাম। 


বাবা ওপাশ থেকে চেঁচিয়ে বললেন, 'আমি ওাদের কথা দিয়েছি। এখানেই বিয়ে হবে তোমার। পরশু ওরা আসবে। ওরা তোমাকে পছন্দ করলে ওই আসরেই বাগদান সম্পন্ন করে রাখব। আমি চাই না তুমি কোনোভাবে আমাদের মানসম্মান খুঁয়ে দাও।'


চোখে জল টলমল করছে। আমার পছন্দ অপছন্দের দামই নেই। ছেলেপক্ষ পছন্দ করলেই হলো।


পাশে এসে দাঁড়ায় ছোট বোন অর্পা। 

'আপু, তুই কী সত্যিই এই লোকটাকে বিয়ে করবি?'


'জানি না। বাবা-মা জানেন।'


'বিয়ে করবি তুই, সংসারও করবি তুই। আর জানেন বাবা-মা?'


আমি চুপ করে রইলাম। অর্পা আবার কথা শুরু করলো, 'আপু জীবনটা তোর। তুই সিদ্ধান্ত নিবি কী করবি আর না করবি।'


আমি অর্পার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পরে বললাম, 'আমিও যদি তোর মতো সাহসী হতে পারতাম! তোর মতো করে ভাবতে পারতাম!'


'কে নিষেধ করেছে তোকে?'


'ছোটবেলা থেকেই যে ভয়ের মধ্যে বড় হয়, তার আর কখনো সাহসী হয়ে ওঠা হয় না রে।'


অর্পা আমার দিকে তাকিয়ে বললো, 'এই লোকটাকে আমার একদম পছন্দ না আপু৷ মায়ের ফোনে ছবি দেখেছি, লোকটার বয়স অনেক বেশি। তুই ছবিটা অন্তত দেখিস।'


মলিন স্বরে বললাম, 'ছবি দেখে আর কী হবে!'


অর্পা আমার দিকে কিছুক্ষণ ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে চলে গেলো। বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছি৷ অনুভব করছি, আমার সাংবাদিক হওয়ার স্বপ্নটা একটু একটু করে ধূসর হয়ে যাচ্ছে। 


বাবার মানসম্মানের কথা চিন্তা করে কখনো কাউকে ভালোবাসার আবেগে জড়াতে সাহস করে উঠতে পারিনি৷ ভার্সিটিতে যে সিনিয়র ভাইকে ভালো লাগতো, রোজ যাকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখতাম তাকেও কখনো বলতে পারিনি ভেতরের কথাটা।

সে গ্রাজুয়েট শেষ করে ভার্সিটি থেকে বিদায় নেওয়ার কালে আমাকে বলেছিলো, 'অথৈ আমরা কী বন্ধু হতে পারি?' 


বাবার কথা চিন্তা করে আমি তার এই বন্ধু হওয়ার প্রস্তাবটাকেও সেদিন প্রত্যাখ্যান করেছিলাম। টের পেয়েছিলাম, তার এই বন্ধু হতে চাওয়ার সম্পর্কটাই সামনে অন্যদিকে মোড় নিতে চাইবে। নিজেকে সামলে নিয়েছিলাম সেদিন। জানতাম, আর কখনো আমাদের কথা বা দেখা হওয়ার সুযোগ নেই। আড়াই বছর পেরিয়ে গিয়েছে আমাদের সত্যিই আর কখনো দেখা বা কথা হয়নি৷ 


কাঙ্ক্ষিত দিন চলে এলো। মা আমাকে শাড়ি পরিয়ে সাজিয়ে গুছিয়ে ফিটফাট করে তৈরি করে রেখেছেন। বাবা বারবার ব্যালকনিতে গিয়ে উঁকি দিয়ে দেখছেন ছেলেপক্ষ চলে এলো কী না!


কিছুক্ষণ বাদেই তারা চলে এলেন। অর্পার সঙ্গে আমি ছেলেপক্ষের সামনে গিয়ে বসি। ছেলেপক্ষের দিকে তাকিয়ে আমি ছেলেকে খুঁজতে থাকি৷ উপস্থিত কাউকেই আমার পাত্র মনে হচ্ছে না৷ তাহলে কী পাত্র আসেননি! ভাবতেই, সামনে থেকে একজন বললো, 'হানিফ তুমি তোমার পাত্রী নিজেই ভালো করে দেখে নাও।'


ছেলের নাম হানিফ, মনে পড়তেই সামনে তাকাই। আমার বিশ্বাসই হচ্ছে না, বাবা এরকম চল্লিশ বিয়াল্লিশ বছরের এক লোককে তার বাইশ বছরের মেয়ের জামাই করতে চাইছেন। 


আমি স্তব্ধ হয়ে মায়ের দিকে তাকালাম। মা হাসিমুখে তাকিয়ে আছেন ছেলেপক্ষের দিকে। একসময় সবাই আলহামদুলিল্লাহ বলে উঠলেন। আর আমার বুকের মধ্যে একটা ধাক্কা লেগে উঠলো। দেখাদেখির আসরেই বাগদান সম্পন্ন করে ফেললেন। আমি মা'কে ইশারায় যতবার বোঝাতে চেয়েছি, মা ততবার আমাকে থামিয়ে দিয়েছেন।


বিয়ের তারিখ ফাইনাল করে ছেলেপক্ষ বিদায় হলো। আমি মা'কে অনুনয় করে বললাম, লোকটার বয়স বেশি। আমি এই বিয়েটা করতে চাচ্ছি না।


মা ধমকের স্বরে বললেন, 'ছেলেদের বয়স একটু বেশিই থাকে। আর ছেলেদের বয়স বেশি থাকা ভালো। অল্প বয়সের ছেলেপুলে দিয়ে কী সংসার হয় নাকি!'


অর্পা বলে উঠলো, 'মা তুমি ছেলের ভুঁড়ি দেখেছো?'


মা রেগে গেলেন, 'পয়সাওয়ালা লোকেদেরই তো ভুঁড়ি থাকে। বেকার, কম পয়সার বেতনে চাকরি করা ছেলেদের ভুঁড়ি হবে কী করে! মাথায়তো এদের হাজারটা দুশ্চিন্তা থাকে।দুশ্চিন্তা আর ভুঁড়ি একসঙ্গে থাকতে পারে না৷ যে কোনো একটাকে বিদায় নিতে হয়।'


'তাহলে বাবার ভুঁড়ি নেই কেন?' 


অর্পার এবারের কথায় মা বেশ রেগে গিয়ে বললেন, 'তোদের দুই বোনের দুশ্চিন্তায়।' কথাটা বলেই তিনি দ্রুত পায়ে হেঁটে চলে গেলেন। 


অর্পা আমার দিকে তাকিয়ে বললো, 'এই বিয়েটা সত্যিই তুই করবি আপু?'


'বাবা-মা যখন বলেছেন তখন তো করতেই হবে।'


'কেন যে একটা প্রেম করলি না আপু! তাহলে আজ তার সঙ্গে চলে যেতে পারতি। তোর তো পালিয়ে যাওয়ার মতোও কেউ নেই!'


'কী আর করার! এই বয়স বেশি, ভুঁড়িওয়ালা লোকটাকেই বিয়ে করতে হবে।'


ঠিক সাতদিন পরে বিয়ে হয়ে যায় আমার৷ বাবা-মায়ের মুখে উপচে পড়া হাসি। বিয়ের অনুষ্ঠানে আত্মীয়-স্বজন এবং সমাজের সব উচ্চ কাতারের লোকেরা ভরপুর৷ কত ভরি গহনা দিয়েছে ছেলেপক্ষ, এটাই এখন মহিলা আত্মীয়স্বজনদের মধ্যে আলোচনার বিষয়বস্তু। ছেলের সম্পত্তি, প্রতিপত্তি, ক্ষমতা, মাসিক ইনকাম নিয়ে আনন্দের স্বরে কথা বলাবলি করছেন পুরুষেরা।


বিয়ে পর্ব শেষ। হানিফের সঙ্গে আমার সংসার জীবন শুরু। আমাকে একটা প্রাইভেট কার কিনে দিয়েছেন তিনি৷ একজন ড্রাইভার আছেন। আমি যখন তখন চাইলে গাড়িতে করে যেখানে সেখানে যেতে পারি। অথচ আমার গাড়ির তেমন প্রয়োজনই হয় না। বাসায় কাজের লোক রয়েছেন। রান্না-বান্না, ধোয়া-মোছা, গোছানো, সাজানো কিছুই আমার করতে হয় না৷ কিন্তু আমি রান্না করতে পছন্দ করি, বাসায় মায়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যেই এটা ওটা রান্না করতাম। শপিং খরচ, পার্লার খরচ, রেস্টুরেন্টে খাওয়ার খরচ বাবদ প্রতি মাসে আমাকে একটা মোটা অঙ্কের টাকা দেন হানিফ৷ কিন্তু আমার এসব টাকা খরচই হয় না৷ সাদামাটা জীবনটাই আমার ভালো লাগে, এত বিলাসবহুল জীবন তো আমার পছন্দ না। হানিফ কয়েকদিন পর পরই নানান উপহার সামগ্রী নিয়ে আসেন আমার জন্য। আমার মন না চাইলেও আমার তাতে জোর করে খুশি হতে হয়। 


পড়াশোনাটা শেষ করতে চেয়েছিলাম, হানিফ সম্মতি দিয়েছেন। কিন্তু পড়াশোনা শেষ করে কোনো চাকুরি করার বিষয়ে তিনি সম্মতি দেননি। বাবা-মাও কড়া গলায় বলে দিয়েছেন, চাকুরি করে সংসারে কোনো অশান্তি সৃষ্টি করা যাবে না। আমি মেনে নিয়েছি। 


আমি যখন দামি পোশাক গায়ে প্রাইভেট কারে ভার্সিটিতে যাই, আমার বান্ধবীরা তখন ঈর্ষণীয় দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে বলে, 'কী সুখ রে তোর! হিংসে হয় তোকে। কত ভালো একটা বর পাইছিস। কত সুখে রাখে তোকে।'


ওরা ভাবে আমি খুব ভালো আছি৷ কিন্তু ওরা জানে না ভেতরের খবর৷ আজকাল মানুষ উপর দেখেই ভেতর বুঝে নেয়। উপরের চকচকে প্রলেপে কখনো কখনো যে ভেতরের পোড়া ক্ষত ঢাকা থাকে, তা অনেকেরই জানা না। 


হানিফ রোজ সকালে অফিসে চলে যান। বাসায় ফেরেন রাত দেড়টা, দুইটা। কখনো বা তারও পরে। আবার কখনো ফেরেনই না৷ মাঝেমধ্যেই শহরের বাহিরে, দেশের বাহিরে চলে যান কাজে। ফেরার সময় এক গাদা উপহার নিয়ে আসেন৷ হয়তো এটাই তার ধারণা, উপহারেই বউ খুশি। তার আর কিছু চাই না। 


দেখতে দেখতে কেটে গেলো কয়েকটা বছর। বাবা-মা এবার আরও তাড়া দিচ্ছেন বাচ্চা নেওয়ার জন্য। শ্বশুরবাড়ির লোকজনও খুব করে চাচ্ছেন। তাদের সকলের ধারণা আমিই বাচ্চা নিতে রাজি হচ্ছি না। এ নিয়ে আকারে ইঙ্গিতে দু-পক্ষই আমাকে কথা শোনাচ্ছেন। হানিফ আগামী মাসে আমাকে নিয়ে কিছুদিনের জন্য সিঙ্গাপুর যেতে চাইছেন আবার৷


কয়েকদিন বাদেই হঠাৎ জানতে পারি, অর্পা বিয়ে করে বরসহ বাসায় ফিরেছে। মা ফোন করে খবর জানালে আমি দ্রুত চলে গেলাম। 


বাবা হুংকার মেরে বললেন, 'কোন সাহসে তুমি একটা বেকার ছেলেকে বিয়ে করে আমার সামনে নিয়ে এসেছো?'


'বাবা রোহান বেকার না, ও একটা চাকুরি করে।'


'ওটাও বেকারেরই মতো। কয় টাকা বেতন পায় আর!' মা বলে উঠলেন।


অর্পা স্পষ্ট স্বরে বললো, 'তোমার মেয়ে জামাই তিনবেলা খেয়ে বেঁচে থাকতে পারবে। শুধু বেঁচে থাকাই নয়, খুব ভালোও থাকতে পারবে।'


'জীবনের কী বোঝো তুমি? বাস্তবতা নাটক সিনেমার মতো নয়।'


বাবার কথায় অর্পা বললো, 'তোমার মতো অত না বুঝলেও এতটুকু বুঝি, কোথায় নিজের সুখটা খুঁজে পাওয়া যাবে।'


'সুখের কী বোঝো তুমি! কত ভালো ভালো প্রস্তাব তোমার জন্য রোজ আসে। আর তুমি কিনা আমার মেয়ে হয়ে এমন একটা কাজ করলে? তোমার বড় বোনকে দেখে কিছুই শিখতে পারোনি?'


অর্পা আমার দিকে তাকিয়ে বললো, 'আপুকে দেখেই তো শিখেছি৷ টাকার সঙ্গে বিয়ে দিয়েছো, কখনো জানতে চেয়েছো এতো টাকা পয়সার মাঝে আসলেই সে ভালো আছে কী না?'


আমি অর্পার দিকে তাকিয়ে বললাম, 'বাদ দে তো আমার কথা।'


বাবা বলে উঠলেন, 'কেন ভালো থাকবে না? কিসের অভাব ওর?'


অর্পা উত্তরে কিছু একটা বলতে যাবে আমি ওর হাতটা চেপে ধরলে থেমে গেলো ও৷ 


অর্পা লম্বা নিঃশ্বাস ফেলে বললো, 'আমি রোহানকে নিয়ে এখানে থাকতে আসিনি৷ আমি ওর বাড়িতেই চলে যাব। শুধু তোমাদেরকে জানাতে এসেছি যাতে তোমাদের ঠিক করা ওই পয়সাওয়ালা ছেলেকে তোমরা বিদায় জানাতে পারো।'


বাবা কপাল চাপড়াতে চাপড়াতে বললেন, 'আমি এখন ওদের কাছে কিভাবে মুখ দেখাব!'


মা আফসোস করে বলতে লাগলেন, 'আমি এখন আত্মীয়দের কাছে কী বলব, আমার ছোট মেয়ে দুই টাকার বেতনের চাকুরিওয়ালা ছেলেকে বিয়ে করেছে! হায় কপাল! কোথায় আমার বড় জামাই আর কোথায় এই ছেলে!'


অর্পা রেগে বললো, 'মানুষের পেশাকে একটু সম্মান দিও মা। আর পয়সা দিয়ে মানুষ বিচার করার মানসিকতাটাও বদলাও।'


রোহান চুপচাপ ড্রয়িংরুমে একা বসে আছে৷ 


মা রাগত্ব স্বরে বললেন, 'পয়সা ছাড়া আজকাল মানুষের দাম আছে নাকি!'


আমি মায়ের দিকে তাকিয়ে বললাম, 'টাকাই কী সব মা? টাকা ছাড়া তোমার ছোট মেয়ে যে সুখটাতে বসবাস করবে আমি এতো টাকার মাঝেও সেই সুখটা কখনো পাইনি আর পাবোও না।'


বাবা চোখ বড় করে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, 'কেন কী নেই তোমার? গাড়ি আছে, বাড়ি আছে, দামি গহনা, দামি পোশাক, দামি রেস্টুরেন্ট সবইতো উপভোগ করছো। এতো আরামের জীবন কোথায় পেতে আর?'


আমি নিঃশ্বাস ফেললাম। ভেতরে পুষে রাখা চাপা যন্ত্রণাগুলো জেগে উঠেছে। নিজেকে থামাতে করতে পারছি না। চোখের কোণে জলেরা ভীড় জমিয়েছে। 


'আমার সব আছে৷ চাকচিক্যময় জীবনের সবই আছে৷ কিন্তু আমি যখন আমার স্বামীর সঙ্গে বাহিরে বের হই লোকজন তখন এটা বলাবলি করে না যে আমি কত সুখে আছি, আমার গাড়ি আছে, বাড়ি আছে, গহনা আছে। লোকেরা তখন বলাবলি করে, বাবা-মেয়ে যাচ্ছে। এটাও বলে, মেয়েরা নাকি টাকাকে বিয়ে করে। টাকাপয়সা থাকলে ছেলের বয়স, ভুঁড়ি, টাক এসব নিয়ে আর কোনো কথাই তোলে না মেয়েরা৷ আমাদের একসঙ্গে দেখলে লোকজন হাসিঠাট্টা করে নানান কথা বলে। কখনো হাসি তামাশার ছলে বলে, কখনো আড়ালে আবডালে বলে। এগুলো তোমাদের স্পর্শ না করলেও আমাকে খুব আঘাত করে। অপমানিত হই খুব ভেতরেও আর বাহিরেও।'


মা বললেন, 'লোকে তো কতকিছুই বলবে। সব কথা কানে তুললে সংসার করবি কী করে! কত মেয়েরইতো স্বামীর বয়স বেশি থাকে তারাও তো সংসার করে। স্বামীর টাকাপয়সা নেই দেখে কত মেয়েরা সংসার ত্যাগ করে।'


'কিন্তু আমি তো তাদের কাতারের লোক হতে চাইনি। সবাইতো টাকা পয়সায় সুখ খুঁজে পায় না মা।'


বাবা-মা আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। আমি বলে চলছি, 'আমার স্বামীকে আমি অতি জরুরী প্রয়োজন ছাড়া তেমন কাছে পাই না৷ কারণ তার সময়ের খুব মূল্য। তিনি জানেন না আমার প্রিয় রং কী, পছন্দের খাবার কী, আমার শখ কী। তিনি যা পছন্দ করেন আমাকেও তাই চাপিয়ে দেন। সময় নিয়ে আমাকে জানবার মতো সময় তার হাতে নেই, তার হয়ওনি।' 


বাবা বললেন, 'সে কাজ করে সারাদিন, অকর্মা নয়। এখানে ওখানে তার মিটিং থাকে। অপচয় করার মতো সময় সে পাবে কোথায়! তারপরেও তো তোমাকে নিয়ে দেশের বাহিরে ঘুরতে যায় সময় পেলেই। তোমাকে তো সে কোনোকিছুর অভাবের মধ্যে রাখেনি। তাহলে আর এতো জানাজানি করে কী হবে?'


মা কিছু একটা বলতে যাবেন এমন সময় অর্পা বলে উঠলো, 'তোমরা কী জানো তোমাদের বড় জামাই বাবা হতে পারছেন না। বিদেশে কয়েকবার যাওয়ার কারণ কিন্তু ঘোরাঘুরি নয়, ডাক্তারের পরামর্শ আনতে যাওয়া।'


বাবা-মা এবার চুপ করে একে অপরের দিকে তাকিয়ে রইলেন। যেন তারা স্তব্ধ। বলার মতো যা ছিলো তাদের সব হারিয়ে ফেলেছেন। 


আমি তাদের দিকে তাকিয়ে বললাম, 'সন্তান ছাড়াও সংসার করা যায়। যদি সেখানে প্রকৃত সুখ থাকে। এই সুখটা লোক দেখানো সুখ নয়৷ এই সুখের নাম মানসিক সুখ।'


বাবা-মা এখনো চুপ করে আছেন৷ আমার চোখে ছলছল করছে জল। অর্পা রোহানের সঙ্গে বাসা থেকে বের হয়ে যাচ্ছে। আমি জানি ওরা দু'জন ভালো থাকতে পারবে। কারণ ওদের সেই সুখটা আছে, যে সুখটা আমার নেই।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract