Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!
Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!

Mysterious Girl "মিশু"

Thriller

3.8  

Mysterious Girl "মিশু"

Thriller

অসুখী পরিণয়

অসুখী পরিণয়

9 mins
361


আনন্দের বন্যা ও একরাশ আনন্দ নিয়ে সেজে উঠেছে দত্ত বাড়ি। মানুষের সমাগম ঘটছে, বাচ্চাদের ছেলেমানুষী দৌড়াদৌড়ি ও সকলের হাঁসির কলরবে মুখরিত হয়ে উঠেছে বাড়িটা।

উজ্জল বাবু স্ত্রী'কে খুঁজতে খুঁজতে হাঁক পাড়লেন "ওগো গিন্নি শুনছো!! কোথায় তুমি? দেখো দেখো জয়ন্ত এসেছে...."

"জয়ন্ত এসেছে?" বলতে বলতে ছুটে এলেন এই বাড়ির কর্ত্রী মালতী দেবী। বাড়ির সদর দরজায় বয়স আটাশের ছেলেটাকে দেখে মালতী দেবী একগাল হেসে অভিবাদন জানিয়ে বললেন, "এসো জয়ন্ত, দাঁড়িয়ে আছো কেন?"

"আন্টি আপনি একদম ব্যস্ত হবেন না। আমি তো এলাম অহল্যা ডাকলো বলে" জয়ন্ত খানিক হেসে বলল।

তখনই উপর থেকে ছুটতে ছুটতে নেমে এলো এই বাড়ির মেয়ে অহল্যা, সে বছর বাইশের মিষ্টি একটা মেয়ে।

"জয়ন্তদা তুমি এসে গেছো!! এখানে বসে কেন, চলো চলো উপরে চলো, তোমার জন্য আনা গিফ্টটা তোমাকে দেখাই। আংটিটা ঠিকঠাক মাপের না হলে চেঞ্জ করতে হবে আজই। কাল তো বিয়ে..." অহল্যা এক নিঃশ্বাসে এতটা বলে থামলো।

মালতী দেবী চোখ রাঙিয়ে বললেন, "কাল বিয়ে আর আজ তুই জামাইকে ডেকে পাঠিয়েছিস! জানিস না নাকি বর কনের দেখা হওয়া ঠিক নয় বিয়ের আগেই"।

"দেখা হবে না, এমনিতেই অভয়া দিদি বাড়িতে নেই। এসো তো জয়ন্তদা..." অহল্যা জোর করে টেনে নিয়ে গেল জয়ন্তকে।

মালতী দেবী কপাল চাপড়ালেন, "মেয়েটা যে কি করে"।

উজ্জল বাবু স্ত্রী'কে প্রশ্ন করলেন, "এসব ছাড়ো, তুমি বলো অভয়া কোথায়? ও আবার কোথায় বেরিয়েছে?"

"বলে যায়নি গো, খালি বলল এখুনি আসছি" মালতী দেবী আমতা আমতা করে বললেন। উনি জানেন এখুনি উজ্জল বাবু বকা দেবেন। কাল মেয়েটার বিয়ে, আর আজ মেয়েটা বাড়ি থেকে বেরিয়েছে একা, এতো ঠিক নয়।

অহল্যা জয়ন্তর আঙুলে আংটিটা পরিয়ে দিয়ে বলল, "ওয়াহ, একেবারে তোমার সাইজ এনেছি"।

"তোমার চোখ একদম ঠিক জিনিসটাই পছন্দ করেছে অহল্যা। তুমি যেমন মিষ্টি, তেমনই সুন্দর একটা জিনিষ এনে দিয়েছো" জয়ন্ত একগাল হেসে বলল।

"বাবাহ এত প্রশংসা! অভয়া দি শুনলে কিন্তু রাগ করতে পারে নিউ জিজু" অহল্যা কথাটা বলে হেসে উঠল।

"কেন রাগ করবো ছুটকি" অভয়ার গলা শুনে অহল্যা একগাল হেসে বলল, "আমি জানি দিদি তুই কখনো আমার উপর রাগ করতেই পারিস না। এই দেখ, আংটিটা সুন্দর হয়েছে না!!"

অহল্যা জয়ন্তর হাতটা তুলে ধরল অভয়ার সামনে। অভয়া আংটিটা দেখছে, আর জয়ন্ত বিস্ফোরিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে অভয়ার দিকে।

অভয়ার সাজগোজ অতি সাধারণ। বয়স পঁচিশের কোটা পেরালেও দেখে বয়স বোঝা যায় না, মুখটা শিশুসুলভ। মুখের হাসিটাও প্রাণোচ্ছল, মিষ্টি চেহারা।

"একি জিজু তুমি ড্যাবডেবিয়ে তাকিয়ে আছো কেন দিদির দিকে? ওহহো চোখ সরছে না দিদির থেকে!!" অহল্যা টিটকিরি দিয়ে বলল।

অভয়া মুচকি হেসে বলল, "আজকেই চোখ সরছে না জয়ন্ত, বিয়ের দিন কি করবে?"

"তাই তো, বিয়ের দিন কি করবে জিজু! বিয়ের দিন আমার দিদি অপ্সরী হয়ে উঠবে।" - অহল্যা

"একদম চিনতে পারবে না জয়ন্ত, একদম পারবে না" অভয়ার ঠান্ডা গলায় বলা কথাটা শুনে জয়ন্তর সারা শরীর জুড়ে যেন বৈদ্যুতিক তরঙ্গ বয়ে গেল। ভীত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল অভয়ার দিকে, অভয়ার ঠোঁটের কোণে একফালি চাঁদের মতো উজ্জ্বল হাসির রেখা ফুটে উঠেছে।

"ত... তুমি...." জয়ন্তকে তোঁতলাতে দেখে অভয়া অট্টহাসিতে ফেটে পড়ল, "ওহ গড জয়ন্ত, তোঁতলাচ্ছো কেন বাবু!!"

"দিদি আমার মনে হয় জিজু ভয় পাচ্ছে তোকে বিয়ে করতে, প্রেমিকা থেকে জাঁদরেল বউ হবি কি না!!" অহল্যা মজা করে বলল।

"তা হবো বইকি!" অভয়া কথাটা বলে বেরিয়ে চলে গেল। জয়ন্ত পিছনে ডাকতে গিয়েও পারলো না, গলা থেকে আওয়াজ বের হচ্ছে না। বাকশক্তি হারিয়ে গেছে বোধহয়।

মনে মনে আওড়ে নিল, "এ হতে পারে না, হতে পারে না। অভয়া, অভয়া কি করে এখানে হতে পারে?"

জয়ন্ত পড়িমড়ি করে ছুটে নিচে এসে সকলের সামনে বলে উঠল, "এই বিয়ে হবে না, হবে না বিয়ে"।

"এসব কি বলছো বাবা?" মালতী দেবী হতবাক হয়ে গেলেন। সব আয়োজন সম্পন্ন, আগামীকাল বিয়ে, আর জয়ন্ত বলছে বিয়ে হবে না!!

"কি হয়েছে জয়ন্ত? কেন হবে না বিয়ে?" অভয়া এগিয়ে এলো।

"কারণ তুমি তো একটু আগে....." জয়ন্ত বলতে গিয়ে থেমে গেল।

অভয়া ভ্রু উঁচিয়ে বলল, "একটু আগে কি?"

"তুমি অভয়া নও, হতেই পারো না" জয়ন্ত ভীত কন্ঠে বলল।

"এসব কি বলছো জিজু?" অহল্যা আশ্চর্যচকিত হয়ে চেয়ে রইলো।

"সত্যি বলছি, এটা অভয়া হতে পারে না। এটা অভয়া নয়। অভয়া একটু আগেই...." আবারও চুপ করে গেল।

"কি একটু আগে একটু আগে করছো বলোতো! একটু আগে কি হয়েছে জয়ন্ত?" অভয়া নাটকীয় ভঙ্গিতে সুর টেনে প্রশ্ন করল।

জয়ন্ত নিশ্চুপ হয়ে রইলো। অভয়া সবার উদ্দেশ্যে বলল, "তোমরা চিন্তা করো না, জয়ন্ত ঠাট্টা করছে। জয়ন্ত আর মজা নয়, এসো আমার সঙ্গে", অভয়া জয়ন্তর হাত ধরে টেনে বাড়ির বাইরে নিয়ে চলে গেল।

মালতী দেবী স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বললেন, "উফফ ভয় পাইয়ে দিয়েছিল এরা। এখনকার ছেলেমেয়েরা যে কি করে!!"

অপরদিকে বাড়ির বাইরে এসেই জয়ন্ত জোর করে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বললো, "কে তুমি! তুমি অভয়া নও, আমি জানি"।

"এ কি বলছো জয়ন্ত! তুমি আমাকে চিনতে পারছো না? আমি তোমার প্রেমিকা। সেই কলেজ লাইফ থেকে আমরা একে অপরকে ভালোবাসি, কাল আমাদের বিয়ে। আর আজ তুমি এসব বলছো!!" অভয়া মুখ ভার করে বলল।

"সব মনে আছে আমার। এটাও মনে আছে যে একটু আগে এই দুহাতেই আমি তোমাকে শেষ করে দিয়ে এসেছি" জয়ন্ত উত্তেজিত হয়ে চিৎকার করে উঠল।

অভয়া কয়েক সেকেন্ড চুপ করে থাকার পর ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসলো। চোখে মুখের মিষ্টি ভাব সরে গিয়ে ভয়ঙ্কর এক অভিব্যক্তি ফুটে উঠল। চোখ নিজের কোটোর ছেড়ে ঠিকরে বেরিয়ে আসতে চাইছে। এসব দেখে জয়ন্ত ভয় পেয়ে গেল, পিছিয়ে যেতে লাগল একটু একটু করে।

অভয়া ভয়ঙ্কর ভাবে হেঁসে উঠল, হাসি থামিয়েই দাঁত মুখ খিঁচিয়ে বলল, "কাল আমাদের বিয়ে জয়ন্ত, সময় মতো চলে এসো নয়তো আমি নিজে পৌঁছে যাবো তোমার কাছে। জানো তো আমি এখন অতৃপ্ত আত্মা...."

জয়ন্ত ঢোক গিলে কোনো রকমে ছুটে পালালো। অহল্যার গলা শুনে অভয়ার মুখে আবারও স্বাভাবিক হাসি ফুটে উঠল। ফিরে গেল বাড়ির ভিতরে।

সানাইয়ের সুরের সাথে মিলিয়ে আনন্দের কোলাহল বেড়ে চলেছে। আজ অভয়ার বিয়ে। মালতী দেবী খুব ব্যস্ত বিয়ের মন্ডপের কাছে সব গোছগাছ করতে। অপরদিকে উজ্জল বাবু খাবার দাবারের তদারকি থেকে শুরু করে অতিথি আপ্যায়ন, সবই করছেন। অহল্যা এখন সাজঘরের তদারকি করছে। অভয়ার সাজ প্রায় হয়ে এসেছে, লাল বেনারসিতে একেবারে অপরুপা লাগছে।

অহল্যা দিদিকে জড়িয়ে ধরে বলল, "তোকে খুব সুন্দর লাগছে রে দিদি, খুব সুন্দর"।

"তোকেও ভারী মিষ্টি লাগছে ছুটকি। তোদের ছেড়ে চলে যেতে মন চাইছে না রে, আমার খুব কষ্ট হচ্ছে" অভয়ার মুখে দুঃখের ছায়া নামলো।

"আরে কাঁদবি নাকি? আর ছেড়ে যাচ্ছিস তো কি, যাবি তো শ্বশুড়বাড়ি। সেটা বেশি দূর‌ নয়" অহল্যা দিদির দিকে তাকিয়ে মিষ্টি করে হাসলো।

অভয়া আহত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল, "অনেক দূর রে ছুটকি, অনেক দূর। এত দূর, যেখান থেকে ফিরে আসা যায় না কখনো...."

"কিহ! এসব কি বলছিস?" অহল্যা হতবাক হয়ে গেল।

"আরে ধুর কিছু না। যা দেখ তো জয়ন্ত এলো কি না!" অভয়া তাড়াতাড়ি বিষয়টা বদলে ফেলল।

"আরে আসবে আসবে, তাড়া কিসের?" - অহল্যা

"অনেক তাড়া, আমার হাতে যে বেশি সময় নেই" অভয়ার কথা শুনে আরেকদফা অবাক হলো অহল্যা। বিরক্তি প্রকাশ করে বলল, "কি আবোলতাবোল যে বকছিস আজ তুই!"

ইতিমধ্যে বর এসেছে রব উঠল। অহল্যা আনন্দে লাফাতে লাফাতে ছুটে চলে গেল। অভয়া নিজেকে আয়নায় দেখতে লাগল। চোখের দৃষ্টি বড়ই শীতল, অনুভূতি শূন্য।

ছাদনাতলায় দাঁড়িয়ে বর রীতিমত ঘামছে। শীতের দিনে কেন জয়ন্ত ঘেমে যাচ্ছে সেটা কেউ বুঝতে পারছে না। মাথা থেকে টোপরটা খুলে রেখে ঘামটা আবারও মুছে নিল জয়ন্ত। পাশ থেকে টোন টিটকিরি কাটছে অহল্যা।

এমতাবস্থায় চারজন পিড়ি ধরে কনেকে নিয়ে এসে উপস্থিত হলো ছাদনাতলায়। অভয়ার মুখের সামনে পানপাতা, মুখটা দেখা যাচ্ছে না। পিড়ি ধরে ছেলেরা সাত পাক ঘুরিয়ে দিল বিয়ের কনেকে। এবার সময় এলো শুভদৃষ্টির। অভয়া মুখের সামনে থেকে পান পাতা সরাতেই জয়ন্তর হাঁড় হিম হয়ে উঠল। একি দেখছে ও! অভয়ার মুখের একটা পাশে শুধু কঙ্কাল!!! জয়ন্ত ভয়ে কাঁপতে শুরু করেছে। কিছু বলার জন্য মুখ খুলতে গিয়ে বুঝলো আবারও ওর গলা থেকে স্বর বের হচ্ছে না।

"আর কতক্ষন একে অপরকে দেখবি! এবার তো থাম" অহল্যা ঠাট্টা করে বলল। জয়ন্ত হতবাক হয়ে বাকিদের দিকে তাকালো, কই তারা তো ভয় পাচ্ছে না। তারা এত স্বাভাবিক কি করে?

এরপর একে একে বিয়ের সমস্ত রীতিনীতি পালন হতে লাগলো। সিঁদুর দানের মাধ্যমে বিয়ে সম্পন্ন হলো।

নব বিবাহিত জুটিকে রাতের খাবার খাইয়ে নিয়ে আসা হলো বাসর ঘরে। অভয়া সবার উদ্দেশ্যে বলল, "বলছি হৈ হুল্লোর পরে করো তোমরা। আমি একটু একান্তে কথা বলতে চাই জয়ন্তর সাথে"।

"এখন আবার কি কথা বৌদি?" জয়ন্তর এক বন্ধু বলে উঠল।

"আরে বেশি না, দশ মিনিট" অভয়া অনুরোধ করলো।

জয়ন্ত তাড়াতাড়ি বলে উঠল, "কোনো কথা নয়, সবাই বসুক"।

"না না শুনে নাও নতুন বউয়ের কথা, নয়তো রাগ করবে যে" অহল্যা মুচকি হেসে সবাইকে নিয়ে বেরিয়ে চলে গেল।

জয়ন্ত পিছনে ডাকতে গিয়ে শুনলো অভয়া শীতল কন্ঠে বলল, "কাউকে ডেকে লাভ নেই জয়ন্ত, কেউ আসবে না"।

জয়ন্ত অভয়ার দিকে ফিরে তাকাতে ভয়ে ওর সারা শরীর অবশ হয়ে এলো। লাল বেনারসি সাজে থাকা অভয়াকে এখন এত কুৎসিত লাগছে যা বর্ণনা করা হয়তো সম্ভব নয়। চোখে মুখে রক্তের ছিটা, বুকের কাছ থেকে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে। কিছু কিছু জায়গায় রক্ত শুকিয়ে কালো হয়ে গেছে, এক বিভৎসতা ফুটে উঠেছে।

জয়ন্ত পালাতে গিয়েও পারলো না। ধরাম করে দরজা বন্ধ হয়ে গেল। দরজা বন্ধ হওয়ার পিছনে হাওয়ার দাপট চলেছে নাকি কোনো এক মন্ত্রবলে ঘটেছে তা বলা সহজ হবে না।

ঝড়ের গতিতে ছুটে এসে জয়ন্তর গলা চেপে ধরলো অভয়া। চোখে মুখের শীতলতা ভেদ করে বেরিয়ে এলো এক হিংস্রতা, "কি ভেবেছিলি তুই! আমাকে মেরে ফেলবি আর আমি ছেড়ে দেবো?"

জয়ন্ত নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে চলেছে তবে পারছে না। অসীম ক্ষমতাশালী অভয়ার সাথে পারছে না জয়ন্ত। কই গতকাল তো এটা হয়নি, খুব সহজে মেরে ফেলেছিল অভয়াকে, ছুঁড়ির আঘাতে ক্ষত বিক্ষত করে দিয়েছিল শরীরটা।

"কেন করলি তুই আমার সঙ্গে এটা! আমি তোকে ভালোবেসেছিলাম আর তুই শুধুমাত্র টাকা সম্পত্তির জন্য আমাকে শেষ করে দিলি? শুধু যদি এতটাই হতো তাও মেনে নিতাম কিন্তু তোর নজর পড়েছিল আমার ফুলের মতো নিষ্পাপ বোনটার উপর। কি ভেবেছিলি, আমাকে পথ থেকে সরিয়ে দিয়ে তুই রাজত্ব আর রাজকন্যা দুই হাসিল করবি? আমি হতে দেবো না। এতদিন যারা আমার মতো অনাথকে খাইয়ে পরিয়ে মানুষ করেছে তাদের এত বড় ক্ষতি হতে দেবো না আমি। আমি আমার পালিত মা বাবা ও বোনের কোনো ক্ষতি হতে দেবো না, আর এই জন্য আমি ফিরে এসেছি। আমি ফিরে এসেছি তোর ছায়া আমার পরিবার থেকে সরাতে"।

অভয়ার মুখের হিংস্রতা ও ভয়ঙ্কর অভিব্যক্তি ধীরে ধীরে আরো ভয়ানক হয়ে উঠেছে। জয়ন্তর শ্বাসরোধ হয়ে এসেছে প্রায়, আত্মাটা শরীর থেকে বেরোনোর জন্য ছটফট করছে।

অপরদিকে, বিয়ের অনুষ্ঠান শেষে সবাই একটু জিরিয়ে নিচ্ছে। বিরাট বড় একটা কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে। ইতিমধ্যে পুলিশের আগমনে সকলের মধ্যে ভয় ও হৈচৈ পড়ে গেল।

উজ্জল বাবু তাড়াতাড়ি এগিয়ে এসে বললেন, "একি আপনারা?"

"অভয়া দত্ত আপনার মেয়ে?" - পুলিশ অফিসার

"হ্যাঁ আমাদের মেয়ে, এইতো আজ ওর বিয়ে" মালতী দেবী বলে উঠলেন।

"বিয়ে? আমরা তো আজ সন্ধ্যায় অভয়া দত্তর মৃত দেহ উদ্ধার করেছি খালের পাশ থেকে। মেয়েটাকে খুন করা হয়েছে। শনাক্তকরণ করতে একটু সময় লেগে গেলো" পুলিশ অফিসারের কথা শুনে সকলে হতবাক।

মালতী দেবী চিৎকার করে উঠলেন, "এসব কি বলছেন আপনি অফিসার! আমার মেয়ে তো বাড়িতেই আছে, ওই তো বাসর ঘরে"।

অহল্যাকে আসতে দেখে উজ্জল বাবু বললেন, "অভয়া কোথায় রে মা? বাসর ঘরে আছে তো!"

"হ্যাঁ, জিজুর সঙ্গে কথা বলছে।" - অহল্যা

"হতেই পারে না। আমরা যে মৃতদেহ উদ্ধার করেছি সেটা অভয়া দত্তর। উনার পার্স পেয়েছি আমরা, সেখানে আইডি প্রুফ ছিল" পুলিশ অফিসার জোর দিয়ে বললেন।

"কি যা বলছেন বলুন তো! হতে পারে কোনোভাবে আমার মেয়ের ব্যাগ পড়েছিল ওখানে, তবে ওটা আমার মেয়ে হতে পারে না। আসুন আপনাকে আমার মেয়ের সঙ্গে দেখা করাই" উজ্জল বাবু পুলিশ অফিসারকে সাথে নিয়ে বাসর ঘরের সামনে এসে দাঁড়ালেন। সঙ্গে মালতী দেবী, অহল্যা ও আরো অনেকেই আছে।

ঘরের দরজা খুলতে সকলের মুখে বিস্ময় ফুটে উঠল। জয়ন্তর শরীরটা রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে মেঝেতে। পুলিশ অফিসার কাউকে ঢুকতে না দিয়ে নিজেই ঢুকলেন আগে। জয়ন্তকে নৃশংস ভাবে খুন করা হয়েছে। যেন ধারালো কোনো অস্ত্র দিয়ে শরীরটা খুবলে দেওয়া হয়েছে।

অহল্যা কাঁপা কাঁপা গলায় বলল, "ওই দেখো, ওই দেখো দেওয়ালটায় কি লেখা আছে...."

অহল্যার আঙুল অনুসরণ করে সবাই তাকালো সেদিকে।

রক্ত দিয়ে লেখা আছে, "মা, বাবা, ছুটকি তোমাদের ছেড়ে যেতে খুব কষ্ট হচ্ছে। আমাকে বাঁচতে দিল না একজন মানুষের লোভ, তোমাদের থেকে ছিনিয়ে নিল। তবে আমিও তাকে উচিত শাস্তি দিয়ে গেলাম। তোমরা ভালো থেকো"।

"দিদি..." অহল্যা চিৎকার করে কেঁদে উঠল। মালতী দেবী ও উজ্জল বাবু এখনো অশ্রুসিক্ত নয়নে তাকিয়ে আছে লেখাটার দিকে।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Thriller