গোয়েন্দা ( ধারাবাহিক)
গোয়েন্দা ( ধারাবাহিক)
পর্ব সাঁইত্রিশ
টানা জেরায় জেরবার পবন কুমারের মুখ কালো হয়ে আছে। পুত্র পঞ্চানন সম্মুখে বসে আছে। একই টেবিলে মুখোমুখি। দু'পাশে মি. দস্তিদারকে নিয়ে মোট পাঁচ ছন পুলিশ অফিসার জিজ্ঞাসাবাদ করে চলেছেন। কখনও পবন কুমারকে কখনও পঞ্চাননকে ।
হঠাৎ এক পুলিশ অফিসার প্রশ্ন করলেন - মি. ঢাঙ ! আপনি কি বিবাহিত?
পবন কুমার বললেন - আপনি কি বলতে চান আমার সম্মুখে যে বসে রয়েছে সে আমার ছেলে নয় ?
- শুধু স্বীকারোক্তি দিয়ে তো কাউকে নিজের বংশধর বলে দেওয়া যায় কি ? আমরা খবর নিয়েছি আপনি বিবাহ করেননি । তার অর্থ দাঁড়ায় সম্মুখস্থ যুবকটি আপনার অবৈধ সন্তান ।
পঞ্চানন বাধা দিয়ে বলে - স্যার, আমি একটা কথা বলি।
- বল ।
- স্যার, শুনেছি আমার একজন কুমারী মা আছেন ।
তিনি বিয়ের আগেই আমায় জন্ম দিয়ে পরিত্যাগ করেছেন। তখন এই ভদ্রলোক আমাকে তাঁর কাছে রেখে লালনপালন করে বড় করেছেন ।
- সেইজন্য তো জিজ্ঞেস করছি মি. পবন কুমার ঢাঙ, আপনার বিবাহিত জীবন সম্পর্কে বলুন।
পবন কুমার এবার বললেন - বিয়ে আমার হয়নি ঠিকই। কিন্তু একজনের সাথে আমার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। সে সম্পর্ক এতদূর গড়িয়েছিল যে আমরা নিয়মিত মিলন করতাম । তারই ফলশ্রুতি এই পঞ্চানন । যদি বিশ্বাস না করেন; প্রয়োজনে আমাদের ডি এন এ টেস্ট করিয়ে নিতে পারেন । আমি আশ্চর্য্য হয়ে যাচ্ছি যে ছেলেকে আমি নিজের হাতে মানুষ করেছি সেই কি না আজ আমাকে ফাঁসিয়ে দিচ্ছে। এমনটা হবে জানলে ওকে ফেলে দিয়ে আসতাম ।
মি. দস্তিদার বললেন - কে সেই মহিলা, যার সঙ্গে আপনার প্রণয় ছিল ?
পবন কুমার বললেন - বললেও তো আপনারা বিশ্বাস করবেন না ।
- সে প্রশ্ন পরে। আগে নামটা তো বলুন।
- তাঁর নাম ছিল অনুপ্রভা ।
- ছিল মানে ? এখন নেই নাকি ?
- আজ্ঞে না। কয়েকদিন পূর্বে তিনি গত হয়েছেন ।
- সে খবরও রেখেছেন দেখছি। তাঁর কি অন্য কারো সাথে বিয়ে হয়েছিল ?
- যথার্থ ধরেছেন । আমার আর্থিক সঙ্গতি সে সময় ভালো ছিল না। গোয়াবাগান এলাকা থেকে জনৈক অরুণকিরণ চৌধুরী মহাশয় তাঁর সুপুত্রের জন্য অনুপ্রভাকে নির্বাচিত করে বিবাহ দিয়েছিলেন।
- অরুণকিরণ চৌধুরী ? আপনি কি খ্যাতনামা ব্যবসায়ী অরুণকিরণ চৌধুরীর কথা বলছেন ?
- আজ্ঞে হ্যাঁ ।
পঞ্চানন এবার সুযোগ পেয়ে বলে দিল - আমি শুনেছি তিনি মারা গিয়েছিলেন আমার জন্মদাত্রীর বিয়ের অব্যবহিত পরেই।
মি. দস্তিদার বললেন - তাঁর মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে কিছু জান?
পঞ্চানন বলল - শুনেছি ভ্যাম্পায়ার জাতীয় কোন প্রাণীর আক্রমণে তিনি গত হয়েছেন ।
মি. দস্তিদার একটু হেসে ফেললেন ।
- ভ্যাম্পায়ার ! ইউ মিন রক্তচোষক বাদুড় জাতীয় কোন প্রাণী ?
- না স্যার, সে একজন যোগসিদ্ধ মানুষ ছিল বলে শুনেছি।
- কার মুখ থেকে শুনেছ ?
- আমার এক বন্ধু ছিল - সূর্য্য । সূর্য্যকিরণ চৌধুরী। সম্পর্কে সে অরুণকিরণ চৌধুরীর নাতি । স্যার, সূর্য্যকিরণের মায়ের নাম ছিল অনুপ্রভা। আর সূর্য্যকিরণের বাবা হলেন তপনকিরণ চৌধুরী মহাশয় ।
মি. দস্তিদার বললেন - কেস সিমস টু বি ভেরি ইন্টারেস্টিং ।
এবার তিনি পবন কুমারকে জিজ্ঞেস করলেন - আপনি কি এ বিষয়ে কিছু জানেন - মানে অনুপ্রভা নামের সঙ্গে তপনকিরণ নামটাও জড়িয়ে যাচ্ছে তো !
মি. পবন কুমার বললেন - আজ্ঞে হ্যাঁ। এই অনুপ্রভাই ছিল আমার বিগত অনু ।
- তবে তো কেস আরও জটিল হয়ে গেল । আমার তো সন্দেহ হচ্ছে মিঃ অরুণকিরণের মৃত্যুর পশ্চাতে আপনার কোন হাত আছে।
পবন কুমার বললেন - পুলিশের সকলকে সন্দেহ করা একটা বাতিক। আমি খামোখা ওঁকে মারতে যাব কেন ? তাও আবার পঞ্চার কথামত ভ্যাম্পায়ার সেজে ?
মিঃ দস্তিদার বললেন - বলেছি না কোন প্রশ্ন নয়; শুধু উত্তর চাই। প্রশ্ন করার অধিকার এখন শুধু আমাদের ।
যে প্রশ্ন করেছি তার উত্তর দিন । তা না হলে সিলিংয়ে ঝুলিয়ে পেটাবো।
ধমক খেয়ে পবন কুমার দিশাহারা হয়ে বললেন - যা জানি না তার উত্তর কেমন করে বলব !
- ঠিক আছে। ওটা আমরা ঠিক বের করে নেব । এবার বলুন পালিয়ে কোথায় যাচ্ছিলেন ?
ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে পবন কুমার উত্তর দিলেন - আপনাদের ধরাছোঁয়ার বাইরে।
- একমাত্র উপরে না চলে গেলে পুলিশ ঠিকই খুঁজে বের করবে । বলুন কোথায় যাচ্ছিলেন আর কিসের এত তাড়া ছিল যে ট্রাফিক আইন ভেঙে রেড সিগন্যালেও তীব্র গতিতে গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছিলেন ?
পবন কুমার উত্তর দিলেন - আমার কাকাতুতো ভাইকে দেখতে যাচ্ছিলাম।
বিস্ময় প্রকাশ করে মিঃ দস্তিদার বললেন - এই ভাবে ?
( চলবে )