Mithun Mondal

Drama Romance Tragedy

3  

Mithun Mondal

Drama Romance Tragedy

ঃ-সোহাগ-

ঃ-সোহাগ-

4 mins
430



দূর থেকে ডাঃ অনিমেষ হালদারকে দেখে সোহাগ প্রায় ছুটতে ছুটতে তিনতলা থেকে নেমে এসে বলল, ‘ মা অনিমেষদা আসছে আজ কি গাজরের হালুয়াটা বানানো হচ্ছে’! অঞ্জনাদেবী চুল আঁচড়াচ্ছিলেন ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে। আয়নায় মেয়ের হাসিখুসি মুখটা দেখে অঞ্জনাদেবীর মন ভরে গেল। কে বলবে এই মেয়ে ৬ মাস আগে তিন তিন বার সুইসাইড এটেম্পট নিয়েছে। অঞ্জনাদেবী মেয়ের দিকে না ঘুরেই আঁচলের এক কোন ধরে কপালের সিঁদুরের ছিঁটে মুছতে মুছতে বললেন, ‘তোর অনিমেষদা আসছে, তুই বানিয়ে খাওয়া। মা ভালো হচ্ছে না কিন্তু... সোহাগ কপট রাগ দেখিয়ে বাড়ির দরজার বাইরে দিকে এগিয়ে গেল। সোহাগের একটু পরিচয় দেওয়া যাক। সোহাগের পুরো নাম সোহাগ সেন। ইন্ডাস্ট্রিয়ালিষ্ট নিখিল সেনের একমাত্র মেয়ে।নিখিল সেন হালে বড়ো লোক নয়! তাদের অ্যান্টিসেপটিক ক্রিমের ব্যবসা চলছে তিন পুরুষ ধরে। তাছাড়াও দার্জিলিঙে একটা চা বাগান এবং আর আরও দু-তিনটে কোম্পানির শেয়ার কেনা আছে। সোহাগ গত বছর বাংলায় এম.এ করেছে। ডাঃ অনিমেষ হালদার। বয়স ৩২। সাইকিয়াটিস্ট। গত পাঁচ মাস ধরে সোহাগের কাউনসেলিং করছেন।প্রথম তিন মাস ডাক্তারের নিয়ম মেনে কাউন্সেলিং করতেন। এখন আর করেন না। ঘণ্টা খানেক সোহাগের সাথে এটা সেটা নিয়ে গল্প করেন, চলে যান। সোহাগ খুশি, বাড়ির লোকও খুশি। গত সপ্তাহেই অনিমেষ হালদার নিখিলবাবুকে বলেছিলেন যে আর আসার দরকার নেই, আপনার মেয়ে সুস্থ হয়ে গেছে। কিন্তু অনিমেষ হালদার আসবে না শুনেই মেয়ে আবার খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। নিজের ঘরে বসে থাকে, কারও সাথে সেই রকম কথাও বলে না। বাধ্য হয়ে আবার ডাকতে হয় ডাঃ অনিমেষ হালদারকে।‘ কি ব্যপার সোহাগ? তোমার নাকি খুব শরীর খারাপ? লুজ মোশন হয়েছে’? ‘না তো! কে বলল আপনাকে’? সোহাগ একটু গম্ভীর ভাবে বলল। ‘তোমার বাবা ফোন করে বললেন,তুমি খাওয়া ছেড়ে দিয়েছ’! তাই আমি ভাবলাম, গরম রসগোল্লা খাও ঠিক হয়ে যাবে’। অনিমেষ মুচকি হেসে বলল। ‘ছিঃ! লুজ মোশন!আপনি শেষে এই ভাবলেন? অন্য কিছুও তো ভাবতে পারতেন! ‘পারলাম না তো! আমার চিন্তা শক্তির একটা লিমিটেশন আছে’? ঠিক আছে আপনি উপরে চলুন আমি চা নিয়ে যাচ্ছি।


 সোহাগ চা নিয়ে ঘরে ঢুকলেই অনিমেষ জিজ্ঞেস করে, ‘তোমাকে যে ডেলি রুটিন করে দিয়েছিলাম সেটা তুমি ফলো করছ’? ‘সকালে যোগাটা নিয়মিত করা হয়নি, গান মাঝে মাঝে শুনেছি, তবে ছবি আঁকাটা শুরু করতে পারিনি’।কেন? অনিমেষ গম্ভীর ভাবে জিজ্ঞেস করল। ‘ছবি আঁকার জন্য যে কনসেন্ট্রেশন লাগে সেটা আমার নেই’। ‘সেটা আসবে কি করে? নিয়মিত যোগা না করলে, সবার সাথে কথা না বললে এবং নিয়মিত মেডিটেশন তো করতেই হবে। সোহাগ, ইফ ইউ ডোন্ট কোঅপারেট উইথ মি, আই কান্ট হেল্প ইউ’। অনিমেষ একটু উত্তেজিত হয়ে কথা গুলো বলল। সোহাগ মুখ নিচু করে বসে থাকে। অনিমেষ আবার বলতে শুরু করে, ‘ সোহাগ অতীত নিয়ে বসে থেকো না, জীবনটা অনেক সুন্দর!এই ভাবে নিজেকে কষ্ট দিয়ো না, অন্তত নিজের মা-বাবার মুখ চেয়ে’। সোহাগের চোখ ছল্ ছল্ করে ওঠে। ‘অনিমেষদা আমি তো অতীত ভুলতেই চাই কিন্তু পারছি না তো! আমার কিছু ভালো লাগছে না।আমার আর বেঁচে থাকতে ভালো লাগছে না’। সোহাগ খুব তাড়াতাড়ি রুমাল দিয়ে চোখের জল মুছে নিয়ে বলে, আমার কথা ছাড়ুন, আমার আর কিছু হওয়ার নেই! আপনি কেমন আছেন বলুন’? ‘সোহাগ কথা ঘোরানোর চেষ্টা করোনা!অনিমেষদা বিশ্বাস করুন আমি পারছি না, অনেক চেষ্টা করেছি। প্রতি মুহূর্তে নিজেকে অপরাধী মনে হয়! নিজেকে শেষ করে দিতে ইচ্ছে করছে।


৬ মাস আগের ঐ ঘটনা বার বার ... সোহাগ ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে। ‘তুমি কেন নিজেকে দোষী ভাবছ, সেটা একটা দুর্ঘটনা! রাতুল সেই দিন তোমার কথা শুনে এখানে না এসে, অন্য কোথাও যেতে গিয়েও অ্যাকসিডেন্ট করতে পারত। দুর্ঘটনা সব সময় বেদনাদায়ক। কিন্তু সেই একটা ঘটনাকে নিয়ে সারা দিন রোমন্থন করলে তুমি বাঁচবে কি করে?যে চলে গেছে সেতো ফিরবে না। সোহাগ আবার চোখের জল মুছে বলে, ‘অনিমেষদা শুধু আমার মনে হয়, আমি যদি সেই দিন ওকে আসতে না বলতাম! ওতো সেই দিন আসতেও চায় নি, আমিই জোর করেছিলাম। আমিই ওকে শেষ করে দিলাম। ‘ওকে! এনাফ! আমরা এই নিয়ে আর কথা বলব না। আচ্ছা তুমি আমাকে দুসপ্তাহ আগে একটা কবিতা আবৃত্তি করে শোনাবে বলে ছিলে, সেটা শোনাও। আপনি তো আসাই বন্ধ করে দিলেন। আজ আর মুড নেই। অন্য দিন শোনাই। কেন? আজ নয় কেন? কোন কবিতা, জীবনানন্দের ‘বনলতা সেন’ না জয় গোস্বামীর ঐ মালতি লতা বালিকা বিদ্যালয়। দুটোই ভালো। যেটা খুশি শোনাও। সোহাগ কবিতা আবৃত্তি শুরু করলে, অনিমেষের মুঠো ফোনটা বেজে ওঠে। ঋদ্ধিমা, অনিমেষের স্ত্রী ফোন করেছে। কখন আসবে, তোমার আজ দক্ষিনাপন নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল।মনে আছে? ‘ও তাইতো! আমি আধ ঘণ্টার মধ্যে আসছি। ফোন রেখে অনিমেষ বলে, ‘সোহাগ আজ থাক! কয়েক দিন পরে তোমার বার্থ ডে না? ঐ দিন আমি আসব, তোমার আবৃত্তিও শুনব আর পেট পুড়ে খেয়েও যাবো। ঠিক আছে ঠিক আছে আমাকে আর বোঝাতে হবে না, আপনি যে বউদিকে ভয় পান সেটা বুঝতে পারছি। সোহাগ মুচকি হেসে বলে। বউকে ভয় পায় না এই রকম কোন পুরুষ আছে? তুমি ডাক্তারই হও কি সুপ্রিম কোটের জাজ! সবাই বউকে ভয় পায়। দুজনেই খুব হাসতে লাগল।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Drama