Nityananda Banerjee

Thriller

4  

Nityananda Banerjee

Thriller

ললন্তিকা ধারাবাহিক

ললন্তিকা ধারাবাহিক

5 mins
407


পর্ব ছেচল্লিশ

মিঃ দেবেন্দ্র ভৌমিকের কল পেয়ে গোপালকৃষ্ণ চাকলাদার মহাশয় বিচলিত হলেন ।

বললেন - ললন্তিকা সেন কে ? তার নাম তো কখনও শুনিনি।

বনলতা রুদ্র কল্যাণী সবাইকে জিজ্ঞেস করলে ; ওরাও

বললেন - নাহ্ এ নাম তো কেউ শুনিনি

গোপালকৃষ্ণ বাবু মিঃ ভৌমিককে বললেন - এ আপনি কি বলছেন আরণ্যকের মত প্রথিতযশা সাহিত্যিকের সঙ্গে ললন্তিকা সেনের কি সম্পর্ক ?

- সে তো আমিও জানি না দাদা । তবে মেয়েটিকে আমার বাড়িতে রেখেছিল আমারই এক প্রতিবেশী। আমিনা বিবি। তার ছেলে কামালের সঙ্গেই তো বেড়া ডিঙিয়ে বাংলাদেশে আমার কাছে আসে । কামালকে আমরা ভদ্র ছেলে বলেই জানি। আর ওদের সঙ্গে আমাদের রিলেশন খুব মজবুত বলে না করতে পারিনি । কিছুদিন আগে জানতে পারলাম আরণ্যক ওকে চেনে। ওদের রিলেশন খুব ঘনিষ্ঠ। হয়তো সে জন্যই আমাকে বারবার অনুরোধ করে আরণ্যক বলেছিল মেয়েটিকে পুলিশে না দিতে । তা না হলে, আমি নিজে প্রাক্তন পুলিশ কর্তা হয়ে কবেই ওকে জমা করে দিতাম থানায় ।

- দাঁড়ান দাঁড়ান, ভাই । একটু ঢোক গিলে নি । এখন মেয়েটা কোথায় আছে; আপনার কাছেই ?

- সেইটেই তো প্রব্লেম হয়ে গেছে । মেয়েটা দশমীর রাতে ভাসানের সুযোগ নিয়ে পালিয়েছে। এখন কোথায় আছে - ভারতে না বাংলাদেশে বুঝতে পারছি না । তবে আমার মনে হয় ও ভারতেই চলে গেছে। এ দেশে তো ওর চেনা পরিচিত কেউ নেই ! আর একটা কথা, ইন্টারপোলও ওকে খুঁজছে।

- একটু আগে কামাল না কি নাম বলছিলেন না ! 

- আজ্ঞে হ্যাঁ। কামাল আমিনা বিবির ছেলে। আমরা তো বটেই, আমিনাও জানত ও ঢাকায় কোন দপ্তরে কাজ করে । পরে শুনলাম ও ভারত থেকে গোরু পাচার করে এখানে ।

- ওরে বাপ রে ! সাংঘাতিক ছেলে তো ! আমরা আজ সকালে শুনলাম সামওয়ান আতাউর কামাল হ্যাজ বিন শট ডেড নিয়ার দ্য রিভার দামোদর এট রাণীগঞ্জ।

- ও আই সি । খবরটা তো ওর মাকে দিতে হয় ! ঠিক আছে, দাদা , এখন রাখছি । আরণ্যককে খবরটা দিমে দি। 

গোপালকৃষ্ণ বাবু গুড নাইট বলে ফোন ছাড়লেন। কিন্তু ললন্তিকার টিকাটা যেন গুটিবসন্তের মত সারা গায়ে কাঁটা বুলোচ্ছে ।

বনলতাকে ঘটনার কথা বলতেই লজ্জায় ঘেন্নায় আরণ্যকের প্রতি রাগের উন্মেষ হল ।

বললেন - এবার বুঝেছি। কণাকে তাহলে মেরে ফেলা হয়েছে ।

গোপালকৃষ্ণ বললেন - সে কি করে সম্ভব ? আরণ্যক তখন তো শয্যাশায়ী !

- আরে সে অন্য কাউকে দিয়ে খুন করিয়েছে। পরকীয়ায় কত কি হয় !

মজা করে বললেন - তোমার তেমন কেউ আছে নাকি ? থাকলে বল, ছেলে বৌমা নাতি নাতনী নিয়ে সরে যাব ।

গোপালকৃষ্ণ বাবু হা হা করে হাসলেন । কি জবাব দেবেন এই কথার ।

একবার ভাবলেন রাণীগঞ্জে ফোন করে আরণ্যককে খবর দিয়ে দেবেন । বনলতা দেবী বললেন - ওকে খবর দেবার থাকলে দেবেনই দিক । আমাদের যেমন অন্ধকারে রেখেছে আমরা তেমনই থাকি।

মনে ধরল কথাটা গোপালকৃষ্ণ বাবুর । যার ঝামেলা সে মিটিয়ে নেবে ।

ললন্তিকাকে নিয়ে অরবিন্দ গেল মোহান্তর নিকট । বলল - মহারাজ ! আজ আমাদের কন্ঠীবদল করিয়ে দিন এই রাধামাধবের সামনে । আমি আমার বোষ্টমীকে পেয়ে গেছি ।

বলে ললন্তিকার দিকে একবার চাইল । আশ্চর্য্যের কথা ললন্তিকা কোন প্রতিবাদ করল না । শুধু গত রাতে কামালের উন্মত্ততার কথা বলে অরবিন্দকে প্রতিরোধ করতে চেয়েছিল। 

অরবিন্দ কোন পাত্তাই দিল না । 

- আরে দেহটাই সব নয় । চল, আজ আমাদের পুনর্জন্মের দিন । রাধামাধবের প্রেমের রঙে রাঙিয়ে নিই আমাদের ।

মোহান্ত আয়োজন করলেন । বৈষ্ণব মতে অরবিন্দ ও ললন্তিকার শুভ পরিণয় হয়ে গেল । গুড় বাতাসা আর ভেজে ছোলার প্রসাদ উপস্থিত সবাইকে খাওয়ানো হল । অরবিন্থ বলল সময় এলে এখানে প্রীতিভোজও হবে ।

কন্ঠীবদল হল, রাধমাধবের চারপাশে বরবধূ ঘুরল। ললন্তিকা ভাবল রাধামাধবের যা ইচ্ছা করুণ ; আরণ্যকের উপর প্রতিশোধ নেবার সাহস ও সক্ষমতা তিনি যেন দেনৎ।

অরবিন্দেরও একই ইচ্ছে । যেনতেন প্রকারেণ আরণ্যক বধ যেন করতে পারি ঠাকুর ।

রাধামাধব শুনলেন কি না জানি না: সুযোগ অন্তত এনে দিলেন ।

হেমন্তের পড়ন্ত বিকেলে আরণ্যক বসুরায়, অভয়ঙ্করবাবু , পামেলা দেবী এবং শৈল দেবী - এই চারজন মিলে গীতা আশ্রমে সন্ধ্যারতি দেখতে গেলেন।

মোহান্ত মহারাজ আরতি করলেন । এবার গানের আসর।

অরবিন্দ মোহান্তকে বলল - মহারাজ ! আজ রাধামাধবের সামনে আমাদের কন্ঠীবদল হয়েছে। আজ দিনটা আমাদের কাছে খুব পয়া । আপনি অনুমতি দিলে আমরা দুইজনে মিলে লালন ফকিরের একটা গান গাই।

আমার রসকলিও ভালো গান করে।

মোহান্ত মহারাজ সানন্দে অনুমতি দিলেন । ললন্তিকা ও অরবিন্দ গান ধরল ' মিলন হবে কতদিনে , আমার মনের মানেষের সনে ।

সন্ধ্যা ছেড়ে রাত হতে চলল। শ্রোতাদের আবদারে আরও দুটো গান গাইল ওরা ।

আরণ্যক দেখলেন, শুনলেন কিন্তু যেন হেরে গেলেন। রাধাশ্যামের মোহন মূর্তির দিকে চেয়ে বিড়বিড় করে কিছু বললেন ।

অভয়ঙ্করবাবু আরণ্যককে বললেন - এবার তো উঠতে হয়; রাত হয়ে গেল । আর বাইরে থাকা ঠিক নয় । বাড়ি 

থেকে এর মধ্যে দু'বার ফোন এসে গেছে। 

আরণ্যাক বললেন - সেদিন একজন ছিল - ছেলেটিই, আজ আবার দেখছি ওরা দু'জনে গাইল । মেয়েটি আবার কি করে এল !

- আপনার সব কিছুতেই সন্দেহ । এটা আশ্রম । রোজ কত বোষ্টম বোষ্টমী আসেন। এতে অবাক হবার কিছু নেই।

ললন্তিকা ও অরবিন্দ উভয়ে দেখছে। আরণ্যকের মধ্যে একটা চঞ্চলতার ভাব এসেছে। ওরা মন্দির থেকে বেরিয়ে বাগানের দিকে গেল । উদ্দেশ্য আরণ্যক যদি পিছু নেয় ।

- বোষ্টম ঠাকুর ! ও বোষ্টম ঠাকুর!

অরবিন্দ ও ললন্তিকার স্বপ্ন সার্থক হতে চলেছে দেখে ললন্তিকা বলল - ওই শোন। তোমার অনুমান ঠিক। আরণ্যক বসুরায় পিছু নিয়েছে ।

অরবিন্দ বলল - তুমি ওই গাছটার নীচে অন্ধকারে মিশে যাও । ও আমাকে ফলো করে আর একটু আসুক। 

অরবিন্দ যেন শুনতে পায়নি - এমন ভান করে চলতে লাগল । ও যেদিকে যাচ্ছে তার কিছু দূরে আছে একটা ওপেন পিট ( খাদ ) । ঘন জঙ্গলে ভরা । দিনের বেলায়ও

কেউ আসে না ; শুধু যারা কয়লা চুরি করে তারাই জীবনকে বাজি ধরে আসে । কত লোক যে ওই খাদের জলে ডুবে গেছে তার সঠিক সংখ্যা নেই কারণ সেখানে যাওয়াই নিষিদ্ধ।

আরণ্যক আবার ডাকলেন - ও বোষ্টম ! যাচ্ছ কোথায়? 

অভয়ঙ্করবাবু আরণ্যককে অনুসরণ করে তাঁকে বাধা দেবার চেষ্টা করছেন । এমন সময় 'গুড়ুম' করে একটা গুলির শব্দ শুনতে পেলেন অভয়ঙ্করবাবু। ঝড়ের বেগে দৌড়ে আরণ্যককে ধরে ফেললেন । 

- বেয়াই মশাই ! আপনি ঠিক আছেন তো ? এদিকে আসছিলেন কেন ?

আরণ্যক বললেন - তাই তো ! এদিকে আসছিলাম কেন ! ওরা তো বাগানেই কোথায় মিলিয়ে গেল !

- কারা ?

- ওই বোষ্টম আর বোষ্টমী ।

- আপনার কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে ? কাক শকুনও এদিকটায় আসে না । আর ওরা আসবে ? আর কিছুটা গেলেই খাদে পড়ে যেতেন - তখন ?

আরণ্যকের হৃৎকম্প শুরু হয়ে গেল। এ কি ভুতুড়ে কাণ্ড রে বাবা ! কিন্তু ওরা কোথায় গেল ?

হাতের টর্চের আলো জ্বালালো অরবিন্দ। এদিকে সাপের আড্ডা। ভাগ্যিস এখন হেমন্তকাল। কি যে হত !

অভয়ঙ্করবাবু বললেন - আপনি?

অরবিন্দ বলল - আপনাদের আসা দেখে রইতে পারলুম না গো ! বিপদের আঁচ পেলাম। তাই টর্চ হাতে চলে এলাম আপনাদের রক্ষা করতে। বলিহারি আপনাদের সাহস!

জানেন এখানে মাঝে মাঝে গুলির আওয়াজ পাওয়া যায় ?

আরণ্যক এবং অভয়ঙ্করবাবু দু'জনেই বললেন - হ্যাঁ, আমরাও শুনেছি ।

- হবে কোন প্রেতাত্মাদের দ্বন্দ্ব । যান যান বাড়ি ফিরে যান।

অভয়ঙ্করবাবু সবাইকে নিয়ে বাড়ি রওনা হলেন ।

ললন্তিকা বলল - আর একটু হলেই ! ইস্ কি আফশোষ হচ্ছে !

- তোমার জীবনটাই তো আফশোষ করার জন্য । নাও এবার চল মন্দিরে !

( ক্রমশ )



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Thriller