Suva Chakraborty [ অগ্নিদ ]

Thriller Others

4  

Suva Chakraborty [ অগ্নিদ ]

Thriller Others

পরিবারের রক্ত-দাগ - Family

পরিবারের রক্ত-দাগ - Family

9 mins
457


- আর কি একটাও কিছু বিক্রি হবে গো? রাত দশটা বাজতে চলল ।


বিষন্ন মনে স্ত্রীয়ের মুখের দিকে চেয়ে কথাটা বলল সুবল । সারাদিনে বিক্রিপাট বেশি নেই । তাও গ্রামের স্টেশনের একেবারে ধারে বলে ঐ স্টেশনযাত্রীরাই সুবলের দোকানের একমাত্র ক্রেতা । অবশ্য তেলেভাজা দোকানে আর কতটুকুই বা লাভ থাকে? 


তবুও রাত যখন প্রায় ন'টা, শীতের বাতাস গায়ে লেগে সমস্ত শরীরকে জমিয়ে দিতে থাকে, তখনও সুবলের মনের ঐ যে একমাত্র আশা অবশিষ্ট থাকে, তাতেই বোধ হয় তার সুখ । সুবল এখনও ছেলেমানুষই রয়ে গেল । সে যখন দোকানে একলা বসে থাকে, তখন কত লোকই না স্টেশন থেকে মাটির আলের রাস্তা ধরে গাঁয়ের পথ ধরে, সুবল তাদের দেখতে থাকে । ভাবে, কত বড় বড় সব লোক, ছোটবেলায় যে কেন ঠিকমতো পড়াশোনা করল না সে? পড়াশোনা করলে, আজ সে কত টাকাই না কামাতো? 


তারপর কল্পনার জগৎ থেকে সুবল ফিরে আসে তার স্ত্রী রমার হাতের স্পর্শে । চোখের জল লুকানোর বৃথা চেষ্টায়, খানিক ময়দা লেগে যায় মুখে । আর সেই দেখে রমা হেসে ওঠে ।


সুবল ও রমার একটি ছেলে আছে । বেশ বড় । গ্রামের পাঠশালায় ক্লাস ফাইভে পড়ে সে । নাম - সুখেন । 


সকালবেলায় উঠে খানিক পড়াশোনার পরে , স্নান শেষে, দু'মুঠো আলুসেদ্ধ ভাত মুখে পুড়েই পাঠশালার পথে ছোটে । মা পিছন পিছন ডাকতে থাকেন - ওরে, দুটো টাকা নিয়ে যা, চিরে ভাজা কিনে খাস । 


সুখেন সব শোনে । তবু পিছনে তাকায় না সে । সে জানে ঐ দুই টাকা বাঁচলে যেদিন রাতে রুটি জুটবে না, সেদিন ঐ চিরে ভাজাই রাতের খিদে মেটাবে । তা না হলে যে ভালো ঘুম আসবে না রাতে? 


পাঠশালা থেকে ফিরে সোজা মাঠে চলে যায় সুখেন । বন্ধুদের সাথে খেলে, দৌঁড়ায়, ছুটোছুটি, লাফালাফি করে । তারপর কখনও বা পড়েও যায়, কিন্তু আবার উঠে খেলতে থাকে । ধনী ঘরের বাপেরা তাঁদের ছেলেদের পাঠান না । এই মাঠে তাঁদের ছেলেরা খেললে, ওদের জামা, প্যান্ট নোংরা হবে কিনা? ওঁদেরও তো স্ট্যাটাস আছে ! সুখেন এই কম বয়সেও খেলতে খেলতেই উপলব্ধি করতে পারে, গরিব সে বড় বটে, কিন্তু এই গরিব হওয়াতেও যেন এক আলাদা সুখ আছে ।


সুখেনের বাপ্ সুবল সবসময় হাসিখুশি থাকার চেষ্টা করে । সন্ধের পর থেকে পয়সা উপার্জনের যে একমাত্র পথ বা যে একমাত্র কর্মকে সম্মানের উচ্চ স্তরে বসিয়ে দিয়ে সুবল দিন কাটাতে বেশি স্বাচ্ছন্দবোধ করে, সেই তেলেভাজার দোকান খুলে বসে । ক্রেতা বেশি না হলেও গাঁয়ের মোড়ল জাতীয় কিছু পরিচিত মানুষ দোকানে এসে আড্ডা মারে ।


এক রাতে মুড়ি আর আলুভাজা মাখিয়ে নিয়ে স্বামী স্ত্রী খেতে খেতে কথা বলতে লাগলো । প্রথমে বর্তমান, তারপর ভবিষ্যত এবং সব শেষে অতীতের কিছু স্মৃতিকথা নিয়ে দুইজন এক গভীর ভাবনায় ডুবে গেল । 


চমক ভাঙলো, রতন পালিতের গম্ভীর গলার স্বরে । 

- সুবল, আছো নাকি? 

- আজ্ঞে দাদাবাবু যে! আসুন, ঘরে আসুন না? 

- না থাক । তুমি বরং তোমার দোকানের ভাড়াটা আমায় দিয়ে দাও । 

- ইয়ে মানে, ভাড়া তো এখন আমার কাছে নেই । আপনি আর একটা মাস আমায় সময় দিন ।

- চার মাসের ভাড়া বাকি পড়ে আছে । আর কত সময় লাগবে বলো তো সুবল? তুমি এটা জানো যে তোমাদের জমিটাকে তোমার প্রপিতামহ বিক্রি করে দিয়ে স্বর্গে গিয়েছিলেন, নাহলে তোমরাও আমাদের মতো এই পলাশপুর গাঁয়ে জমিদারিই করতে ! সবই যখন নিয়তি ! 

- আর একটা মাস যদি আমায় সময় দিতেন দাদাবাবু?কথা দিচ্ছি, এবারে আর কথার অমান্য হবে নে ।

- আর যদি এই মাসেও না দিতে পারো? তাহলে? 

- তাহলে দোকানটা নিয়ে নেবেন । ভিক্ষা করে দিন কাটাবো । আত্মসম্মান বোধ বড় বাজে জিনিস জানেন তো দাদাবাবু? কথার দাম না রাখলে ভিক্ষার পথটাই বেছে নেব । 

- তোমার স্ত্রী আছে সুবল । একটা ছেলে আছে । এই তেলেভাজা ছেড়ে নতুন কোনো পথ খোঁজো । আমার দৃঢ় বিশ্বাস তুমি পারবে ।


এবারে সুবল আর কোনো কথা বলল না । চুপচাপ শুনে গেল কেবল । শেষে হাত জোর করে প্রণাম ঠুকে রতনবাবুকে বিদায় জানানোর পর, অন্দরমহলে ঢুকে স্ত্রীর কাছে গিয়ে নিজেকে প্রায় একপ্রকার আত্মসমর্পণই করে দিল সুবল । সে এখন সুবল নয় । মন থেকে সে এখন বেশ দুর্বল ! 


মাঝরাতে ঘুম ভেঙে গেল সুবলের । ঘুমানোর আগে অবধি, রমার হাতটা নিজের বুকে রেখে শুয়েছিল সুবল । তারপর রমাকে ফিসফিস করে পজিজ্ঞেস করেছে - তবে কি আমরা গরিব হয়েই মরবো রমা?


রমা উত্তর দিয়েছিল একটা ছোট্ট না - তে । রমার বিশ্বাস, ভগবান মুখ তুলে চাইবেন তাদের দিকে । তারপর কখন যে নিদ্রাদেবী সুবলকে গ্রাস করে নিয়েছিল, তা কেউ জানে না ।


মাঝরাতে ঘুম ভাঙলো যখন, তখন ঘড়িতে রাত

দুটো বেজে চল্লিশ মিনিট । সুবল দরজা খুলে রাস্তায় বেরোলো । তারপর মাঝরাতের আকাশের দিকে তাকিয়ে কি যেন খুঁজতে লাগলো । অবাক বিস্ময়ে কি যেন একটা খুঁজতে খুঁজতে আপন মনেই বলতে লাগলো - বাবা, তুমি কোথায়? এই বুড়ো বয়সেও কিছুই শিখতে পারলাম না । লজ্জা বাবা, লজ্জা হওয়া উচিৎ তোমার আমার উপর ।


তারপরের দিন সকালে সুবলকে না দেখতে পেয়ে রমার মনে ঝড় বয়ে যেতে শুরু করল । কত অদ্ভুত সব খেয়াল মাথায় আসতে লাগলো । তারপর প্রায় আধ ঘন্টা কাটার পর, রমা দেখল, তার স্বামী আসছে । মুখ-চোখ দেখে মনে হচ্ছে বেশ খুশি । কিন্তু তার কারণটা যে কি উপলক্ষে, তা রমা হাজার বুঝবার চেষ্টা করেও বুঝতে পারল না । যেমন দিন শুরু হয়, ঠিক তেমনই শুরু হয়ে প্রত্যেকদিনের মতো চলতে লাগলো । তারপর বিকেলের মুখে, পালিতবাবু সুবলের ঘরে এলেন । সুবল ঘরে তখন ঘুমোচ্ছে, আর রমা রান্নাঘরে বাসন মাজছে । সুখেন, খেলতে গেছে মাঠে । এই অসময়ে পালিতবাবুকে আসতে দেখে রমা বেশ অবাকই হল । মাথায় ঘোমটা টেনে ঘরে আসতে বলে শোবার ঘরে চলে গেল । সুবলের গায়ে আলতো করে স্পর্শ করে ডেকে বলল - কিগো শুনছো? ওঠো, দাদাবাবু এসেছেন ।

সুবল ধড়মড় করে উঠে বসে উঠে বলল - আরে দাদাবাবু আসুন । বসুন । ওগো, এই চেয়ারটা দাও ওনাকে ।

রমা কাঠের চেয়ারটা সামনে এগিয়ে দিতেই, সুবল আবার বলে উঠল - বসুন জমিদারবাবু । 

- সে না হয় বসছি, কিন্তু যে জন্যে ডেকেছো, সেটা তো আগে দাও । চার মাসেরটা একেবারে দেবে । 

- আজ্ঞে হ্যাঁ । এই নিন ।

বলে সুবল নিজের লুঙ্গি থেকে চারটে পাঁচশোর নোট বের করে পালিতবাবুর হাতে ধরিয়ে দিলেন । পালিতবাবু দেখে তো অবাক! এতগুলো টাকা একসাথে সুবল যে তাঁকে দেবে, তা তিনি স্বপ্নেও ভাবেন নি ।

পালিতবাবু বেশ প্রসন্ন মুখে একটা ছোট্ট হাসি নিয়ে বললেন - তুমি কথা দিয়ে কথা রাখো দেখছি । তা কালকে একটু এসোতো, একটু দরকারি কথা আছে । আমার বাড়িতেই, ঐ দুপুরের দিকে ।

- আচ্ছা ।

পালিতবাবু চলে গেলেন । রমা ছুট্টে ঘরে এসে সুবলের হাত চেপে জিগ্যেস করল - এই টাকা তুমি কোথা থেকে পেয়েছো? আমার মাথার দিব্বি, বলো এখুনি, এখুনি বলো ।

সুবলের হাত, এখন রমার মাথা স্পর্শ করে আছে । সুবলের এখন আর সাধ্যি নেই, যে সে মিথ্যে কথা বলে । মুখ শুকিয়ে গেল ওর । গলা নামিয়ে খানিক ইতস্তত হয়েই উত্তরটা দিল সুবল । বিয়েতে পাওয়া রমার গহনাগুলির মধ্যে সোনার দুটো বালা সে বিক্রি করেছে । দাম পেয়েছে যতটুকু, জহুরি তাকে বোকা বানিয়ে দিতে পেরেছে ! 


সুবলের চোখদুটো এখন ছলছলে । রমার চোখের দিকে সে এখন আর তাকাতেও পারছে না । কোন্ মুখে বলতে পারলো এই কথাগুলো? একটুও লজ্জা করল না ওর? ছি ছি ! রমা বোধ হয় খুব কষ্ট পেয়েছে । না বলে নিয়ে নেওয়াটা ঠিক হয়নি ওর । কিন্তু রমা একটুও রাগ করল না । দুই হাত দিয়ে সুবলকে জড়িয়ে ধরল শুধু । বয়স বাড়লেও, প্রেম যে কমে নি ।


সুবল রমার হাতে হাত রেখে প্রতিজ্ঞা করল, এই বালা দুটো সে ঐ জহুরির কাছ থেকেই কিনে নেবে, ন্যায্য দামে । ঠিক তখনই সুখেন ঢুকল ঘরে । খেলে, দৌড়ে ঘামে গা একেবারে ভিজে চপচপে হয়ে গেছে । সুবল রমার হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে - না, যাই, এবার দোকান খুলতে হবে । - বলে মাফলারটা গলায় জড়িয়ে নিয়ে বেরিয়ে পড়লো ।



পরের দিন দুপুরে মধ্যাহ্নভোজনের পর, যখন সুবল, রতন পালিতের বাড়ি পৌঁছালো, তখন পালিতবাবু খেয়ে সবে উঠছেন । ঘরে টিভিটা চালিয়ে দিয়ে, সুবলকে বসতে বলে, হঠাৎই বাড়ির উঠোনের দিকে চলে গেলেন । সুবল, ঘরে একা বসে টিভি দেখতে লাগলো । 


কিছুক্ষণ পর, ঘরে প্রবেশ করলেন পালিতবাবুর ছোটভাই দীনেন মাইতি । একদম চোরের মতো । ঘরে, সুবলকে একা বসে থাকতে দেখে হয়ত একটু চমকে গিয়েছিলেন, কিন্তু পরক্ষণেই কি একটা ভেবে নিজেকে সামলে নিলেন । তারপর, টিভির নিচে থাকা কাপড়ের নিচ থেকে চারটে পাঁচশো টাকার নোট বের করে, নিজের পকেটে পুড়ে নিয়ে নিঃশব্দে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন ।


পালিতবাবু যখন ঘরে প্রবেশ করলেন, তখন তারপর হাতে একটা সিগারেট । 

- থাকতে পারি না বুঝলে সুবল? এই সিগারেট ছাড়া এক মুহূর্তও থাকতে পারি না । শরীরের ভিতর কেমন যেন একটা রস টানে । এটাকেই বোধ হয় নেশা বলে? কি জানি বাবা !

বলে সিগারেটে টান দিতে দিতে টিভির সামনে গিয়ে কিছু একটা দেখে হঠাৎই দাঁড়িয়ে পড়লেন । তারপর সিগারেটটা মাটিতে বুজিয়ে দিয়ে, টিভির নিচে থাকা কাপড়ের নিচে খুঁজতে লাগলেন ।

সুবল কিছু বলতে গিয়েও পারল না । আর সেই মুহূর্তেই, বোধ করি, ঐ সময় থেকে এক মিনিটও অতিক্রম হয় নি! পালিতবাবুর ইশারা আর লম্বা এক হাঁকে কোথা থেকে গোটাকতক মোটাসোটা লোকের আবির্ভাব ঘটলো । আর তারপরই চোর অপবাদে সুবলের পিঠে অসংখ্য কিল, চড়, ও লাথি পড়তে লাগলো । মারতে মারতে সুবলকে হেঁচড়াতে হেঁচড়াতে ওর নিজের দোকানের সামনে নিয়ে যাওয়া হল । ততক্ষণে সুবলের শরীরের প্রত্যেকটা হাড় বোধ করি গুঁড়ো হয়ে গিয়েছে ! বেচারার ওঠবার ক্ষমতাটুকুও আর নেই । 


রমা খবর পেয়ে ছেলেকে নিয়েই দোকানে হাজির হল । নিজের স্বামীকে ঐ অবস্থায় দেখে নিজেকে সামলে রাখতে পারলো না সে । সুবলকে সে জড়িয়ে ধরলো। কিন্তু বেত্রাঘাত অথবা লাথি, কোনোটাই থামলো না । সুবলের পাশাপাশি রমার শরীরের উপরও চলল এক নৃশংস অত্যাচার । শেষে, যখন রমা তার স্বামীকে বাঁচাতে ব্যর্থ হয়ে মুষড়ে পড়লো, তখন চিৎকার করে সাহায্য চাইতে লাগলো । প্রতিবাদ জানাতে লাগলো পালিত বাবুর বিরুদ্ধে । কিন্তু, সে গুড়ে বালি । রতন পালিত কিছুতেই থামলেন না । একটা হিংস্র হাসি যেন লেগে রইল, তাঁর মুখের চারিপাশে । শেষে যখন, রতন পালিতের মুখ থেকে ধীরে ধীরে ঐ হিংস্র হাসিটা মিলিয়ে যেতে লাগলো, তখন রমার সামনে গিয়ে আসল সত্যির রহস্য উদ্ঘাটনের এক বৃথা চেষ্টা করলেন তিনি । হিংস্র হাসির মতোই, হিংস্র কণ্ঠে বলতে লাগলেন - ও আমার টাকা চুরি করেছে । কাল যে আমাকে নিজে ডেকে দুইহাজার টাকা দিয়েছিল তোমার বর, নিজের হাত দিয়ে, সেই দুই হাজার টাকাই ও আজ আমার বাড়ি গিয়ে করেছে । এর কোনো উত্তর কি আছে তোমার কাছে? একে পেটাবো নাকি পুজো করব? শালা যদি চুরি করতিস-ই তাহলে টাকাটা কাল দিলি কেন? 



সুখেন সেই সময়ের জন্যে ওখান থেকে পালিয়ে গিয়েছিল । বাবাকে ঐভাবে মার খেতে দেখতে পারে নি । বাড়ি ফিরে পাশ বালিশে মুখ গুঁজে ডুকরে ডুকরে কেঁদেছিল শুধু । 


সুবলকে হাসপাতালে ভর্তি করা হল । কিন্তু ওর অবস্থা খুবই শোচনীয় তখন । প্রাণ যায় যায় অবস্থা । সুস্থ হতে চিকিৎসার জন্যে যে খরচের প্রয়োজন, সেই খরচ রমা একা জোগাড় করতে পারল না । ফলস্বরূপ, সুবল সেদিন হাসপাতালেই মারা গেল । সুখেন, তার বাবার মুখে আগুন দিল ।


  

                   ২


এর ঠিক দুইদিন পর, যখন রমা নিজেকে একটু সামলেছে, তৃতীয় দিন সকালে, রতন পালিতের বাড়ি গিয়ে চিৎকার করে বলেছিল, সুবল চুরি করে নি । সে, চুরি করতেই পারে না । ও টাকা অন্য কেউ সরিয়েছে । 


এর পর সুবলের শ্রাদ্ধ শান্তি হল । সুখেন নেড়া হল । নিয়ম যা যা মানা হয় সব হল । কিন্তু ছেলে সুখেন এই এগারো বছর বয়সেও ছলছল দুই চোখে বাবার প্রতিশোধ নেবার স্বপ্ন দেখে । পিতৃশোকে একবার চোখের জল মুছতে মুছতে রাতের বেলা খাবার ছুঁয়ে প্রতিজ্ঞাও করল, ওর বাবার হত্যাকারীকে সে ছাড়বে না । তারপর আর গলা দিয়ে খাবার ওঠে নি সুখেনের ।



সদ্য বিধবা মা রান্নাঘরে বটিতে আলু কাটছেন । রান্না হবে । তবে বাড়িতে এখন ছেলে নেই । ছেলে সুখেন গেছে রাজনৈতিক এক সভাতে । আগে সুখেন বাবার সাথে যেত । কিন্তু, এই প্রথমবার সে একা । পিতৃহীন সুখেন আজ বড় একা ।


তখন বেলা গড়িয়ে দুপুরের দিকে । হঠাৎ গাঁয়ের বেশিরভাগ লোককে ছুটতে দেখে রমা হতবাক । হঠাৎ কি এমন হল? এত কোলাহলই বা কিসের? 


রমা রান্নাঘর থেকে উঠে বাড়ির বাইরে এল । দেখল সবাই দৌড়োচ্ছে । কেউ কেউ ওদিক থেকে এদিকে দৌড়ে পালাচ্ছে, তো কেউ কেউ এদিক থেকে ওদিকে । এসব দেখে কোনো এক অজানা কারণে রমার বুকের হৃদস্পন্দনটা যেন আরও বেড়ে গেল । রমার মন কুডাক দিতে লাগলো । ঐ যে কথায় আছে, মায়ের মন সব বোঝে !


হঠাৎ, যখন এইসব কোলাহল, ছুটোছুটি দেখে রমার মনে হাজার প্রশ্ন জন্মে গেছে, ঠিক তখনই দূরে সুখেনকে আসতে দেখা গেল । কিন্তু ও তো দৌড়াচ্ছে না । কেমন যেন ঝিমিয়ে ঝিমিয়ে হাঁটছে । যখন সুখেন তার মায়ের কাছে এল, হাত থেকে একটা রক্তাক্ত ছুরি মায়ের পায়ের সামনে রাখল । রমার চোখে এখন জল । রমা এখন কাঁদছে ।


এগারো বছরের সুখেন দাঁতে দাঁত চিপে বলল - মা, ঐ পালিত কে আমি ছাড়ি নি । এই নাও ওর রক্ত । 


রমা ছুরিটার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে অজ্ঞান হয়ে মাটিতে পড়ে গেল ।



সমাপ্ত...




Rate this content
Log in

Similar bengali story from Thriller