Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!
Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!

Shyamasree (শ্যামশ্রী)

Drama Tragedy Thriller

3  

Shyamasree (শ্যামশ্রী)

Drama Tragedy Thriller

জীবনযাপন(পর্ব এক)

জীবনযাপন(পর্ব এক)

7 mins
166


আরতি সবে ঘুম ভেঙেছে,ওর এক পাশে বছর পাঁচেকের মেয়ে নয়ন আর এক পাশে বছর নয়ের ছেলে চয়ন। বড় ছেলে অয়ন বাবার সাথে পাশের চৌকিতে শুয়ে। ঘুম ভেঙেই আরতি ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে দুই হাত তুলে প্রণাম জানিয়ে, খাট থেকে নেমে অয়নের কপালে গিয়ে তাপ পরীক্ষা করে দেখলো না সব ঠিক আছে, জ্বর নেই, আর নিশ্চিন্তে ঘুমোচ্ছে ছেলেটা, কপালে একটা স্নেহ চুম্বন একে দেয় আরতি। কাল বেশ জ্বর ছিল ছেলেটার, ওদের দুইজনকে কাছ ছাড়া করতে চায়নি। তাই মাথার কাছেই বসে জল পটি দিয়েছিল অনেক রাত পর্যন্ত, এই চৌকিতে তিন জনের পক্ষে শোওয়া সম্ভব না, তাই অয়ন যখন ঘুমিয়ে পড়লো, তাও চুপ করে বসেইছিল, সুজিত জোর করে শুতে পাঠায় আরতিকে । দুই ভাই এখানে একসাথে শোও, স্বামী সুজিত আর তার মাঝে ঘুমোয় মেয়েটা। এখনো ছোট তো, তাই মায়ের কোল ঘেষে ছাড়া ঘুমোতে পারে না। অবশ্য মাঝে মাঝে দাদাদের মাঝে গিয়ে শুয়ে পড়ে নয়ন, কিন্তু ঘুম না আসায় মাঝরাতে একা একাই নেমে মা-বাবার মাঝে এসে শুয়ে পড়ে।

আরতি অয়নের পাশ ছেড়ে উঠে খাটে এসে ছেলে মেয়েদুটোকেও কপালে চুমু দিয়ে, পাশে বসে দেখতে দেখতে ভাবলো ঘুমিয়ে থাকলে কি সুন্দর লাগে ছেলে মেয়েদের। অন্য সময় মাতিয়ে রাখে, ছোট নয়নটাও কম যায় নাকি। আগে ছেলেদুটি ঠাকুমার কাছেই ঘুমোতো গল্প শোনার লোভে, ছোটটা অবশ্য লোভে পড়ে ঠাকুরমার কাছে শুতে গেলেও মাঝ রাতে এসে দরজায় ধাক্কা দিতো, সাথে ঠাকুমা। রাগ করে আরতির শ্বাশুড়ি বলতো " নাও বাবা তোমার ছেলেকে আমি রাখতে পারবো না। " কিন্তু কয়েকদিন পরে যে কার সেই। আরতি তাই শুনে মিটিমিটি হাসতো, মুখে কিছু বলতো না। চয়নও একই কাণ্ড করতো আজ মনে পড়ে একা বসে রইলে। শ্বাশুড়ি মারা গিয়েছেন প্রায় বছর ছয়েক হলো। কিন্তু মনে হয় এই সেদিনের কথা, শ্বাশুড়ি চলে যাওয়ার পরে শ্বাশুড়ির চৌকিখাটটা ওদের ঘরে নিয়ে আসে, অয়ন তো আর একা শুতে পারবে না।যেহেতু আরতির শ্বাশুড়ির মৃত্যুর পরে নয়নের জন্ম, তাই সুজিত মরা মাকে ফিরে পেয়েছে এটা মনে করে, তাই মেয়েকে চোখে হারায়।যে শ্বাশুড়ি প্রথমে ওকে এই সংসারে মেনে নিতে পারেননি, কিন্তু পরে দুইজনের মাঝে অসম বন্ধুত্ব হয়ে গিয়েছিল। নিজের মেয়েদের সাথে যা গল্প করেনি আরতি তা জানে, মাঝেমধ্যে ননদরা হিংসা করত এই বিষয় নিয়ে, বলতো "বৌ তুই মাকে কি গুন করেছিস রে এই বাড়ি ছেড়ে যেতে চায়না, আগে তো খুব যেতো। অন্তত দিন পনেরো থেকে আসতো।"

আরতি হেসে বলতো "আমি কি জানি দিদি, যেতে তো বলি মাকে।"

" সে আগে তো বৌ তোকে পছন্দই ছিলো না, আর এখন কিভাবে বশ করলি রে মেয়েদেরই ভুলে গিয়েছে। "

আরতি কাজ করতে করতে হেসে বলে "আমি তো ভাবি উল্টোটা।"

" বুঝতে পারলাম না ঠিক। "

" আর বোলো না দিদি সারাদিন তোমাদের কথা বলেন উনি, বড়দি তুমি তেঁতুলের আচার ভালোবাসো, বাড়িতে তেঁতুলের আচার করলেই তোমার কথা বলে, আর মেজদি তোমার তো পেয়ারা পছন্দ, তোমার আসার খবর শুনে মা কাউকে পেয়ারা ছুঁতে দেননা। আর সেজদি তোমার তো কোলবালিশ ছাড়া চলে না, গিয়ে দেখো মা পাশবালিশটা বের করেছে, যেটা উনার টিনের বড় ট্রাঙ্কটিতে সযত্নে রাখা থাকে, একমাত্র তুমি এলে ওটা বাতাসের মুখ দেখে। আর ছোট তুমি তো মায়ের কোলের তোমার..."

আরতির কথা শেষ হতে না দিয়ে ছোটজন বলে "অনেক হয়েছে, এবার থামো।"

ওর কথায় সবাই হেসে ফেলে। এই কথাগুলো হয়েছিল যখন চয়নের বছর খানেক বয়স, জন্মদিন ছিল। আরতির শ্বাশুড়ি মেয়েদের আর বড় ছেলেকে ডেকে পাঠায় যাতে তারা চয়নকে আশীর্বাদ করে যায়। চয়নের অন্নপ্রাশনটা ভালো করে করা হয়নি,তখন তিনি অসুস্থ হয়ে গিয়েছিলেন। মুখে প্রসাদ দিয়ে নমোঃ নমোঃ করে সারা হয় অন্নপ্রাশনটা। তাই শ্বাশুড়ি জন্মদিনকে সবাইকে নিয়ে পালন করতে চেয়েছিলেন।

সুজিতরা দুই ভাই চারবোন। সুজিতের সবচেয়ে বড় দাদা অজিত,তারপর তিন বোন অজয়া, বিজয়া, সর্বজয়া, এরপর সুজিত। সবশেষে বোন সুমিতা। দাদা অজিতের হাটে চালের দোকান আছে, তাই সে গ্রামে থাকে না। সেখানেই বাড়ি করে নিয়েছেন। সুজিত পৈতৃক সামান্য জমি চাষ করে আর বাড়ির সাথে বাপের আমলের ছোট একটা মুদির দোকান। এসব কথা ভাবলে আরতির মনে হয় এই তো সেদিনের কথা।

আরতি উঠে ঘরের কাজে লেগে পড়লো, ভোর থাকতেই সে উঠে পড়ে। কিন্তু কাল রাতে ঘুমোতে দেরি হয়ে গিয়েছিল, তাই ঘুম ভাঙ্গেনি আজ। ঘর উঠোন ঝাড় দিয়ে, গোবরের ছড়া দিয়ে, দোরে দোরে যখন গোবর জলে ল্যাপা সেরে সবে কাপড় ছেড়ে উঠেছে তখনই দরজার কাছে স্বামীর নাম ধরে

একজনকে ডাকছে দেখে বাইরে বেড়িয়ে এসে দাঁড়িয়ে পড়ে। দেখে সহজেই চিনতে পারে, চিনতে পেরে মাটিটা একটু যেন দুলে ওঠে। সে নিজেকে কোনো মতে সামলে নেয়। সে নিজেকে আড়াল করতে তাড়াতাড়ি নিজের মুখখানা ঢেকে নেয়। আরতি এমন একটা জায়গায় দাঁড়িয়েছিলো ঘরের আঁধারের কারণে ঠিক ঠাওর হয়না।

আরতি বলে " কাকে চাই? "

" কাকে আবার চাইবো? যাকে চাওয়ার তার নাম ধরেই ডেকেছি।"

আরতির কথাটা শুনে বুকটা কেঁপে উঠলেও নিজেকে সামলে বললো " তিনি এখনো ওঠেননি।"

" তাহলে আমি অপেক্ষা করি।"

আরতি প্রমাদ গুনল। অনেক ভেবে বললো " আপনার কি দরকার আমাকে বলেন আমি বলে দেবো।"

ভদ্রলোক চুক চুক করে মুখে একটা শব্দ করে বললো " তা তো হয়না। আমি যে তাকেই সবটা বলব।"

আরতির অসম্ভব রাগ হচ্ছিল, সে রাগটা সংবরণ করে বললো " দেখুন আমাদের ছেলের জ্বর, প্রায় সারারাত জাগতে হয়েছে, উনি কখন উঠবেন ঠিক নেই, আপনি পরে আসুন।"

লোকটা কথাটা শুনে দ্রুত পায়ে আরতির সামনে এসে বললো " তুমি কি ভেবছ আরতি আমি তোমাকে চিনতে পারিনি, ঘোমটার আড়াল করলেই হবে? আমি সব খোঁজ নিয়ে ঠিকানা জোগাড় করে এসেছি। "

আরতি বেশ ভয় পেয়ে গেল, তবুও মনে সাহস নিয়ে বললো "কি চান আপনি? এখান থেকে যান।"

তারপর খপ করে আরতির হাত ধরে নিয়ে বললো " উঁহু আমি তো যাওয়ার জন্য আসেনি, সুদে আসলে সবটা মেটাতে এসেছি। "

আরতি হাত ছাড়াতে ছাড়াতে বললো " হাত ছাড়ো বলছি, হাত ছাড়ো, নইলে চিৎকার করবো।"

হাতটা ধরে রেখেই বললো " করোনা চিৎকার, আমিও সবটা বলবো। আমি তোমার জন্য জেলে পচে মরছি, ওদিকে তুমি সংসার করছো মনের আনন্দে। দেখবো তোমার এই সুখের সংসার থাকে নাকি।"

আরতি এতোটা ভয় পেয়ে গেল যে, ভয়ে ঠকঠক করে কাঁপতে শুরু করলো, কোনো মতে বললো "কি চাই আপনার? "

" আমি আশেপাশেই আছি আজ, সুযোগ বুঝে আমার ইচ্ছে পূরণ করে দিয়ো।" তারপর নোংরা একটা হাসি হেসে বলল "আশা করি বুঝতেই পারছো আমার ইচ্ছেটা কি? অবশ্য তোমার তো নতুন না কি বলো।" আরতি ঘৃণায় মুখ ঘুরিয়ে নিলো।

এমন সময় সুজিত বাইরে এসে স্ত্রীকে একজন অপরিচিত ব্যক্তির সাথে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বেশ জোর গলায় বললো "আরতি উনি কে?"

আরতি সাথে সাথে উত্তর দিতে পারলো না নিজেকে সামলে নিতে সময় লাগছে দেখে, বিল্টু সুজিতের দিকে এগিয়ে এসে বললো " আরে মহাশয় আপনার অপরিচিত হলেও, আরতি আমাকে সবরকম ভাবেই চেনে। "

এমন করে ঈঙ্গিতটা করলো, আরতির গাটা রি রি করে উঠলো।

সুজিত বিল্টুর কথায় পাত্তা না দিয়ে বললো " কি জিজ্ঞেস করছি সেটার উত্তর দিচ্ছো না কেন? উনি কে?"

আরতি বলার আগেই বিল্টু বললো "আরে মশাই আরতিকে কষ্ট দিচ্ছ কেন আমিই বলছি, আমি হচ্ছি ওর বড় বৌদির ভাই। তবে নিজের না, একটু দূরসম্পর্কের।এদিকে এসেছিলাম, তাই ভাবলাম দেখা করে যায়। ঠাট্টার সম্পর্ক তাই আরতির সাথে একটু ঠাট্টা করছিলাম।"

সুজিতের মনটা তবুও যেন খচখচ করছিল,সে তো স্ত্রীকে চেনে। এমন করে কারো সাথে গল্প করতে দেখেনি কোনো দিনও।

আরতি ততক্ষণে কিছুটা ধাতস্থ করতে পেরেছে, স্বামীর দিকে এগিয়ে এসে বললো "ওর নাম বিল্টু, বড় বৌদির বাপের বাড়ির পাড়ায় বাড়ি৷ কেমন একটা আত্মীয় হয়। "

" তা বেশ, তা আপনি এদিকে কোথায় এসেছেন। "

" একজনের কাছে কিছু পাওনা ছিল মেটাতে এসেছি, তাই ভাবলাম দেখা করে যাই আরতির সাথে। দেখে যাই নিজের চোখে কেমন সংসার করছে।"

সুজিত হেসে বলল "ও কি নতুন সংসার করতে এসেছে নাকি?"

" না না মশাই তা নয়, আমি তো ওর নতুন সংসার দেখিনি, তাই নতুন আমার কাছে।"

" আগে আসলেই দেখতে পেতেন।"

" আরে মশাই এখানে থাকলে না।"

" কেন কোথায় থাকতেন?"

" আপনি চিনবেন না।"

" আরে বলেই দেখুন না।"

" জেলে"

"জেলে!!!"

বিল্টু হেসে বলল " ঠাট্টা করছি মশাই, আপনাদের সাথে আমার ঠাট্টার সম্পর্ক তাই না?"

" বাইরে থাকতাম, নির্দিষ্ট নেই। ভবঘুরে তো। বিশেষত দক্ষিণ ভারতে।"

" ও বেশ, তা কবে ফিরলেন। "

" এই তো সপ্তাহ খানেক হলো ছাড়া পেলাম।"

" ছাড়া পেলেন মানে? "

বিল্টু অন্যমনস্কতায় বলে ফেলেছে, "বাড়ি থেকে, আরে মশাই কিছুদিন হলো ফিরেছি। মা দেখে বলে আমি নাকি রোগা হয়ে গিয়েছি। কিছুতেই ছাড়ছিল না। এদিকে পাওনার হিসাবটাও মেলাতে হবে। "

সুজিত বললো" সবে তো সকাল, দুপুরের খাবার খেয়ে পাওনাদারের চলে যেও। এখন চলো গল্প করি, তুমি কোথায় ঘুরতে গিয়েছ, কি কি দেখলে, আমাদের তো এ জন্মে কিছু দেখা হলো না, আপনার মুখে শুনে খুশী হই। পাওনাদারের কথা ভাববেন না, আমি এদিকের সবাইকে চিনি। তা কি নাম ভদ্রলোকের? "

এবারে বিল্টু প্রমাদ গুনল, কি বলবে বুঝতে পেলোনা। আর আরতির কথা বলতে পারবে না৷ তাহলে তো যেটার জন্য এসেছে সেটাই পাওয়া হবে না। সেটা পাওয়া হয়ে গেলে না হয় বলে দিতো। তাই সে চালাকি করে বললো "নাম তো অরুণ, আগে দিদির বাড়ির ওদিকে থাকত, আমাদের বাড়ির ওদিকে যাতায়াত ছিল। পরে শুনলাম কিছু বছর হলো এদিকে এসেছে। "

" ঠিক জানেন এদিকেই এসেছে?"

" তা কি করে বলব, দেখি খুঁজে। "

" কিন্তু ওই নামের কেউ এদিকে এসেছে বলে মনে পড়ছে না।"

" হয়তো অন্য নামে উনাকে চেনে। এখন একটু উঠি, খুঁজে দেখি আশপাশ।"

" আরে জলখাবার খেয়ে যান।"

" সে হবেক্ষণ, আমি তো আছিই, ঠিক আসব যখন খাবো।"

" তা হবে না এখন যাচ্ছেন যান, তবে দুপুরে যাইহোক খেয়ে যেতে হবে।"

বিল্টু হেসে সম্মতি জানিয়ে তখনকার মতো বিদায় জানালো।


চলবে...



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Drama