Anindya Biswas

Romance

4  

Anindya Biswas

Romance

♥️বিয়েটা তো হবে না♥️

♥️বিয়েটা তো হবে না♥️

4 mins
422


         


--" শুনুন, মনে হচ্ছে বিয়েটা হবেনা। আপনাকে পছন্দ হয়েছে ঠিকই। কথাবার্তাও তো ভালই লাগলো। কিন্তু আমার বাড়ীর লোক মেনে নেবে না। আমারও কেমন কেমন লাগছে।"

এই কথা বলে দর্শনা আদিত্যর দিকে তাকালো।


দর্শনা আর আদিত্যর বিয়ের কথা চলছে। আদিত্যর পরিবার থেকেই দর্শনার পরিবারে সম্বন্ধ গেছিলো। এমনিতে সমস্যা নেই কিছুই। তবে সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো আদিত্য ডিভোর্সী। তাই দর্শনার বাবা ইতস্তত করছিলেন। তবুও আদিত্যর পরিবারের আগ্রহ দেখে মুখের উপর না করতে পারেননি। দর্শনাও পরিবারের মতে একমত। তাও আদিত্যর সঙ্গে কথা বলে ভালো লাগার কারণে দুজনে একটু ঘুরতে পারছে।


আদিত্য(হেসে):-" কেউ মানবেনা, না তুমিই মানবেনা?"


দর্শনা আমতা আমতা করে হ্যাঁ,মানে, করতে লাগলো।


আদিত্য: -" যাইহোক বুঝলাম যা বুঝার। তো এই তো শেষ দেখা। চলো আজ কোথাও একটু বসি। না আপত্তি আছে?"


দর্শনা:--" নানা চলুন। বসি ।"


দুজনে হাঁটতে হাঁটতে কলেজটিলার লেকের ধারে বসলো। মৃদুমন্দ বাতাস বইছে। সে বাতাসে দুজনেরই মন প্রাণ জুড়িয়ে গেলো। কিন্তু আদিত্যর মনের জ্বালা কি মিটে। সে যে মনে মনে পছন্দ করে ফেলেছে দর্শনাকে।


দুজনেই চুপচাপ বসে রইলো।


দর্শনাই প্রথম নীরবতা ভাঙলো।


--" চুপচাপ বসে থাকবেন নাকি? না গল্প করবে।"


-" নাহ্, বলো।"


--" দ্যাখো মন খারাপ করার কিছু নেই । আমার আর তোমার পারিবারিক ভাবেই দেখা হয়েছে। টা ছাড়া আমার বাবাও বেশি রাজি ছিলেন না। তাই এই কথাটাই বলতে এসেছিলাম।"


-"হুঁ, চানাচুর খাবে? এখানে ভালো বানায়।"

--"হ্যাঁ "


চানাচুর মুখে দিতে দিতে আদিত্য বললো।


--"একটা গল্প শুনবেন?"


- "বলেন"


-- " প্রত্যেকদিন রাতে ঘুমোতে ঘুমোতে একটা দারুন স্বপ্ন দেখি জানেন? দেখি আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে। একটা অসাধারন ভালো মানুষের সাথে। হ্যাঁ, আমার খারাপ সময়টা সেই স্বপ্নের অংশই হয়। সেই স্বপ্নে দেখি, দুজনে বিয়ের আগে ঘুরতে গেছি, বিভিন্ন জায়গা নতুনভাবে আবিষ্কার করছি, ভিড়ের মধ্যে, বা রাস্তা পার হবার সময় অজান্তেই তার হাত ধরছি, ভয় হয় , যদি তার কিছু হয়। বা সবসময় তাকে পছন্দমত ফুল বা চকোলেট গিফট্ করছি, কারন বিশ্বাস করি যে ভালোবাসার মানুষের জন্য এইসব ছোট্ট ছোট্ট গিফট্ আরো টান বাড়িয়ে দেয়। দেখি যে হটাৎ দুজনে ঘুরতে বেড়িয়েছি, বলা নেই , কওয়া নেই, বৃষ্টি ঝমঝমিয়ে নামছে, সে বৃষ্টি থেকে বাঁচতে দুজনেই একটা যাত্রী আশ্রয় নিয়েছি। সে যাত্রীশেডে কিন্তু আমরা একা নই। এক দাদু দিদাও আছে।


 দেখছি দাদু চুপচাপ দাড়িয়ে, আর দিদা বকে যাচ্ছেন --" এখনও বুড়ো বয়সে জোয়ান হওয়ার সখ, তাই না? হটাৎ জ্বর বাঁধালে দেখবে কে শুনি? আর কত জ্বালাবে?" বলে আস্তে আসতে দাদুর মাথাটা পরম যত্নে মুছে দিচ্ছে।আর দাদু হাল্কা অনুযোগ করে বলছেন -- "বলতে থাক বুড়ি ।যেদিন থাকবনা, বুঝবি। যা রাগ করার এখনই করে নে।"

 

 শুনে দিদা রেগে কাঁই। ওমা পরক্ষণেই দেখি দিদা ঠোঁট ফুলিয়ে হাল্কা করে কাঁদছে। দাদুকে বলছে , "তুমি এমন করে বলতে পারলে?চিন্তা হয় তোমার জন্য , তাই না বললাম। যাও কথা বলবো না।"

 

দাদু তখন দিদার মানভঞ্জনে ব্যাস্ত। ঠোঙায় করে আনা দুটো গরম গরম জিলিপি দিদার মুখের কাছে নিয়ে বারবার বলছে " এমা, একটু খাও না গো । এমনই মজা করলাম। খাও না লক্ষ্মীটি।"


দিদা তখন বলছে আর এইরকম অলুক্ষণে কথা বলবেনা বলো। দাদু তখন দু কান মলে বললো " আর না। বলবনা । এখন খাও।"


বাইরে তখন অবিশ্রান্ত বৃষ্টি। আর যাত্রীশেডে জন্ম জন্মান্তরের প্রেম - দুয়ে মিলে একটা স্বর্গীয় আবেশ। 

আর আমরা দুজন দুর থেকে সেই দৃশ্য দেখে হাসছি, দেখছি, ভাবছি আর প্রতিজ্ঞা করছি, সারাজীবন পাশে থাকার, সাথে থাকার, মরণের পারেও থাকার।


একসময় বৃষ্টি থেমে যায়। কিন্তু থামেনা দাদু দিদার প্রেম। দিদা তার পুঁটুলি থেকে একটা সুঁই সুতো বের করে দাদুর পাঞ্জাবির গলার কাছের বোতামটা লাগিয়ে দেয়, আর দাদু এক দৃষ্টিতে দিদার দিকে তাকিয়ে থাকে। আমরাও তাকিয়ে থাকি, মুগ্ধ হয়ে।


আস্তে আস্তে হাত ধরে দুজনে আমরা বাড়ির দিকে রওনা দিই। সে তার বাড়ি পৌঁছে যায়। আমিও তাকে বিদায় দিয়ে পৌঁছে যাই।


 কিন্তু জানেন, স্বপ্নটা সেখানেই শেষ হয়ে যায়। বিয়েটা আর দেখা হয়না, বলা ভালো, হয়তো বিয়েটা হয়ই না, " এই বলে আদিত্য থামলো।


দর্শনা ( অস্ফুটে) " কেনো হয়না? "


আদিত্য স্মিত হেসে গান ধরলো।


"জানি স্বপ্ন সত্যি হয় না,

তবু মন মানতে চায় না,

কেন এমন রাত্রি নামছে জানলায়

বোঝেনা সে বোঝেনা,

বোঝেনা সে বোঝেনা ..

বোঝেনা, বোঝেনা, বোঝেনা ..


এটা গল্প হলেও পারতো,

পাতা একটা আধটা পড়তাম,

খুব লুকিয়ে বাঁচিয়ে রাখতাম তাকে।

জানি আবার আসবে কালকে,

নিয়ে পালকি পালকি ভাবনা,

ফের চলে যাবে করে একলা আমাকে।

বোঝেনা সে বোঝেনা,

বোঝেনা সে বোঝেনা ..

বোঝেনা, বোঝেনা, বোঝেনা .."


দর্শনা ( কাঁদো কাঁদো সুরে) " শুনুন মন এত ভাঙবেন নাতো। আরো কত ভালো ভালো মেয়ে পাবেন । আমার শুধু একটু সমস্যা আছে বলেই। "


আদিত্য " শোনো দর্শনা, তুমি প্রথম মেয়ে না যে আমাকে এই কারণের জন্য না করছে। এটাই স্বাভাবিক, এটাই হবে। তবুও মন তো , অজান্তেই ভালোলাগা তৈরি হয়ে যায় । সেটা কেটে গেলে কষ্ট তো হয়ই, যাইহোক অভ্যাস হয়ে গেছে। এটা পুরো জীবনের অঙ্গ হয়েই আছে, হবেও।"


দর্শনা একদম চুপ হয়ে গেলো। স্কুটিতে আসতে আসতেও দুজনের কোনো কথা বললো না।


দর্শনাকে বাড়ির সামনে নামিয়ে দিলো আদিত্য। দুজনের চোখাচোখি হলো। দর্শনার ছলছল চোখ দেখে আদিত্যও ম্রিয়মাণ। কিন্তু মন ভাঙলে চলবে না।


স্কুটি ঘুরিয়ে নিজের বাড়ির দিকে রওনা হতেই ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি। ভিজে যাওয়া থেকে বাঁচাতে আদিত্য কাছেই একটা যাত্রীশেডে আশ্রয় নিল। হটাৎ লক্ষ্য করল সেই শেডে এক বুড়ো বুড়ি বসা।

আদিত্য মনে মনে ভাবছে বাহ, দেখি কি হয়।

দেখলো বুড়ি সেই বুড়োর পাঞ্জাবির বোতাম সেলাই করে দিচ্ছে, আর বুড়ো বুড়ির মাথা পরম মমতায় বুলিয়ে দিচ্ছে। বৃষ্টিও আস্তে আস্তে ধরে এলো।


আদিত্য বাইরে এসে মনে মনে ভাবলো -- কে বললো সপ্ন সত্যি হয়না। হলোই তো। সেই , বিয়েটাই আর হলনা।শেষ অব্দি নিজের অসম্পূর্ণতাতেই সপ্নের সম্পূর্ণতা পূর্ণতা পেল হয়তো।


কারণ শুনে শুনে তো এখন অভ্যস্ত হয়ে গেছে -- ♥️বিয়েটা তো হবে না♥️।






Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance