Anindya Biswas

Abstract Romance Others

3  

Anindya Biswas

Abstract Romance Others

নতুন শুরু

নতুন শুরু

12 mins
230


-- "তোর কোনো কষ্ট হচ্ছে না তো মা?"

- " না বাবা, তবে"

--" তবে কি মা?"

--" দেখো বাবা এমনিতে তো আমার শ্বশুর বাড়ির লোকেরা খুবই ভালো। খুবই আদর যত্ন করেন, ভালোবাসেন। ওদিক দিয়ে কোনো সমস্যাই নেই। সমস্যাটা তোমার জামাইকে নিয়ে।তোমার জামাই কেমন জানি সবসময় একটা গুটিয়ে থাকে। কোনোকিছু বলতে গেলে খালি নীরবে হুঁহু করে। কিছু বলেনা, গুমোট মেরে থাকে। এমনিতে কোনো সমস্যা নেই, সবসময় বাড়ি আসে, খেয়াল রাখে আমার, সবকিছুই ঠিক আছে, কিন্তু কেমন যেনো খোলতে চায়না নিজেকে। একটা দেয়াল তুলে রাখে চারপাশে।"

-"দেখ মা; ধৈর্যহারা হোস না। জীবনে খুব বড় ধাক্কা খেয়েছে তো।"

-- " বুঝি বাবা; কিন্তু মাঝে মধ্যে রাগ উঠে জানো ত ওকে নিয়ে। আরে রান্না ভালোনা হলে বলবে তো,বা কোনো বিষয়ে আমার কোনো ভুল হলে বলবে তো। মোদ্দা কথা আমার সঙ্গে বসে একটু গল্পও তো করতে পারো। আমি একাই বকর বকর করে যাই; আর উনি এমনিতেই শুনতে থাকেন। এদিকে আবার সকালে ঠিকই লেবুচা বানিয়ে রাখে, বা অনেকসময় যদি শুনে ক্লিনিক এ খাবার নেইনি; টিফিন বক্স এ করে নিয়ে আসেন; বা আমার সব জামাকাপড় ওষুধপত্রের ঠিকই হিসাব থাকে, কিন্তু ওই; সব নিঃশব্দে, যেনো দায়িত্ব করছে; কোনো যেনো টান নেই।আমি বলেছি আমার শাশুড়ি মাকে, উনিও সবুর ধরতে বলেন; কিন্তু এরকম পাথরের সঙ্গে কি থাকা যায়; তুমিই বলো।"


ও ঘর থেকে দেবলীনার কথা চুপচাপ শুনছিল অরিত্র। হাল্কা হাসিও পাচ্ছিল তার। আবার দুঃখও লাগছিল মেয়েটার জন্য।


অরিত্র আর দেবলীনার বিয়ে হয়েছে কয়েকমাস হলো। অরিত্র ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কর্মরত। আর দেবলীনার একটা ক্লিনিক আছে। পারিবারিক দেখাশোনার ভিত্তিতেই বিয়ে।


 বিয়ের কয়েকমাসেই অরিত্র দেবলীনার মনে আস্তে আস্তে জায়গা করে নিচ্ছিল। অরিত্রর দায়িত্ববোধ; সরলতা; পরিবারের প্রতি টান দেবলীনার খুব ভাল লাগছিল। অরিত্রর বাকি ভাইবোনদের সাথেও দেবলীনার খুব ভাব। কিন্তু তা সত্ত্বেও দেবলীনা লক্ষ্য করতো অরিত্র কেমন যেনো তাকে এড়িয়ে চলে। 

সকালবেলা চোখ আধবোজা অবস্থায় দেবলীনা বুঝত অরিত্র একদৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে । কিন্তু হটাৎ চোখ খুললেই অরিত্র চোখ ঘুরিয়ে নিত। বা রাস্তা পার হবার সময় দেবলীনার হাত সবসময় চেপে ধরত অরিত্র। কিন্তু ব্যাস ওইটুকুই। পার হয়েই ছেড়ে দিত হাতটা। বৃষ্টি পড়লে দেবলীনার খুব ইচ্ছে করতো একসাথে ভেজার। কিন্তু ডাকবে কি করে অরিত্রকে? সে তখন ছাদের কাপড় আনায় ব্যাস্ত।


ওদিকে বেচারা অরিত্র কি শুধুশুধু এরকম করে। আসলে বেজায় ভীতু সে। সাংঘাতিক ভয় তার। কারণ? (( আপনাদের বলে রাখি , অরিত্রর এটা প্রথম বিয়ে নয়। প্রথমবার অরিত্র বউকে খুব ভালোবাসত। কত রোমান্টিক কবিতা, গল্প, তার নামে লেখত। কিন্তু প্রথম বিয়েতে জুটেছে অসহ্য যন্ত্রনা আর মানুষিক অত্যাচার। দিনের পর দিন সহ্য করেছে সে তির্যক অপমান। তীব্র অভিমান , শোক, দুঃখ জমতে জমতে অরিত্র এখন কঠোর হৃদয়। মা - বাবার কথায় বিয়ে করলেও কিছুতেই সে খোলস ভাঙতে রাজি নয় আর। তাই বলে নতুন বউয়ের প্রতি কোনো ক্রটি সে রাখতনা। কিন্তু সেটা একান্তই দায়িত্ববোধ থেকে। দেবলীনার পরিবার সবই জানত। দেবলীনাও জেনেশুনেই মত দিয়েছিল। তবুও নারীহৃদয় তো। ভালোবাসার জন্য হাহাকার করে। অরিত্রও বোঝে সেটা। কিন্তু খোলস ভাঙবে না সে।


কিন্তু তাই বলে কি তারও মন আনচান করেনা? ইচ্ছে কী করেনা যখন দেবলীনা চান করে এসে আয়নার সামনে চুল শুকোতে থাকে, একটু ঘাড়ের কাছে গিয়ে একটা দুষ্টু চুমু দিতে, তার শাম্পু করা চুলের ঘ্রাণ নিতে? বা রান্নাঘরে ঢুকে হটাৎ গালে একটা ভালবাসার চিন্হ একে দিতে? কিংবা সকালবেলা একদৃষ্টে দেবলীনার দিকে তাকিয়ে বলতে - ভালোবাসি তোমায়। বা ক্লিনিক এ টিফিন বক্স দেওয়ার অজুহাতে তাকে হুট করে নিয়ে বাইরে পার্কে ঘুরে আসতে । অথবা ছুটির দিনে লং ড্রাইভ এ যেতে। বা রাস্তার ধারে আইসক্রিম খেতে খেতে তার নাকে একটু লাগিয়ে দিতে? কতবারই ইচ্ছে করে দেবলীনার পাতলা কোমরটাকে জোরে কাছে এনে ( কি করতে সে নাই বললাম-- কিছু ভেবে নিতে হয়))) --- কিন্তু না, অরিত্র কিছুতেই খোলস ছেড়ে বেরোবে না।


--"নাহ্, বাবার সাথে কথা বলেও লাভ হয়নি।কি যে করি" এ কথা ভাবতে ভাবতেই অরিত্র ঘরে ঢুকলো।

--"ওহ্, কখন এলে?"

- " এই মাত্র"

-- " চলো হাতমুখ ধুয়ে নাও, খাবার বেড়ে দিচ্ছি।"

-" হুঁ , তুমি খেয়েছো?"

--" না, অপেক্ষা করছিলাম তোমার"

-" হুম " অরিত্রর ছোট্ট জবাব। 


দেবলীনা বুঝলো লোকটার দ্বারা সত্যিই কিছু হবেনা। মিথ্যে আশা। এ এক রোবট।


          ।।পরের দিন।।


ক্লিনিকের কাজ সেরে চেম্বার বন্ধ করতে যাবে এমন সময়ে দেবলীনার মোবাইলে ফোন। তার ননদের।

--" হ্যালো, কেমন আছো?"

- " হ্যাঁ বৌমনী, , তুমি ভালো?"

-- " হ্যাঁ রে, বল "

-" বলছি কালকে একটু লাঞ্চে বেরোবে আমাদের সঙ্গে। সিনেমাও দেখব। অনেদিন দেখা হয়না তো, একসাথে গল্পগুজবও করবো, চল।"

-" হ্যাঁ, সে যাওয়া যেতেই পারে।"

--" দাদাকে?"

--" বলে দেখব, তবে তোরা তো জানিস ও ওর দুনিয়ায় থাকে হারিয়ে। "

-(ওপাশে হাসির আওয়াজ) " ঠিকাছে, দেখা যাবে কাল।"


অরিত্র কে বলতে মাথা দুদিকে নাড়িয়ে বোঝালো যাবেনা। অগত্যা দেবলীনা একাই গেলো।


লাঞ্চে একথা সেকথা বলতে বলতে দেবলীনা তার আর অরিত্রর কথা সবই বললো। সবশুনে তার ননদ বললো :- " দেখো বউমনি , তোমার এই খারাপ পাওয়াটা খুবই সত্যি। প্রত্যেকটা মেয়েই চায় তার প্রিয় মানুষটার মুখে ভালোবাসি শব্দটি একবার অন্তত শুনতে। তবে কি বৌদি , দাদা আসলে এইরকম নয়। ওর তো আগের কাহানি জানো। সে ভয়ানক ঘটনার পরই দাদা একটু একটু করে বদলাতে শুরু করে। আগে কি ভাল গান গাইতো, গীটার বাজাতো, কবিতা গল্প লিখতো। লং ড্রাইভ তো ওর খুব প্রিয় ছিল। কিন্তু সব বন্ধ এখন।"


" তুমি একটু সবুর করো বৌদি, আমি জানি তুমি পারবে। আর আমরা ননদেরা আছি কিসের জন্য? দেখি কি করা যায়"


--" না তোরাই তো ভরসা, এজন্যই বলা। দেখতে দেখতে ১ বছর হয়ে আসবে বিয়ের। জানিনা শুষ্কং কাষ্ঠং এর মনেও আছে কিনা ডেট টা" বলে একটা হাসি দিল। ননদের মুখেও হাসি।


          


।। ওদিকে।।


" কিরে, কেমন চলছে সংসার জীবন? দেখে তো মনে হচ্ছে একদম ঝাক্কাস। বৌদির হাতে

খুব চর্ব- চোষ্য- ল্যাহ - পেয় খাচ্ছো বোধয়" -- রাহুলের অরিত্র কে পেয়েই এই কথা বলল।

 রাহুল আর অরিত্র অনেকদিনের বন্ধু। বাল্যকাল থেকে। এখন চাকরিসূত্রে দুজন দুদিকে থাকলেও যোগাযোগটা আছে । আজ অনেকদিন পর দুজনের দেখা।

 

-"ভালই" অরিত্রর সংক্ষিপ্ত উত্তর।

--" শ্রেফ ভালই?"রাহুল অবাক।

-" হ্যাঁ , আর কি"

--"ধুর"

-"কেনো কি বলতে হবে?"


--" কেনো, কি বলতে হবে - সব ঠিক আছে তো আবার? এমন মনমরা উত্তর? আমি ভাবলাম এক বছর পর হো হো করে উত্তর দিবি, নাহ্ সেই ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে"


-" না না সত্যিই ভালো আছি রে। কোনো সমস্যা নেই। সে সত্যিই সবাইকে আপন করে নিয়েছে। আমার কত সময় শরীর খারাপ করলে কত আদর যত্ন করে, আমাকে নতুন নতুন রেসিপি রেঁধে খাওয়ায়, এমন ভাবে পরিবারের সবাইকে বেঁধে রাখে যেনো তাদের কতদিনের আপন। কিন্তু?" বলে অরিত্র চুপ।

-- " কিন্তু কি?"


-" আসলে সে কি চায় আমি জানিরে, দেখ আমার সব ঘটনা জেনেই সে এসেছে, মেনেও নিয়েছে, যার কারণে আমি তোর তার কাছে চিরঋণী। কিন্তু দেখ সেও তো একটা মেয়ে, তারও নিজস্ব চাওয়া পাওয়া আছে, সে চায় আমি তাকে মন খুলে দিই, বন্ধুর মত মিশি।"

--" হ্যাঁ, তো সমস্যা কি? "

-" আমার ভয় করে , ভয় করে আবার ভালবাসতে , কাছে আসতে। ভয় হয় আবার যদি নিজেকে হারিয়ে ফিরে পাওয়ার রাস্তা না পাই? একবার অতল গভীরে হারিয়েছি, আর হারাতে চাইনা। দেখ সব মেয়ে এক না, কিন্তু মেয়ে তো দিনের শেষে।তাই কাছে যাই না।"


দুজনেই চুপ। খালি কফি খাওয়ার আওয়াজ।


রাহুল-- " দেখ মানছি তোর জীবনে একটা সাংঘাতিক ঘটনা ঘটেছে, এবং সে ঘটনা থেকে বেরোনো কষ্টই। কিন্তু তা বলে কি দরজা বন্ধ করে রাখবি? অনেক কিছুই হয় জীবনে, কিন্তু তার জন্যে কেনো শুধুশুধু খুশির রাস্তা বন্ধ করে রাখবি? কেনো মেয়েটাকে অন্যের ভুলের শাস্তি দিবি?"


অরিত্র-" শাস্তি দেবার আমি কে? আর তাছাড়া আমি জানিওনা ও আমাকে ভালোবাসে কিনা, না নেহাতই অভ্যাস?"


রাহুল -- " জানতে চেষ্টা করেছিস একবারও? কোনদিন চকোলেট, ফুল গিফট্ করে বলেছিস নিজের মনের কথা? কোনদিন বেড়াতে নিয়ে গেছিস? এত গান কবিতা লিখেছিস কত মেয়েদের নিয়ে, কোনোদিন মনে হয় নি না আজকে একটু বউটাকে নিয়ে লিখি? খালি সময়মতো ওষুধ খাইয়ে আর ঘরের দুটো কাজ করে দায়িত্ব খালাস করেছিস স্বামীর। আর অভ্যাসের কথা বলছিস, অভ্যাস হলে তোর এত আদর যত্ন নিত, তোদের পরিবারের সবাইকে আপন করার চেষ্টা করতো? যাই বলিস অরিত্র, এর থেকে ঢের বেশি করতি একটা পেত্নীর জন্য। আরো একবার চেষ্টা করে দ্যাখ না, কেনো স্বার্থপরের মত আচরণ করছিস?"


 অরিত্র কিছু না বলে উঠে গেলো। কথাগুলো তার মাথায় ঘুরছে।

------------------------------------------


ক্যাফে থেকে বেরিয়ে গাড়িটা স্টার্ট দিতে যাবে অরিত্র, সেসময় মনে হলো দেখি আজকে একটা চকোলেট নিয়ে । না খেতে চাইলে নিজে খেয়ে নেবে নাহয়। এই ভাবে ওরিয়েন্ট এর পাশে গাড়িটা রেখে চকোলেট কিনতে গেলো।


কিনে বেরোতে যাবে , এমন সময় হটাৎ দেখলো অপরদিকে রেস্তোরার কাঁচে দেবলীনা আর তার সঙ্গে আরেকটা ছেলে, অরিত্রর কাছাকাছি বয়স হবে, বেরোচ্ছে। দুজনে খুব হাসাহাসি। ছেলেটা বেরোতে বেরোতে দেবলীনার হাতে একটা প্যাকেট দিয়ে দুজন একদিকে চলে গেলো।

অরিত্র পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে ওর কাজিন কে ফোন করলো।


অরিত্র :- " হ্যালো আদৃতা"

আদৃতা :- " কে দাদা? বলো।"

অরিত্র:- " তোদের সবার আজকে লাঞ্চ প্ল্যান ছিল না তোদের বৌদির সঙ্গে?"

আদৃতা :- " হ্যাঁ, করলাম তো, আমরা চারজন একসাথেই ছিলাম, গল্প হল, তারপর বৌদি কোথায় বেরিয়ে গেলো, বললো কাজ আছে।"

 অরিত্র :- " হুঁ, আচ্ছা রাখছি"

 আদৃতা :- " হ্যাঁ, আচ্ছা শোন, দুদিন পর তো তোদের বিবাহবার্ষিকী। কি করবি? বউদিকে সারপ্রাইজ দিবি? প্ল্যান করবি কিছু।"

 অরিত্র :- " ঝাঁটের বার্ষিকী আমার" বলে ফোন কেটে দিলো।




বাড়িতে এসে অরিত্র দেবলীনাকে কিছু বলতে গিয়েও কিছু বললোনা।বিছানার উপর সেই প্যাকেট টা দেখে আরো তিরিক্ষী হয়ে গেলো মেজাজ।সত্যিই সাহস বটে মেয়েটার। সেই গিফট্ আবার শোবার ঘরে, বেডরুমে। পেয়েছে কি? কিছু টের পাবোনা?রাগে সে গজগজ করছিল ভিতরে ভিতরে। আবার ভাবলো তার তো কোনো আশা ছিলনা এই বিয়ে থেকে, তাহলে কেনো সে রাগছে? কেনো দেবলিনাকে জিজ্ঞেস করতে গিয়েও আটকাচ্ছে সে? তাহলে কি রাহুলের কথাই সত্যিই? আসলেই সে ভালোবেসে ফেলেছে দেবলীনাকে?


উত্তর খুঁজছে অরিত্র।


    ।। বিবাহবার্ষিকীর দিন।।

     

এই দুইদিন একবারও দেবলীনাকে কিছু বলেনি অরিত্র। যদিও দেবলীনা বারবার জিজ্ঞেস করার চেষ্টা করে গেছে। না কিছু বলবেনা অরিত্র।


অফিসে আনমনে কাজ করছে অরিত্র। এমন সময়ে দেবলীনার ফোন। অরিত্র দেখলো। ধরলো না।


খান ৭-৮ এক মিস কলের পর বাধ্য হয় অরিত্র ফোন তুলতে।


দেবলীনা:-" কি হলো, ফোন ধরছনা কেনো? কাজ বেশি?"


অরিত্র :- (রাগত স্বরে)" কেনো কি হয়েছে? কি করবে জেনে"


দেবলীনা:- " এমন ভাবে বলছ কেনো, কি করেছি আমি?, দুদিন ধরে কথাও বলছ না , এমনিতেই তো কথা বলোনা"


অরিত্র:- " কথা বলে, মায়া বাড়িয়ে, কি লাভ, শেষ যখন ধ্বংস।"


দেবলীনা:- " কি আবোলতাবোল বলছ, কিসের কথা , কিসের মায়া, কি আবার ধ্বংস। যাক, সন্ধাবেলা একটু তাড়াতাড়ি এসো আজকে।"


অরিত্র :- " কেনো, বয়ফ্রেন্ডের সাথে আলাপ করাবে?"

দেবলীনা:-" কি বলছো অরিত্র। সীমা ছাড়িয়ে যেওনা। কি বয়ফ্রেন্ড। কেনো বয়ফ্রেন্ড। পাগল হয়ে গেলে নাকি।"


অরিত্র :- " হ্যাঁ, আমিই তো পাগল, কারণ পাগলরাই রাস্তায় থাকে, এবং বিভিন্ন রেস্তোরাঁতে প্রেমিক প্রেমিকার আশা যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে।"


দেবলীনা:- " শোনো, আমার নিজের চরিত্রের বিশ্লেষণ অন্তত তোমার থেকে জানার কোনো ইচ্ছে নেই। যে স্বামী তার বউকে বিশ্বাস করেনা, সে আর যাই হোক স্ত্রীর ভালোবাসার যোগ্য নয়। ভালো থেকো" বলে ফোন কেটে দিলো।


অরিত্র আর কিছু না বলে ফোন রেখে দিল।



বাড়িতে ঢুকেই অরিত্র অবাক। বাড়ির গেটের একধার জুড়ে অরিত্রর ছোটবেলার ছবি। আরেকধারে দেবলীনার । আস্তে আস্তে বড় হয়ে উঠা। এরপর ক্রমান্বয়ে তাদের দুজনের নিজেদের বেড়ে উঠার বিভিন্ন ছবি ।এত সুন্দর ভাবে সাজানো। সবগুলো একসাথে তাদের বিয়ের ফটো গিয়ে মিশেছে। অরিত্র হাঁ করে তাকিয়ে রইল। তার ঘোর কাটছেনা।

হটাৎ পিঠে একটা হাত।

ঘুরে দেখতেই অরিত্র দেখে সেই ছেলেটা, যার সাথে দেবলীনাকে রেস্তোরাঁ থেকে বেরোতে দেখেছিলো।


--" হাই, বিবাহবার্ষিকীর অনেক অনেক শুভেচ্ছা"

-" ধন্যবাদ, আপনাকে ঠিক চিনলাম না"

-- " আরে আমি দেবলীনার স্কুল কলেজের বন্ধু, আমি ডঃ সৌহার্দ্য দত্ত। আর এই যে ( আড়াল থেকে একটি মেয়েকে টেনে) আমার স্ত্রী সমহিতা রয়।"

-" ওহ্, আচ্ছা আচ্ছা। "

-- " আরে সেদিন শপিং এ গিয়ে হঠাৎই দেবুর সঙ্গে দেখা। অনেকদিন পর। তারপর ওই বললো দেখা হয়ে ভালই হয়েছে, বিবাহবার্ষিকীর নিমন্ত্রণ করলো। আবার আমাকে নিয়ে আপনার গিফ্ট ও কিনলো, সারপ্রাইজ, ও বাবা, বেশি বলে ফেললাম।"

পাশ থেকে সমহিতা বলে উঠলো :- " আরে মুখটা বন্ধ রাখো এখন, দেবলীনা দির জন্য কিছু রেখে দাও।"


অরিত্রর আর কোনো কথা কানে ঢুকছে না। ছি ছি, এতটা নিচে নেমে গেলাম আমি, দেবলীনাকে কিনা কি ভেবে বসলাম।ধপ করে বসে পড়লো সিড়িতে।


ওপাশ থেকে অরিত্রর মা :-" এসে গেছিস, দেখ তোর জন্য ভিতরে কত কিছু সাজিয়েছে, সব একার হাতে রে, যা যা ভিতরে যা"

 এমনি সময় অরিত্রর ভাই বোন সবাই হৈ হয় করে এসে পড়ল। 

 আদৃতা " এই তোদের জন্য কি সুন্দর কেক্ অর্ডার করেছে। আমি , অর্ণবদা, আর বৌমনি গিয়ে নিয়ে আসলাম। বৌমনির চয়েস আছে মানতে হবে।"

 

 অরিত্র এইসব শুনতে শুনতে ভিতরে ঢুকে দেখে দেবলীনা একমনে সেজে যাচ্ছে। হাল্কা মেকাপ, গাঢ় লাল লিপস্টিক, কাজল কালো চোখ, সঙ্গে পিকক ব্লু শিফন শাড়ি আর ম্যাচিং ব্লৌসে তাকে অসাধারণ লাগছিল। অরিত্র কে দেখতেই চোখ ঘুরিয়ে নিল। অরিত্র বুঝলো সাংঘাতিক অভিমান ঘিরে আছে তার এই দুই চোখে। নাহ, এই মান তাকে ভাঙতেই হবে।

 

অরিত্র :- " একটু শুনবে দেবলীনা?"

দেবলীনা কোনো উত্তর দিলনা।

অরিত্র হাতে হাত দিলে জোরে হাতটা সরিয়ে নিল।

অরিত্র :- " ভুল হয়ে গেছে, অ্যাম রিয়েলি ভেরি সরি"

দেবলীনা:- " যে স্বামী নিজের বউয়ের চরিত্র নিয়ে সন্দেহ করে, তাকে আমার কিছুই বলার নেই। মেকি হাসি হাসবো নে বাইরে, কিন্তু তোমাকে আর স্বামী মানতে পারবনা।যাও গিয়ে জামাকাপড় চেঞ্জ করে এসো।সবাই এসে গেছে। "

অরিত্র :- " আরে মাফ তো করে দেও।"

দেবলীনা:- " আমি মাফ করার কে অরিত্র। আমি তোমার স্ত্রী। অন্তত কাগজে কলমে। একজন স্বামী ঠিকই পারে তার স্ত্রীর মান ভাঙ্গাতে। কিন্তু সেজন্য তার ' স্বামী ' নামের সুবিচার করতে হয় । বাকি তুমি জানো।"

অরিত্র আর কিছু না বলে চুপচাপ নিজের ঘরে চলে গেল। গিয়েই রাহুলকে ফোন।


সব শুনে রাহুল বললো," এইবার সময় হয়েছে নিজেকে ভাঙার। আর আটকাস না। বাকি সব তুই জানিস"।

অরিত্র হাসলো। আর পুরো ভাইবোনদের ফোন করে বললো নিজের ঘরে আসতে।


পার্টিতে কেক টেক কাটা হলো। অনেক হাসি মস্করা ঠাট্টা হলো। পুরো পার্টিতে একবারও ওদের দুজনের চোখাচোখি হলনা। হটাতই কারেন্ট চলে গেলো।


স্টেজ এ আলো।


গীটার হাতে অরিত্র র প্রবেশ।


মাইক এ গান তুললো অরিত্র।


"হাম তেরে বিন আব রেহে নেহি সাকটে..

তেরে বিনা কিয়া ওয়াজুদ মেরা..

তুজসে জুদাগার হো জায়েঙ্গে

তো খুদসে হি হো জায়েঙ্কে জুদা....


কিউকি তুম হি হো

আব তুম হি হো,

জিন্দেগী আব তুম হি হো.....


চ্যান ভি...মেরা দার্দ ভি

মেরী আশিকি আব তুম হি হো..

তেরা মেরা রিসতা হে ক্যাসা

এক পাল দুর গাওয়ারা নেহি

তেরে লিয়ে হার রোজ হে জিতে,


তুসকো দিয়া মেরা ওয়াক্ত সভি

কোই লামহা মেরা না হো তেরে বিনা

হার সাস পে নাম তেরা

কিউকি তুম হি হো,"


গাইতে গাইতে অরিত্র স্টেজ থেকে নামছে । দেবলীনা নির্বাক। দুজনে দুজনের দিকে এক পলকে তাকিয়ে আছে।


হটাৎ চারপাশ থেকে পুষ্পবৃষ্টি শুরু হলো। হাল্কা হাওয়া, পুষ্প বৃষ্টি, সব মিলিয়ে একটা কল্পনার জগৎ তৈরি হলো। এমন সময় অরিত্র দেবলীনার দুহাত ধরে তার সামনে হাঁটু গেড়ে শুরু করলো


"হ্যে তামান্না হামে, তুমহে দুলহান বানায়ে

তেরে হাতো-পে মেহনদি, আপনে নাম কি সাঁজায়ে


তেরি লেলে বালায়ে, তেরে সাদকে উতারে

হ্যে তামান্না হামে, তুমহে আপনা বানায়ে


নেহি মুশকিল ওয়াফা, জারা দেখো ইয়াহা

তেরে আখোমে বাছতা-হে মেরা যাহা


কাভি শুনতো যারা, যো ম্যা কেহনা সাকা

মেরি দুনিয়া তুম-হি হো, তুম-হি আছরা


দুয়ায়ে সুনো, সাজায়ে সুনো

মুঝে পেয়ার হুয়া থা, ইকরার হুয়া থাকা



হানী সুনো, জুবানি সুনো

মুঝে পেয়ার হুয়া থা, ইক-রার হুয়া থা



মুঝে – পেয়ার হুয়াথা, পেয়ার হুয়াথা, পেয়ার হুয়াথা

ইক-রার হুয়া থা, পেয়ার হুয়াথা"


শেষের দুলাইন গাওয়ার সময় অরিত্র আর পারলনা। দেবলীনা কে জাপটে ধরে ঝরঝর করে কেঁদে ফেললো। দেবলীনাও কি আর শক্ত থাকতে পারে।দুজনেই দুজনকে জড়িয়ে কাঁদতে লাগলো। কান্নায় ধুয়ে মুছে গেলো সব রাগ - জেদ - অভিমান।


আসে পাশে সবাই খুশিতে হাততালি দিয়ে উঠলো - যাক শেষে দুজনের প্রকৃত মনের মিলন হলো।



সেদিন রাত্রে খাওয়া দাওয়া শেষ হলে সবাই শুতে যাবে। এমন সময়ে অরিত্র দেবলীনাকে বললো কানে কানে:" একটু ব্যালকনিতে যাবে?"

দেবলীনা হেসে সম্মতি দিলো।


ব্যালকনিতে গিয়ে দেবলীনাকে কে চেয়ার এ বসিয়ে অরিত্র নিচে বসতে গেলো। দেবলীনা এই এই করে উঠতেই তার ঠোঁট এ তর্জনী দিয়ে চুপ করালো।


অরিত্র " তুমি আমাকে বলছিলে না তুমি ক্ষমা করার কে। জানোনা তুমি আমার ভগবান। ভগবান তো মাফ করবে নাকি? আসলে কি জানো দেবু, আমি ভালবাসতে ভুলেই গেছিলাম। ভেবেছিলাম কোনো বন্ধনে বাঁধব না আর। সেটা তোমায় বিয়ের আগেই বলেছি। কিন্তু আস্তে আসতে তুমি যেইভাবে আমার মনে জায়গা করে নিলে, আমি আর নিজেকে আটকাতে পারছিলাম না। অবচেতন মনে তোমাকে হারানোর ভয় চেপে বসছিল। বুঝছিলাম না তোমার মনে কি চলছে। তাই তোমাকে সেদিন সুমিতের সাথে দেখে মাথা ঠিক রাখতে পারিনি। তোমাকে সন্দেহ নয়, হারানোর ভয়। তুমি জানোনা এই কয়দিনে তুমি আমার কত কাছের হয়ে গেছো, তা ভাষায় বোঝাতে পারবনা। চাইনা আর তোমায় হারাতে।"


দেবলীনা অরিত্রর মুখটাকে জাপটে ধরে চুমো খেতে খেতে বললো " আরে পাগল, এত ভালবাসিস আমাকে, এত সম্মান করিস। কেনো ছেড়ে যাব? ওতো রাগের মাথায় বলেছিলাম। পাগল নাকি আমি? আমি প্রতিদিন সকালে ঠাকুরের কাছে ধন্যবাদ দেই, তোমার মত জীবনসঙ্গী পাওয়ার জন্য, আর তাকে ছেড়ে যাব?"



অরিত্র :- " চল না একটা গান গাই"

দেবলীনা :-" কোনটা?"


অরিত্র :- " গেস করো"


দুজনে গেয়ে উঠলো:-

"

পৃথিবীর যত সুখ যত ভালবাসা

সবই যে তোমায় দেব একটাই আশা

তুমি ভুলে যেও না আমাকে

আমি ভালবাসি তোমাক

...

পৃথিবীর যত সুখ যত ভালবাসা

সবই যে তোমায় দেব একটাই আশা..

তুমি ভুলে যেও না আমাকে...

আমি ভালবাসি তোমাকে


ভাবিনি কখনো এ হৃদয়ে রাঙানো

ভালবাসা দেবে তুমি

দুয়ারে দাঁড়িয়ে দু'বাহু বাড়িয়ে

সুখেতে জড়াব আমি

সেই সুখেরই ভেলায়..

ভেসে স্বপ্ন ডানা মেলব হেসে

এক পলকে পৌঁছে যাব রুপকথারই দেশে

তুমি ভুলে যেও না আমাকে...

আমি ভালবাসি তোমাকে

আমি ভালবাসি তোমাকে"




ভোরের সূর্য উঁকি দিচ্ছে, নতুন জীবনের আজান নিয়ে। ভালো থাকবে ওরা। পাশাপাশি, কাছাকাছি, আনন্দে।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract