পাগল কথন 🚫
পাগল কথন 🚫
-- এই যে শুনছেন, একটু শুনবেন শ্রী শ্রী পাবলিক, একটা কথা।
- বলুন।
-- এই আমি, মাত্র ডিভোর্স দিয়ে এসেছি। মুক্তি পেয়েছি, না মুক্তি দিয়েছি বলতে পারিনা। ওহ্। আমার নামটাই বলা হয়নি, আমার নাম : থাক বাদ দিন; জেনেই কি হবে, নামহীন প্রলাপ বলে মনে রাখুন।
আমার জীবনটা অদ্ভুত জানেন। খুবই অদ্ভুত। আমি কি চাই জীবনে আজ অব্দি বুঝে উঠতে পারিনি। সব কেমন যেনো হয়ে উঠেছে, বা নিজে থেকেই উদয় হয়েছে আমার জীবনে। ডেকে ডেকে আনিনি। বলতে গেলে নিজের থেকেই হাতে ধরা পড়েছে। একটা বিষয়ে কপাল ভালো, আজ অব্দি বেকারত্বের যন্ত্রণা সহ্য করতে হয়নি । যা হয়েছে সব সোজাসুজি। কলেজ থেকে বেরোবার তিন মাসের মধ্যে সরকারি চাকরি। কি করে পেলাম আমি জানিনা। এই পরীক্ষা টা দেওয়ার ইচ্ছেও ছিলনা। যাইহোক মাসের শেষে মাসোহারা আছে খাড়া।
হমম, আরাম তাই না? ধুরর মশাই। মনে হয় কেমন যেনো আছি।
সেইরকম হটাতই বিয়ে হয়ে গেলো। মজার ব্যাপার, কোনোদিনই টিকবে বলে মনে হয়নি। কিন্তু বড্ডো বেশি ভালোবেসে ফেলেছিলাম। ভেবেছিলাম বদলে যাবে। আদর করবে। বুঝবে। ভালবাসতে শিখবে। জামাই হিসেবে গর্ববোধ করবে। কিন্তু কিছুই হলনা জানেন। শুধু শারীরিক মিলনে কি সম্পর্ক টেকানো যায়। মনের যদি টান না থাকে, যদি দিনশেষে তাকে দেখতে ইচ্ছে না করে, যদি সবসময় মনে হয় পালিয়ে থাকি, যদি প্রতিরাতে কেঁদে কেঁদে বিছানায় জেতে হয় , এমাহ্ কি শুনালাম, ছেলেরাও কাঁদে নাকি? না ঠিকই শুনছেন, কাঁদে। খুব কষ্ট পেলে, বুকের কাছে যন্ত্রণায় কাঁদে। যখন দেখে যার কোলে মাথা রেখে ঘুমানোর কথা নিশ্চিন্তে, সেটা একটি কাঁটার আসন, তখন ব্যাথায় কাঁদে, যন্ত্রণায় কাঁদে, বুক ফেটে কাঁদে, চোখের জল বাঁধ মানেনা, মানতে চায় না পুরুষের সংজ্ঞা- পুরুষের নাকি কাঁদতে নেই।কাঁদে সে, যখন তার নিরপরাধ মা বাপ ভাই কে আদালতের দরজা নাড়তে হয়। কাঁদে সে, যখন মিথ্যে অভিযোগ এ জর্জরিত হয়। কাঁদে সে, যখন জীবন যন্ত্রণায় হাঁস ফাঁস করে।
সবচেয়ে দুঃখের বিষয় কি জানেন। বিয়ের পর জানি আমাকে বিয়ে করার কোনো ইচ্ছে ছিলো না তার।
আজ নিজেকে প্রশ্ন করি, কি হয়েছিল আমার? কেনোই বা পাগল হয়েছিলাম? কেনোই মরীচিকার পেছনে , কিসের আশায় দৌড়ালাম? এরই কি নাম ভালবাসা। উত্তর পাইনা। এখন আর খুজীও না।
খুব শক্ত হয়ে গেছি জানেন। মন আর ভাঙতে চায়না। কাউকে কাছে টানতেও ইচ্ছে করেনা। কারুর প্রেমের দুঃখের কাহিনী শুনলে বরঞ্চ হাসি পায় । ভাবি কর জন্য কাঁদে, কিসের জন্য কান্না করে। কাউকে সহানুভূতি দিতেও ইচ্ছে করেনা। উল্টো বলি , কেনো এমন এক সম্পর্ক বা এমন কোনো বিষয়ে নিজেকে ঢেলে দিচ্ছ, যাতে অন্যদিকের মানুষের সহযোগিতা, সহমর্মিতা, আবেগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একা থাকতে পারো না? একা গান গাইতে পারো না? একা রেস্তোরাঁতে খেতে পারোনা? একা সিনেমা দেখতে পারো না?
গভীর রাতে একা লাগলে, ভয় লাগলে নিজেকে সাহস জোগাতে পারো না? জানোনা মরলে একাই পূর্বে আগুনে, লাশ হয়ে যাবে মুহূর্তে, body বলে ডাকবে, তোমার অস্তিত্ব মুছে যাবে। থাকবে বডি হয়ে; আর পুড়ে গেলে গলায় মালা নিয়ে দেয়ালে ফটো হয়ে। একাই কিন্তু থাকবে।
তাই কিসের কান্না? কিসের ভয়? কাকে হারানোর ভয়?
কি লাভ?
একই পাবলিক, ঘুমিয়ে গেলে নাকি? বোর হয়ে গেলে? ঠিক আছে। উঠি তাহলে। ট্রেন আসার সময় হচ্ছে -- লাইনে বিছানা পেতে রেখেছি যে। নাহলে ট্রেন মিস হবে
চলি, টাটা, আলভিদা।